
চলো দুঃখ ঢেলে আসি !
কোথায়?
কোন বহবান নদীর স্রোতে।
না! না! আমি তো দুঃখ ঢালতে ঐ দূর আকাশটাকে বেঁছে নিতে চাই।
কেন???
কারন মানুষের তৈরী এই সমাজ, সমাজের মুখোশধারী মানুষ আর পারিপাশ্বিক অবস্থা।
নিজের সাথে নিজের এই আত্নকথোপোকথনে অনেকেরই পরিচয় আছে । এই কথোপোকথনে কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে আবার ঘুরে দাঁড়ায়,আর কেউ নিজের সাথে নিজের কথোপোকথনে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, নিঃশেষ হয়ে বেঁছে নেয় আত্নহত্যার পথ।
ঠিক তেমনিভাবে আজ রাত ৩ ঘটিকায় নাটোরের ছাত্র মামুনকে বিয়ে করা আলোচিত সহকারী অধ্যাপিকা খাইরুন নাহার সিলিং ফ্যানে ওড়না পেচিয়ে আত্নহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছে ।
কিছুদিন আগেই ভালোবেসে মামুন কে বিয়ে করায় ফেসবুক, টুইটার,টেলিভিশনে তাদের নিয়ে ট্রল করার সীমা ছিল না। কারন ছিল ঐ মহিলার ৪০ বছর বয়স, বিয়ে করেছে ২২ বছর বয়সী ছাত্রকে, ছি!ছি! এটা কোন হইলো? একজন শিক্ষক এমন করতে পারে? চরিত্রের ঠিক নাই ! একজন শিক্ষক কি নোংরামী করল! আগের স্বামীর কাছে টিকতে পারে নাই বোঝেন ব্যাপারটা! মান সম্মান ডুবাইলো, টিকবে কয়দিন দেখি!!!!এ ধরনের আরও কত কথা, কত গুজব আর কত নোংরা সমালোচনা যার জন্য মাশুল হিসাবে দিতে হলো আত্নবলি । এরই নাম জীবন?.??.????এখন ভালো থাকো সমাজ, সমাজের মানুষ আর সাথে তার সহকর্মীরা।
মানুষ বাঁচে বিশ্বাসে,ভালোবাসায়, আত্নমর্যাদায়,আর যোগ্যতায়। এইগুলো যখন একসাথে হারিয়ে যায় তখন আমরা হয়ে পড়ি দিশেহারা,পাগল। প্রত্যেক মানুষই খোঁজে একটা বিশ্বস্ত কাঁধ, যে কাঁধে ভড় করে একসাথে বিশাল আকাশ,বিশাল সমুদ্র,বিশালাকার এই জীবন কাঁটাতে চায়, তাইতো মানুষ ভালোবাসে । আর এই ভালোবাসা যখন হারিয়ে যায়, বিশ্বস্ত কাঁধ যখন অবিশ্বস্ত হয়ে যায় তখন আর বিশাল আকাশ একসাথে দেখা হয়ে ওঠে না। হয় তারা কাঁটাযুক্ত বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয় নয়ত বাধ্য হয়ে একসাথে থেকে আজীবন বেঁচে থেকেও বার বার মরে যায়,নয়ত বা বেঁছে নেয় আত্নহত্যার পথ।
মৃত্যু শব্দটির স্বাদ আমাদের সবাইকেই কোন না কোনদিন নিতেই হবে। তবে এই মৃত্যু শুধু শরীরের নয়, মনেরও হতে পারে। আজ খাইরুন নাহারের নিথর দেহটা পড়ে আছে হয়ত কোন কোনে!!!কিন্তু সেতো সেদিনই মরে গিয়েছে যেদিন তাকে বিয়ে করার জন্য তার কলিগ আপনজন আর এই সমাজ ছি! ছি! দিয়েছিল। সেদিন থেকে সে মানসিক মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করছিল আর আজ একেবারে শরীর মন সব একসাথে শেষ । এই কি হওয়ার ছিল?????
সবাই বলে প্রেম, ভালোবাসা নাকি খুবই পবিত্র শব্দ। কিন্তু কোথায় সেই পবিত্রতা??? একজন ডিভোর্সী নারী নাকি সমাজে একা থাকলে খারাপ, আবার কোন মেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করলে নাকি মেয়েটি ভালো ছিল না,কারন সে মেয়ে বলে। অথচ এক ছেলে অনেক বিয়ে করতে পারবে কেউ পরকিয়া করলে সেখানেও মেয়েটি খারাপ কারন সে মেয়ে বলে,তার সংসার আছে পুরুষের নেই, এটাই সমাজের নিয়ম, এতে সমাজের কিছু যায় আসে না। এক হাতে তালি বাজে না এটা আমাদের ভদ্র সমাজ মানতে নারাজ। এক নারী ধর্ষন হলে মুখ ফুটে বলা যাবে না কারন ঐ মেয়ের পরেতো বিয়ে দিতে হবে নাকি!! নয়ত বা ঐ মেয়ে খারাপ ছিল,বাজে পোশাক পড়ত, রাতে বাইরে থাকত আরও বহুত কাহিনী। কারো ব্রেক আপ হলে জানা নেই শোনা নেই অযাথা এক পক্ষকে ভয়ানক দোষী সাজিয়েই ক্ষান্ত হয় না, টেনে হিঁচরে একাকার করে ফেলে। এই হলো আমাদের সমাজ আর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী। আরে ভাই কারো ভালো করতে না পারি, চুপ থাকি, “দৃষ্টিভঙ্গী বদলান জীবন বদলে যাবে”।
আমাদের জীবনে যেকোনোভাবে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিরাট ঝামেলা হতেই পারে, এতে করে আমরা অনেক ভেঙ্গে পড়ি, দিকবিদ্বিকশূন্য হয়ে পড়ি,এই সময় আমাদের সবচেয়ে বড় মানসিক সাপোর্ট দরকার যেটা আমাদের খুব কাছের,খুব আপনজন,বন্ধুরাই দিতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই সাপোর্ট না দিয়ে অনেকেই বিশ্বাসের হাত বাঁড়িয়ে দিয়ে আরও নীচে নামিয়ে দেয় ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে। আবার এমন অনেক মুখোশধারী মানুষ আছে যারা আজাইরা নিজে নিজেই আপনার কাছাকাছি এসে আপনার সরলতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার আপনাকেই বাঁচানোর ভান করে মহান সাজতে চায়। আপনি কিন্তু ঠিকই জানেন সেই মানুষটাই চরম বিশ্বাসঘাতক তবুও চুপিসারে সব মেনে নিয়ে তার সাথে থাকবেন, নয়ত তার থেকে অনেক দূরে যাবেন নয়ত বেঁছে নিবেন ভুল পথ। এই হলো বিচিত্র মানুষ!!! যাদের নাকি মান আর হুশ সমান???
মানুষ বিশ্বাসে বাঁচে। কিন্তু পর পর যখন সবাই
একসাথে আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে তখন আপনি বুঝবেন ই না আপনার কি করা উচিৎ। তাই বার বার ভুল মানুষদের বিশ্বাসঘাতকতায় ঠকে গিয়ে ও মানুষ আবার অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করে, স্বপ্ন দেখতে চায়। কিন্তু একা একা কি স্বপ্ন দেখা যায়????মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজের প্রয়োজনেই সবার সাথে মিশতে হয়,বিশ্বাস করতে হয়, চলতে হয়। এই চলতে চলতেই আশেপাশের চারপাশের পরিবেশ যখন একসাথে কোন মানুষের সাথে প্রতারনা করে তখনই মানুষটা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়,ঝরে পড়ে আরেকটি নতুন জীবন। যার ভাগ্য ভালো বা যার পাশে কেউ না কেউ এগিয়ে আসে সে লীলাক্রমে আবার ঘুরে দাঁড়ায় কেননা সে একটা শক্ত আশ্রয় খুঁজে পায় সেই আশ্রয় মা, বাবা,পরিচিত,অপরিচিত,বন্ধু, যে কেউই হতে পারে। তাই আমার মনে হয় আত্নহত্যার মত এই ভয়ানক ডিশিসনের অনেকগুলো কারন হয় যেমন নিজের ভুল,প্রিয়জনের চলে যাওয়া, প্রিয়জনের দেয়া মিথ্যা দোষ,আপনজনের প্রতারনা,ভুল মানুষকে বিশ্বাস করা অনেকটা অপাত্রে ঘি ঢালার মত!, কাছের মানুষদের অকারনে অবহেলা সহ আমাদের এই খোলশযুক্ত সমাজ।
তারপরেও বলব আত্নহত্যা সমাধান নয়, ইহকাল ও গেল পরকাল ও গেল। জীবনে যদি সব লোকই ভালো হয় তবে প্রতারক চিনব কিভাবে? সমাজ তার গতিতেই চলুক আমরা আমাদের গতিতে চলি,জীবনে আর কাউকে সঙ্গী না করি তাতেই তো হয়, আমার দুঃখ,কষ্ট একান্ত আমার, আরেকজনকে বলে সাময়িক হালকা না হই সেই মানুষটাকে সুযোগই দিবো না ক্ষতি করার। আমার বন্ধু, আমার সঙ্গী আমার একাকীত্ব যে আমার সব পুষে রাখবে যে আমাকে মাঝে মাঝে ছুরি কাঁচি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করবে কিন্তু আমার সাথে প্রতারনা করবে না। আমার একমাত্র ভরসাই আমার একাকীত্ন, আমার বিশ্বাসের জায়গাও আমার একাকীত্ব,যার সাথে আমার সুখ দুঃখের আলাপন চলে দিনরাত, যে আমার ছায়াসঙ্গী,যে আমার ভিতরই অন্তঃনিহিত থাকে বাইরের এই খোলশযুক্ত সমাজে যে প্রতিফলিত হয় না। তাই খুব ভালোবাসি আমার একাকীত্ব তোমায়❤️❤️❤️।
একাকীত্ব তোমায় সাথে নিয়েই বলতে চাই, যতই মানুষ, সমাজ বিশ্বাস ঘাতকতা করুক না কেন!!!তবুও,,,,,
“মরিতে চাহিনা আমি এ সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই”।
জীবন তো একটাই!!!!সকালে ঘুম থেকেই সহকারী অধ্যাপিকার মৃত্যুসংবাদ দেখে বুকের ভিতর ধক করে উঠল, চিনি না জানি না অথচ এত কষ্ট কেন লাগছে????মানুষ বলে, আমাদের মন আছে বলে, সিমপ্যাথি আছে বলেই কষ্ট পাই ! অথচ এমন মানুষ ও আছে যারা আপনজনের মৃত্যু দেখেও কষ্ট পায় না,যারা অন্যের মারা যাওয়া দেখে প্রতিনিয়ত হাসে,মজা করে। আসলেই কি তারা কষ্ট পায় না?? নাকি কষ্ট পেয়েও ভান করে থাকে? কে জানে????এইসব উত্তর আমার অজানা।
বার বার খাইরুন নাহারের কথা মনে পড়ছে, আহারে কতটা মানসিক চাপে পড়ে😭😭😭😭
হয়ত তার আর্তনাদ পৃথিবীর কেউ শুনতে পায় নি।
হয়ত বা তার অন্তঃরীক্ষ দ্বীপে বেঁজে উঠেছিল,,,
“আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার,
বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার”।।।।
শত যন্ত্রনার পরেও আসুন প্লিজ কেউ আত্নহত্যার পথ বেঁছে না নেই, আসুন নিজের সাথে নিজেই কথা বলি,নিজের সঙ্গী নিজেই হই নয়ত বা আমার মত সব দুঃখ যখন একসাথে ডানা ঝাঁপটাতে থাকে তখন একা একাই কখনো আশেপাশের প্রকৃতিতে,কখনো ধরলা নদীর স্রোতে,কখনো একাকী কফির চুমুকে নিজের দুঃখ ঢেলে আসি।।।।।
ছবিঃ নেট থেকে।
৮টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই এটা কোন সমাধান নয়। এখন তো শান্তি পেয়েছে সমালোচক। আর কিইবা ঘাটতে পারে তারা। খারাপ লাগছে অনেক খারাপ।।।
রেজওয়ানা কবির
সমালোচকরা এইসবই পারে এদের তো কাজই মানুষ কে হীন করা। আমারও খুব খারাপ লাগছে। শুভকামনা।
হালিমা আক্তার
আজ স্কুলে খুব ব্যস্ততা ছিল। টিফেনের ফাঁকে মোবাইল অন করতেই খবর টা দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না।বার বার মনে হচ্ছিল খাইরুন নিজেও হারলো, আমাদের হারিয়ে দিল। আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। সবাই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। সামাজিক পরিবেশ তাকে বিষন্নতার পথে ঠেলে দেয়। আমাদের দেশে সামাজিক ট্রল এক বিশাল সমস্যা। শুভ কামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে পারি না বিধায় তো একেকজন একেকটা ভুল করি আপু।আর যাইহোক এই ট্রল,এই হাসি ঠাট্টা মেনে নেয়া সত্যি খুব কষ্টের। শুভকামনা আপু।
আলমগীর সরকার লিটন
আত্মহত্যা এক দিকে মহাপাপ অন্যদিকে বোকামির ফল
এক জন শিখিত মানুষ খুবি ভাল ভাবে বুঝে
এই সমাজ কিছু দিতে পারে না
আজও দেখতেছি কোন কিছুই দেয় না
শুধু নোংরা সমাচালোনা করে
হায় সমাজ—— হায় সংসার
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া। এই সমাজের কারনে খাইরুনের মত হাজার মানুষ এভাবেই হারিয়ে যায়।।।
নিতাই বাবু
জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এমনিতেই হয়ে ওঠে না। কোনো-না-কোনো কারণেই জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আর ঘৃণা জন্ম নেই। জন্ম নেয়া সেই ঘৃণা থেকে রেহাই পেতেই মানুষ স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা বা আত্মত্যাগের মতো পথ বেছে নেয়।
হয়তো আমার নিজের একমাত্র ছেলেটার জীবনেও এমন বিতৃষ্ণা আর ঘৃণার জন্ম হয়েছিল। তাই ২০১১ সালের ২০ মে এমনটাই হয়েছিল।
রেজওয়ানা কবির
হুম ভাইয়া জীবনের প্রতি এই চরম অনীহায়ই মানুষ এই ভুল করে যখন আর একেবারে সামলাতে পারে না। শুনে খুবই কষ্ট লাগছে কি বলব বুঝতেছি না আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিক,তার আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি,আমিন।