শতবর্ষী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

কামাল উদ্দিন ২৭ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ১১:৫৩:৫১পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ১৮ মন্তব্য

কেউ বলেন জমিদার বাড়ি, কেউ বলেন রাজবাড়ি। নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও শতবর্ষী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। বিভিন্ন সময় এ জমিদার বাড়িটি কয়েকজন জমিদার কর্তৃক সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এটি উপজেলার মুড়াপাড়া নামক গ্রামে অবস্থিত।

জমিদার রামরতন ব্যানার্জী ১৮৮৯ সালে ৪০ হেক্টর জমির উপর নির্মাণ শুরু করেন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। তিনি নাটোর স্টেটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন এবং তার সততার কারণে একটি উচ্চ পদে উন্নীত হন। কিন্তু প্রচলিত আছে, রামরতন ব্যানার্জী শুধু এই বাড়ির ভিত্তি ও কাঠামো তৈরি করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৮৯ সালে পুরনো বাড়ি ছেড়ে পেছনে আরো একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। কথিত আছে, ১৯০৯ সালে জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জী এই ভবনটি সম্পন্ন করেন। তিনি দুইবার দিল্লির কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জী তাঁর শাসনামলে অনেক কিছু তৈরি করেছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তিনি কলকাতা চলে যান।

এই জমিদার বাড়িতে প্রায় একশ’র উপরে কক্ষ রয়েছে। যার প্রায় সবগুলোতেই পাবেন কারুকার্যের ছোঁয়া। এতে রয়েছে কাছারিঘর, অতিথিশালা, নাচঘর, পুজামণ্ডপ, বৈঠকখানা, ভাঁড়ারসহ বিভিন্ন কক্ষ। জমিদার বাড়ির মূল ভবনটিই মুরাপাড়া ডিগ্রী কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার পাশে ১৯৯৫ সালে আরও একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ জমিদার বাড়ির চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় রয়েছে জমিদার বাড়িটি। কিন্তু মূল ভবনের পেছন দিকে গেলে দেখা যায়, কীভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই বাড়িটি।

উপরের তথ্যগুলো নেট থেকে পাওয়া। এখন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটা কলেজ হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় সাবলীল ভাবে সব জায়গা ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হবে না। আর করোনার এই সময়টাতে কলেজ বন্ধ রয়েছে, তার উপর মূল ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। তবে ওখানে গেলে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখতে না পেলেও পাশের শতবর্ষী আম বাগান বিশাল মাঠ-পুকুর, মন্দির সব মিলিয়ে একদিন ঘুরে বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটা জায়গা।


(২) সিংহের পাহাড়ায় মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির কলেজের সাইনবোর্ড।


(৩) সামনেই রয়েছে বিশাল পরিচ্ছন্ন পুকুর।


(৪) শেকলাবৃত্ত লৌহ কপাট। জমিদার বাড়ির অন্দর মহলটা দেখার আকাংখা মনের ভেতরে থেকেই গেলো।


(৫/৬) জমিদার বাড়ির সামনের আম বাগানটাও বেশ পুরোনো। কতোটা পুরোনো তা জানা হয়নি। তবে এই জায়গাটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। নিচে বসার জন্য কিছু বেঞ্চ নির্মান করে দিয়েছে, ইচ্ছে হলে সবুজ ঘাসেও বসা যায়।


(৭/৮) কাঠ ঠোকরা আর কাঠ শালিক ছাড়াও এলাকাটায় প্রচুর পাখি রয়েছে।


(৯) গাছের ছায়ায় বসে আছে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা।


(১০) এমন পরিবেশে ঝাল মুড়ি গুলো সত্যিই খেতে অসাধারণ হয়।


(১১) পর্যটকদের ফেলে যাওয়া খাবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছে কাঠ শালিক আর ভাট শালিকেরা।


(১২/১৩) আম বাগানের পরেই রয়েছে দুটি পুরোনো মন্দির, তবে নতুন রং করা।


(১৪) মন্দিরের পাশেই রয়েছে এই সাইনবোর্ডটি।


(১৫) পুরোনো মন্দিরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমি।


(১৬) মন্দিরের দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে তোলা কলেজের ছবি।


(১৭) মা ও শিশু।


(১৮) পর্যটকদের আনাগোনায় আম বাগানটা বেশ মুখরিতই থাকে।


(১৯) যাবার আগে ফুচকা ওয়ালার সাথেও একটু সাক্ষাৎ করতে হয়।


(২০) জমিদার বাড়িগুলো দেখে আমরা যতোটাই আনন্দ উপভোগ করিনা কেন আমার সব সময়ই মনে হয় এখানে রয়েছে বাংলার অনেক দুখী কৃষকের রক্ত-ঘাম। যদিও সব জমিদাররাই অতোটা খারাপ ছিলো না। তবে সব মিলিয়ে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির আমি প্রেমেই পড়ে গিয়েছি বলা যায়।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ