নদী (১৮তম পর্ব)

ইঞ্জা ২ মে ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:০৭:৩৮পূর্বাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

images-16

 

 

নদী রুমে গিয়ে খিল দিলো আর নদীর মা বলছে, তোর এইসব কাগজ কলম আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই,আমি সব বুঝি, তুই নিজ হাতে তোর জীবন নষ্ট করেছিস, এখন সমাজে আমাদের মুখ দেখানোই দায় হয়ে গিয়েছে, বলেই মাথায় হাত চাপড়াতে লাগলেন।
নদীর ভাই সাগর চেয়ারে বসেছিল, সে এরি মধ্যে ফাইলটা টেনে নিয়ে পড়তে শুরু করেছে, নদীর বাবাও ছেলের পাশে এসে বসেছে ফাইলটা দেখার জন্য।
ফাইল গুলো দেখা শেষে সাগর মার দিকে তাকিয়ে বললো, মা তুমি চুপ করো, আপু যা বলছে তা বিন্দু মাত্র মিথ্যে নয়।
নদীর মা সাগরের দিকে ফিরে বললেন, কি বললি?
মা তুমিই পড়ে দেখো, সাগর ফাইলটা এগিয়ে দিলো মার সামনে।
নদীর মা ঝট করে টেনে নিলেন ফাইলটি আর দৌড়ে চলে গেলেন নিজ রুমে, সাগর আর নদীর বাবাও পিছ পিছ গেলো।
নদীর মা টেবিল থেকে চশমা নিয়ে চোখে দিয়ে পড়তে শুরু করলেন, ফাইলের প্রত্যেকটা পাতা উল্টিয়ে পালটিয়ে বারবার করে পড়তে লাগলেন, পড়া শেষে ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লেন।
কি হয়েছে, কি হয়েছে বলে নদীর বাবা উনার পাশে এসে বসলেন।
আমার মেয়েটাকে ওই রনি এতো অত্যাচার কিভাবে করেছে, ওকে আমি বিশ্বাস করে এতো ভুল করলাম?
তোমাকে তো আমি আগেও বলেছি, আমাদের মেয়ে অমন নয়, এরপরেও তুমি ওকে বিশ্বাস করোনি।
দেখো সে আমার মেয়েকে কিভাবে না মেরেছে, নদীকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যায় তখন আমার মেয়েটা মৃত্যুর পথে ছিলো, হাসপাতালের রিপোর্ট, পুলিশ রিপোর্টে তাই লেখা আছে, উফ আমি কতো বোকা!
এখন তুমি যাও, মেয়েটার খবর নাও।
যাচ্ছি, আমি যায়।

নদী, ও নদী, দরজা খুলনা মা, মারে আমি ভুল করেছি, আমায় ক্ষমা করে দে মা, দরজাটা খুল।
নদী দরজা খুলে দিলে, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন নদীর মা, মারে আমি তোকে ভুল বুঝেছি তোকে, ওই হারামিটা আমাকে অনেক ভুল বুঝিয়েছে, তোর সম্পর্কে উল্টা পাল্টা অনেক কথা বলেছে, আমি জানতাম না, আমি বুঝতে পারিনি, আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
তুমি আমাকে জম্ম দিয়েছো, তুমি ওর কথায় কিভাবে আমাকে ভুল বুঝলে মা, আমি তো বারবার তোমাকে বুঝিয়েছি।
আমি জানিনা, রনি আমাকে যাতা ভাবে তোর সম্পর্কে বলেছিলো, আমি এখন বুঝতে পারছি, সে আসলেই খুব খারাপ মানুষ।
মা, এখন যখন বুঝেছো তাহলে তুমি শান্ত হও, যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
না না এখন ঘুমাবোনা, আগে তুই চল খাবি, তুই রাগ করে কিছু খাসনি।
মা আমি এখন খাবোনা, আমার খিদে নেই।
না তোকে খেতে হবে, আমিও খাইনি, চল দুজনেই খাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি রেডি করো আমি আসছি।
একটু পর মা মেয়ে খেতে বসেছে, সাথে নদীর বাবা আর ভাইও বসেছে পাশে, সাগর বললো, মা ভোর হচ্ছে আর তোমরা খেতে বসলে?
কেন তোরও খিদে পেয়েছে, খাবি?
না না, আরেকটু পর ব্রেকফাস্ট করবো।
আজ আর ব্রেকফাস্ট হবেনা, এখন গিয়ে ঘুম দে, নদীর বাবার দিকে তাকিয়ে, এই তুমিও যাও ঘুমাতে, আমি সব ঘুচিয়ে আসছি।
না আমরা এখন যাবোনা, তোমরা মা মেয়ের তামাশা দেখবো, তুমি যা করেছোনা, আমার মেয়ে এখনো মন খারাপ হয়ে আছে।
নদী হেসে বললো, বাবা আমি ঠিক আছি।
এইতো আমার মা হাসছে, খুব ভালো খুব ভালো, নদীর বাবাও হাসতে লাগলো।

নদী তুই শুয়ে পড়, আমি সব ঘুচিয়ে ফেলছি।
না মা এখন ঘুম আসছেনা, অনেকদিন পর তোমাদের দেখছি, আসো গল্প করি।
আচ্ছা, ওই ছেলেটা, কি যেন নাম?
জীবন?
হাঁ হাঁ, ওর বউ কই?
যতটুকু শুনেছি, উনার ওয়াইফ সাংসারিক ছিলেন না, হাসবেন্ড ও মেয়ের প্রতি এতটুকু দরদ ছিলোনা, একদিন জীবনদের ছেড়ে অন্য লোকের সাথে চলে যান আর কিছুদিন পর ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেন।
কি বলিস!
হাঁ মা, তখন থেকেই উনি মেয়েকে একাই বড় করছেন।
তোর সাথে পরিচয় হলো কিভাবে, সাগর জিজ্ঞেস করলো।
সে অনেক কথা, একদিন কাজ থেকে ফেরার পথে উনাকে দেখলাম রাস্তায় পড়ে আছে, কালোরা মেরে উনার টাকা পয়সা সব নিয়ে চলে যায়, আমি পুলিশে রিপোর্ট করলে, পুলিশ এম্বুলেন্স নিয়ে এসে উদ্ধার করেন উনাকে, জানো মা ঐ রাতে এই পিচ্চি মেয়েটা সারা রাত একা ছিলো বাসায়।
কি বলিস, অতটুকুন মেয়েটা একলা ছিলো, নদীর বাবা বললেন।
আচ্ছা ছেলেটা কেমন, কি করে?
খুব ভালো মানুষ, ব্যাংকে ভালো পদে চাকরী করেন।
আপু, উনি তোকে পছন্দ করেন?
ধুর কি যে বলিস, উনি আমাকে দয়া করেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন, বিপদের সঙ্গি উনি আর কিছুই না, আমি উনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম।

দরজায় নকের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো জীবনের, ধড়মড় করে উঠে বসলো বিছানায়, দরজায় নকের শব্দ হলো আবার।
কে?
ভাইয়া আমি।
জীবন উঠে গিয়ে দরজার খুলে ধরে অবাক হলো মিনার কোলে নাবিলাকে দেখে, কি হয়েছে?
ভাইয়া ওর খুব জ্বর, আবোল তাবোল বকছে, মামনি মামনি করছে।
কি বলিস, তাড়াতাড়ি রুমে নিয়ে আয় বলেই জীবনও দ্রুত ভিতরে গিয়ে ব্যাগ খুলে ব্যাটারি চালিত থার্মোমিটার নিয়ে এসে বিছানায় শোয়ানো মেয়ের কানে ধরে জ্বর মেপে দেখে আৎকে উঠলো, ১০৪ জ্বর মেয়ের।
জীবন দ্রুত মেয়ে কোলে করে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে মেয়ের মাথা পানির নিচে দিয়ে বসে পড়লো, পানির ছিটা চোখে মুখে পড়তেই নাবিলা চোখ খুলে তাকিয়ে বললো, ড্যাড, আন্টি বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সুইট হার্ট আমরা যাবো তো, আন্টির কাছে যাবো, জীবনের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগলো।
ভাইয়া, অনেক হয়েছে এখন উঠো, আমি ওর মাথা মুছে দিই, মিনা বললো।
জীবন মেয়েকে নিয়ে উঠে পড়লো, ট্যাপ বন্ধ করে দিয়ে মিনার সামনে নিয়ে গেল মেয়েকে, মিনা ভালো করে মাথা মুছে দিলে মেয়েকে রুমে এনে শুয়ে দিলো জীবন।
মিনা এইখানে ভালো ডাক্তার কই পাবো?
ভাইয়া, আমাদের পরিচিত ডাক্তার আছে, আমি কল দিচ্ছি।
ওকে তুই কল দিয়ে আয়, কয়টা বাজে এখন?
দুপুর দুইটা, ভাইয়া তুমিও ফ্রেস হয়ে নাও?
না আগে তুই কল দিয়ে আয়, আমি বসছি।

জীবন কি হয়েছেরে আমার দাদুরির, বলতে বলতে জীবনে মা এসে প্রবেশ করলেন রুমে, একিরে রুমের পর্দা সব বন্ধ কেন, বলেই উনি নিজে সব খুলে দিলেন, পুরা ঘর আলোয় ভরে গেল।
নাতনির মাথায় হাত দিয়ে দেখে বললেন, জ্বর কি পড়েছে, মাথা ঠান্ডা দেখছি বলেই গলায় হাত দিয়ে বললেন, না জ্বর আছে দেখছি।
মা মাথা ধুয়ে দিয়েছি ওর, জীবন বললো।
ভালো করেছিস, তা তুই কি খাবি, নাস্তা করবি নাকু ভাত খাবি।
মা এখন না, পরে খাবো।
ভাইয়া ডাক্তার সাহেব এখন হাসপাতালে, সেইখানে যেতে বলেছেন।
গাড়ী আছে?
আছে, আমি অনিক ভাইয়াকে বলছি।
যা বল, আমি মেয়েকে রেডি করে নিই।
ভাইয়া, তুমি কিছু খেয়ে নাও, আমি নাবিলাকে রেডি করে নিচ্ছি।
না আমি খাবোনা, ঐ ব্যাগটাতে নাবিলার ড্রেস আছে, নিয়ে পড়িয়ে দিস, আমিই অনিককে বলছি গাড়ী বের করতে।
দশ মিনিট পর জীবনরা বেড়িয়ে গেল নাবিলাকে নিয়ে, নাবিলা চোখ খুলেছে জ্বর একটু কমায়, জীবনের কোলেই বসে এইদিক ওইদিক তাকাচ্ছে।
ড্যাড আমরা কোথায় যাচ্ছি, আন্টির কাছে?
না মা, আমরা ডক্টরের কাছে যাচ্ছি।
কেন ডক্টরের কাছে যাচ্ছি, আমি যাবোনা।
কেন সুইট হার্ট, তোমার ফিভার, ডক্টর দেখাতে হবে।
না আমি আন্টির কাছে যাবো, গোঁ ধরলো নাবিলা।
বেবি, আমরা আগে ডক্টর দেখাবো, এরপর আন্টির কাছে যাবো।
নাবিলা চুপ হয়ে গেল।

কোথায় হাসপাতালটা, জীবন মিনাকে জিজ্ঞেস করলো।
বসুন্ধরায়, এপোলো হাসপাতাল।
ওহ তাই?
আমরা এসেই পড়েছি ভাইয়া, আর পাঁচ মিনিট লাগবে।
ডাক্তারের কাছে পোঁছেই বেশি অপেক্ষা করার দরকার হলোনা, চেম্বারে মেয়েকে নিয়ে গেলো ওরা, ডাক্তার মেয়েকে ভালো করে চেক করে জিজ্ঞেস করলো, আজই কি জ্বর উঠেছে?
হাঁ, মিরা জবাব দিলো।
আর কখনো, মানে এক মাসের ভিতরে আর জ্বর হয়েছে?
না আর হয়নি, জীবন জবাবে বললো।
ওকে আমি একটা মেডিসিন দিচ্ছি জ্বরের জন্য, জ্বর একশর উপরে গেলে খাওয়াবেন, ছয়দিন পর্যন্ত জ্বর থাকলে নিয়ে আসবেন, চেকআপ করবো।
ওকে, আপনার ভিজিট, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
ভাইয়া নিচে টিকেট কাটার সময় আমি দিয়ে দিয়েছি, অনিক জানালো।
আচ্ছা আমরা আসি, মেয়েকে কোলে নিয়ে জীবন বেড়িয়ে এলো।
ড্যাড এখন আন্টির কাছে যাবো।
ওকে চলো, তোমাকে ঘুরিয়ে আনি।

নদীদের বাসার সামনে গাড়ী রেখে জীবনরা ঘরের দরজার কলিং বেল চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
ভেতর থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো, কে, পর মূহুর্তে দরজা খুলে ধরলেন নদীর বাবা।
জীবন সালাম দিলে নদীর বাবা বললেন, আসো বাবা আসো, বলেই পথ দেখিয়ে ড্রয়িং রুমে এনে বসালেন আর ডাক দিলেন নদীর মাকে, এই শুনছো, মেহমান এসেছে।
নদীর মা এসে জীবনকে দেখে প্রথমে থমকে গেলেন, তারপর হেসে বললেন, আপনারা এইসময়, ভালো আছেন?
জি আন্টি, আসলে মেয়েটার জ্বালায় আর পারলাম না, হটাৎ জ্বর, ডাক্তার দেখানোর আগে থেকেই গোঁ ধরেছে আন্টির কাছে যাবো, তাই নিয়ে আসলাম, সরি বিরক্ত করছি।
না না অসুবিধা নেই, এই বুঝি আপনার মেয়ে, আসো আসো আমার কাছে আসো, নদীর মা নাবিলাকে ডাকলেন।
নাবিলা ইতস্তত করছে দেখে জীবন বললো, যাও বেবি, উনি তোমার আন্টির মা।
নাবিলা ছোট পায়ে এগিয়ে গেলো নদীর মার কাছে, নদীর মা হাত বাড়িয়ে নাবিলাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলেন।
আন্টি কই, ণাবিল আসতে করে জিজ্ঞেস করলো।
তোমার আন্টি ঘুমাচ্ছে।
আমি যাবো।
চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি, বলেই নাবিলার হাত ধরে ভিতরে নদীর রুমে গিয়ে দরজা খুলে ধরলে নাবিলা ভিতরে উঁকি দিলো, এরপর দৌড়ে গিয়ে বিছানায় উঠে পড়ে নদীর বুকে মাথা গুঁজে এক হাত দিয়ে নদীকে জড়িয়ে ধরলো।

________ চলবে।

ছবিঃ Google.

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ