আমাদের দেশে নারী নেতৃত্ব নতুন হলেও শুনেছি যে পৃথিবীর বহু দেশে এটা ছিল হাজার বছর আগে থেকে। আজ আমি সেই সব মহান নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এই লেখাটা পোস্ট করছি এটা সেসব নারীর জন্য বিশেষ ভাবে যারা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেড়াজাল ভেদ করে স্বমহিমায় উজ্জল হয়ে উঠেছিলেন ।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০-১০০০
ইথিওপিয়ার কিংবদন্তিতুল্য রানী ইউলেকা(খ্রিস্টপূর্ব৪৫৩০-৪৪৮৫)
দালুকাহা নামে পরিচিত এই রানীর ব্যাপারে এই কিংবদন্তি প্রচলিত ছিল যে তিনি অ্যান্টেডিলুভিয়ান(মহাপ্লাবন) পূর্বের একজন শাসক ছিলেন। তিনি রাজা বরসার রাজসিংহাসন অধিগ্রহণ করেন যিনি ৬৭ বছর যাবত রাজত্ব করেন,এবং তিনি রাজত্ব করেন ৪৫ বছর ।
(২৯৫২-২৯৩৯ ) খ্রিষ্টাব্দপূর্ব , মিসরের ফারাও মেরিনিয়েথ
ম্যানেথ এর মতবাদ অনুযায়ী, নেত্রেন এর রাজত্বকালে এটা ধারনা করা হয়েছিলো যে একজন নারী শাসক হয়তবা সিংহাসনে বসেছিলেন।কিন্তু বর্তমান কালের প্রমাণ অনুযায়ী কিছু ইতিহাসবিদ এটা মানতে শুরু করেছেন যে মেরিতনিয়েথ(অথবা মেরিয়েত-নিত) ছিলেন ফারাও জির এর উত্তরসূরি আর তৃতীয় শাসক ছিলেন প্রথম মিশরীয় বংশের। তাঁর নিজের কবর আছে অ্যাবিডোস এর ‘রাজকীয় সমাধিস্থলে।তবে এটাও ধারণা করা হয় যে তিনি প্রথম কয়েক বছর নিজের পুত্র ডেন অভিভাবক হিসেবে রাজ্য শাসনকরেছিলেন।
খ্রিস্টপূর্ব ২৭২০ সালের কাছাকাছি মিসরের রাজ-অভিভাবক রানী নি-মাত-হেপি
প্রথম নারী শাসক হিসেবে নি-মাত-হেপি নিশ্চিত ভাবে মিশরের রাজত্ব ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। প্রথমদিকে তিনি তাঁর পুত্র জোসের এর রাজঅভিভাবক হলেও পরের দিকে তিনি নিজ কতৃত্ব সম্পন্ন ফারাও হিসেবে আখ্যায়িত হন। বেশ কয়েকটি তত্ত্ব আছে তার অরিজিন নিয়ে।তার কাছে মহান রাজবধু এবং রাজ সন্তানের মাতা নামক দুটি সম্মানজনক খেতাব ছিল।এটার সাথে সাথে তিনি উত্তরাধিকারিণী (Wrt' Hts) নামক খেতাব ধারী ছিলেন।
জনপ্রশাসন ,প্রদেশ প্রধান এবং বিচারকদের নিয়ন্ত্রণকারী।তিনি ছিলেন মিশরের প্রথম পিরামিড নির্মাতা ফারাও খুফুর বোন এবং রানী মেরিতিয়েতিস দ্বিতীয় এর কন্যা। প্রথমে যুবরাজ কাওয়াব এর সাথে তার বিয়ে হয়।যুবরাজ এর মৃত্যু ফারাও খুফুর শাসনামলেই হয়। এর পরে ২৫৮০ খৃস্টপূর্বাব্দে হেতেফেরেস কে বিয়ে করেন রেদেজেদেফ সিংহাসনে তার কব্জা সুদৃঢ় করার জন্য ।এটাও অনেক সময় বলা হয়েছে যে হেতেফেরেস কে ফারাও খাফ-রে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় পাঁচ জন ফারাও এর শাসন দেখে যান, তার মৃত্যু হয় ২৫১০ খ্রিষ্টাব্দে।
খ্রিস্টপূর্ব বাইশ শতকের কাছাকাছি ইথিওপিয়ার কিংবদন্তী রানী নেহাসেত নাইস(২১৪৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ)
কিংবদন্তী অনুযায়ী তিনি ৩০ বছর রাজত্ব করেন মহাপ্লাবনের ঠিক পরের দিকে
কাওয়াব এবং হেতেফেরেস ২য় এর কন্যা এবং খাফ-রে এর দ্বিতীয় স্ত্রী হলেও তিনি রাজকন্যা এবং হরাস আর সেথ এর ধারণকারিণী হিসেবেই বেশী পরিচিত ছিলেন,যদিওবা তার পিতা কখনই ফারাও ছিলেন না।এ থেকে এটা বোঝা যায় যে তিনি অন্তপুরের কোন অবলা না হয়ে রাজদরবারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন তার জীবদ্দশায়। দরবারের বিভিন্ন মূর্তি আর খোদাই করা নির্দেশনামা সমূহে এটা বেশ ভালভাবেই বোঝা সম্ভব ছিল।তার জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রধান পুরোহিত এবং বিচারক ছিলেন মিশরের ।তিনি সম্ভবত ৫৫ বছর বয়সে মারা যান।
(চলবে)
Thumbnails managed by ThumbPress
৮টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
লেখাটি আমার ব্লগে পড়েছিলাম অনেক আগে। সম্ভবত ২০১২ এর দিকে
সোনেলায় অবশ্য প্রথম শেয়ার করলেন।
শুভ কামনা।
ইমরান হাসান
আপনাকেও ধন্যবাদ 🙂
অনিকেত নন্দিনী
কেবল মিশরেই কি নারী নেতৃত্ব ছিলো?
আরো জানতে চাই।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা। -{@
ইমরান হাসান
সমস্ত পৃথিবীতেই ছিল আপু । নারী মুলত শিল্প বিপ্লব এর পরবর্তী সময় থেকে নিগৃহীত হতে শুরু করে । তবে এশিয়া নারীর ক্ষমতায়নে ছিল সবথেকে এগিয়ে । এরপরেই ছিল মেসোআমেরিকা ।
অনিকেত নন্দিনী
আরো অনেক অনেক নেতৃত্বের গল্প বিস্তারিত জানতে চাই।
পরবর্তী পোস্ট কবে আসছে?
ইমরান হাসান
খুব তাড়াতাড়ি আসছে আপু , আপনিও তৈরি থাকেন আমি এর আগেই আমার ব্লগ এ দুইটা পর্ব লিখেছিলাম । কিন্ত সেগুলো তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি । আশা করি এখানে সবাই বুঝবেন ।
অপার্থিব
আদিম যুগে নারীর সম্মান ও ক্ষমতা দুটোই ছিল। সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নারীকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হত। সম্পত্তির উপর যখন ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুরু করে তখন থেকেই নারী মূলত তার ক্ষমতা হারাতে থাকে। কারণ ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হত শারীরিক শক্তির
উপর ভিত্তি করে আর নারীদের শারীরিক শক্তি পুরুষের তুলনায় কম। তবুও ইতিহাসে কিছু ক্ষমতাবান নারীর আবির্ভাব ঘটেছে ,ভবিষ্যতেও ঘটবে। পরের পর্বের অপেক্ষায়…
ইমরান হাসান
এটা মার্ক্সীয় ভাবধারার কথা মুলত । নারী সবথেকে নিগৃহীত ছিল মুলত ইউরোপে এবং লেভানট বা প্যালেস্টাইন এর আশেপাশে । ভারতেও গুপ্ত পরবর্তী যুগ থেকে নারীদের নিপীড়ন শুরু হয় । এর আগে অনেক উজ্জল নারী ছিলেন । ইতিহাসে ফিউডাল সোসাইটি এর সময় পর্যন্ত নারী আর পুরুষ মুলত কিছু বৈষম্য এর শিকার হলেও সেটা শিল্প বিপ্লব এর পরবর্তীতে বৈষম্য এর ধারে কাছেও লাগে না ।