রাজকন্যার স্বপ্নে রাজকন্যা (পর্ব-৭)

 

আর কেউ না। ফারিনের স্বপ্নের রাজপুত্র, স্বপ্ন পুরুষ সিয়াম সাথে ফারিনের ক্লাসমেড। ফারিন সিয়ামকে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে কিছুই বলার ভাষা পাচ্ছিল না অপলকহীন ভাবে চেয়ে থাকে কিছুক্ষন। সিয়াম কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো, ওরা ফারিনের দিকে খেয়াল করে নাই। ফারিন লম্বা শ্বাস নেয়  চিৎকার করে বলে ওঠে সিয়াম তুমি.? এবার সিয়ামের দৃষ্টি ফেরে অবাক দৃষ্টিতে ফারিনের দিকে তাকায় কিছুই বুঝতে পারে না। ফারিনের বোরকা পড়া,মুখে নেকআপ লাগানো চিনতে পারে না। সিয়াম কিছুটা হতবম্ব হয়ে যায়, কম বয়সি একটা মেয়ে তাকে নাম ধরে ডাকছে! সিয়াম ধমক দেয় কে তুমি.? ফারিন চুপ করে চেয়ে থাকে সিয়ামের দিকে তাকায় না চোখ নামিয়ে নেয়। চুপ করে আছো কেন.? জবাব দাও ইঞ্জিনিয়ার সিয়াম চৌধুরীকে নাম ধরে ডাকছো, তুমি আমাকে চিন.?।পাশে থাকা ছেলেটা বলে ভাইয়া শান্ত হোন ও আমাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ে আমার ক্লাসমেড খুব ভালো মেয়ে। এবার সিয়াম কিছুটা শান্ত হয়,ও আচ্ছা তা শোন আমি তোমার বন্ধুর বড় ভাইয়া আমাকে সিয়াম না সিয়াম ভাইয়া বলে ডাকবে।

 

ততক্ষনে ফারিনের চোখে পানির বন্যা বয়ে চলছে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না জ্বী সিয়াম ভাইয়া বলেই ক্লাসের দিকে দৌড়ে চলে আসল।

সিয়াম ফারিনের যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে, বুকের ভিতরটা কেমন জানি একটা হাহা কার করে ওঠে।

রাগটা কন্টোল করতে পারি নাই মেয়েটার সাথে এতটা রাগ দেখানো কি উচিত হলো ভাবতে লাগলো সিয়াম। ফারিন সোজা ক্লাসে ঢুকে পড়লো তারপর আর দেখা যাইনি, আচ্ছা আসি তাহলে বলেই সিয়াম মোটর বাইক নিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে ফারিন বই ব্যাগে ঢুকিয়ে ক্লাস শেষ না করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। আপা যাবেন.? রিক্সাওয়ালার ডাকে ফারিন সামনে তাকাল, কিছু না বলেই রিক্সায় চড়ে বসল।

 

নওরীন দাদুমনির কাছে খুব ভালো আছে, বিকালে বাসার পিচনে মাঠে খেলা করতে যায় দাদুমনির সাথে।

আজ পিংকিদের বাসায় যাব, মা নেই কোন বাঁধা নেই বলেই হি হি হি হি করে হাসল নওরীন। একদম তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে কোন সমস্যা হলে আমি জামানকে কি বলবো বললেন নওরীনের দাদুমনি।

তুমি টেনশন করো না আমি তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরব বললো নওরীন, আমি হাত পা ধুয়ে আসছি তুমি টেবিলে খাবার দাও।

 

আপা কোথায় যাবেন বলেন অনেকক্ষন ধরেই ঘুরছি, মিরপুর.. যাব বলেই ফারিন ডানে ইশারা করে। রিক্সা চালক রাস্তা চিনতে পারে তাই সোজা ফারিনের বাসার সামনে থামল। ফারিন ৫০ টাকা দিয়ে চলে যায়,চালক পিচন থেকে ডাকে আপা ভাড়া ৩০ টাকা।

বাকিটা আপনার বকসিস রেখে দেন বলেই ফারিন বাসার গেইট লাগিয়ে চলে যায়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় আম্মু,আম্মু বলে ডাকলো, জান্নাত বড় বোনের সাথে খোশ গল্প করছিলো। ফারিন চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে রুমে ঢুকল,জামান, জান্নাত,বড় খালামনি সবাই অবাক হলো। জান্নাত সবাইকে বললো চিন্তা করো না আমি ব্যাপারটা দেখছি বলেই ফারিনের রুমে যায়। ফারিন কেঁদেই চলছে

জান্নাত কিছুতেই ফারিনের কান্না থামাতে পারছিলোনা। জীবনে আজ প্রথম ফারিরকে এত কান্না করতে দেখছে জান্নাত।

ফারিনের প্রতিটা চোখের পানির ফোঁটা জান্নাতের বুকে রক্ত ঝারাচ্ছে, কি হয়েছে মা আমাকে বলো। ফারিনের কান্নার আওয়াজ আরো বাড়ে, মা কেউ কিছু বলেছে.? ফারিন কিছু বলে না, চুপ থাকে। জান্নাত অনেক কষ্টে ফারিনের কান্না থামাল,কিছু না বললে আমি কিভাবে বুঝব আমাকে সবট বলো। এবার ফারিন কান্নার কারন হিসাবে বললো আজ ইউনিভার্সিটিতে সিয়ামের সাথে দেখা হয়েছিলো।

জান্নাত হেসে বললো আলহামদুলিল্লাহ্! এটা তো সুখরব পাগলি মেয়ে তাহলে কাঁদছো কেন? ফারিন সিয়ামের সাথে ইউনিভার্সিটি মাঠে ঘটে যাওয়া সব কথা মাকে জানায়। জান্নাত সব শোনে বললো তুমি বোরকা পড়া,মুখ ঢেকে ছিলে, তাই সিয়াম চিনতে পারে নাই। কষ্ট পাবার কিছুই নাই আবার দেখা হলে পরিচয় দিবে।নেকাপ খুলে কথা বলবে আর কাঁদতে হবে না বলে জান্নাত মেয়ের চোখের পানি মুছে দিল। ফারিন নিজের ভুলটা বুঝতে পারল সে কান্না থামায়ে গোসলে গেল। রাতে ভালো ঘুম হয়নি নিজের বোকামির অনুতপ্ত হলো পরদিন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে বন্ধুটার সাথে কথা করলো। সে বললো সিয়াম পরিচিত কাউকে খোঁজতে এখানে ইউনিভার্সিটিতে আসছিলো। তাকে পায়নি তাই চলে গেছে তাছাড়া কোন পরিচয় জানে না।

ফারিন কষ্ট পেল বাসায় ফিরে মাকে সবটা জানাল জান্নাত বললো সিয়ামের ঠিকানা জানলে খোঁজে বের করা যেত। ঠিকানা ছাড়া কাউকে পাওয়া যায় না সিয়াম আবার যখন স্বপ্নে আসবে ওর ঠিকানা জেনে নিও আমরা খোঁজে নিব। পরদিন জামান,জান্নাত ময়মনসিংহে ফিরে আসে ফারিন আবার একা হয়ে পড়ে পড়াশোনায় মন দেয়।

 

২বছর পর..

নওরীনের পড়াশোনার খোঁজ নেয় চলছে ভালো অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। নওরীনও মেধাবী ছাত্রী ঠিক ফারিনের মতো নওরীন স্যার,মেম দের কাছে বড় বোনের গল্প শোনে মুগ্ধ হয়। ফারিন অনার্স কম্পলিট করে ঢাকায় মন বসে না ফিরে আসে ময়মনসিংহে চিরচেনা শহরে বাবা,মায়ের কাছে। ময়মনসিংহের নামকরা এক ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে ভর্তি হয়। জামান জানে বাসায় পড়াশোনা হবে না তাই ফারিনকে মহিলা হোস্টেল থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সবকিছু ঠিক টাক চলছিলো সবাই বলে ফারিনের বিয়ের বয়স হয়েছে,পড়াশোনাও যতেষ্ট হয়েছে। এবার ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও বাকি পড়াশোনা শ্বশুড়বাড়ী গিয়ে শেষ করুক। জান্নাত জানায় ছেলে ম্যাজিস্ট্রেড ঢাকায় নিজস্ব বাড়ি,গাড়ি আছে ফারিনকে দেখে পছন্দ করেছিলো। তারপর ফারিন ময়মনসিংহে ফিরে আসে খোঁজে পায়নি পরে বড় আপার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ছেলের বাবা৷ জান্নাতের এমন কথা শোনে জামানও খুশি হয় ছেলে ম্যাজিস্ট্রেড হলে তো বিয়ে দিতে কোন সমস্যা নেই৷ কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে.?

.......চলবে।

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ