আগে থেকেই খুব নিরিবিলি বই পড়ার অভ্যাস আমার। বই এ দাগ দেবার অভ্যাসও আমার পুরোনো। নিজের জন্য যা স্বপ্ন দেখেছি তা এই লাইব্রেরীর বইগুলো। নিজের জন্য একান্ত কিছু সময় শত ব্যাস্ততাতেও কাটাতে চেয়েছি এখানে। এ আমার নিজস্ব ভূবন। নিজের ছোট্ট লাইব্রেরী রুমটায় কেটে গেছে আমার অনেকটা সময়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় বাচ্চাদের মানুষ করার জন্য নিজেকে এখানে পরিপূর্ণ করতে চেয়েছি।
বাচ্চাদের নোট করা, প্রশ্ন করা সবই একা নিরিবিলি পরিবেশে করতে অভ্যস্ত। সে সব পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের অনুভূতিগুলোর শব্দ জোড়া দিতে দিতে জমে গেছে আমার বেশ কিছু ডায়রি। লিখতে বা পড়তে পড়তে কখন যে ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ি! যতো দেরি করেই ঘুমাই না কেনো, তবু খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস হয়ে গেছে বেশ কিছু বছর। শুনেছি রাতজাগা চোখের পাতা ভোরের আলো ফোটার আগে আগে ভারি হয়ে আসে। কিন্তু এ চোখ আমার সাড়ে পাঁচটা কখনো কখনো ছ'টায় ঘুম ভেঙে উঠে পড়ে। উঠে সামনের বারান্দায় এসে বসতে ভিষণ ভালো লাগে। এটা এখন একপ্রকার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। সকালে গান শুনতে ভাল লাগে মৃদুসুরে। তাই নিজের পছন্দ করা গানগুলো ফোনে সেভ করে নিয়েছি।'জাগো নতুন প্রভাত জাগো, সময় হলো' চমৎকার একটা গান। সকালে এ গানটা শুনতে বেশ লাগে আমার। এ বারান্দায় বসে মস্তিষ্ক নামক কারিগর হাজার কথার ভিড় করে। দৃষ্টি খুঁজে আনে উঁচু গাছটার সবুজ পাতার বুকে বেগুনি ফুল। সব থেকে মজা লাগে কাঠঠোকরার কান্ড দেখে। সে জানলার থাই গ্লাসে গাছের বা নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে গ্লাসে অনাবরত ঠোকরাতে থাকে। পাশের বাগানে নাম না জানা কোনো বুনো ফুলের এক গন্ধ নাকে আসে, ভালো লাগায় ভরে থাকে চারপাশ। এতোসব ভালোলাগার মাঝেও কিছু আক্ষেপ জীবনে উঁকি মেরে ওঠে। চলতিপথে অনেক মানুষের সাথে মিশে আসি, একপ্রকার সৌজন্য সাক্ষাত যাকে বলে। হুম, এটা আমি জানি পৃথিবীর সব মানুষ মোটেও একরকম নয়। তাদের জীবন বৈশিষ্ট। আমার কাছে মনে হয় জীবন চলবে তার নিয়মে। যদিও তা চলে না। এমন সব চলার পথে ইদানিং এক চঞ্চলা হরিনীকে ভাল লাগে। নামটা আমারই দেওয়া। প্রানবন্ত উচ্ছল হাসির এক মানুষ। তবে রাগও আছে মেয়েটির। প্রচন্ড অভিমানী। বাচ্চাদের মতো। কখনো কখনো পরিনত মানুষের মাঝে শিশুসুলভ আচরনটাকে আমি শ্রদ্ধা করি।
ইদানিং মনে হয় জীবনটাকে একটু অন্যরকম করে ভাবলেও পারতাম। অর্থ কখনো মৃত্যু আটকে রাখতে পারে? এক ঘন্টা/দুই ঘন্টা বা একদিন? যাকে বলে লাইফ সাপোর্ট। চটকরে একদিন আক্ষেপ করে বলেছিলাম, হ্যাঁ পারে বৈকি!
বলেছি না? মস্তিষ্ক নামক কারিগর ছুটে চলে কথার পিছনে। এক কথার পিঠে চলে যায় অন্য কথার পিঠে।
নিজস্ব শখের মধ্যে একটা বেহালা কিনেছি, একবছর হলো। তিনি বললেন,'এখন বেহালা শিখবে!' বুঝে নিয়েছি ব্যাপারটা তার পছন্দ নয়। কারণ, কথা সে একবারই বলে। দিতীয়বার সে কোনো কথা বলে না। মানুষমতে এটা তার বৈশিষ্ট। মানুষের স্বভাবের বৈশিষ্ট বিষয়টাকে আমি বেশ প্রাধান্য দেই। কারণ, অযথা শব্দ দূষণ আমার অপছন্দ বরাবর। তাই দমিয়ে দিয়েছি এ স্বাদটুকুও। বেহালাটা পড়ে আছে,পড়ে থাক বাক্সবন্দী।
এও আমার সুরমা দানির দদুল্যমান এক স্বপ্নস্বাদ।
দূরে দৃষ্টি আটকে গেলো লালটকটকে রঙটার দিকে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। মানুষের হৃদয় যাকে বলে হৃদপিন্ড তার সাথে এর নাকি দারুন মিল। দুজনেরই রঙ রক্তলাল। হুম, আমি বুকের পাঁজর থেকে বের করা রক্তলাল হৃদপিন্ড দেখেছি। সোহরাওয়ার্দী হসপিটালে। শাশুড়িমায়ের অপারেশন করাতে গিয়ে। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে। রক্তলাল হৃদপিন্ড বের করা এক নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে নিজেই কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম মনে নাই। জ্ঞান ফিরে দেখি শাশুড়িমায়ের বেডেই আমি শুয়ে আছি।
সত্যিই তো! উঁকি মেরে কারো হৃদপিন্ড নামক বস্তুটিকে দেখতে নেই। মনের এক দরজা থাকে, তা বন্ধই থাকা ভালো। অযথা সেখানে উঁকি মেরে লাভ কি! কারো হৃদয়ভার কেউ বইতে পারে না। আচ্ছা, সবার হৃদপিন্ডের রঙ কি টকটকে লাল হয়, ঐ কৃষ্ণচূড়ার মতো?

,,,,, রিতু,,,,,
২৪/০৫/১৮ কুড়িগ্রাম।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ