লাইফ ইজ বিউটিফুল

গাজী বুরহান ১৫ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার, ০৩:২২:২৯পূর্বাহ্ন বিবিধ ২০ মন্তব্য

মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ কিছুটা শূন্যের উপর দিয়ে শাঁ করে একটা বাইক পাঁশ কাঠিয়ে চলে গেল। মনে হল এই শব্দটাই লাইফ।

গাড়ী করে যাচ্ছি, চোখের সামনে ভাসল আকাশ সম পাহাড়। এই পাহাড়গুলো আমাদের বাড়ি থেকে দেখা যায়। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে পাহাড়কে সুপ্রভাত বলে দিন শুরু করি কিন্তু এত এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছিলনা। এখন মন চাইছে এখানকার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘের সাথে ডানা মেলে কিছুক্ষণ উড়তে। কিন্তু পারবনা, দুর্ভাগ্যক্রমে এর সব উঁচু উঁচু পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পড়েছে। খুব আফসোস হচ্ছে, মনে হচ্ছে দেশ বিভাগের সময় ভারত খুব প্ল্যান করে আমাদের এসব নিয়ে গেছে। আমাদের সাথে অন্যায় করেছে। কিন্তু পরক্ষণে ভাবলাম ভালোই হয়েছে ভারতে এই পর্বত-মালা পড়ায়। এখন তো প্রান খোলে  দেখতে পাচ্ছি। ভূমিকম্প থেকে কিছুটা রেহাই পাচ্ছি। সময় মত বৃষ্টি পাচ্ছি। আর কি চাই? শুনেছি চিন নাকি ভারত থেকে বৃষ্টি কিনতে চাচ্ছে। আরব আমিরাতে কৃত্রিম ভাবে পাহাড় তৈরি করা হবে শুধু মেঘের জন্য। আমার দেশের পাহাড় খেকোর দল গুলো অতি বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে গাছ তো কাটতই সঙ্গে পাহাড়ও খেয়ে ফেলত।

যেঁতে হবে লোভাছড়া চা বাগান। আমি একা না সঙ্গে পাঁচ জন। সেই ঈদের আগের দিন থেকে প্ল্যান... কোথায় যাব? ক'জন যাব? কিভাবে যাব?

সব শেষে সিদ্ধান্ত হল ঈদের পরের দিন সকাল ৯.৩০ এ বের হব, গন্তব্য লোভাছড়া।

লোভা ছড়াঃ এটি একটি চা বাগান। আমার বাড়ির পাঁশেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এখনো যাওয়া হয়নি। সেদিন রাস্তা ধরে হাঠছিলাম, পিছন থেকে একটা গাড়ী প্যাঁ প্যাঁ করতেছে। বিরক্তি চোখে তাকাতেই দেখি গাড়ির ভেতর থেকে কজন লোক হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকতেছে। কাছে যাওয়ার পর একজন বলল "ভাই আমরা ঢাকা থেকে এসেছি, লোভাছড়া চা বাগান কোন দিকে?"

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে, কত জনকে যে পথ দেখিয়েছি। আর আমি বাড়ির পাঁশে রেখেই যেঁতে পারছিনা!

 

মা এসে ঘুম থেকে ডাক দিয়ে বললেন তর কে যেন ফোন দিয়েছে। আমার বুজতে আর দেরী হল না, ইডিয়টরাই ফোন দিয়েছে আর সময় প্রতি বারের মত এবারো... হু সময় এখন ১০.৩০!

এবার প্রশ্ন, ওরা আমার ঘরের নাম্বার পেল কোথায়? ৩০ মিনিট ধরে ফোনে ট্রাই করে যখন আমায় পাচ্ছিলনা, তখন নাকি ফেইসবুক থেকে আমার চাচাতো ভাইয়ের নাম্বার নিয়ে পেল! হাঁহাঁ...

যাক, তাড়াতাড়ি শাঁওয়ার সেরে রওয়ানা দিলুম। মেইন রোডে এসে মনে পড়ল ইস! আমি তো সকালে কিচ্ছু খাইনি। এক কাজ করা যায়, সামনের বাজার থেকে কিছু খেয়ে নেয়া যাক, তারা এই রাস্তা দিয়ে যাবে সঙ্গে আমায় নিবে। তার আগেই আমার কাজ সমাধা হয়ে যাবে। নইলে ফইন্নিগুলোর জালায় কিচ্ছু খেতে পারবনা। যেই ভাবা সেই কাজ...

যেঁতে যেঁতে দেখি একটি পাহাড়ের নিচে ঝুপের মধ্যে কয়েকটি ছোট ছোট গাছের নড়াচড়া। ভয় পেলাম, বাঘ টাঘ নয়ত? কিন্তু না একটি মেয়ে কচুর লতি তুলতেছে। দেখলাম, মনে হল এই দৃশ্য টা দেখার জন্যই লাইফ!!

কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দেখলাম একটি ছেলে ৮/১০ বছর হবে, হাতে একটি সিগারেট নিয়ে ফোকতেছে আর গরু রাখতেছে। মনে হল এইটাই লাইফ।

আমাদের পাঁশের নৌকার চালকটি এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে অন্য হাত দিয়ে নৌকায় উঠা পানি ফেলতেছে। মনে হল এইটাই লাইফ।

ছোট নৌকা শাঁ শাঁ করে এগুচ্ছে। কি নীলাভ পানি! মনে হচ্ছে এই ত আমার দেশের সম্পদ,এই ত হীরের খনি, এই তেল, এই গ্যাস! মনে হচ্ছে এই পানি এখান থেকেই বোতলজাত করা যাবে। কিন্তু তাও কি রাখতে দিল ওই বোকার দল? ল্যাট্রিনের পাইপ সরাসরি নদীতে ছেড়ে দিল। আবর্জনা যা আছে সব নদীতে!!

নৌকা এগুচ্ছে তো এগুচ্ছেই, বড় বড় স্রোত এসে চোখ-মোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে। মনে হল লাইফ তো এখানেই!

পাঁশের নৌকার একটি ছেলে নৌকার পিছে দাঁড়িয়ে হিসু করতেছে মনে হল লাইফ তো এই দৃশ্যেই!!

যাক, আমাদের জার্নি শেষ হল। ভালোই কাটল। এই কয়েকদিনে মাথাটা হ্যাঁং হয়ে গেছিল। চা গাছের নতুন কুঁড়ি, উঁচু উঁচু পাহাড়ের দৃশ্য, নৌকা ভ্রমণ। সব মিলিয়ে মনটাকে কি আর খারাপ রাখতে দিল? \|/ নেক্সট রাঙামাটি

 

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ