স্বরণীয় বই মেলা ২০২১

মনির হোসেন মমি ৬ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ০৯:১৩:৪৭অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য


পুরো বিশ্বের মানব জাতিকে নাকানি চুবানি খাওয়ানো বহুরূপী করোনার কারনে এবারের একুশে বইমেলা  সকল জল্পনা কল্পনা শেষ করে শুরু হয় ১৮ মার্চ ২০২১।মেলা শুরু হলেও মেলার সেই চাঞ্চল্যতা ছিলো না।তবুও উৎসবহীন মেলায় যাবার শখ প্রতিবারের মতো এবারো ছিলো অন্তত পরিচিত লেখক প্রকাশকদের সাথে দেখাটাতো হবে।এমন ভাবনায় মেলায় যাবার দিনটি ছিলো শুক্রবার ২৬ মার্চ।পবিত্র জুম্মার নামাজ পড়ে আমার আইটি কলিগ লিমনকে সাথে নিয়ে গুলিস্থানে পৌছেঁ আতংকিত হলাম বায়তুল মোবারক মসজিদ হতে আসা মোল্লাদের মিছিলের উগ্রতা দেখে।

যতই বই মেলার দিকে এগুচ্ছি ততই যেন একটু একটু করে মন আতংকিত হচ্ছে।শহরের প্রতিটি দোকানপাট বন্ধ দেখতে পাচ্ছি তবে রিক্সায় যাতায়াতে তেমন ঝামেলা না হবার কারনে মেলায় গিয়ে পৌছতে পারলাম কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া।ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট দিয়ে ঢুকার প্লান আগে থেকেই ছিলো কিন্তু এমন একটি দিনে ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের গেইট সংলগ্ন স্থান ফাকা! লোকজনের বালাই নেই- তা ভাবতে অবাক লাগল!!।লোকে কোলাহলহীন ভীড়ের ঝামেলা না থকাটা দেহ মনে প্রশান্তি এলেও মেলায় এসেছি এই ইমেজটি মন থেকে উদাও হয়ে গেল।মেলার ভেতরে ঢুকে আরো অবাক হলাম-কই গেল এতো এতো লোকজন?এটা কী বই মেলা নাকি স্টলগুলোতে পসরা সাজিঁয়ে রাখা স্টল মেলা? বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেলায় লোকজন আসতে শুরু করলেও চোখে পড়ার মতন তেমন একটা ভীর নেই মেলায়। তাছাড়া এবারের বই মেলার সীমানাও বাড়ানো হয়েছিলো।যাতায়াতে ছিলো পর্যাপ্ত জায়গা।

ব্লগার মজিবর ভাইকে ফোন দিয়ে সাথে নিলাম-সাথে ছিলো সোনেলা ব্লগের এক সময়কার তুখোর ব্লগার মিথুন মিঠু।আমরা প্রথমে জলছবি প্রকাশন স্টলে গেলাম।শ্রদ্ধেয় গুরুজি জলছবি’র প্রকাশক নাসির আহমেদ কাবুল এবং জনপ্রিয় লেখক সঞ্জয় মুখার্জী দেখে কোশলাদি জিজ্ঞাসা করলাম।করোনা’র প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পূর্ব নির্ধারীত ইভেন্ট লেখক প্রকাশক আড্ডা স্থগিত করা হয়।স্টল থেকে সঞ্জয় মুখার্জীর বানান নিয়ে প্রকাশিত একটি বই নিলাম।

কী আর করা মেলায় যখন এসেই পড়েছি তখন একটু ঘুরে ঘুরে দেখি।তখনি মনে পড়ল আরে সোনেলা  ব্লগার সূরাইয়া নার্গীসতো আজ মেলায় জলতরঙ্গ স্টলে থাকার কথা।এখানে একটু না বললেই নয়।ব্লগার সূরাইয়া নার্গীস তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস “আমি তোমার জন্য এসেছি” মুলত তিনি বই আকারে প্রকাশ করেছেন সোনেলা ব্লগের ব্লগার এবং তার বন্ধু বান্ধব শুভাকাঙ্খিদের ইচ্ছের প্রতিফলন হিসেবে।সেই হিসাবে তার বইটি সংগ্রহ করা আমার নৈতীক দায়ীত্ব বলে মনে হল তাই জলতরঙ্গ স্টল নাম্বার তথ্য কেন্দ্র হতে সংগ্রহ করে চলে গেলাম স্টলে।

জলতরঙ্গ স্টলে বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ বসে থাকলেও সুরাইয়াকে প্রথম দেখে একটুও ভুল হয়নি তাকে খুজেঁ নেয়ার।সদা হাস্যোজ্জ্বল মিষ্টি ভাষি সুরাইয়া বোনটি এই ভাইটিকে চিনতেও তার বেগ পেতে হয়নি-ব্লগার মজিবর ভাইকে সুরাইয়া আপু হয়তো চিনতে পারেনি তাই তার সাথে তার তেমন কথা হয়নি।যাই হোক বেশ তাড়া ছিলো বলে “আমি তোমার জন্য এসেছি” রোমান্টিক ধাঁচের বইটি সংগ্রহ করলাম সাথে অটোগ্রাফ এবং ফটোসুট করলাম।আমরা আশা করছি সে যেন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসাবে গড়ে উঠেন।

এরপর উর্কিঁ দিলাম প্রিয় ব্লগার প্রকাশক সাহিত্যিক সমাজকর্মী নীলসাধু’র এক রঙা এক ঘুরি’র স্টলে।না পরিচিত কেউ নেই।স্টলের সামনে কাউকে দেখতে না পেরে চলে গেলাম লিটল ম্যাগ চত্বরে।সেখানকার মেলার পরিবেশ আরো নাজুঁক।সেখানে দলবেধে বসে ছিলেন কথা সাহিত্যিক ব্লগার “হরিবোল”চলচ্চিত্রের রূপকার রেজা ঘটকে।তার সাথে দেখা করলাম।দেখা মাত্র হাস্যোজ্জ্বল মুখে কিছু কথা বিনিময় হল।

আবারো মুল মেলায় আসার পথে ভাগ্যক্রমে দেখা হলো  জনপ্রিয় ব্লগার সাহিত্যিক,প্রকাশিত অসংখ্য বইয়ের লেখক,বেশ কয়েকটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিনেষ সম্পাদক জায়েদ হোসাইন লাকী ভাইয়ের সাথে।আমাকে দেখেই আপণ মনে বরণ করে নিলেন।কথা হল অনেক কিছু; অবশেষে  বহুল আলোচিত প্রকাশিত তার কাব্যগ্রন্থ “মন মহুয়া” আমাকে গিফট হিসাবে দিয়ে বাধিত করলেন।মহৎ মহান মানুষের গুণাবলী যা থাকা দরকার তার সবটাই তার ভেতরে আছে।মন মহুয়া”বইটি হাতে নিয়ে ফটোসুট করলেন প্রিয় লাকী ভাই সহ তার সহ লেখকরা।ধন্যবাদ প্রিয় লাকী ভাই।

হাটার এক পর্যায়ে এখন কী করা যায় ভাবছি আবার গতবার ২০২০ এর সোনেলা ব্লগের মিলন মেলার স্মৃতিও বলে যাচ্ছি।গতবারে মেলাটা ছিলো আমরা যারা সোনেলা ব্লগের ব্লগার তাদের জন্য স্বরণীয়।আজও সেই আলোচনার এক পর্যায়ে মজিবর ভাই যে খবরটি জানালেন তা শুনার জন্য বিশ্বাস করেন আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

করোনার প্রথম ধাপ হতেই আমার কর্মময় জীবনে অনেক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায় যা এখনো অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও আজকাল আগের মত আর অনলাইন ব্লগ কিংবা ফেবুকে চব্বিশ ঘন্টা থাকাটা হয়ে উঠে না সেই কারনে মজিবর ভাইয়ের খবরটিও অজানা ছিলো।ফেবুক খুলে দেখে সত্যতা জেনে চোখে জল এসে গেল। আহারে মানুষ মৃত্যুর কাছে কতটাই না অসহায়।এটাই হয়তো মানব জীবনের চির সত্য অধ্যায়।

যে দেশটিকে ভালবেসে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ পেয়েছিলাম স্বাধীন একটি মানচিত্র সেই দেশটিতে কালের স্বাক্ষী হয়ে মরতে মরতে বেচে যাওয়া কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধারা বেচে ছিলেন অবশেষে; একান্তই ইচ্ছের বিরুদ্ধে।এরই মধ্যে কিছু মুক্তিযুদ্ধা অযত্নে অবহেলায় দেশ ছেড়েছেন, কেউ বা কোম মতে দেশে বেচে আছেন, দেশে রাজাকারের ক্ষমতার দৌড়াত্বা,বঙ্গবন্ধু সহ মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান অপদস্ত পরিস্থিতি দেখে কিছু মুক্তিযোদ্ধা ধুকে ধুকে এখনো বেচে আছেন বা ছিলেন।তাদের একজন রাজাকারের জম অন্যায়ে প্রতিবাদী,দেশ প্রেমী বীর মুক্তিযুদ্ধা শামসুল আলম এফ এফ।আমাদের প্রিয় ব্লগার জিসান ভাইজানের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম এফ এফ। ভাইজানের মৃত্যুর খবর দেখে অনেকটা চুপ হয়ে গেলাম।মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক মনে মেনে নিয়ে ভাবলাম এমন সু-মৃত্যু ক’জনার হতে পারে!কারন দিনটি ছিলো ২৬ মার্চ। দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন।যে দিনটির বিভীষিকাকে মনে আকঁড়ে ধরে প্রানের মায়া ত্যাগ করে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন যে বীর মুক্তিযুদ্ধা  তেমনি এক ঐতিহাসিক দিনে মৃত্যু তার মত ভাগ্যবান আর কে বা আছেন।

ফেবুকের কল্যায়ণে তার সাথে আমার বেশ সখ্যতা ছিলো।সখ্যতার মুল কেন্দ্র বিন্দু ছিলো সোনেলা ব্লগের খুটিনাটি বিষয়াদি।একবার এক ঝড়ে সোনেলা যখন অনেকটা বিপর্যস্ত তখন সে আমাকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন
-জীবন চলার পথে ঝড় আসবেই আর এ সব ঝড়ে সাহসীকতায় মোবাবেলা করাই একজন বীরের ধর্ম।তোমরা জয়ী হবে নিশ্চয়।
হয়েছিলাম তাই।ঝড় মোকাবেলায় সোনেলা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক উচুমাত্রায় পৌছে গেছে।আফসোস শুধু তিনি নেই-তার লেখা আর আমরা পড়তে পারবনা।

স্যালুট জানাই হে বীর মুক্তিযোদ্ধা।পরপারে ভাল থাকুন শান্তিতে থাকুন।তবে আমরা সোনেলা ব্লগের ব্লগাররা হারালাম একজন অবিভাবক,দেশ হারালো তার একজন খাটি দেশপ্রেমিক।

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।মেলা চত্বরে আর থাকতে ভাল লাগছিলো না।বিদায় নিলাম মজিবর ও মিঠু ভাইয়ের নিকট হতে।দোয়েল চত্বর থেকে রিক্সা নিয়ে সোজা চলে এলাম গুলিস্থান।বাড়ী ফেরা লোকে লোকারন্য দেখে অবস্থা আচ করতে পারলাম।হয়তো আজ বাড়ী ফেরাটা আমাদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যাবে।তখন রাত্র সাড়ে আটটা।গুলিস্থান মোড়ে অপেক্ষারত বাড়ী ফেরা শত শত লোকের মাঝে একটি গাড়ীও নেই যে উঠে বাসায় যাব।হঠাৎ হঠাৎ দুএকটা গাড়ী এলেও ভীড়ের ঠেলায় উঠা দায় হয়ে গেল।যাই হোক অনেক কষ্টে দীর্ঘ সময়ে অবশেষে সহি সালামতে বাড়ী ফিরতে পেরেছিলাম।

এবারের বই মেলা স্বরণীয় হয়ে রইল।পরিচিত আরো কিছু প্রকাশিত বই সংগ্রহের ইচ্ছে থাকলেও মন ভাল ছিলো না বলে সব ভুলে মেলা হতে প্রস্থান নেই।

সবাই ভাল থাকুম।সুস্থ থাকুন।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ