ঘুরাঘুরি আমার অনেক পছন্দের। নতুন নতুন মানুষ আর তাদের জীবন যাপন করার পদ্ধতি দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। আরেকটা গোপন ব্যাপার হলো জীবনে তেমন কিছু করিনি তাই ভাবলাম অল্প সল্প ভ্রমণ করি তাহলে বুড়ী বয়সে হালকা পাতলা স্মৃতিচারণ করতে পারবো।

অনেক সখের একটি জায়গা ভ্রমণ করেছি কিছুদিন আগে যেখানে সংগী ছিল আমার ৩ বছরের কন্যা। পতি-দেব খুলনা যাবে কাজে, রওনা দিবে ভোর ৬ টায় যখন রাত ৩ টা বাজে সাহস করে বলেই ফেললাম যে আমাদের কে নিয়ে গেলেই পারো, সেও রাজী হয়ে গেল। ফেসবুকে ভ্রমণের একটি গ্রুপের কল্যাণে খুলনার অনেক তথ্যও পেলাম, পৌছানোর অভিজ্ঞতা তো বিরাট ইতিহাস।

রাত ১ টা বাজে হোটেলে উঠলাম, সকালে মেয়ের বাবা কাজে চলে গেল, আর আমি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম খুলনা দেখতে, হঠাৎ মনে হলো মংলা যাই, যেই কথা সেই কাজ। বন্দরে যাওয়ার পরে সিকিউরিটি জানালেন কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেয়া হবে না। ওইদিন আবার ছিল বন্ধের দিন। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু হাল ছাড়লে কি হবে!!! লোককে অনেক বলে ভিতরে যাওয়ার পারমিশন নিলাম, ১০ মিনিট এর পারমিশন পেলাম। সেসময় দশ মিনিট আমার কাছে ১০ ঘন্টা। এত্ত বড় বিশাল জাহাজ মনে হয়েছে টাইটানিক এর চেয়ে ছোট ই হবে (এটা কিন্তু মজা করে বলেছি, এখানে হাসতে হবে)।জাহাজের লোকেরা বলেছিল ম্যাডাম ভিতরে চাইলে দেখতে পারেন ভয়ে যাইনি যদি ওরা আমাকে নিয়ে যায়!! এসব দেখতে দেখতে ১ মিনিট বেশি হয়েছিল শুধু সাথে সাথে ওরা ওদের গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে বের হওয়ার জন্য।

মংলা বন্দর দেখার পরে ভাবলাম আশেপাশে একটু দেখি, একজন লোককে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই আসেপাশে কি আছে দেখার মত, সে বললো সামনে ই সুন্দরবন এর পিকনিক স্পট। আমি তো খুশীতে অস্থির। কিন্তু কিভাবে যাব ভাবছিলাম আর মন খারাপ হচ্ছিল। কারণ ওখানে সবাই দল বেধে গিয়েছে আর আমি আমার মেয়ে সহ দেড় জন ছিলাম। মনটা খারাপ করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম তখনই ৪ টা ছেলে স্টুডেন্ট বোট ভাড়া করছিল, ওদের বললাম আমাকে সাথে নিবে ভাড়া শেয়ার করবো। ১ জন রাজি ছিল না কিন্তু বাকী ৩ জনের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত আমাকে নিয়েছে, ব্যাস রওনা দিয়ে দিলাম। ওরা আমার অনেক খেয়াল রেখেছে আর খুবই ভদ্র ব্যবহার ছিল ওদের। আমার জন্য ওরা অনেক ভাল করে ঘুরতে ও পারেনি। এর মাঝে আরো অনেক কিছুই ঘটেছে কিন্তু সেটা বাদে অনেক উপভোগ করেছি আমার মেয়েটা কে নিয়ে, সেও অনেক আনন্দ করেছে।
মানুষের একটি স্বভাব দেখে অবাক লাগে বানরকে ও এরা ছাড়ে না। বনে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা পশু পাখিদের খুব বিরক্ত করে। অনেককেই মানা করলাম কেউ শুনলেন কেউ শুনলেন না তাতে আমার কি!! আমি বলা থামালাম না, নিষেধ করতে করতে ফেরার নৌকায় উঠলাম।
কিশোর কিছু ছেলে তাদের মধ্যে এত দায়িত্ববোধ থাকে সেটা ওই ছেলেদের না দেখলে জানতাম ও না। নামার পরে কে কত টাকা দিবে সেটা হিসাব করতে লাগলো। হঠাৎ মনে হলো আমি অনেক ভাললাগা নিয়ে যাচ্ছি এখান থেকে, ওদের ও কিছু ভালো স্মৃতি তৈরী করতে সাহায্য করি। পরে মাঝিকে পুরো ভাড়া টা দিয়ে দিলাম। ছেলে গুলো কোন কথা বলছিল না, আমিও কিছু শোনার অপেক্ষা না করে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে চলে এসেছি।
বাসায় ফিরে এর জন্য অনেক বকাও খেয়েছি। কিন্তু ব্যাপার না বকা খাওয়া আমার জন্য নতুন কিছু না। এই ভ্রমণ টা আরো একটু ভাল হতো যদি আমার ভ্রমণ সংগী আমার ক্রাইম পার্টনার আমার বড় বোন যদি আমার সাথে থাকতো।

খুলনার মানুষের ব্যবহার আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। কোন কিছু জানতে চাইলে খুবই আন্তরিকতার সাথে বলেছে। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে একা রাত ১০ টা পর্যন্ত শহরে ঘুরেছি কোন সমস্যা হয়নি।
যা যা দেখেছিলাম
১. রয়্যাল হোটেল
২. খুলনা ক্লাব
৩. খুলনা শিপইয়ার্ড
৪. সন্ধ্যা বাজার
৫. হাদীস পার্ক ও শিশু পার্ক
৬. নগর ভবন
৭. জিরো পয়েন্ট
৮. রুপসা ব্রিজ
৯. মংলা পোর্ট
১০. সুন্দরবন

আমরা আমাদের সব ময়লা আবর্জনা আমাদের সাথে নিয়ে আসতাম হোটেল এ, আর ঢাকা-খুলনা- ঢাকা যাওয়ার পথের ময়লা আবর্জনা এ গাড়ীতেই ছিল। আমার মেয়েটা ৩ বছর ৬/৭ মাসের কিন্তু তাকে শেখানোর চেষ্টা করছি ডাস্টবিন ছাড়া যেখানে সেখানে ময়লা ফেলতে না আর সে ফেলেও না।

#খুলনা_মংলা_সুন্দরবন_ভ্রমন

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ