75452
মানুষের কত ইতিহাস যে চাঁপা পরে থাকে। প্রকাশ না হলে তা কেউ জানতেই পারেনা। প্রায় সবারই কিছু ইতিহাস আছে যা অপ্রকাশিত। সাহসের অভাবে বা সুযোগের অভাবে তা প্রকাশ করতে পারেন না অনেকেই। আমার সাহস আছে প্রকাশ করার 🙂 সুযোগ করে দিয়েছে সোনেলা 🙂 সাহস এবং সুযোগ দুটোই যখন আছে তখন কেন প্রকাশ করবো না আমি?

ক্লাস সিক্স এ পড়ার সময়ে ঘটে গেলো আমার জীবনের একটি বড় দুর্ঘটনা। ছেলেদের আর মেয়েদের স্কুলের রাস্তা একটিই। উচ্চ ক্লাসে পড়ুয়া ছাত্রদের দেখতাম গার্লস স্কুলে পড়ুয়া বড় আপুদের দেখে সিটি বাজাতো মুখে। আপুরাও দেখতাম সিটি শুনে হেঁসে লুতুপুতু 🙂  কি যে ভাল লাগতো আমার এই সিটি বাজানো। আমারও ইচ্ছে হত সিটি বাজাই। মুখে এক আঙ্গুল ভাজ করে দিয়ে কত যে ফু ফু ট্রাই মেরেছি, কাজের কাজ কিছুই হতো না। মুখের লালায় আঙ্গুল ভিজে যেত শুধু। এরপর দু হাতের আঙ্গুল দিয়েও কত চেষ্টা করেছি। বাজাতে পারিনি সিটি।

প্রিয়ঙ্কার বাসা আমাদের বাসার তিন বাসা পরেই। এত সুন্দর লাগতো ওকে যেন পুতুল একটি। ক্লাস ফোরে পড়ত তখন প্রিয়ংকা। ইশ প্রিয়ংকার জন্য যদি একদিন সিটি বাজাতে পারতাম, ও হেঁসে দিত, আর আমার জীবন ধন্য হয়ে যেতো 🙂 একদিন স্কুলে যাচ্ছি, আমার একটু সামনেই প্রিয়ংকা। জানি সিটি বাজাতে পারবো না, তারপরেও আঙ্গুল ভাঁজ করে জিহ্বার নীচে নিয়ে দিলাম এক ফু। বিকট শব্দে সিটি বেজে উঠলো 🙂
155671987 []
চমকে তাকালো প্রিয়ংকা আমার দিকে, এবার নিশ্চয়ই হেঁসে দেবে 🙂 আমি দু-কদম লাফ দিয়ে ওর প্রায় কাছে  পৌঁছুলাম। প্রিয়ংকার পাশেই সিনিয়র এক আপু হাঁটছিলেন, ক্লাস টেন এর হবেন। প্রিয়ংকা হাসি তো দিলই না, ঐ আপুকে বললো , আপু আপনাকে সজু সিটি দিয়েছে। আপু থমকে দাঁড়ালেন, হাত দিয়ে ইশারা করাতে কাছে গেলাম। হঠাৎ আমার কানটা ধরে এমন মোচর দিয়ে বললেন, বেশী পাকনা হয়েছো না? আর যদি কোনোদিন সিটি বাজাও তোর কান ছিড়ে ফেলবো। কানের মোচড়ে আমি চোখে জোনাক দেখছিলাম তখন। নিষ্ঠুর প্রিয়ংকা হেসেছিল ঠিকই তবে আমার সিটি শুনে নয়, আমার কানে মোচড় দেখে  🙁
500_F_46874140_EdFDR0W9tzajHdelIPr45vLrwfZbAkSF
Royalty-Free Stock Imagery
আর কোনোদিন সিটি দেইনি আমি। আচ্ছা সিটি বাজালে কি হয়? ঐ আপু আমার সিটি শুনে আমার উপর রাগ করলেন কেন? বড় ভাইরা যখন সিটি বাজান তখন তো তিনি ঠিকই হাসেন। সিটির মধ্যে কি সুর আছে? যা আমি দিতে পারিনি? সিটিতে আনন্দ আর সিটিতে রাগ কেনো?
আমার বড় আপুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপু সিটি বাজালে কি হয়? আপুর উত্তর 'কি হবে আবার, কিছুই তো হয় না'। বাসায় আম্মু প্রেসার কুকারে রান্না করেন, মুরগীর মাংসে চার সিটি, গরুর মাংসে ছয় সিটি দরকার। রোজই তো প্রেসার কুকারে সিটি শুনি, কিছুই তো হয় না। '

কিছুই যখন হয়না, তাহলে আপু আমার কানে মোচড় দিলেন কেন?  ;(
ইচ্ছে থাকা সত্বেও আমার আর সিটি দেয়া হয়নি 🙁

হৃদয় ছেদারক এক

0 Shares

৭৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ