আমরা সবাই জাতীয় স্মৃতিসৌধকে দেখি,অনেকেই আছি যারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। আসুন জেনে নেই স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে কিছু তথ্য।

কেন এমন আকৃতি?
স্মৃতিসৌধের স্থপতির চমৎকার ব্যাখ্যা ‘চারদিকে প্রচণ্ড চাপ। সেই চাপে কিছু একটা উপরে উঠে যাচ্ছে।’

স্তম্ভের ব্যাখ্যাঃ
স্মৃতিসৌধের বেদীমূল থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সাতটি ত্রিকোণ কলাম। ম্তম্ভের সাতটি ত্রিকোন কলাম বিভিন্ন উচ্চতার কংক্রিটের স্ট্রাকচার। ইংরেজি এল আকৃতির স্তম্ভটি একেক পাশ থেকে এক একেক ধরনের দৃশ্যমান। আর এটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতির। সবচেয়ে বড় স্তম্ভটির সবচেয়ে ছোট বেজ, আর সবচেয়ে ছোট স্তম্ভটির সবচেয়ে বড় বেজ। একেবারে ছোট দেয়াল দিয়ে পরবর্তী ধাপের দেয়ালগুলো বেষ্টিত। মূল কলাম সাতটি কংক্রিটের ঢালাই। বাকি চত্বরের সকল নকশায় লাল ইটের ব্যবহার স্থাপনাটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করেছে।
কংক্রিটের সাতটি কলাম ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বড় বড় সাতটি আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের প্রতীক।
* একেবারে নিচের খাঁজটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রতীক
* তারপরের খাঁজটি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রতীক
* পরেরটি ১৯৫৮ সালের সামরিক আইউব বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক
* পরেরটি ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক
* পরেরটি ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের প্রতীক
* পরেরটি ১৯৬৯ সালের আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের প্রতীক
* একেবারে উঁচু খাঁজটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতীক।
সাতটি বড় আন্দোলনকে সাতটি খাঁজে অত্যন্ত নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সবচেয়ে উঁচু মিনারটি ৪৫ মিটার বা ১৫০ ফুট উঁচু এবং জাতীয় শহীদ সৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং মনোরম বাগান। সৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণ সমাধি।এর মোট আয়তন ৮৪ একর।

স্মৃতিসৌধ স্থাপনের ইতিহাস
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নতুন সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহন করে।
* ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
* ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ জাতীয় স্মৃতি সৌধ উদ্ভোধন করেন।

স্মৃতিসৌধ নিয়ে এক কান্নার ইতিহাস
স্মৃতিসৌধের নকশা প্রনয়ন করেন  একুশে পদক প্রাপ্ত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল ইসলাম স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭-১৮ জন প্রতিযোগীর ৫৭টি নকশার মধ্যে তাঁর প্রণীত নকশা গৃহীত হয় এবং তাঁর করা নকশা অনুসারেই ঢাকার অদূরে সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

১৯৮২ সালের জাতীয় স্মৃতি সৌধ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে এই স্থপতিকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি। তিনি নিজে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান দেখেছিলেন।
স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর কারা যেন বেনামি চিঠি দিয়ে তাঁকে খুন করতে চেয়েছিল। তারপর পত্রিকায় ইচ্ছা করে তার নাম ভুল লেখা হয়েছিল। নকশার সম্মানী বাবদ ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তার আয়কর ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ, মানে ১ লাখ। পরে রাজস্ব বোর্ডের কমিশনার ধরে-টরে ২০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছিলেন।

এরপর থেকেই তিনি অত্যন্ত ভীতু মানুষের মত জীবন যাপন শুরু করেন। ঢাকায় যে বাড়িতে তিনি থাকতেন, সে বাড়ীর তাঁর শয়ন কক্ষের দরজা জানালা বন্ধ করে মশারী টাঙ্গিয়ে এর মধ্যে বসে থাকতেন তিনি। বাড়ির বাইরে বের হতেননা, কোন অপরিচিত মানুষের সাথে দেখা এবং কথা বলতেন না।

২৩ বছর পুর্বে স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার। এক ছেলে এক মেয়ে বিদেশে থাকায় নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন তিনি। অত্যন্ত অবহেলা আর নিঃসঙ্গ অবস্থায় ১০ নভেম্বর ২০১৪ সনে ইন্তেকাল করেন।

তথ্য সুত্রঃ
এই লেখাটি লিখতে অনলাইনে   প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা , ব্লগসংবাদ মাধ্যমের   সহায়তা নেয়া হয়েছে।

বিজয়ের মাসে সবাইকে বিজয়ের লাল সবুজ শুভেচ্ছা

 

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ