সুখ দূঃখের দুই যুগ

রিমি রুম্মান ৭ এপ্রিল ২০১৯, রবিবার, ১২:০৫:৪২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১০ মন্তব্য

ফেসবুক আইডিটি খোলার পর শুরুর দিকে বেশ অনেকগুলো দিন ব্যবহার করা হয়নি। বর ব্যবহার করতেন। ভুরি ভুরি ছবি আপলোড দিতেন। নিষেধ করলে বলতেন, ' থাক না, এইখানে ছবি গুলা সেইভ থাকুক '। শেষে বাধ্য হয়েই পাসওয়ার্ড বদলে দিলাম। মাঝে মাঝেই অসহায়ের মতো করে বলতেন, তোমার পাসওয়ার্ডটা একটু দিও তো। কী করবা প্রশ্ন করলে বলতেন, এমনি একটু দেখবো আর কী। আমি বলি, ঠিক আছে দিবো এক শর্তে। তোমার সামনেই পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করবো। মনোযোগ দিয়ে দেখবা। মনে রাখতে পারলে আমার আইডিতে যখন তখন ঢুকতে পারবা, বুঝছ ? তিনি হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়েন। এবং চোখ টান টান করে কীবোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতার আগে আমরা যেমন টান টান উত্তেজনা নিয়ে হাঁটু 'দ' অক্ষরের মতো ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বাঁশি বেজে উঠবার অপেক্ষায় থাকতাম, অনেকটা তেমন। আমি খুব দ্রুতই লগ ইন করলাম। তিনি মনে রাখতে পারলেন না। এরপর দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ...। তবুও তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে বললেন, ' ধুর, ক্যান যে এতো কঠিন পাসওয়ার্ড দাও ! ' মজার বিষয় হোল, তিনি আজও জানতেই পারলেন না যে আমার ফেসবুক আইডি লগ ইন করাই থাকে।

একবার বাসায় অতিথি এলো। তিনি বিরামহীনভাবে চা দাও, চা দাও করতেই থাকলেন। ঘরে সেদিন চা পাতা নেই, বিধায় কফি দিলাম। তিনি বলে চলছেন, ' কই, বললাম না চা দিতে! কফি দিলা কেন ? অতঃপর গল্পে মশগুল হলেন। ক্ষণিক পর পর ' দিলা না ?' বলে হাক দেন। আমি যে তাকে আড়ালে দাঁড়িয়ে ডাক দিচ্ছি, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অতিথিরা চলে গেলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি। এত চা চা করে চেঁচাও ক্যান ! ঘরে চা পাতা আছে কী নেই সেই খবর তো কোন কালেই রাখ না ... তিনি পাংশু মুখ করে বললেন, ' আমাকে আস্তে করে টিপা দিতা, তাহলেই তো বুঝি (বুঝে) যেতাম '। অন্যদিনের কথা। অতিথি আপ্যায়ন করছি। অতিথিরা যেই না বলল এটা মজা হয়েছে, ওটা মজা হয়েছে, অমনি তিনি দ্বিগুণ উৎসাহে বলে উঠলেন, তোমার হাতের পাকোড়া খুব মজার মচমচে হয়। কয়টা বানায়ে দাও না। অতিথিরা বলে উঠলেন, আরে না না কোন দরকার নেই। এতো খাবার কে খাবে... এটুকু বলতেই তিনি তাদের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, ' আরে নাহ্‌ সমস্যা হবে না। ও খুব ঝটপট বানাতে পারে '। পূর্বের সেই কথা অনুযায়ী আমি টেবিলের নিচ দিয়ে পায়ে টিপা দিলাম। অমনি তিনি পা সরিয়ে নিয়ে অস্ফুটে বলে উঠলেন, ' আআআহ্‌ , টিপা দিতাসো ক্যান ! ব্যথা পাইতাসি তো ' ! অতিথিরা সকলে একযোগে মাথা নুইয়ে টেবিলের নিচে তাকালেন ! সেই মুহূর্তে আমার দশা আর না-ই বলি।

গতকাল আচমকা বলে উঠলেন, বাথরুমে এতোগুলা টুথব্রাশ, কোনটা যে কার কিছুই বুঝি নাহ্‌ ! আমি হাতের কাজ থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাই। বলি, তুমি কোনটা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করো ? বললেন, হাতের কাছে যখন যেটা পাই। চোখ কপালে তুলে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বলি, তার মানে তুমি কি আমার ব্রাশ দিয়েও দাঁত মাজো ? বললেন, ' হয়তোবা '। মুহূর্তেই আমার পেটের ভেতরে মোচড় দিয়ে বমির উদ্রেক হয় ! বলে কী !

রাস্তায় কেউ ঝগড়া লেগেছে ? তিনি গাড়ি একপাশে পার্ক করে হলেও সেখানে নেমে পড়বেন। দুই ব্যক্তির মাঝে কার দোষ সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন। তারপর একজনকে বলবেন, ভাই দোষ তো আপনারই। ব্যাস, শেষে দেখা গেলো বিবাদ ডাল পালা ছড়াতে ছড়াতে উনার সাথেই লেগে গেলো ! আবার পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে ? গাড়ি থামিয়ে হলেও দেখা চাই-ই চাই। কার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলো। রেড লাইটে থেমে থাকা কোন গাড়ি থেকে কেউ যদি উইন্ডো গ্লাস নামিয়ে জিজ্ঞেস করে অমুক ঠিকানায় যেতে হলে কোন পথে যাবো ? ব্যাস হয়েছে! তিনি বলবেন, ' ওকে, ফলো মি '। তারপর পারলে তাকে সেই ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে আসবেন !
... ... ...

ছেলেটি বলেছিল মেয়েটির জন্যে সে দোযখে পর্যন্ত যেতে রাজি। আল্লাহ তাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তাদের বিয়ে হয়েছে। 😃

কেউ কেউ বলে, বিয়ে হচ্ছে অনেকটা সুখে থাকতে ভূতে কিলানোর মতো। আবার কোথায় যেন পড়েছিলাম, ' ভালোবাসা হচ্ছে একটা আদর্শ ব্যপার, আর বিয়ে হচ্ছে বাস্তব। আদর্শ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব তাই কখনো নিস্পত্তি হবে না।' নিস্পত্তি হোক কিংবা না হোক ভালোবাসা ছিল বলেই আমরা এইসব খুনসুটি নিয়ে সুখ দুঃখে হেঁটে এসেছি জীবনের দীর্ঘ পথ ! যেতে চাই আরো বহুদূর। একসাথে হতে চাই দন্তবিহীন থুড়থুড়ে বুড়ো-বুড়ি। যেখানে থাকবে কেবল শতশত স্মৃতিচারণ। হোক তা টেবিলের নিচ দিয়ে পা টিপা দেয়ার বিব্রতকর স্মৃতি কিংবা ভুল টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজার মতো পেট গুলিয়ে উঠা স্মৃতি। আজ ৭ই এপ্রিল। আমাদের দু'জন মানুষের এক হবার দুই যুগ।

ভালো থাকুন সকলে। প্রার্থনায় রাখুন।

রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ