সাইলেন্ট কিলার

কোডনেম এ্যাসাসিন ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩, শুক্রবার, ০৪:০৬:২৮পূর্বাহ্ন গল্প, সাহিত্য ২২ মন্তব্য


 

ঘড়ির কাটায় রাত ২ টা ছুই ছুই। গ্রামের মানুষ একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়ে। সেই হিসেবেই পুরো গ্রামে এখন শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক প্রানের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এই নিশুতি রাতে গ্রামের প্রভাবশালী সিকদার বাড়ীতে একটা গোপন বৈঠক বসেছে। আর সেই বৈঠকে আছেন কাশেম সিকদার, তার শ্যালক মারুফ মিয়া আর আমি।
হ্যা আমাকে নিয়েই মূলত এত আয়োজন। আমি একজন ভাড়াতে খুনি, ইংরেজীতে আপনারা যাকে কিলার বা এ্যাসাসিন বলে থাকেন। আমি টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করি। সিকদার বাড়ীতেও এই জন্যই আসা। সিকদার সাহেব এই ইউনিয়নের চারবারের চেয়ারম্যান। তবে এবার তার বিপক্ষে বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ দাড়িয়েছে। জোয়ার্দার বাড়ীর ফারুক জোয়ার্দারের ছেলে ঢাকা থেকে পড়ালেখা করে গ্রামে এসেছে। মানুষ তাকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। তাই পথের কাটা সরিয়ে দিতে সিকদার সাহেব আমাকে.....

"আমি টাকার বিনিময়ে খুন করি। কার সাথে কি নিয়ে শত্রুতা সেটা জানার প্রয়োজন নেই। তবে আমি নারী আর শিশু খুন করি না। ৫০% টাকা অগ্রিম দিবেন, বাকিটা কাজ হবার পরে। এ নিয়ে কোন কথাবার্তা চালাচালি হবে না। কাজ সমাধা হবার পর এক মাস আর কোন কাজে হাত দেই না। সেজন্য বাড়তি খরচ দিবেন।"

স্পষ্ট ভাষায় কাশেম সিকদারকে প্রথমেই বলে দিয়েছি। এক লাখ টাকার ৫০% দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন ফালতু বকবক করেই যাচ্ছেন।

: বুঝলা ভাই, রাজনীতি হইলো ধুতরা ফুলের মত.. দেখতে সুন্দর মনে হইলেও ভেতরটা বিষে ভরা। সবার জন্য তাই রাজনীতি না..
: হুম
: এত বাচ্চা একটা পোলারে মারতে খারাপই লাগবো কিন্তু কিছু করার নাই। এই এলাকার রাজা হইলো গিয়া সিকদার বংশ। একটা বাচ্চা পোলার কাছে ঠইকা গিয়া চেয়ারমেনি বেহাত হইলে এলাকায় মুখ দেখাইতে পারুম না।
: হুম
: ধুর মিয়া, তুমি হইলা শিক্ষিত পোলা, ঢাকায় যাউগা, চাকরি বাকরি ব্যাবসা বানিজ্যি কর গিয়া। আমার কামে বাম হাত ঢুকানোর দরকার কি? ঠিক কইছি না
: হুম

সিকদার সাহেব বকবক করেই যাচ্ছেন আর আমি না শুনেও শ্রোতার ভূমিকা পালন করছি। তার বকবক শোনার চেয়ে সিগারেট টানাতেই মন দিলাম।

দুই দিন পর,

জোয়ার্দার বাড়ীর ছেলে আসলাম জোয়ার্দারের লাশ রাস্তার পাড়ে পড়ে আছে। গলায় তীক্ষ্ম ছুরির দাগ জমাট বাধা লাল রক্তের দ্বারা উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
গতকাল রাতে কোন এক ঘাতক এই ছেলেটার জীবন নিয়ে নিয়েছে।

আমি এখন সিকদার সাহেবের সামনে বসা। সিকদার সাহেব প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ব্লাড প্রেশারটা মনে হয় বেড়েছে। তার উপর এই দিনে-দুপুরে আমি সবার সামনেই তার কাছে চলে এসেছি, ব্যাপারটা হজম করতে তার সমস্যা হচ্ছে।

: আপনি এখন এখানে কেন? আপনার বাকি ৫০ হাজার আমি রাতে মারুফরে দিয়া পাঠায়া দিমু।
: হুম.. তাতো দিবেনই। সাথে আরো পঞ্চাশ হাজার বেশি দিবেন। একমাস আমি কোন কাজ করব না সেই খরচা।
: দিব.. দিব। আপনি এখন যান
: না একটু বসি.. সেদিন আপনি গল্প করছিলেন শুনতে ভাল লাগছিল
: আপনার পায়ে ধরি আপনি এখন যান
: আচ্ছা আমিই গল্প করি। কিসের গল্প শুনবেন? আমি তো খুনের গল্প ছাড়া কিছু জানি না।
: আপনি যান ভাই, আপনার টাকা এখনই দিয়ে দিচ্ছি। (চাপা ভয় মেশানো গলায় মারুফ কে ডাকলেন)

টাকা গুনে পকেটে ভরে বেরিয়ে যাবার আগে আবার চেয়ারে বসলাম। সিকদার সাহেব আরও যেন অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

: কি হল? টাকা দিয়েছি তো.. যান না ভাই
: যাবার আগে গল্প বলে যাই। কাল রাতে আপনার শত্রকে কিভাবে মারলাম সেই গল্প। বাজার থেকে সে একাই ফিরছিল। সুযোগ বুঝে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে চাপাতিটা গলায় চালিয়ে দিলাম.. গরম রক্ত আমার হাতের উপর দিয়ে বেয়ে পড়তে লাগলো। আর মজার ব্যাপার কি জানেন? যখন শ্বাসনালী কেটে দিলাম। তখন গরম একটা নিশ্বাস বেরিয়ে গেল...............

আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসের ভেতর। জোয়ার্দার বাড়ী শোকের মাতম বইছে। সিকদার সাহেব হার্ট এটাক করে হাসপাতালে ভর্তি। আসলে মানুষ যখন ভয় পায় তখন আজব একটা অনুভূতি আসে। মনে হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে কাউকে চরম ভয় পাইয়ে দেয়া। যাই হোক, আমি ঢাকায় যাচ্ছি। শুনেছি খুনি কখনো তার অস্ত্র স্পটে ফেলে যায় না। আমি অবশ্য ব্যাতিক্রম.. এক অস্ত্র দিয়ে দুই খুন করি না। রক্তাক্ত চাপাতিটা হয়ত এখন মল্লিক বাড়ীর পুকুরের তলায় পড়ে আছে।

 

# কেবলই একাউন্ট খুললাম। তাই আগে প্রকাশিত একটি লেখা দিলাম। আমি কমিউনিটি ব্লগে নতুন। আগে ব্লগস্পটে লিখতাম।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ লেখা

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ