আব্বা আব্বা ও আব্বা উঠেন, উঠেন না আব্বা এই ভাবে কেন আপনি শুয়ে আছেন ও আব্বা উঠেন না, উঠছেন না কেনো, এই তোমরা সবাই মিলে বলনা আব্বাকে উঠতে, ও আব্বা ও আব্বা কেন ঠাট্টা করছেন আপনি এমন কেন করছেন উঠে পড়েন। আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলনা আমার আব্বা আর নেই যেন উনি ইচ্ছে করেই আমাকে জ্বালাতন করছেন আমি বারবার আমার আব্বার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাচ্ছিলাম কিন্তু অনেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল যেন আব্বাকে আমি ছুঁতে না পারি কারণ তার আগের রাতে আব্বা অসুস্থ হয়ে ক্লিনিকে আছেন শুনে সিলেট থেকে গাড়ী নিয়ে রওনা হয়ে পরের দুপুর ৩ টায় চট্টগ্রাম পোঁছেছি (১৯৯০ তে তখন রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল) আর এরি মধ্যে আব্বার ২য় জানাজা শেষে কবরস্তানে আব্বাকে নিয়ে এসে আমার জন্য অপেক্ষায় ছিল সবাই, আমাকে পেয়ে ছোট তিন ভাই জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর আমি অবাক হচ্ছি কেন এমন হচ্ছে আমাদের সাথে। সবাই আমাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু আমরা কি আর সেইসব শুনি? এরি মধ্যে আমি সহ যারা জানাজা পাইনি তাদের জন্য আরেকবার জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হোল আর জানাজা শেষে সবাই মিলে দাফন করলো।
মাত্র ৪৫ বছর বয়সে আমার আব্বা ইন্তেকাল করেন চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবে যেখানে উনি প্রতিদিন ব্যাডমিন্টন খেলতেন আর ২ গেম খেলার পরে আগের রাত আনুমানিক ৮ টায় রেস্ট নেওয়ার সময় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এত অল্প বয়সে আমরা আব্বাকে হারাবো তা আমাদের কোন ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না যা আমাদের সবাইকে বিরাট ধাক্কা দেয়।
আব্বা আমাদের জন্য যেমন ছিল তা বলে শেষ করতে পারবোনা কারণ একদিকে কঠিন ও রাগি পিতা আর আরেক দিকে ছিলেন বন্ধুই, উনার রাগ দেখলে যেমন আমদের ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো তেমনি উনার বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার আমাদের জীবনে এনে দিত অনাবিল প্রশান্তি। আব্বা খুব খেলার পাগল ছিলো যেমন ফুটবল উনার খুব পছন্দের ছিল আর ম্যারাডোনা ছিল উনার ফ্যাবারিট প্লেয়ার আর পছন্দ ছিল ব্যাডমিন্টন ও ক্যারাম, উনি আমাদের সাথে এই দুইটি খেলা খেলতেন তাও বাজী ধরে আর বাজী হোত কোক, প্যাটিস, কেক এইসব, উনি আমাদের বাসার উঠানে শখ করে ব্যাডমিন্টন কোর্ট সিমেন্ট ঢালাই করে বানিয়ে ছিলেন আর পাড়ার বড় ছোট ভাইয়েরা সবাই আসতো সাথে আমার স্কুল বন্ধুরাও খেলার জন্য, আব্বার সবার কাছে প্রিয় চাচা ছিল যাকে তারা সবাই আজও পর্যন্ত কেউ ভুলতে পারেনা। আব্বার নিয়ম ছিল খেলতে হলে নিয়ম মোতাবেকই খেলতে হবে যেমন ছেলেরা সর্টস পড়তে হবে আর মেয়েদের ট্র্যাক সুট নইলে খেলতে পারবেনা আর কেউ নিয়ম না মেনে খেলতে আসে তাকে র্যাকেট দিয়ে দাবড়ানি দিতো।
আবার আব্বা ব্যাবসায়িক মহলেও খুব পপুলার ছিলেন, সবাই উনাকে খুব পছন্দ ও সমীহ করে চলত যে কারণে উনার অকাল মৃত্যুতে উনার খেলার সাথীরা ছোট বড়, ব্যাবসায়িক পরিচিত জনেরা সবাই বুক ফাটা কান্না কেঁদেছিল সেদিন আর আমরা উনাকে হারানোর বেধনা এখনো বয়ে বেড়াই যা আমাদের হৃদয়ে এক ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গেছে যা কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়।
রাব্বিরহাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।
আপনারা সবাই আমার আব্বার জন্য দোয়া করবেন যেন মহান রাব্বুল আলামীন আমার আব্বাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, আমীন।।
২৮টি মন্তব্য
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বাবারা হচ্ছেন বটবৃক্ষ। মাথার উপর ছায়া। বাবা হারানো মানে ছাতাহীন জীবন যাপন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি স্ত্রী-সন্তানদের রেখে পরপারে চলে গেছেন শুনে খারাপ লাগলো। বাবা ভালো থাকুক পরপারে। দোয়া রইলো।
ইনজা
ধন্যবাদ নিরন্তর।
ব্লগার সজীব
এত অল্প বয়েসে উনি পরলোকে গমন করেছেন ভাবতেই কষ্ট লাগে। বাবার অভাব কোনকিছুতেই পূর্ন হয়না। আল্লাহ্ আপনার আব্বাকে বেহেশত নসীব করুক।
ইনজা
আমীন।
ইলিয়াস মাসুদ
আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্বল শব্দ “বাবা”, অনেকেই বাবাকে নিয়ে লিখতে পারে বলতে পাড়ে, আমি এমন হতভাগ্য যে সেটাও পারিনা, আপনার বাবার লিখাটা আমার সামনে নিয়ে এসেছে আমার বাবা কে…..
উনাদের আল্লাহ যেন বেহেস্তের সর্ব উচ্চে অধিষ্ঠিত করেন, আমিন
ইনজা
আল্লাহুমা আমীন
খসড়া
ভাল থাকুন বাবারা যেখানেই থাকুন।
ইনজা
ধন্যবাদ অক্লান্ত
সালমা আক্তার মনি
রাব্বি হাম হুমা কামা রাব্বি ইয়ানি সাগীরা।
আল্লাহ আপনার আব্বাকে বেহেস্ত নসীব করুন।
ইনজা ভাইয়া আমি আপনার থেকেও দূর্ভাগা আমার মা যখন চলে গেলেন তখন মা আমার মাত্র 41বছর বয়স। আমি ম্যাট্রিকের প্রিটেষ্ট পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরতার আশ্রয় হারালাম আমি।
ঠিক আড়াই বছর পর আমার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ঠিক আগে মাত্র 46 বছর বয়সে বাবাও চলে গেলেন। আমার বটবৃক্ষও চলে গেলেন।
জীবন কি বিচিত্র দেখেন তবু থেমে নেই। কি লিখবো বলেন।
শুধু এটুকু বলতে পারি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক তাঁরা।
ইনজা
খুব ব্যথিত হলাম আপনার এই দুঃখজনক অধ্যায়ের, এই মূহুর্তেতে কিভাবে আপনাকে সান্ত্বনা দেবো তার ভাষাও আমি হারিয়ে ফেলেছি শুধু বলি আসুন আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে প্রতিদিন উনাদের জন্য দোয়া করি
রাব্বি হাম হুমা কামা রাব্বি ইয়ানি সাগিরা
আর আল্লাহকে বলি হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের মাতা পিতাদের জান্নাতুল ফেরদৌস দান কর, আমীন
জিসান শা ইকরাম
আব্বা নেই, তাই বুঝতে পারি কতটা জুড়ে ছিলেন তিনি আমার মাঝে।
আল্লাহ্ আপনার আব্বাকে বেহেশত নসীব করুন_____ আমীন।
ইনজা
আমীন।
নীলাঞ্জনা নীলা
বাবা ভালো থাকুন ওপারে।
ইনজা
আমীন।
মেহেরী তাজ
সৃষ্টিকর্তা উনাকে ভালো রাখুক….
ইনজা
আমীন
লীলাবতী
রাব্বিরহাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।
ভাইয়া মন খারাপ রাখবেন না, আল্লাহ্ আপনার বাবাকে নিশ্চয়ই ভাল রাখবেন।
ইনজা
আপনার দোয়া কবুল হোক রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপু।
স্বপ্ন
খারাপ লাগছে আপনার বাবা ইন্তেকাল করেছেন এত অল্প বয়েসে জেনে। আল্লাহ্ ওনাকে শান্তিতে রাখবেন ভাইয়া।
ইনজা
দোয়া করবেন।
অনিকেত নন্দিনী
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আপনার বাবার আত্মা শান্তি পাক।
এখন সময়টাই এমন দাঁড়িয়েছে যে আমরা ভুলে যাই সব। ভুলে যাই ছোটবেলায় কতোটা অসহায় ছিলাম, কতোটা আদরযত্নে এতো বড় হয়েছি, ভুলে যাই নিজের ন্যূনতম সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে কারা আমাদের এতো আদর করে পেলেছে। 🙁
ইনজা
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
রাব্বি হাম হুমা কামা রাব্বি ইয়ানি সাগীরা।
আল্লাহ সব বাবাকে বেহেস্ত নসীব করুন। আমিন।
ইনজা
সুম্মা আমীন
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
রাব্বিরহাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।আপনার আব্বা সহ সকলের বাবা মা কবরে শান্তিতে থাকুক এই দোয়াই করছি।
ইনজা
আমীন
মৌনতা রিতু
বাবা ভাল থাকুন।
বাবার কথাগুলো মেনে চলুন। এই কামনা।
ইনজা
বাবা ভালো থাকুন অন্য লোকে।