সাতকাহন

তৌহিদুল ইসলাম ৭ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ১০:৫১:৩৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২২ মন্তব্য

একঃ

পাটিগণিত -

জীবন যদি কাব্যকথা হয় তাহলে সেখানে জটিল আর দাঁতভাঙা শব্দ ব্যবহার করে সে কাব্যকথাকে কুটিলতার পর্যায়ে নিয়ে যাবার পক্ষপাতী আমি নই। সহজ সরল ভাষায় রচিত কাব্যকথা পড়তেও যেমন সুন্দর, ভালোলাগার রেশটুকুও মনে থেকে যায় আমৃত্যু। জগত-সংসারের কুটিলতাগুলিকে আমি প্রশ্রয় দেইনা। অন্যকে ভালোর পথের রাস্তা দেখাতে গিয়ে নিজেই ছোট হয়েছি অনেকবার তবে দমে যাইনি।

অল্প সময়ের একটাইতো জীবন। একে সুন্দরভাবে উপভোগ করে যেতে চাই।

দুইঃ

যাপিত সায়ানাইড -

একজন মানুষ হয়ে আমার যাপিত জীবনের শেষ একফোঁটা রসকেও আমি অন্য মানুষের কল্যানে বিলাতে চাই। এটা এমন কোন বড় বিষয় নয় তবে এই চিন্তাকে কাজে রুপান্তরিত করার মানসিকতা নিজের মধ্যে ধারণ করা সবসময় কি সম্ভব?

ধরুন, বাসার সামনে রাস্তার ধারে একটি বটগাছ লাগাবো। একসময় আমি যখন থাকবোনা তখন ঘর্মাক্ত দেহের ক্লান্ত পরিশ্রান্ত পথিকেরা একটু শীতল পরশ পাবার আশায় সেই বটগাছ তলায় বসে শরীর জুড়োবে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলবে - আহা! কতইনা ভালো মানুষ ছিলেন তিনি যিনি এই গাছ লাগিয়েছিলেন।

এর থেকে বড় প্রাপ্তি একজন মানুষের জীবনে আর কিছু আছে কি? মনে হয়না।

তিনঃ

অবিনশ্বরবাদ-

মানুষ বেঁচে থাকলে রঙ বদলায়, আর মরে গেলে অমর হতে চায়। এটা আমাদের হোমোসেপিয়ান বৈশিষ্ট্য। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তবে গ্লানির অনলে পুড়ে যে ভাবনাটি আমার মনে বার বার আসে - আমি মরে গেলে কি আর কারও জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে? কে কে কাঁদবে আর কার কার মনে আমার জন্য বর্তমানের এই ভালোবাসা অম্লান থাকবে? এমন কি কেউ আছে? আদৌ কি কেউ থাকে?

আমি আজও এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাইনি। আপনিও কি আমার মত করে কখনো ভেবেছেন?

চারঃ

নিউরনের জ্যামেতিক ষড়ভুজ-

মানুষের মস্তিষ্ক এক বৃত্তকার ষড়ভুজের কেন্দ্রের মত। অনুরণনের ব্যাসার্ধ, পরিধি, জ্যা সবকিছুই পুঙ্খানুরুপে মাপতে পারাটা অসম্ভব। আর্কিমিডিস যেদিন ইউরেকা ইউরেকা বলে চিৎকার করে উঠেছিলেন সেদিন তিনি নিজেও কি জানতেন তার মস্তিষ্ক চৌবাচ্চার পানি এত পছন্দ করে? তা না হলে তার সেই ঐতিহাসিক সূত্র অন্য সময় মাথায় না এসে স্নানকার্যের সময়েই কেন আসলো? বিছানায় শুয়ে কিংবা গবেষনার টেবিলেওতো আসতে পারতো। একেবারে স্নানের সময়! মনুষ্য মস্তিষ্ক আসলেই এক আশ্চর্য বস্তু তাইনা?

এই দেখুন, মস্তিষ্ক নিয়ে বলতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছি- বৃত্তাকার ষড়ভুজ কখনো হয়? জীবনে পড়েছেন বা শুনেছেন? দেখলেনতো আমার মস্তিষ্কও জটিলতার ঊর্ধে নয়।

পাঁচঃ

বক্রতার সীমারেখা-

আঁকা-বাঁকা পথের সীমানা পরিমাপ করার ভুল প্রয়াসই একজন বেদুঈনের যবনিকাপাত করে ঠিক মরুভূমির ক্যাকটাসের মতন। সারাদিন রাত্রির উচ্ছ্বল তপ্ততার ব্যাঘাত ঘটায় একপশলা বৃষ্টি। জীবন যেন তপ্ততায় অবগাহন করতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। শান্তিকে সিরিয়া আর প্যালেস্টাইনে সমাহিত করে নিজেদের মিথ্যে অহমিকা ঢাকতে এর নাম দিয়েছি বিগব্যাং থিউরি। কি অদ্ভুত!

আমিও মহাশুন্যে অন্তত একবার হাইপার ডাইভ দিতে চাই। ব্লাক হোলের বক্রতার দেয়াল স্পর্শ করে জানতে চাই সৃষ্টির আদি রহস্য।

দেখুনতো কান্ড! এসবতো সহজসরল ভাবেও বলা যেত। প্যাঁচানো গুরুগম্ভীর তত্ত্বকথা ক'জনা বোঝে?

ছয়ঃ

হিজল তমালের স্বপ্ন-

স্বপ্ন সাদাকালো এটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। তবে আমার স্বপ্ন সবসময় রঙিন। আমি মকরক্রান্তিবৃত্তে সমুদ্রের নীলে সাদা মেঘের ভেলা বানিয়ে পাড়ি দেই কর্কটক্রান্তি রেখা। প্লাঙ্কটন জমা পুকুর জলের ধূসর ঢেউ ছুঁয়ে যাওয়া লাল ঠোঁটের মাছরাঙাগুলি খেলা করে আমার স্বপ্নে। লাল সবুজের বুকে আমি খালি পায়ে হেঁটে বেড়াই সদর্পে। এলার্জি জনিত রাজাকার শব্দেটির বর্ণমালায় আমার জন্মের স্বাক্ষর রেখে যেতে চাইনা। আমি ভালোবাসি মা মাটি দেশ। তাইতো স্বপ্ন নিয়ে রথী মহারথীদের কপচানো উপদেশকে আমি তুচ্ছ করে যাই বারংবার।

হিজল তমালের সাতরঙা আলোয় ভর করে আমার স্বপ্নে আসে বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর, পঁচাত্তর, নব্বই, দুই হাজার তেরো...। সাদাকালো দুঃস্বপ্নে অনেকগুলি শব্দের একটি বর্ণ 'ক'- কে কলঙ্কিত করা কসাইটাকে জনতার মঞ্চে সফলভাবে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলাম সেদিন প্রথমবার - কাদের মোল্লা।

সাতঃ

দার্শনিক বোহেমিয়ান-

"সুর্য আমি- ঐ দিগন্তে হারাবো। অস্তমিত হবো, তব ধরণীর পরে স্মৃতিচিহ্ন রেখে যাবো।"

জীবনের দর্শনকে আমি মাত্র এই দু'লাইনেই ব্যাখ্যা করতে শিখেছি। এর গভীরতার ব্যাপ্তি খুঁজে পেলে সৃজনশীল ম্+আ+ন্+উ+ষ্+অ এর কাতারে আপনাকে স্বাগতম।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ