বাসার সামনের লনে যখন বুক পরিমান তুষার, ছেলে দু'টিকে নিয়ে খেলছিলাম, ছবি তুলছিলাম।ছেলেদের সাথে খেলার সময়টাতে বরাবরই আমি ওদের মতোই ছোট হয়ে যাই। জাম্প করে তুষারের উপর শুয়ে পড়া, একে অন্যকে হাত ভর্তি সাদা তুলার মত তুষার ছুঁড়ে মারা__ যেন তিন বন্ধুর খেলা !
খেলা শেষে ওদের বাসায় পাঠিয়ে শাবল হাতে পার্কিং স্পেসের দিকে যাই। তুষারে ডুবে থাকা গাড়িগুলো বের করতে হবে একে একে।প্রতিবেশী কিং আর আমি, আমরা যার যার পার্কিং স্পেসের সামনের তুষার পরিস্কার করছি। একটু জিরিয়ে নিচ্ছি। গল্প করছি। আবারো শাবল দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে একপাশে তুষার স্তূপ করছি।
কিং বলে, তোমরা খেলছিলে, আমি জানালায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলাম।চমৎকার দৃশ্য, চমৎকার সময়।আমার এমন স্নেহ ভালোবাসায় মাখামাখি অসাধারন কোন স্মৃতি নেই ছেলেমেয়ে দু'টির সাথে।আমি বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করি, "কেন" ? মিস্টার কিং শাবলে তুষার তুলে লং আইল্যান্ড রেললাইনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে, সময় খুব দ্রুত উড়ে যায়।জানলাম__ ছেলেমেয়েরা ছোট থাকতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দু'জন চাকুরী, ব্যস্ততা, বাড়িফেরা ক্লান্তি আর দিনশেষে ঘুম ... এমন করেই সময় গড়িয়েছে কখন টের পায়নি। টের পায়নি ছেলেমেয়ে দু'জনের বড় হয়ে উঠা।নিজেদের জগত নিয়ে তাঁদেরও ব্যস্ত হয়ে উঠা। জীবনের এ বেলায় এসে একরাশ শীর্ণ হাহাকারে সময়গুলো খুঁজে ফিরে কিং।
গহীন কূপের অন্ধকারে যে সময় একবার হারায়, তা কি আর ফিরে আসে ?
সন্তান আর বাবা-মা'য়ের মাঝখানে যে শূন্যতা একটু একটু করে গড়ে উঠে, তা কি আর পূরণ হবার ?
জীবন থেকে এক একটি দিন চলে যাওয়া মানে হিসেবের খাতা একটু একটু করে ছোট হয়ে আসা।সন্তানের সাথে গা'য়ে গা ঘেঁষে আগ্লে থাকা বাঁধন একটু একটু করে আল্গা হয়ে আসা।অনেকটা বিশাল আকাশের বুকে ভেসে থাকা মেঘ খণ্ডের দ্রুত মিলিয়ে যাওয়ার মতন।
সন্তানদের সাথে আমাদের সময়গুলো হোক উপভোগ্য প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে ...
Thumbnails managed by ThumbPress
১৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
সন্তানরা থাকুক দুধে-ভাতে তা আমরা চাই, পাই ও।
রিমি রুম্মান
অনেক শুভকামনা। -{@
রুহুল
এমন ই যেনো হয়। আপনার লেখা থেকে পরিস্কার আপনি প্রবাসের বাসিন্দা। পশ্চিমা সংস্কৃতির দেশে মা বাবা হয়তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন থাকে। কিন্তু আমাদের বাঙ্গালীদের অবস্থা দেখেছেন কখনো? বাবা রিক্সা চালায় দুপুরে ভাত রান্না করে। মা গার্মেন্টস শ্রমিক করে রাতে রান্না। আট বছরের বালক সজিবের দিন কাটে দু বছরের বোন সুমাকে কোলে করে। নিন্মবিত্ত এর কথা গেলো। উচ্চবিত্তদের সময় যায় ক্লাব আর ব্যাবসা পাড়ায়। মধ্যবিত্ত রা? বাবা অফিস ফেরত জীর্ণ আর মা সংসারের পাশাপাশি দু একটা টিউশনি বাসায় বসে সেলাই কাজ। সময় কই আমাদের?
সর্বশেষ বলি
সন্তানদের সাথে আমাদের সময়গুলো হোক উপভোগ্য প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে …
রিমি রুম্মান
সবটুকু ব্যস্ততা শেষেও আমাদের দেশের বাবা মায়েরা যেটুকু সময় দেয়, উজাড় করে দেয়। আগলে রাখে আমাদের। অসুখ হলে কপালে মমতার হাতখানি রাখে। এটুকুই যেন অনেক বড় পাওয়া ।
ভাল থাকুন অনেক। শুভকামনা নিরন্তর। -{@
মৌনতা রিতু
সন্তান সে তো আমারই অংশ।আড়ং থেকে যেদিন মেমনের সামনে চাকরির অফারটা আসলো,মেমন আমায় বোলছে,”তুমি চাকরি করলে আমাদের কে দেখবে”।বাচ্চারা আসলেও চায়না মা বাবা দীর্ঘখন ওদের কাছ থেকে আলাদা থাকুক।ওদের জন্যই আসলে ত্যাগ করা উচিৎ অনেক কিছু।।ভালো লখেছেন।আমারও দুই সন্তান।লেখা পড়ে মনে হচ্ছিল আমাদের কথা বোলছে কেউ।
রিমি রুম্মান
আমাদের চারিপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা। আমাদের অনেকের সাথেই মিলে যায় হয়তো। তবে এই যে ছোট একটি হাহাকার… আমাদের সচেতন হতে শেখায়। অনেকের অনেক লেখা পড়ে আমি নিজেও একটু একটু করে সচেতন হয়ে উঠি।
ভাল থাকবেন। শুভকামনা।
অনিকেত নন্দিনী
“সন্তান আর বাবা-মা’য়ের মাঝখানে যে শূন্যতা একটু একটু করে গড়ে উঠে, তা কি আর পূরণ হবার ?”
এ কি আর পূরণ হয় আপু? বরং এ শূন্যতায় পড়ে গিয়ে বাচ্চারা খাবি খেতে থাকে। 🙁
সন্তানদের সাথে আমাদের সময়গুলো হোক উপভোগ্য প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে …
রিমি রুম্মান
অনেক শুভকামনা ।
ভাল থাকুন সবসময়।
লীলাবতী
আপু এভাবেই দুরত্ব তৈরী হয় ধীরে ধীরে। বড় একটি সমস্যাকে খুব সহজ ভাবে ফুটিয়ে তুললেন।
রিমি রুম্মান
অনেকদিন পর এলেন…
জিসান শা ইকরাম
লেখাটা চাবুকের মত পিঠে এসে পড়লো
কতটুকু সময় দিয়েছি আমার বাচ্চাদের!
নিজকেই প্রশ্ন করছি লেখা পড়ার পর হতে
ধন্যবাদ আপনাকে, এমন লেখার জন্য।
শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
সময় থাকতে আমরা আসলে অনেক কিছুই তেমনভাবে খেয়াল করি না। কিংবা বুঝতে পারি না। সময় শেষে অনেক কিছুতেই আমাদের শূন্যতা থেকে যায়। কিছু মানুষের কাছ হতে আমি নিজেও অনেক শিখছি, জানছি, সচেতন হচ্ছি।
শুভকামনা।
অরুনি মায়া
এই শূন্যতা আর পূরণ হয়না আপু | সময়ের উপহার সময়ে আঁকড়ে না ধরলে তা আর ফিরে আসেনা |
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছ আপু। এই একটি লাইনই বলতে চেয়েছি, বোঝাতে চেয়েছি। তুমি কত অল্পতেই বলে ফেললে।