সারপ্রাইজ

সুরাইয়া পারভীন ২০ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার, ০৯:৩৫:৩৪অপরাহ্ন ছোটগল্প ২৪ মন্তব্য

সায়মা রাতুল একে অপরের কাজিন। ছোট বেলা থেকেই ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতো এবং তা আস্তে আস্তে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। ওদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে দু'পক্ষের কেউই তা মেনে নেয় না। তাই বাধ্য হয়েই সবার অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ওরা। তখন থেকে আর কেউ ওদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি। রাতুল একটি বেসরকারি কোম্পানীতে জব করে। যা বেতন পায় তাতে সায়মা রাতুলের ছোট্ট সংসার বেশ ভালোই চলে।  আত্মীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে, সবার থেকে দূরে গিয়ে খুব একটা খারাপ আছে তা নয়। রাতুল যেমন ভালোবাসে সায়মাকে, সায়মাও ঠিক তেমনই ভালোবাসে রাতুলকে। কাছের মানুষদের অনুপস্থিতি বিন্দু মাত্র টের পেতে দেয়নি কেউ কাউকে।

 

বিয়ের দশ বছর হলেও ওদের কোল আলো করে কোনো সন্তান আসেনি। এতে দুজনেই মনে মনে কষ্ট পেলেও কেউ কাউকে তা মুখ ফুটে বলে না। না বললেও দুজনেই বেশ বুঝতে পারে দুজনের কষ্টটা। দুজনেই আলাদা আলাদা ভাবে ডাক্তার দেখিয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চা না হবার কারণ হিসেবে কেবল সৃষ্টিকর্তা চান না বলেই ধরে নিয়েছে ওরা। বেশ ক'দিন ধরে সায়মা কিছু সমস্যা ফেস করছে। কখনো মাথা ঘুরাচ্ছে, কখনো গা গুলাচ্ছে তো আবার কখনো  বমি হচ্ছে। সায়মা কারণটা বুঝতে পারছে না।  সেদিন রাতুল অফিসে চলে গেলে সায়মা ডাক্তারের কাছে যাবে মনে করে বাসা থেকে বের হয়। ডাক্তার ধারণা করেন সায়মা মা হতে চলেছে। ব্যাপারটা শিউর হবার জন্য কিছু টেস্ট দেন। টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে জেনে সায়মা খুব খুশি। এতো দিন পর মহান রাব্বুল আলামীন ওদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।

 

সায়মা রাতুলকে ফোন করে খবরটা দিতে যাবে ঠিক এমন সময় মনে করলো না এভাবে নয়। আজ রাতুল বাসায় এলে সারপ্রাইজ দেবে। সায়মা কিছু গোলাপ ফুল আর গোলাপ শিউলির মালা কিনে নিয়ে বাসায় ফিরলো। সায়মা সুন্দর করে সেজেছে। রাতুলের পছন্দের লাল শাড়িটা পরেছে। খোঁপায় গোলাপ শিউলি ফুলের মালা জড়িয়েছে। কপালে একটা লাল টিপ পরেছে। রাতুলের পছন্দের খাবার গুলো রেঁধে অপেক্ষা করছে। কখন রাতুল আসবে, কখনো দেবে এই খুশির খবরটা। প্রচণ্ড উত্তেজনা নিয়ে পায়চারি করছে সায়মা। 

 

রাতুলের অফিসে গিয়ে দেখে আজকে অফিসের পরিবেশটা কেমন থমথমে! সবাই কেমন রাতুলের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। রাতুল কিছুটা নার্ভাস ফিল করে। সে‌ নিজের রুমে গিয়ে বসতেই এমডি স্যার ফোন করে বলেন উনার রুমে যেতে। রাতুল তড়িঘড়ি করে যান স্যারের রুমে। স্যার একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলেন খুলে দেখুন রাতুল সাহেব। রাতুল ভয়ে ভয়ে খাম খুলে চমকে যায়। প্রোমশন লেটার। ঠিক তখনই কলিগরা এসে রাতুলকে চেপে ধরেন ট্রিট দেবার জন্য। রাতুল সায়মাকে খবরটা দিতে গিয়েও দিল না। ভাবলো সায়মাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক। রাতুল অফিস থেকে বের হয়ে ফুলের দোকানে গেলো। কিছু সুন্দর সুন্দর একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। এমন সময় দ্রুতগামী একটা ট্রাক এসে রাতুলকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। সায়মা রাতুলের অপেক্ষায় পায়চারি করছে। আকস্মিক কলিংবেল বেজে উঠল। সায়মা দ্রুত দরজা খুলে দেখলো কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে হাতে লাশের খাটিয়া আর তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা শরীর।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ