এ সমাজে মুলতঃ ক্ষমতা হীন অর্থ সম্পদ হীন হয়ে জন্মাটাই হয়তো পাপ,যা জয়ের মনের মাঝে এ দেশ এ সমাজ সম্পর্কে তিক্ততাই বলে দেয়।rab পুলিশ স্টেসন থেকে চোখ বেধে কোথায় কি ভাবে নিয়ে গেলেন তা অনুমান করার দুঃসাধ্যও তার ছিলো না।পুলিশী নির্যাতনে তার দেহ অনেকটা অচেতন।বেশ কিছু ক্ষণ পর ধীরে ধীরে চোখ খুললেন জয়,,,,উভুর হয়ে পড়ে থাকা দেহের মাথাটা একটু উচু করলেন,তার কাছে সব কিছু কেমন যেন ঘণ অন্ধকার লাগছে।আঘাতে তাহলে চোখ কি তার নষ্ট হয়ে গেলো!অবাক বিষ্মিত সে এ কি ৭১ এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতার সেই দেশটিই নাকি এখনো পরাধীনতার শিকলে বন্দী আমরা!।ধীরে ধীরে অনেক কষ্টে ওয়াল ঘেষে দাড়ালেন।কিছু ক্ষণ চোখ বন্ধ খোলা খেলা খেলে বুঝতে পারলে না চোখ তার ঠিকই আছে তবে যে ঘরটায় তাকে রাখা হয়েছে সেই ঘরটাই ঘণ অন্ধকার।হতাশায় দেয়াল ঘেষে বসলেন,এ সময় তার মাকে বেশ মনে পড়ছে,তাছাড়া ঐ মা ছাড়াতো দুনিয়াতে তারতো আর কেউ নেই;না জানি অভাগী মা কেমন আছেন, কি করছেন।

পাখি ডাকা ভোরে ফুলী লোকাল সাংবাদিককে সাথে নিয়ে চলে গেলেন সেই থানায় যা রাতেই সাংবাদিক ফুলীকে জানিয়ে গিয়েছিলেন।শিশির ভেজাঁ শীতের ভোরে ফুলী কাপতে কাপতে থানায় পৌছলেন সঙ্গে ছেলের রাখা টাকাগুলো থেকে কিছু টাকা সঙ্গে আনতে ভুলেননি।ফুলী দুর থেকেই দেখছিলেন থানার ভিতরে কিছু একটা উৎসব হচ্ছে।কাছে যেতেই এক হাবিলদার পথরোধ করলেন।
-দাড়ান,এখন যেতে পারবেন না।ভিতরে দামী মেহমান আছে।
-ভাই আমার খুব দরকার দারোগা সাবের সাথে কথা বলতে হবে।
-যতো দরকার থাকুক এখন যাওয়া যাবে না.....।
ভিতরে প্রবেশে হাবিলদারদের সাথে এক প্রকার জোর যবদস্তি চলছে ফুলীর।তা থানা থেকে নজর কাড়ে দারোগার।হাবিলদারকে জোর শব্দে তাদের ভিতরে প্রবেশে অনুমতি দিলেন।থানার ভিতরে প্রবেশ করেন ফুলী ও সাংবাদিক।ভিতরে ঢুকেই নাক চেপে ধরেন ফুলী।আশে পাশে আরো কিছু কর্মকর্তা মদ পান করছেন নিশ্চিন্তে।সাংবাদিক সাহেবের সাথে থানার সকলের কম বেশ পরিচিত আছেন।তাদের একজন মদ্যপস্থায় তাকে ইশারা করলেন তার কাছে যেতে।সে তার কাছে যেতেই ফুলীকে নিয়ে একটি খারাপ উক্তি করলেন,যা সাংবাদিকের মনে বাধে।তবুও কিছুই বললেন না,নিজেকে ক্রোধকে সামলে সে পথ ঘুরিয়ে ফুলীকে নিয়ে সোজা দারোগার টেবিলে দারোগার সামনে।
-বসুন,,কি খবর সাংবাদিক!বহু দিন পর।
-জি স্যার ঐতো আপনে দোয়ায়;একটু ভেজাল ছিলো স্যার।
-ঠিক আছে বল।
সাংবাদিক ফুলীকে বলার জন্য ইশারা করলেন।কোমড় থেকে ফুলী সঙ্গে আনা টাকার থলেটা দারোগার টেবিলের উপরে রাখলেন।তারপর তার অভিযোগ পেস করলেন।
-স্যার,আমি আইছি আমার ছেলের লাইগা।আমার গ্রাম এ গ্রামেই।আর এ থলেটা আপনার জন্য।দারোগা তার হাতের লাঠি দিয়ে থলেটাকে খুচা দিলেন।
-ঠিক আছে কি বলতে এসেছেন তাই বলেন।
কথা শুরুর আগেই চোখের জলে কথা আকা বাকা আমতা আমতা করে কথা বলতে থাকলেন।কারন ফুলী জানে পুলিশে ছুইলেই আঠারো গা তার পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে বলে,মনে পড়ে যায় তাদেরকে কি ভাবে পোষ মানাতে হয়।
-স্যা..র আমার একমাত্র ছেলে সে,যাকে বুকে ধরে....., বুকে ধরে বেচে আছি।
-আহা আপনি এভাবে কাদবেননা,কাদবেনা...বুঝেছি,আপনি জয় নামের ছেলেটির কি হন?
-মা,,
-হুম মা...দেখুন দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সে এখন আর আমার এখানে নেই।
-স্যার দোহাই আল্লার,আমার ছেলে কোন দোষ করে নাই তাকে আপনি ফিরাইয়া দেন।এই যে এই এখানে পুরো বিশ হাজার টাকা আছে,লাগলে আরো দিমু।
-কি মুশকিল সাংবাদিক এ তুই কাকে আনলি।এই সাংবাদিক আমি কি ঘুষ খাই?বল আমি কি ঘুষ খাই।
-না মানে স্যার...
-না মানে কি আবার,আমার এখান থেকে এক্ষুণি বের হ' নতুবা একজন সৎ পুলিশ অফিরসারকে ঘুষ দেয়ার অপরাধে তোদেরকে মামলায় ঢুকাবো।
-স্যার স্যার একটু রহম করেন...আপনিওতো কারো না কারোর বাপ।আপনার ছেলেকে যদি খুজে না পেতেন আপনার কেমন লাগত।
জগতে খারাপ মানুষগুলোর সেন্টিম্যান্টাল বড় আজব হঠাৎ কখন মনে মানবতার বাসা বাধে তা বলা মুসকিল।তেমনি মৃত ছেলের কথা মনে করিয়ে ফুলী তার মানবতায় স্পর্শ করলেন।মধ্য রাতে জয়ের ট্রান্সফায়ারের ফাইলটি খুলে দেখিয়ে সব সত্য বলে দিলেন দারোগা।মা ফুলী যেনো সেখানেই অজ্ঞান।সাংবাদিক ধরা ধরি করে তাকে একটি লম্বা টেবিলে শুয়াতে চাইলেও ফুলীর দৃঢ় মনোবলে সাংবাদিককে বাধা দিয়ে পেছন ফিরে থানা ত্যাগ করার মনঃস্থির করলেন।সে সময় দারোগা টাকার থলেটি নিয়ে যেতে বললেন।
-শুনেন যা হবারতো হয়েছেই যদি আপনার ছেলেকে জীবিত ফেরত পেতে চান তবে আমার মনে হয় এক্ষুনিই শহরের  র্য্যাব অফিসে চলে যান।তারপরও কিছু কাজ হবে কিনা জানি না তবে চেষ্টা করে দেখেন.....আর এই টাকার থলেটা নিয়ে যান ওখানে কাজে লাগবে।
ফুলী চলে গেলেন দারোগার পি এ দারোগার হঠাৎ এমন কান্ড দেখে অবাক হলেন।
-স্যার আপনি করলেন কি?এতোগুলো টাকা ফেরত দিয়ে দিলেন।
-তুমি সেটা বুঝো না বলেইতো এতো বছর চাকুরী করেও তোমার প্রমশন  হয় না।এটাও আমার আমিকে বাচানোর কৌশল।

RAB অফিসের কর্মকর্তা মাইদুল হক সহ আরো অনেক ব্যাস্ততায় কাটাচ্ছেন তাদের কর্ম ব্যাস্ততার প্রতিটি দিন।কখনো এখানে কখনো ওখানে জঙ্গি নির্মূলের অভিযান যেন এখন নিত্য নিয়ম হয়ে গেছে।এর সাথে বাড়ছে গুম হত্যার অভিযোগ।তেমনি একটি গুম অভিযোগ ফরহাদ মাজহার মাত্র ১৯ ঘন্টা পর চমৎকার তথ্য নিয়ে বেরিয়ে আসে এর মুল রহস্য।সারা রাত রামায়ণ পড়লাম সকালে বললাম সীতা কার বাপ।এত ক্ষণ যাকে সরকারদলীয় গুমের অভিযোগে সারা দেশ তোলপার সেই গুম হয়ে স্রেফ স্ব-ইচ্ছায় জার্নি।এ সব ঘটনা নিয়ে দিন ভর টান টান উত্তেজনায় থাকেন প্রশাসনিক কর্ম কর্তারা ঠিক এই rab অফিসও এর ব্যাতিক্রম নয়।rab এর তেমনি একজন কর্ম কর্তা একটু স্বস্তি পেতে সম্মেলিত আলোচনা টেবিল হতে উঠে এসে বসলেন নিজের চেয়ারটিতে অতপরঃ চোখ পড়ে জয়ের সেই ডায়রীটি তার টেবিলর উপর।ডায়রীটি হাতে নিয়ে একের পর পৃষ্টা উল্টিয়ে পড়তে লাগলেন।লেখার কৌশলী ভাষা তাকে ডায়রীটি অনবরত পড়ে যেতে বাধ্য করল।ডায়রীর এক স্থানে এসে সে থেমে গেল।ফ্লাশ ব্যাক...

এ জেলায় একটি মাত্র কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়।এ বিদ্যালয়ের সে পর পর দুই বারের ভিপি।স্বামী হারা ফুলীর এক মাত্র সন্তান যে পৃথিবীতে আগমন করেও পিতৃ স্নেহতো দুরে থাক পিতার মুখটিও সে কখনো দেখেননি।অনেক বার জিজ্ঞাসা করায় একবার মা তাকে বারণ করেছেন,কখনো যেনো তার পিতার কোন বিষয়ে জানতে না চায় সে।সেই থেকে সীমাহীন কষ্টের মাঝে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছেন জীবনের দিকে.....।
চলবে... -{@

৩য় পর্ব গত

বিঃদ্রঃ এটা একটি কাল্পনিক গল্প মাত্র।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ