ইংরেজী নামঃ Large-tailed Nightjar.

বৈজ্ঞানিক নামঃCaprimulgus macrurus

বাংলা নামঃ রাতচরা/দিনকানা।

আকার ও আকৃতিঃ আকারে কাকের মত; ৩৩সেঃ; সারা দেহে কালচে বাদামী নকশা। বসে থাকলে ডানায় তিন সারি বাদামী লাইন দেখা যায়। লম্বা ও প্রশস্ত লেজ। গলায় চওড়া সাদা ফিতা। ঘাড়ে লালচে রং। পুরুষের লেজের প্রান্তে সাদাটে  এবং ডানায় স্পষ্ট সাদা পট্টি।

প্রজাতিঃ এটা ছাড়াও আরো ৪ প্রজাতের রাতচরা বা দিনকানা পাখি আমাদের দেশে দেখা মেলে। (১) Great-Eared Nightjar.বড়-কানচরা (২) Grey-Nightjar. মেটে-রাতচরা (৩) Indian --Nightjar. দেশী-রাতচরা  (৪) Savanna Nightjar. মেঠো-রাতচরা।

প্রাপ্তি স্থানঃ এটি দক্ষিণ হিমালয়ের পাখি, পূর্ব দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়া বরাবর পাওয়া যায়। এই প্রজাতিগুলি অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভুটান, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরে, থাইল্যান্ড, টিমোর-লেস্টে এবং ভিয়েতনামের অধিবাসী।

খাদ্যঃ পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ বিটোলস ও মথ।

বাসা ও প্রজননের সময় কালঃ ফেব্রুয়ারী থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত।

বর্ণনাঃ এরা হচ্ছে প্রকৃতির camouflage বা ছদ্মবেশী। যারা এই পাখির ছবি তুলেছেন তারা বুঝতে পারবেন কতটুকু ছদ্মবেশ ধারন করে তারা প্রকৃতির সাথে বাস করে। ধরুন আপনি অন্য কোন পাখির ছবি তুলতে গেলেন। বনে বা জঙ্গলে হাঁটছেন বাঁশ ঝাড়ের ভিতর দিয়ে। দেখা গেল আপনার পায়ের সামনে পড়ে থাকা শুকনো পাতা থেকে কি যেন ফুরুৎ করে উড়ে গিয়ে সামনের ডালে বসেছে। তখন দৃষ্টি দিয়েও তাকে খুঁজে পাবেন না। এমনভাবে গাছের ডালে বা বাঁশের কঞ্চিতে বসে থাকে শরীর মিশিয়ে ভাববেন কোন একটা উইপোঁকার ঢিবি লেগে আছে গাছের ডালে।
এরা দিনের বেলায় চোখে কম দেখে বলে আঞ্চলিক ভাষায় দিনকানা নামেও পরিচিত। দিনের বেলায় মাটিতে শুকনা পাতায় থাকে বা বাঁশ ঝাড়ে বাঁশের কঞ্চিতে দেহ লাগিয়ে শুয়ে থাকে। রাতে তাদের চোখ এত জ্বল জ্বল করে মনে হবে কোন গাড়ীর হেডলাইট জ্বলছে। রাতেই এরা চলাফেরা করে ও আহারের জন্য পুরো বন চষে বেড়ায়। মাটিতে গাছের ঝরে যাওয়া কিছু শুকনা পাতা একত্রিত করে বাসা বানায়। সেই বাসায় মেয়ে পাখি দুটি ডিম দেয়। পুরুষ ও মেয়ে পাখি পালা করে ডিমে তা’ দেয়ে। ১৭-২১ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফুঁটে বের হয়। তবে গুই সাপ,সাপ,বিড়াল ও কুকুর এদের বংশ বিস্তারের প্রধান বাঁধা। এরা ডিম খেয়ে ফেলে। এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সার্বক্ষনিক ডিমের উপর বসে থাকতে দেখা যায়। মানুষের পায়ের চাপেও অনেক সময় এদের ডিম ভেঙ্গে যায়। প্রকৃতির সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করেই এরা বেঁচে আছে।  এরা পরিযায়ী পাখি। তবে আমাদের দেশে যেগুলি দেখা যায় সেগুলি আমাদের আবাসিক বা দেশীয়। রাতে এরা জোরে জোরে “চৌঙ্ক-চৌঙ্ক-চৌঙ্ক করে ডাকে।

ছবিটি আমি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ব্যাসপুর গ্রাম থেকে ২০১৫ সালের মে’ মাসে ক্যামেরায় ধারন করি।

এই পাখি সহ দেশের সকল বন্যপ্রানী ও পাখি শিকার করা, মারা ও খাঁচায় পোষা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষন করা ও মুক্ত ভাবে প্রকৃতিতে বসবাস করা এদের অধিকার। সবাই ভালো থাকুন। প্রকৃতির সাথে থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ