আমার কম্পিউটারে ফিফা নামের একটা গেম ইন্সটল করা আছে। আমি যথেষ্ঠ অবাক এবং বিস্মিত হয়েই গেমটা খেলি। গেমের প্রতিটা খেলোয়াড়ের মুভমেন্ট, তাদের মুখভঙ্গি, সিআর সেভেনের ফ্রি-কিক নেবার সময় পা ছড়িয়ে দাঁড়ানো, মেসি চিকি শট  সব হুবহু তুলে ধরা হয়েছে।

 

আমি ভাবি, কেমন করে সম্ভব এত কিছু করা? গোল দিলে উল্লাস করবে, গোল মিস হলে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়বে-প্রতিটা জিনিস এত নিখুঁত করে প্রোগ্রাম করা সম্ভব হলো কিভাবে?

 

আমার মনে হতে থাকে সমরেশ মজুমদারের কথাই ঠিক। তিনি বলেছিলেন, “মানুষই সবচেয়ে বড় কারিগর। মানুষের চেয়ে বড় কারিগর হয়ত ঈশ্বরও নন।”

 

আমি মানুষের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। প্রবল স্রোতের শক্তি থেকে বিদ্যুৎ মানুষই বের করে এনেছে। অক্সিজেনহীন জায়গায় কিভাবে যেতে সেটাও মানুষ জেনে ফেলেছে। বিগ ব্যাং থেকে শুরু করে বিগ ক্রাঞ্চের অন্ত পর্যন্ত কিছুই মানুষের অজানা নয়।

 

প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগে যখন কোনো এলাকার মানুষের জীবন এলোমেলো হয়ে যায় তখন মানুষই জেট বিমানে করে ত্রাণ নিয়ে যায়।

 

আমি মানুষের ক্ষমতা দেখে বিস্মিত এবং সৃষ্টিকর্তার নির্লিপ্ততায় হলাম বিরক্ত।

 

ঈশ্বর অনেক ক্ষেত্রেই নিরব দর্শক হয়েই থাকেন- এই অনুসিদ্ধান্ত আমার মনে পুরোপুরি ভিত্তি স্থাপন করে ফেলল।

 

আমি আমার ভিত্তিতে বড় রকমের ধাক্কা খেলাম উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের বই পড়তে গিয়ে।

 

পদার্থবিজ্ঞানে একটা ব্যাপার আছে- কোন একটা বস্তুকে যদি আমি উঁচু কোনো স্থান থেকে ফেলে দেই, প্রতি সেকেন্ডে এর বেগ সময়ের সাথে সমানুপাতে বৃদ্ধি পাবে। মানে বস্তুটা যতটুকু সম্ভব তার সর্বোচ্চ বেগেই মাটিতে হিট করবে। এতে সন্দেহের কিছু নাই। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও’র এই তত্ত্ব আরেক মহামতি স্যার নিউটন গিনি পালক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করে গেছেন।

 

তাহলে যখন বৃষ্টি পড়ে, সে তার পুরো বেগ নিয়েই নীচে পড়তে থাকবে। বস্তু যতই ছোটো হোক না কেন, তার গতি অনেক বেশি হলে সেটা অনেক মজবুত জিনিসকেও ছিন্ন করে দিতে পারে। যেমন বুলেট।

 

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, বৃষ্টিও যেহেতু সর্বোচ্চ গতিতেই নীচে পড়ে, তাহলে আমাদের টিনের চাল ফুটো হয়ে যাচ্ছে না কেন? আচ্ছা, ফুটো না হোক, অন্তত ফুটোর দাগ তো হয়ে যাবে। আমাদের ছাতা কেন ছিদ্র হয়ে যায় না? বৃষ্টিতে ভিজে যখন জাম্বুরা দিয়ে পিচ্চিরা ফুটবল খেলে,কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখবেন, বৃষ্টি ওদের শরীরে পরার পর ওরা ব্যাথা পাচ্ছে কিনা! হিসেব মতে ব্যাথা পাবার কথা, ব্যাথা কিন্তু পায় না। গাছের পাতারাও অক্ষত থাকে।

 

তাহলে গন্ডগোলটা কোথায়? বৃষ্টি কি প্রকৃতির নিয়ম ভেঙ্গেচুরে দিচ্ছে? গ্যালিলিও আর নিউটন কি এখানে ঘোল খেয়ে গেলেন ?

 

এখানে যে ব্যাপারটা কাজ করে সেটা হচ্ছে সান্দ্রতা। তরল আর বায়ুর একটা কমন প্রোপার্টিজ আছে- এদের বেগ বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রকম । মানে সব স্থানে এরা সমান  তালে প্রবাহিত হয় না।

 

বায়ুমন্ডলে যখন বৃষ্টি অতিক্রম করে তখন তাকে সব স্তরে পার হয়েই নিচে নামতে হয়। এই সময়টাতে বায়ুর স্তরের সাথে বৃষ্টির পানির ঘর্ষণে তাদের বেগ কমতে থাকে। মেঘ থেকে বৃষ্টির পানি রিলিজ হওয়ার সময় বেগ থাকে মাটিতে পড়ার সময় তাঁর সিকি ভাগ বজায় থাকে।

 

কাজেই আমাদের ব্যাথাও লাগে না, গাছের পাতার ও ঠিক থাকে।

 

আমি ভাবলাম , এত সূক্ষ্ম প্লান কি এমনিতেই হওয়া সম্ভব? ধরেই যদি নেই বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্ব তৈরী। তবুও কি ‘কেউ একজন’ ছাড়া এত নিখুঁত মডেল সম্ভব?

 

আমরা পৃথিবীতে আসার অনেক আগে থেকেই গাছেরা ছিলো।  গাছে ফলও হইত, হইত না? তার মানে নিশ্চয়ই কেউ একজন জানতেন পৃথিবীতে এমন কোনো কিছু যাবে যারা গাছের উপর নির্ভর করেই বাঁচবে।

 

প্রাণিকুলের সবাই কিন্তু গাছের উপর বেস করেই বাঁচে।

তাহলে আগে সৃষ্টিকর্তাকে যতটা নির্লিপ্ত ভাবছিলাম আসলেই কি তিনি ততটা? চারপাশে এত জিনিস দেখার পরেও কি মনে হয় না, তিনিই সবচেয়ে বড় আর্কিটেক্ট? সব চেয়ে বড় কারিগর।  মনে হয় না, সূরা রহমানের সেই আয়াতটাই ঠিক- তুমি তোমার রবের কোন কোন দানকে অস্বীকার করবে?

 

পাদটীকা-

কবি এলেন গিন্সবার্গ বাংলাদেশে এসেছেন কবি সুনীল গাঙ্গুলীর সাথে। বাংলার এসেই তিনি প্রথম কলা খান। তিনি কলা ছিলে মুখে দিচ্ছেন এবং বলছেন- গড ইজ দ্য বেস্ট কুক। ঈশ্বরই সবচেয়ে উত্তম রাঁধুনী।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ