রোনিন পাড়া টু ব্যঙ্গছড়ি

কামাল উদ্দিন ২৩ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ০৬:১৭:০৪অপরাহ্ন ভ্রমণ ২০ মন্তব্য


এ্যডভেঞ্চার ট্যুর করতে হলে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা গুলো অনন্য। পাহাড়ি দুর্গমতাকে যারা ভালোবেসেছে তারা পাহাড়ের ডাক কে অগ্রাহ্য করতে পারে না। আমি ও কিছুটা তাই। যখন নিজের কাজ করে হাঁপিয়ে উঠি তখনি একটু রিলাক্সের জন্য এ্যডভেঞ্চারের খোঁজে বেড়িয়ে পড়তে মন চায়। আর আমার পছন্দের একেবারে প্রথম সাড়িতে আছে পাহাড়ের দুর্গমতা। যেখানে সাড়ি সাড়ি সবুজ গাছ আকাশ ছুয়ে আছে, তারি ফাঁকে ফাঁকে ছোট মাচার উপর পাহাড়ের আদিবাসি বসতি, আর ঝুঁকিপূর্ণ উঁচু নিচু খাড়া ঢাল বেয়ে ছুটে যেতে হয় নির্ধারিত গন্তব্যে। কখনো দেখা যাবে সেই সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে নেচে নেচে নেমে আসছে পাহাড়ি চঞ্চলা ঝর্ণা বা ঝিরি পথ, আর সে সব পথে চলতে খেতে হয় প্রচুর জোঁকের কামড়, এমন ট্রাভেলটাই আমার সব থেকে পছন্দের।.

কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম বান্দরবানের গহীন অরণ্যে কয়েকটি ঝর্ণা দেখার জন্য। আমাদের ক্যম্প ছিলো রোয়াংছড়ির রোনিন পাড়ায়। রোনিন পাড়া থেকে রোয়াংছড়ি ফেরার পথে বিকল্প রাস্তা হিসাবে যেটা নির্বাচিত করা হয়েছিল সেটা ছিল আসলে ভুল পথ। পাহাড়ে একবার পথ ভুল করলে শোধরানো প্রায় অসম্ভব। রোনিন পাড়া থেকে রোয়াংছড়ি প্রায় সারাদিনের পথ, তাই রোনিন পাড়া থেকে ব্যঙ্গছড়ি এসে ওখান থেকে ট্রলারে রোয়াংছড়ি যাওয়ার পরিকল্পনায় আমরা রওয়ানা হয়ে কি যে ভুল করেছিলাম পরে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম। আমার আজকের পোষ্ট ঐ ভুল পথের এ্যডভেঞ্চারকে নিয়েই।


(২) রোনিন পাড়া থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে বন্ধুদের সাথে আমার ক্যমেরায় তোলা সেলফি।


(৩) আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় পথ ছিল বেশ পিচ্ছিল, সেই পিচ্ছিল পাহাড়ি পথে লাঠি হাতে বেড়িয়ে পড়ি ব্যঙ্গ ছড়ির উদ্দেশ্যে।


(৪) এই পথটায় এতো বেশী জোঁক ছিল যে প্রায়ই আমাদের দৌড়ে চলতে হচ্ছিল, যদিও পিচ্ছিল পথে দৌড়ানোটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। আর মাঝখানে এমন কোন জুম ঘর পেলে জিরিয়ে নিচ্ছিলাম।


(৫) রোনিন পাড়া থেকে ক্রমান্বয়ে আমরা নিচের দিকেই নামছিলাম।


(৬) এক সময় নেমে এলাম এমন পাথুরে ঝিরি পথে।


(৭/৮) নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট আকারের জলধারা, আর তার মাঝখান দিয়ে ছোট বড় শ্যাওলা ধরা পাথর দিয়ে হেটে যাওয়া যে কতোটা বিপদ জনক এটা ভুক্তভুগী ছাড়া বলতে পারবে না।


(৯) এক সময় গাইড বললো ঝিরি পথে আর চলা যাবে না, এবার সামনের পাহাড়টা টপকাতে হবে। পাহাড়ের কিছুটা উঠে তোলা আমার এই ছবিটা। জোঁকের কামড় থেকে বাঁচতে দৌড়ে চলা, তারপর পিচ্ছিল পাথুরে পথে চলার পর আমাদের শক্তি প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছিল। তারপর সামনের খাড়া পাহাড় দেখে মনটা একেবারে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিল।


(১০) পাহাড়ে উঠার সময় ছোট বেলার এমন পটকা ফোটানো গাছগুলো দেখে চমৎকৃত হলেও বেলে মাটির পাহাড় দেখে মনটা শংকায় ভরে উঠেছিল। সেই সাথে আমাদের সাথে ছিল কয়েকজন শতভাগ আনাড়ি লোক। এই ছবির পর দীর্ঘ দুর্গম পথে ক্যামেরা চালানোর সাহস বা শক্তি কোনটাই আমার ছিল না। তাই বেশ কিছু পথের ছবি দিতে পারলাম না।


(১১) এই পাহাড় চুড়াটা অনেকটা লম্বা রাস্তার মতো। আমরা যে পাশটা থেকে উঠেছি সেই দিকটা ছিল বেশী খাড়া এবং বাতাস ছিল উল্টো দিক থেকে। যার জন্য গরমে পাহাড় চড়তে গিয়ে আমরা খুবই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু চূড়ায় উঠার পরই বিপরিত দিকের হিমেল বাতাসে মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গীয় অনুভুতি। তাই ক্লান্তি দূর করার জন্য সবাই শুয়ে পড়েছিলাম স্বর্গের বিছানায়।


(১২) সামনের পাহাড়গুলো এতো চমৎকার লাগছিল যে, মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এসেছিল স্বর্গ এর থেকে সুন্দর হতে পারে না।


(১৩) এদিকে আকাশে আবারই মেঘের ঘনঘটা দেখে স্বর্গ ছাড়ার তাড়া ছিল বলে এই মেঠো পথে পা লাগালাম দ্রুত।


(১৪) একটু দূরে জুম চাষিরা ব্যস্ত ছিল নিজেদের কাজে।


(১৫) শন শন বাতাসে কলা পাতাগুলো অন্য রকম একটা মধুর শব্দ করছিল।


(১৬) আমাদের স্বাগতম জানানোর জন্য ব্যঙ্গছড়ির রাস্তার পাশটা প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছিল এমন ফুলে।


(১৭) তবে ব্যঙ্গছড়ি গ্রামে ঢোকার আগের রা্স্তাটা ছিল সত্যিই জগন্য। এতো বেশী আঠালো কাদা ছিল যে তা অতিক্রম করাটা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল।


(১৮) ওখানকার শিশুরা আমাদের দেখছিল উৎসুক নয়নে।


(১৯) ব্যঙ্গছড়িতে একটা দোকান পেয়ে তৃষ্ণা ও ক্ষুধা নিবারনে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম আমরা।


(২০) ব্যঙ্গছড়ি থেকে ট্রলারে করে আমরা যখন রোয়াংছড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই তখন প্রায় সন্ধ্যা। ঐ সময়টায় খালে পানি কম থাকায় অধিকাংশ সময় আমাদের ট্রলার ঠেলেই নিতে হয়েছিল।

কষ্ট যতোই হয়েছিল, ব্যঙ্গছড়ির আগে যেই পাহাড়টায় জুম ঘরগুলো ছিল, ওখানটাকে আমি বলবো নিঃসন্দেহে স্বর্গ। এবং আবারো কোন দিন ঐ স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছেটা মনের মাঝে পুষে রেখেছি স্বযতনে।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ