তুই রাজাকার -১, ২, ৩ (অডিও সহ)

তির্থক আহসান রুবেল ১ জুলাই ২০২২, শুক্রবার, ১০:০১:২৬পূর্বাহ্ন কবিতা ১২ মন্তব্য

তুই রাজাকার -১

কাঁনাকে কাঁনা বলিও না
খোঁড়াকে খোঁড়া
কাঁনাকে কাঁনা বলিলে
কাঁনা মনে কষ্ট পায়
খোঁড়াকে খোঁড়া বলিলে
সেও মনে কষ্ট পায় ।

ছোট বেলায় গুরুজনদের শেখানো এই কথাগুলো বুকে নিয়ে , কখন যে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভুলে গেছি জানিনা । তাই আজ আমি আর অকপটে একজন রাজাকারকে রাজাকার আর একজন দালালকে দালাল বলতে পারি না ।

অথচ:
স্বাধীনতার নায়ক নিয়া
ঝগড়া চলে দুরো: মিয়া
২৬ আর ১৬ তারিখ
মুক্তিযোদ্ধার নয় ।
বুক ফুলিয়ে চলছে তারা
৭১’এর দালাল যারা
চারিদিকে দেখছি আজি
রাজাকারের জয় ।

অন্ধকারের চিপায় বইসা
পান খাওয়া মুখ লাল করিয়া
দেশের বুকে লাত্থি মাইরা
পুড়াইছে কত বাড়ী ।
লুটপাট আর ঠেক মারিয়া
জিন্নাহ্ সাবরে বাপ ডাকিয়া
ইসলাম রক্ষার নাম করিয়া
করছে ধর্ষণ নারী ।

তাই আজ গুরুজনের সেই শিক্ষাকে ভুলে নতুন করে সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে চাই । চিৎকার করে বলতে চাই:
আরে ঐ গোলামের বাচ্চা গোলাম
আরে ঐ দালালের ঘরের দালাল
শালা বেজন্মা
তুই রাজাকার।

অডিও: https://soundcloud.com/tirthok-ahsan-rubel/tui-razakar-1

তুই রাজাকার -২

সবাই পেছন দিকে একটু দেখেন
ঐ যে যায় রাজাকারের জাতিস্মর
কেমন বুক ফুলিয়ে চলছে দেখেছেন
আলী বাবার চল্লিশ চোর ।

করত মুরগী চুরি
আর কানে গোজা বিড়ি
মাফলারটা জড়াইয়া
ঘুরতো বাড়ী বাড়ী ।

বেজন্মা এই শালাদের
কুত্তার ঐ লেজ
খাইতে রাজি জুতার বাড়ি
কমাইবনা তেজ ।

ফকিরনির সব পোলাপাইন
করছে তারা যোগাড়
যাদের হাতে হইতাছে
রাজ্যের অনাচার ।

মাইয়া মানে জাহান্নাম
মাইয়া মানে যম্

আমরা না
ঐ রাজাকার কয়,
মাঝ রাইতে চিৎকার করে
মাইয়া ছাড়া নয়।

ব্রিটিশের দালাল ছিল দাদা
পাকের দালাল আব্বা
এখন আমি নব্য দালাল
পঁচা আমের ছোবড়া।

এক খাঁচা এক পঁচাই
করবি তোরা কি?
কুত্তা, বিলাই, গরু, ছাগল
সব দলে এনেছি।

অডিও: https://soundcloud.com/tirthok-ahsan-rubel/tui-razakar-2

তুই রাজাকার -৩

ঐ শালা তুই রাজাকার
ধইরা তারে জুতা মার।
জন্ম কি ঠিক আছে তোর
গুষ্টি শুদ্ধা মুরগী চোর।
বড় বড় কথা কস্
কানে ধইরা উঠ বস্।
তর পিঠে চাঁন তারা
বিষ্ঠার উপর একটু দাঁড়া।
কিরে দৌড়ে পালাস কে
ডরাইছে ডরাইছে ।
ধর শালারে জলদি ধর
খাইব ধরা একটু পর।
বান্ শালারে কইসা বান্
পাকিস্তান খান্ খান্।
কিরে মনে কষ্ট পাস্
রক্ত চোষার রক্ত খাস্।
আর কত কাল রক্ত খাবি
বাংলা ছাইড়া কবে যাবি।
ছাড় বাংলা জলদি ছাড়
জুতা খাবি বারবার।

 

প্রেক্ষাপট:

১ম কবিতাটা লেখার সময় মাথায় শুরুতেই যেটা আসে সেটা হচ্ছে: অনেকে বলে যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর কথা বলে কি লাভ! সবচেয়ে বড় যেটা অনুভব করলাম সেটা হচ্ছে, অনেকেই সুন্দর কথার বিপরীতে রাজাকারদের-ই সাধু বানানোর চেষ্টা করছে। তার উপর নানান বিকৃত গপ্পে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন শিবিরে নানাভাবে তরুণদের ভিড়ানোর চেষ্টা চলছে।

আর সেখান থেকেই ২য় কবিতাটির জন্ম। একদিন ভার্সিটিতে কিছু ছেলে-মেয়ে নিয়ে মিটিং করছিলাম পরবর্তী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে। আমার ভার্সিটির ৩৫ বছরের ইতিহাসে একটাই সাংস্কৃতিক সংগঠন। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমি। যাই হোক, আমি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসলেই আশেপাশে ছোট জটলা বা নানাভাবে ভিড় করতো শিবিরের ছেলেরা। একদিন জানতে চাই কোন কাজ আছে কিনা! জবাব না দিয়ে তারা পেছন দিকে হাটা ধরে। এমন-ই একটা দিন হঠাৎ মাথায় আছে ২য় কবিতার প্রথম দুটো বাক্য।  ছড়াটি মূল শিবিরের সদস্যদের নিয়ে লেখা।

৩য় টাও ঠিক কবিতা নয়, ছড়া বলা যায়। এটা আসে ভার্সিটির জামাতপন্থী প্রশাসনকে গালি দিতে। এই ছড়াটির প্রতিটি জোড় লাইন আবৃত্তিতে কোরাস হবার কথা ছিল। এ্যলবামের কাজ শেষ করতে না পারায় শুধুমাত্র বেজোড় লাইনগুলো রেকর্ড হয়। তাই সেটা আর আপলোড করা হয় নি।

তিনটি কবিতাই ২০০৪ এর শেষ থেকে ২০০৫ এর শুরুতে লেখা। কন্ঠ দিয়েছেন ৯০ পরবর্তী কিংবদন্তী আবৃত্তিকার এবং শত শত আবৃত্তিকারের শিক্ষক বরকত আজিজ ধ্রুব। তিনি ৯০ পরবর্তী অসংখ্য রোমান্টিক ক্যাসেটের পাশাপাশি 'রাজাকার ও রাজাকার' শিরোনামে একটি ক্যাসেট প্রকাশ করেন। যা জাহানারা ঈমামের নেতৃত্বে পরিচালিত গণ আদালতের প্রতিটি আয়োজনের প্রচারণায় মাইকে বাজানো হতো। এই মানুষটিকে নিয়ে আমার জীবনের গল্প আরেকদিন বলবো। আমি উনার সংগঠনে যুক্ত হই তৃতীয় শ্রেণীতে থাকতে। আর হারিয়ে যাওয়া এই মানুষটিকে আমি নতুন করে সামনে আনি অনেক খুঁজে বের করে আমার ভার্সিটি জীবনে। আরেকটা তথ্য জানিয়ে রাখি: এই সিরিজের প্রতিটি আবৃত্তি আমার নির্মাণ ছিল, যা আগামীতে আসবে। অর্থাৎ গুরু তার শিষ্যের নির্দেশনায় কন্ঠ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে অডিওগুলো চূড়ান্ত ভার্সন নয়। সবই পাইলট বা টেস্ট প্রজেক্ট ছিল।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

  • জিসান শা ইকরাম

    একটা ব্লগে রাজাকারদের বেজন্মা বলার পর হতেই ব্লগ মালিকের কু দৃষ্টি পরে আমার উপর।
    এখন এই সোনেলা ব্লগে রাজাকারদের বেজন্মা বলায় রাগ করার কেউ নেই।

    আজকাল রাজাকাররা প্রভুত ক্ষমতাবান হয়েছে। তবে যতই ক্ষমতাবান হোক, গর্ব নিয়ে কখনো এরা বলতে পারবে না যে সে রাজাকার।

    আপনার এই কবিতা, ছড়ার সিরিজটিতে অনেক ভালোলাগা।
    শুভ ব্লিগিং

  • সাবিনা ইয়াসমিন

    কাঁনাকে কাঁনা বলিও না
    খোঁড়াকে খোঁড়া
    কাঁনাকে কাঁনা বলিলে
    কাঁনা মনে কষ্ট পায়
    খোঁড়াকে খোঁড়া বলিলে
    সেও মনে কষ্ট পায় ❞

    হ্যা ভাই, যে যাই হোক তাকে কিছু বলা যাবে না। যদি মনে কষ্ট পায় তাইলে তো মন ভাঙার দায় নিয়ে আত্মঘাতী হওয়া লাগবে। কে চায় এই সুন্দর পৃথিবীর ( পড়ুন আমাদের দেশ) মায়া ছেড়ে অকালে বিদায় ( কল্লা হারাইতে) নিতে!!
    আমি আপনার লেখা যত পড়ি অবাক হই। কীভাবে লিখেছেন! মুখে দেশ প্রেমের উগরানো তেল আর কলমে কুলুপ দেয়া লেখকদের ভীড় ঠেলে এমন লেখা প্রকাশে আনা সহজ ব্যাপার নয়।

    • সাবিনা ইয়াসমিন

      আরেকটা কথা, আপনার এই লেখা নেটে সার্চ দিলে অন্যান্য সাইটেও দেখা যায়। আপনি কি এগুলো সেখান থেকে সরিয়ে আনেননি?
      যতটা জানি, অন্যান্য সাইটে প্রকাশিত লেখা এখানে প্রকাশ করার ব্যাপারে কিছু শর্ত আছে।
      যেমন অন্যান্য সাইটে প্রকাশিত হয়েছে এমন লেখা সোনেলায় প্রকাশ করা যাবে না, আবার অন্যান্য সাইটে হয়তো আংশিক প্রকাশিত হয়েছিল ( এক/একাধিক পর্ব) কিন্তু এখানে আপনি সম্পুর্ন লেখা প্রকাশ করেছেন, এমন পোস্ট দেয়া যাবে।
      আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।

      • তির্থক আহসান রুবেল

        প্রথমত আমার দেশ-সমাজ-মুক্তিযুদ্ধ-রাজাকার নিয়ে লেখাগুলো২০০৪-২০০৫ এবং ২/৩ টা ২০০৯-২০১০ এর দিকে লেখা। সে আমলে আজকের মতো ইন্টারনেট বা সাইট সহজলভ্য ছিল না। আমি সে সময় বহু সাইটে সে সময় পাঠিয়েছি মেইলে বা চিঠি লিখে। কিন্তু কোন জবাব পাই নি। আমি আমার নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলে বছর কয়েক আগে প্রায় ২০/৩০ টা পেজ আসতো আমার নামে, যেখানে আমার লেখা বা আমাকে নিয়ে সংবাদ পাওয়া যেতো। যার বেশীরভাগ আমি মনেও করতে পারি না কিংবা তারা অন্য কোথাও থেকে কপি-পেস্ট করেছে সে সময়। এখনো বিভিন্ন জায়গায় আমার লেখা পাওয়া যায়। সবখানে যে আমার নাম আছে সেটাও না। এমন কি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বা ইউটিউব চ্যানলেও আমার আইডিয়া থেকে শো হচ্ছে। যা আমি একটা সময় কাজ চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রপোজাল দিয়েছিলাম। যা সে সময় রিজেক্ট হয়েছিল।

        ফলে বিভিন্ন জায়গায় আমার লেখা পাওয়া গেলেও সে ব্যপারে আমার ধারণা নাই। গল্প কবিতা ডট কম নামে একটা সাইটে আমি নিজে লেখা পোস্ট করেছি প্রায় ৮/১০ বছর আগে। সেসব যদি সামনে আসে তাহলে সেসব অবশ্যই আমারই পোস্ট ছিল। তবে সেখানকার সদস্যদের সাথে ভাবনাগত জায়গা না মেলায় আমি সেখান থেকে সরে আসি। যদিও ২/৪ বার সেখান থেকে প্রাইজমানি পেয়েছিলাম। এর বাইরে আরো আগে সামু ব্লগে লিখতাম। সেখান থেকেও এক সময় সরে আসি ব্লগ রাজনীতি দেখতে পেয়ে। তবে এটা চরম সত্য যে, আজ থেকে প্রায় ১৭/১৮ বছর আগে ম্যাগাজিন পাড়ায় আমি বেশ নামী লেখক ছিলাম। দেশের নামী-দামী পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশ হতো। কিন্তু কোন না কোন কারণে আমি সব জায়গা থেকেই এক সময় সরে আসি। ফলে কোথাও আমার লেখা পাওয়া গেলেও, সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।

        এবার কবিতাগুলো নিয়ে বলি: এই কবিতাগুলো সে সময় লেখা যখন জামাতপন্থী বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। আমি তখন ভার্সিটির বেশ পরিচিত ছাত্রদল কর্মী। ভার্সিটির ভিসি জামাতপন্থী। আমি একটা সাংস্কৃতিক সংগঠন সেখানে প্রতিষ্ঠা করি। আমি জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠান করতে চাই। কিন্তু সেখানে বাঁধা আসে। আমি তার কারণ অনুসন্ধানে নামি। মূলত আমার জামাত বিরোধী লড়াইটা সে সময়-ই শুরু হয়। এক সময় আমি স্টাডি করতে করতে মুক্তিযুদ্ধের উপর এতটাই আর্কাইভ জমা করি যে, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরেও এমন অনেক ডকুমেন্টস বর্তমানে নাই যা আমার কাছে আছে। বরং ১ বছর আগের কথা যদি বলি, আমার ডকুমেন্টের ওজনের চাপে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরও আমাকে মানা করে দেয় সেসব ডকুমেন্টের ক্রসচেক করতে সহায়তা করতে। কারণ তারা নিজেদের এলিট ভাবে, যে কোন গবেষকের চেয়ে।

        যাই হোক, আমার রাজাকার সিরিজের লেখাগুলো মূলত ক্যাম্পাসের শিবির কর্মীদের কলিজায় আগুন ধরাতে এবং ভিসি পন্থীদের গালি দিতেই লেখা ছিল, যা আগামী কবিতাগুলোতে আরো পরিস্কার হবে। আমার ছাত্রদলের রাজনীতি এবং একই সাথে শিবির বিরোধী অবস্থান নিয়ে যদি কিছু জানার থাকে সেটাও সরাসরি জানাতে পারবো।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ