আব্বা

ইঞ্জা ১৫ মে ২০১৬, রবিবার, ০৫:২০:০১অপরাহ্ন বিবিধ ২৮ মন্তব্য

আব্বা আব্বা ও আব্বা উঠেন, উঠেন না আব্বা এই ভাবে কেন আপনি শুয়ে আছেন ও আব্বা উঠেন না, উঠছেন না কেনো, এই তোমরা সবাই মিলে বলনা আব্বাকে উঠতে, ও আব্বা ও আব্বা কেন ঠাট্টা করছেন আপনি এমন কেন করছেন উঠে পড়েন। আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলনা আমার আব্বা আর নেই যেন উনি ইচ্ছে করেই আমাকে জ্বালাতন করছেন আমি বারবার আমার আব্বার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাচ্ছিলাম কিন্তু অনেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল  যেন আব্বাকে আমি ছুঁতে না পারি কারণ তার আগের রাতে আব্বা অসুস্থ হয়ে ক্লিনিকে আছেন শুনে সিলেট থেকে গাড়ী নিয়ে রওনা হয়ে পরের দুপুর ৩ টায় চট্টগ্রাম পোঁছেছি (১৯৯০ তে তখন রাস্তা ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল) আর এরি মধ্যে আব্বার ২য় জানাজা শেষে কবরস্তানে আব্বাকে নিয়ে এসে আমার জন্য অপেক্ষায় ছিল সবাই, আমাকে পেয়ে ছোট তিন ভাই জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর আমি অবাক হচ্ছি কেন এমন হচ্ছে আমাদের সাথে। সবাই আমাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু আমরা কি আর সেইসব শুনি? এরি মধ্যে আমি সহ যারা জানাজা পাইনি তাদের জন্য আরেকবার জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হোল আর জানাজা শেষে সবাই মিলে দাফন করলো।

মাত্র ৪৫ বছর বয়সে আমার আব্বা ইন্তেকাল করেন চট্টগ্রাম রাইফেলস ক্লাবে যেখানে উনি প্রতিদিন ব্যাডমিন্টন খেলতেন আর ২ গেম খেলার পরে আগের রাত আনুমানিক ৮ টায় রেস্ট নেওয়ার সময় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এত অল্প বয়সে আমরা আব্বাকে হারাবো তা আমাদের কোন ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না যা আমাদের সবাইকে বিরাট ধাক্কা দেয়।

আব্বা আমাদের জন্য যেমন ছিল তা বলে শেষ করতে পারবোনা কারণ একদিকে কঠিন ও রাগি পিতা আর আরেক দিকে ছিলেন বন্ধুই, উনার রাগ দেখলে যেমন আমদের ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো তেমনি উনার বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার আমাদের জীবনে এনে দিত অনাবিল প্রশান্তি। আব্বা খুব খেলার পাগল ছিলো যেমন ফুটবল উনার খুব পছন্দের ছিল আর ম্যারাডোনা ছিল উনার ফ্যাবারিট প্লেয়ার আর পছন্দ ছিল ব্যাডমিন্টন ও ক্যারাম, উনি আমাদের সাথে এই দুইটি খেলা খেলতেন তাও বাজী ধরে আর বাজী হোত কোক, প্যাটিস, কেক এইসব, উনি আমাদের বাসার উঠানে শখ করে ব্যাডমিন্টন কোর্ট সিমেন্ট ঢালাই করে বানিয়ে ছিলেন আর পাড়ার বড় ছোট ভাইয়েরা সবাই আসতো সাথে আমার স্কুল বন্ধুরাও খেলার জন্য, আব্বার সবার কাছে প্রিয় চাচা ছিল যাকে তারা সবাই আজও পর্যন্ত কেউ ভুলতে পারেনা। আব্বার নিয়ম ছিল খেলতে হলে নিয়ম মোতাবেকই খেলতে হবে যেমন ছেলেরা সর্টস পড়তে হবে আর মেয়েদের ট্র্যাক সুট নইলে খেলতে পারবেনা আর কেউ নিয়ম না মেনে খেলতে আসে তাকে র‍্যাকেট দিয়ে দাবড়ানি দিতো।

আবার আব্বা ব্যাবসায়িক মহলেও খুব পপুলার ছিলেন, সবাই উনাকে খুব পছন্দ ও সমীহ করে চলত যে কারণে উনার অকাল মৃত্যুতে উনার খেলার সাথীরা ছোট বড়, ব্যাবসায়িক পরিচিত জনেরা সবাই বুক ফাটা কান্না কেঁদেছিল সেদিন আর আমরা উনাকে হারানোর বেধনা এখনো বয়ে বেড়াই যা আমাদের হৃদয়ে এক ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গেছে যা কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়।

রাব্বিরহাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।

আপনারা সবাই আমার আব্বার জন্য দোয়া করবেন যেন মহান রাব্বুল আলামীন আমার আব্বাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন, আমীন।।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ