রঙধনু আকাশ (২৩তম পর্ব)

ইঞ্জা ১৬ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ০৭:০৯:৩২অপরাহ্ন গল্প ২৯ মন্তব্য

ছয় মাস পরঃ

রুদ্রর মা, নীল, রেনু, রুহি আসছে আজ, ঘরে সাজ সাজ রব উঠেছে, অনিলা সব নিজে চেক করে করে দেখছে, নীলের রুম, ওর শ্বাশুড়ির রুম, রান্না সহ সব কিছুই অনিলা নিজে করেছে, এছাড়া পুরা ঘর সাজিয়েছে নীলের আগমন উপলক্ষে। 

কি হলো তোমার, ভাইয়াদের আসার সময় হয়ে এলো, রুদ্র ডাক দিলো। 

আসছি, শাড়ি ঠিকঠাক করতে করতে নিজেকে আয়নাতে আরেকবার দেখে নিলো অনিলা, এরপর হ্যান্ড ব্যাগ হাতে নিয়ে দ্রুত নিচে চলে এলো। 

চলো আমি রেডি। 

হুম চলো বলে রুদ্র অনিলাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠলো, আজ রুদ্র ওর বাবার এসইউভি নিয়ে যাচ্ছে, ওর পিছন পিছন আসবে অন্য একটি কার মালপত্র নিতে। 

রুদ্র ড্রাইভ করে গেইট দিয়ে বেরিয়ে রওনা হয়ে গেলো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। 

আজ রুদ্র খুবই খুশি, নীল অনেকটা সুস্থ এখন, সবাইকে মোটামুটি চিনতে পারছে, আরও কয়েক মাসের মধ্যে একদম সুস্থ হয়ে উঠবে ও। 

ঘন্টার কাছাকাছি লাগলো এয়ারপোর্টে পোঁছাতে, রুদ্র অনিলাকে বললো তুমি কনকর্স হলের টিকেট কেটে দাঁড়াও, আমি গাড়ি পার্কিং করে আসছি, অনিলা নেমে গেলে রুদ্র এগিয়ে গেলো পার্কিংয়ে গাড়ি রাখতে। 

গাড়ি রেখে রুদ্র এগুলো ভিতরের দিকে, ভিতরের গেইটে অনিলার কাছে গিয়ে বললো, চলো ভাইয়াদের ফ্লাইট নিশ্চয় ল্যান্ড করেছে। 

 

প্রায় বিশ পঁচিশ মিনিট পর রুদ্র প্রথমে খেয়াল করলো রেনুকে, পাশে নীল, এর পিছনে ওর মা আর রুহি। 

ঐ যে ওরা এসে গেছে, অনিলাকে দেখালো। 

অনিলা তাড়াতাড়ি মাথায় কাপড় তুলে উঁকি দিলো। 

আরও আধা ঘন্টার মতো লাগলো সবার বেরিয়ে আসতে, রুদ্র এগিয়ে গিয়ে নীলকে জড়িয়ে ধরলো, অনিলা দ্রুত নীল আর মমকে কদমবুচি করলে নীল অবাক হয়ে তাকালো। 

নীল ও অনিলা, রুদ্রর বউ, রুদ্রর মা বললেন। 

রুদ্র বিয়ে করেছে, নীল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। 

হাঁ বাবা, সে অনেক কথা, এখন চল। 

রুদ্র সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে এসে গাড়ি নিয়ে আসলো, ব্যাগ, লাগেজ সব অন্য গাড়িতে নিয়ে সবাইকে নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে রওনা হয়ে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।

গাড়ির পিছনের সিটে সব মেয়েরা বসেছে আর নীল সামনে, গাড়ি ছুটে চলেছে ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে। 

অফিসের কি অবস্থা?

নীলের প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকালো রুদ্র, মুখে বললো, ভালোই চলছে। 

ভালো, আমার সেক্রেটারি আছে?

আছে ভাইয়া।

হুম। 

 

বাসায় পোঁছেই রুদ্র সবাইকে ভিতরে পাঠিয়ে নিজে লাগেজ পত্র নামাতে সময় তদাকরি করলো, এরপর নিজে এসে বসলো ড্রয়িংরুমে, নীল রেনুকে না দেখে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়ারা কি রুমে গেছে? 

হাঁ, অনিলা জবাব দিলো। 

মম তুমি চেইঞ্জ করে নাও, এক সাথে খাবো। 

আচ্ছা যাচ্ছি। 

মম ভাইয়া কি একেবারে ঠিক হয়ে গেছে? 

না তেমন না। 

তাহলে অফিস, সেক্রেটারি এইসব মনে রাখলো কি করে? 

আমিও আশ্চর্য হয়েছি, অবশ্য ও হটাৎ হটাৎ করে অনেক কথায় বলে যে আমরাও অবাক হয়ে যায়। 

ভালো লক্ষ্মণ মম, আচ্ছা তুমি যাও, আমরাও চেইঞ্জ করে আসছি। 

রুদ্রর মা উঠে গেলে রুদ্র অনিলাকে বললো, চলো চেইঞ্জ করে আসি।

কিছুক্ষণ পর সবাই খাবার টেবিলে জড়ো হলো, সবার পাতে পাতে খাবার তুলে দিতে লাগলো অনিলা।

আজ এতো খাবার করলে মা? 

মম ছয় মাস পরে এলেন আপনারা, তাই কিছু ভালো মন্দ রান্না করলাম। 

মম মেয়েটি কে, তোমাকে মম ডাকছে, নীলের জিজ্ঞাসা। 

কিরে বাবা তুই এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি, ও অনিলা, রুদ্রের বউ। 

রুদ্রর বিয়ে হয়ে গেছে, আমি কই ছিলাম তখন? 

তখন তুই আমেরিকা ছিলি বাবা, নে খা বাবা, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। 

 

পরদিন সকালে রুদ্র অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে চলে এলো ব্রেকফাস্ট করতে, সেখানে বাকি সবার সাথে নীলও আছে। 

রুদ্র তুই রেডি? 

হাঁ ভাইয়া। 

আমিও যাবো আজ, এই খোকন ড্রাইভারকে বল আমার গাড়ি বের করতে। 

ভাইয়া মাত্র তো এলে, কয়েকদিন রেস্ট করো। 

রেস্টের দরকার নেই, আমি আজ যাবো। 

রুদ্র মার দিকে তাকালো, মা ইশারা করলো চুপ থাকতে।

রুদ্র ব্রেকফাস্ট শেষ করার আগেই নীল উঠে চলে গেলো নিজ রুমে। 

মম ভাইয়া এখন প্রেশার নিতে পারবেনা। 

রেনু বললো, ও নিয়ে চিন্তা করোনা, তোমার ভাইয়া এখন রুমে গেছেনা, দেখো সব ভুলে যাবে, তুমি অফিসে যাও।

রু তোমার কফি, দেখো তো ঠিক আছে কিনা, কিভাবে যে ব্ল্যাক কফি খাওনা, অনিলা হেসে হেসে বললো। 

একবার তুমি খেয়েই দেখোনা কেমন লাগে, রুদ্রও জবাবে বললো। 

রুহিকে আসতে দেখে রুদ্র উঠে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আমার সুইটির ঘুম ভাঙ্গলো? 

হু, ড্যাডা তুলে দিয়েছে। 

তাই, অনি তুমি আমার সুইটিকে ব্রাশ করিয়ে দাও, মম আমি আসছি। 

আল্লাহ হাফেজ বাবা।

 

রুদ্র অফিসে ব্যস্ত সময় পার করছে, ইন্টারকমে রিং বাজছে শুনে স্পীকার ফোন অন করলো, হুম কি বলো? 

স্যার আপনার শ্বশুর স্যার এসেছেন সাথে গেস্ট আছে। 

পাঠিয়ে দাও। 

দরজায় নক শুনে রুদ্র উঠে দাঁড়ালো, দেখলো সুলতান সাহেবের সাথে মামা শ্বশুরও আছেন, রুদ্র  সালাম দিয়ে বললো, আব্বু, মামা বসুন, উনারা বসলে রুদ্র প্যান্ট্রিতে ভালো কিছু নাস্তা আর কফি দিতে বললো। 

রুদ্র এতো ঝামেলার দরকার নেই, তা কেমন আছো বলো। 

জ্বি ভালো আছি, আপনার শরীর ভালো?

হাঁ ভালো আছি বাবা, নীল আসলো, ওরা সবাই ভালো আছে তো? 

হাঁ আব্বু, ভাইয়া অনেক কিছুই মনে করতে পারছে। 

আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো খবর।

দোয়া করবেন আব্বু। 

তা অবশ্যই দোয়া বাবা। 

তা মামা কেমন আছেন, ঘরের সবাই ভালো তো? 

হাঁ সবাই ভালো আছে, আমার মা কেমন আছে? 

জ্বি ভালো আছে আপনাদের দোয়াই। 

তা বাবা তুমি তো ব্যাংকের লোন সব শোধ করে দিলে, এখন কি নতুন করে লোন নিতে চাও, সুলতান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন। 

 

রুদ্র একটু চিন্তা করে বললো, না আব্বু, আসলে আমি ড্যাডের লোন শোধ করে দিয়েছি এই অনেক বড়, আমরা এখন লোন ফ্রি। 

তা খুব ভালো করেছো কিন্তু? 

কিন্তু কি আব্বু?

এতো বড় ব্যবসা তোমাদের, লোন ছাড়া এইসব ব্যবসা কি ভাবে চালাবে, আমি বলি কি এক হাজার কোটি টাকার একটা সিন্ডিকেট লোন করে দিই। 

আব্বু আসলে আমি অন্য চিন্তা করছি। 

কি চিন্তা বাবা? 

আব্বু এখন ভাইয়া সুস্থ হয়ে উঠছে, হয়তো কয়েক মাসের মধ্যে অফিস জয়েনও করবে, আমি ভাবছি দরকার হলে ভাইয়া সেই লোন নিক, আমি ভাইয়ার অবর্তমানে এমডি ছিলাম, ভাইয়া এসেছে যখন আমি সেই দ্বায়িত্ব ভাইয়াকে ফিরিয়ে দেবো। 

কি বলছো তুমি, তুমি এমডি পদ ছেড়ে দেবে, সুলতান সাহেব অবাক হলেন।

আব্বু এ পদ কখনো আমার ছিলোনা, আমি সাময়িক ভাবে এ দ্বায়িত্ব পালন করেছিলাম। 

হুম, তুমি এইসব ভালো বুঝবে বাবা, এনিওয়ে আমরা আসলে অন্য কারণে এসেছিলাম। 

অন্য কারণ কি আব্বু? 

আসলে সবাই তো দেশে এসে গেছে, তাই ভাবছিলাম তোমাদের অনুষ্টানটা করে ফেলি। 

আব্বু কি দরকার এইসবের। 

দরকার আছে বাবা, এ আমাদের সামাজিকতা। 

 

আচ্ছা আব্বু এক কাজ করলে ভালো হয়না? 

কি বলো। 

আজ সন্ধ্যায় বাসায় আসুন মামাকে নিয়ে, মমের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিন সব। 

হাঁ তাতো অবশ্যই করবো। 

তাহলে আজ রাতের ডিনার আমাদের বাসায়। 

ডিনার না বাবা, আরেকদিন হবে। 

না আব্ব, মামা সহ আসবেন যখন, তাহলে অবশ্যই খেতে হবে, আমি অনিলাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। 

পিয়ন এসে নাস্তা আর কফি দিয়ে গেলে রুদ্র বললো, সব্বু, মামা প্লিজ নিন। 

রুদ্র সেলফোনে কল দিলো অনিলাকে। 

অপর পাশে কয়েক রিং হতেই অনিলা রিসিভ করে বললো, রু কি করছো? 

অনি, আব্বুরা এসেছেন, আজ সন্ধ্যায় বাসায় আসবেন এবং ডিনার করবেন, তুমি মমকে একটু বলে দিও। 

আচ্ছা বলছি, তুমি কখন আসবে? 

আমিও সন্ধ্যায় চলে আসবো। 

ওকে রাখছি। 

বাই। 

রুদ্র আমরা এখন আসি, সন্ধ্যার সময় দেখা হবে। 

আচ্ছা আব্বু। 

সুলতান সাহেব নিজ শ্যালককে নিয়ে বেরিয়ে গেলে রুদ্র জিএম সাহেবকে ফোন দিয়ে রুমে আসতে বললো। 

 

________ চলবে। 

ছবিঃ গুগল ইমেজ 

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ