আমার স্বপ্নের কোন সঠিক সীমারেখা নেই। মানুষ যেমন বলে আমি অমুক হতে চাই, তমুক হতে চাই। আমিও চাই, কিন্তু চাওয়াটার তালিকা বিশাল। আজ মনে হয় যদি আমি বড় ব্যবসায়ি হব, কাল আবার মনে হয় আমি বড় অনলাইন ব্যক্তিত্ব হব। তবে যতগুলো স্বপ্নই দেখি সবগুলোই আমার কাছে ১০০% গুরুত্বপূর্ণ। কোন স্বপ্নই ৯৯.৯৯% নয়। থাক আমার স্বপ্নের কথা। এখন আমি আমার স্বপ্নের কথা বলতে চাই না। তবে বললাম এই কারণে যে, আমি শিক্ষা নিয়ে মাঝে মাঝে চিন্তা, গবেষণা করি। তাই মাঝে মাঝে শিক্ষাবিদও হওয়ার স্বপ্ন দেখি। আর সেজন্যই আমার স্বপ্ন নিয়ে কথা বললাম। আমি অনেক দিন থেকে শিক্ষার উদ্দেশ্য অর্থাৎ এই যে আমরা সারা জীবনের অর্ধেক জীবনেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা গ্রহণ করি এর সঠিক সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য কি? আমি একে শিক্ষা নামে ডাকতে চাইনা। আমার মতে আমরা যে শিক্ষা নেই সেটিকে পড়াশুনা নামে সম্বোধন করাই শ্রেয়। কোন যুক্তি ছাড়াই প্রথমে বলতে চাই আপনারা শিক্ষাকে বেছে নিন পড়াশুনাকে নয়। লেখার প্রথমেই বলতে যেতে চাই, আজকের পোস্ট সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব চিন্তা ধারা এবং ছোটখাট গবেষণার উপর লিখেছি।

প্রথমেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে (বাহিরের দেশের প্রেক্ষাপটের অভিজ্ঞতা নেই) বলতে চাই, আমরা যে শিক্ষা নিচ্ছি তাকে শিক্ষা বলা যায়না। কারণ আমার কাছে শিক্ষার অর্থ জ্ঞান অর্জন করা। আর জ্ঞান অর্জনের জন্যই পড়াশুনা করা। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে পড়াশুনা করি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস, এ প্লাস, পাস আরও কত কি-র জন্য। কত কি- এর নাম গুলোও বলে রাখা ভালো। আমরা পড়াশুনা করি প্রধানত টাকার জন্য, চাকুরীর জন্য, উচ্চ বিলাসী জীবন যাপনের জন্য। অতএব আমার এই যুক্তিতে কি বলা যায়না যে, আমাদের পড়াশুনায় জ্ঞান অর্জনের যেহেতু কোন উদ্দেশ্য বিদ্যমান নেই। সেহেতু এটিকে আমরা শিক্ষা বলতে পারিনা। এই যে আমি বললাম, শিক্ষা মানে জ্ঞান অর্জন করা। এই কথাটি আমার নয়। এটি আমি বইয়ে পড়েছি, শিক্ষামূলক নানা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বড় বড় বক্তাদের মুখেও শুনেছি। আশা করি আমার কথার মর্মটি বুঝেছেন।

আমরা সবাই, "শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড"। সেখানে কিন্তু বলা নেই পড়াশুনাই জাতির মেরুদণ্ড। দয়া করে এসব শুনে আমাকে পাগল-ছাগলের দলে পাঠিয়ে দিবেন না। আর দিলেও আমার কিছুই করার নেই। আমি এখানে যা বলছি সব যুক্তিহীর উপরেই লিখছি। আমাদের দেশে মা-বাবারা বলেন, "পড় বাবা, লেখাপড়া করে ভালো ফল পেয়ে বড় চাকুরি করবি ", "এবার এসএসসি/এইচএসসিতে তোকে গোল্ডেন এ-প্লাস পেতে হবে", "মন দিয়ে পড় তাহলে ভালো রেজাল্ট করবি" আরও অনেক কিছু আপাতত মনে আসছেনা। এখন আমার কথা হল, পড়াশুনা বা শিক্ষা (যদিও পড়াশুনা আর শিক্ষা এক নয়) একটি পবিত্র এবং অনেক জরুরী প্রয়োজনীয় জীবনী অংশ। তাহলে সেটিকে কেন ছেলেমেয়েদেরকে (আমাদেরকে) মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, কখনও আবার গলা টিপে ধরে জোর করে পড়াশুনা করাতে হবে। জানি বাবা-মা কেন এটি করেন। তাঁরা সন্তানের ভালো চান তাই করেন। তাঁরা চান বড় হয়ে তাঁদের সন্তান যেন ধনী হয়ে জীবন যাপন করে। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য তো অর্থ উপার্জন নয়, ধনী হওয়াও নয়। তাহলে এমন কেন হচ্ছে? আমার মতে এর কারণ পরিস্থিতিই এমন করে তুলেছে। বাংলাদেশে অর্থ উপার্জনের নেশাই এর মূল কারণ। আপনি একটু চোখ বন্ধ করেই ৫-৬ সেকেন্ড চিন্তা করে দেখুন না যে, আমরা প্রতিদিনের পড়াশুনা করছি কোন একটি মূল উদ্দেশ্যে? আপনার মনই বলে দিবে , এই যে প্রতিদিন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া আসা, বাড়িতে পড়াশুনা করা সবই করছেন পড়াশুনা শেষে একটি ভালো আর্থিকসচ্ছল অবস্থানের জন্য। সবাই এই একই উদ্দেশ্যে পড়াশুনা করেও বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য আমাদের পড়াশুনা করতে হবে। হায় রে পরিস্থিতি !

এবার বলি, শিক্ষার্থীদের কাছে কেন এই পড়াশুনা তেঁতো ঔষধের মত। এটার সোজা উত্তর, আমাদের দেশের পড়াশুনা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পড়াশুনার উপকরণ পর্যন্ত সবই তেঁতো। সুতরাং তেঁতো লাগাটা তো অস্বাভাবিক নয়। তবে তেঁতো লাগাকে তো মিষ্টি মধুর করতে হবে। কিন্তু কে করবে এই সমাধান? আরে ভাই, এর সমাধানের জন্যও তো লোক আছে, যারা সরকার থেকে টাকাও পায় ! সরকার তাঁদেরকে হাজার হাজার টাকা বেতন দিয়ে শিক্ষার উন্নতির জন্য গবেষণা করতে বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন কাজই হয়নি ! তাঁরা বেতন নিয়ে কোন এক দেশ বা জায়গার শিক্ষা ব্যবস্থা কপি পেস্টের মত বাংলাদেশে বসিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা মোটেও চিন্তা করেন না যে, সব জিনিস সব জায়গায় খাপ খায়না। আমি আগেই বলেছি এখানে যুক্তিহীন কোন শব্দ লিখবনা। তাই একটা উদাহরনও দেই, "বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা আমাদের জন্য সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করলেন। কাজটার জন্য তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। কারণ সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষার্থীদেরকে সৃজনশীল করে তুলবে। কিন্তু আমার জানা মতে, এটিও কপি পেস্টের মত কোথা থেকে যেন কপি মেরে বাংলাদেশে পেস্ট করেছে। আচ্ছা, সেটাও মেনে নিলাম। কিন্ত এটার জন্য যে সৃজনশীল ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষক লাগবে, উপকরন লাগবে, সঠিক এবং বিভ্রান্তিমুক্ত সৃজনশীল প্রশ্ন লাগবে সেটা তাঁরা মনে হয় শুধু ভুলে যাননি, তাঁরা গিলেও খেয়েছেন। " এসব কথায় তাঁরা বলবেন, আমরা এসব সঠিকভাবে পালন করেছি। মানলাম, করেছেন। কিন্তু কি পরিমাণে করেছেন, সেই পরিমাণ কতটুকু বিশুদ্ধ সেটা বলুন। সৃজনশীল প্রশ্ন করেছেন ঠিকই কিন্ত বাস্তবসম্মত সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেননি। শিক্ষকদের ট্রেইনিং দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু নগণ্য পরিমাণ শিক্ষককে বিশুদ্ধ ট্রেনিং দিয়েছেন। যার বেশিরভাগ শিক্ষক গুটি কয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তাহলে বাকী শিক্ষকরা সৃজনশীল প্রশ্ন শেখার সুযোগও পায়নি। সেখানে শিক্ষার্থীরা কিভাবে বুঝবে। আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, আপনি গ্রামে গিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে পরিস্থিতিটি বুঝতে পারবেন। আরও হাজার হাজার উদাহরন রয়েছে আপনার আমার মত সাধারণ মানুষের কাছে। এসব প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে বললে তাঁরা ৩ সেকেন্ডের মাঝে অস্বীকার করবেন। তাতে আমার করার কিছুই নাই। আমার একটি কথাই বলার আছে যে, "আপনারা অস্বীকার করলে আমাদের কিছুই করার নাই। কিন্তু সাধারণ সব মানুষ-জনতা এগুলো জানে, স্বীকার করে। এটাই বড়"।

সবশেষে আশার কথা হল, আমাদের সরকার যদি দেশের মেরুদণ্ড শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট কার্যকরী গুরুত্ব আরোপ করে তাহলে বাংলাদেশেও উন্নতির শিখরে পোঁছে বিশ্বকে বলবে, "আমরাও পারি"। শিক্ষার্থীদেরকে কিভাবে পড়াশুনায় আগ্রহী করে তোলা যায় সে ব্যাপারে জোর দিন। একটি সুন্দর গল্প বা রহস্যমূলক গল্পের বই যেমন প্রচণ্ড আগ্রহের সাথে একজন শিক্ষার্থী পড়ে। ঠিক তেমনি পাঠ্য বইগুলোও আগ্রহমূলক করতে ব্যবস্থা নিন। যাতে শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছায় আনন্দের সাথে বই পড়বে এবং কিছু শিখবে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা অনিচ্ছা এবং চাপে পড়ে যা পড়ছে তার দ্বারা পরীক্ষায় গোল্ডেন কেন ডায়মন্ড প্লাসও পাওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানী কিংবা মানুষ হওয়া সম্ভব না। আমি একজন ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী তাই আশা করি বুঝতে পেরেছেন যে, এই লেখায় যা ব্যক্ত করলাম সেসব নিজের উপলব্ধি থেকেই লিখলাম। আর আমরা যদি শিক্ষাকে তাঁর প্রকৃত উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতে না পারি তবে বাধ্য হয়ে বলতেই হবে "ধরে বেঁধে পিরিত হয়না"। ছোট মুখে কিছু সত্য উপলব্ধি আপনাদেরকে জানালাম। আমার ভুলত্রুটি দয়া করে মাফ করে দিবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

জানিনা, ছোট মানুষ হয়ে কি বলেছি। তাই আবারো বলছি ভুল কিছু বলে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এই লেখাটি আমার ব্যক্তিগত ছোট বাংলা ব্লগ "ব্লগার মারুফ" -এ প্রথম প্রকাশ করেছি।

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন