Oriental pied horn bill বা কাউ ধনেশ।

শামীম চৌধুরী ৩০ এপ্রিল ২০১৯, মঙ্গলবার, ০২:৪১:৫৩পূর্বাহ্ন ছবিব্লগ ১৮ মন্তব্য

কাও ধনেশ (Anthracoceros albirostris) (ইংরেজী: Oriental pied horn bil বা Indian Pied Hornbill), কাউ ধনেশ বা পাকড়া ধনেশ বিউসেরোটিড (Bucerotidae) পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত একটি মোটামুটি বৃহদাকার ধনেশ প্রজাতির পাখি। ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাংশ এবং দক্ষিন- ‍পূর্ব  এশিয়ার উত্তর-পূর্বাংশের বিভিন্ন দেশ কাও ধনেশের প্রধান আবাসস্থল।

বাংলাদেশ,ভারত(উত্তরপূর্বাঞ্চল),ভূটান, নেপাল,  মিয়ানমার, থাইলেন্ড , ইন্দোনেশিয়া,  মালয়েশিয়া, লাওস, ব্রুনাই,ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর এবং চীন (দক্ষিণাঞ্চল, মূলত ইউনান প্রদেশ) কাও ধনেশের প্রধান আবাসস্থল। এরা মূলত পাহাড়ী মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা।

কাও ধনেশের উপরের দিক চকচকে কালো রঙের, নিচের দিক সাদা। ডানার ওড়ার পালকের ডগা এবং লেজের বাইরের পালকের আগার দিক সাদা। গলায় পালকহীন নীল চামড়ার পট্টি থাকে। চোখের চারপাশে ও গলায় নীলাভ-সাদা চামড়া দেখা যায়। পা ও পায়ের পাতা স্লেট রঙের সবুজ। চোখের তারা লালচে। নিচের দিকে বাঁকানো বড় ঠোঁটের উপরের বর্ম মাথার পেছনের দিকে বেশি প্রলম্বিত কিন্তু সামনের দিকে একটু বাড়ানো ও এক ডগাযুক্ত। আপাতদৃষ্টিতে এদের ঠোঁট অনেক ভারি মনে হলেও আসলে বেশ হালকা, কারণ ঠোঁট আর বর্মের ভেতর আছে অনেক ফাঁপা প্রকোষ্ঠ। পুরুষ পাখির বর্মের সামনে-পেছনে কালো অংশ আছে, কিন্তু মূল ঠোঁটে কোন কালো অংশ নেই। স্ত্রী ধনেশ যে কেবল আকারে ছোট তাই নয় তাদের বর্ম পর্যন্ত ছোট এবং এর ঠোঁটের উপর কালোর ছোপ বেশি আর নিচের ঠোঁটের গোড়ায় লালচে অংশ আছে। তাছাড়া এর চোখও বাদামী। কাও ধনেশ দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৯০ সেন্টিমিটার।

সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। কখনও সঙ্গে অপরিণত ছানাও থাকতে পারে। বনের বটজাতীয় গাছের যখন ফল পাকে, তখন অন্য অনেক প্রজাতির পাখি ও স্তন্যপায়ীদের সাথে মিলে সে খাবারে হামলা চালায়। বনের ছোট বড় সকল নরম ফল খেতে পারদর্শী, সেই সাথে খেয়ে থাকে পাখির ছানা, ডিম, ইঁদুর, ব্যাঙ, সরিসৃপ প্রভৃতি।

এদের বাসা বানানো থেকে শুরু করে প্রজনন ও ডিম পাড়ার পর বাচ্চাদের সংরক্ষন করার পদ্ধতি অন্য কোন পাখির সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় না।  এক জোড়া একই এলাকায় বছরের পর বছর থাকতে পছন্দ করে। বেশিরভাগ সময়ে একই মরা গাছের উপরের দিকের কান্ডে গর্ত করে বাসা বানায়। কোনো কোনো গাছে পর পর কয়েকটি গর্ত থাকতে পারে। স্ত্রী ধনেশ বাসায় ঢুকে নিজের বিষ্ঠা দিয়ে  বন্ধ করে দেয় বাসার প্রবেশ পথ। ডিম পাড়া থেকে বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত মা ধনেশ গর্তের বাসায় বন্দী থাকে। ছোট একটি ফুটো দিয়ে বাবা ধনেশ এই দীর্ঘ সময় স্ত্রী পাখির খাবারের জোগাড় করে। ব্যাপারটা খুবই বিস্ময়কর এবং একাজের জন্য অস্বাভাবিক ধৈর্যের প্রয়োজন পড়ে। ছানা ডিম ফুটে বের হওয়ার পর বাবা ধনেশ বাসার মুখ ভেঙে দেয়। তখন মা ও বাবা ধনেশ পাখি সম্মলিত ভাবে বাচ্চাদের খাবার দেয়। পালাক্রমের বাচ্চাদের খাওয়াতে থাকে। বাচ্চাদেরও খাবার গাছের বটফল। বাবা ওমা পাখি মুখে করে বেশ কয়েকটি বটফল নিয়ে আসে। পরে তা একে একে বের করে বাচ্চাদের মুখের ভিতর ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার দেয়।

বিভিন্ন দেশে বন ধ্বংস এবং বন এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায় কর্তৃক এদেরকে ধরে খাওয়া, হাতুড়ে চিকিৎসায় ও গৃহপালন বা চিড়িয়াখানায় সংগ্রহের কারণে এদের সংখ্যা অতি দ্রুত কমে আসছে।চিড়িয়াখানায় এদের বংশবিস্তারের প্রচেষ্টা কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে ধনেশ পাখির তেল বিক্রির নামে কাও ধনেশ ব্যাপক হারে মারা হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতারা ধনেশ পাখির তেল মনে করে পোড়া মবিল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এক্ষেত্রে ধনেশ পাখি মারা হয় কেবলমাত্র তেলের বিজ্ঞাপনের জন্য।

এসমস্ত স্বার্থন্বেষী ও লোভী মহলের জন্য আজ প্রকৃতির অলংকার এই ধনেশ পাখি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজেশে এই ভন্ড কবিরাজরা এদের শিকার করছে। একটি ধনেশ পাখির মাথা বিক্রি হয় ৫০০ টাকা। তাও আবার প্রকাশ্যে বান্দরবনে দূর্গম পাহাড়ি এলাকায়। স্থানীয় সচতেন জনগন যদি নিজ উদ্দ্যোগে অপরাধীদের দমন না করতে পারে তবে একদিন এই সুন্দর পাখিটি আমাদের দেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

তাই আসুন, আমরা আমাদের পাশের জনকে সাথে নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যবর্ধক এই ধনেশ পাখিকে  রক্ষা করি শুধু মাত্র আমাদের সচেতনতা দিয়ে। মনে রাখবেন পাখি বাঁচলে বন বাঁচবে। আর বনকে বাঁচাতে পারলে আমরা বাঁচবো। না হলে অক্সিজেনের অভাবে মানব জাতিই হুমকির মুখে পড়বে কোন একদিন।

সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সোনেলার সাথে থাকবেন।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ