রঙধনু আকাশ (১৯তম পর্ব)

ইঞ্জা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ০৫:৪৫:২৭অপরাহ্ন গল্প ৩৩ মন্তব্য

আমেরিকার আকাশ তখনো অন্ধকার, রুদ্ররা আমেরিকার নিউইয়র্কে ল্যান্ড করেছে, কিছুক্ষন পর ওরা বেরিয়ে এলো লাগেজ নিয়ে, একটা টেক্সি এসে দাঁড়ালে রুদ্র সবার লাগেজ ব্যাক ট্রাংকে রেখে নিজেরা উঠে পড়লো, পূর্বদিকের আকাশে হাল্কা লালচে আভা মাত্র দেখা যাচ্ছে।

রুদ্র সব লাগেজ তোলা হয়েছিলো বাবা, রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন। 

হাঁ মম চিন্তা করোনা, সব তুলে রেখেছি। 

মা তুমি তো আগেও এসেছো নাকি? 

হাঁ মম বেশ কয়েকবার এসেছি, এইখানে প্রচুর আত্মীয়রা আছে, খবর পেলেই হবে, সব উড়ে আসবে, বলেই ফিক করে হাসলো অনিলা। 

না এখন নয় অনি, ভাইয়ার অপারেশনটা হয়ে যাক, এছাড়া আমাকে দেশে তাড়াতাড়িই ফিরতে হবে। 

ঠিক আছে, ও আমি বুঝতে পেরেছি। 

রুদ্ররা যে বাসা ভাড়া নিয়েছে সেইটি এক ব্যাংকারের, উপরে নিচে মিলে পাঁচটি রুম, ভাড়া দুই হাজার ডলার অন্যান্য খরচা সহ।

নীল সুস্থ হয়ে গেলে সুমী হোস্টেলে উঠে যাবে এবং ভাড়া বাসাটি ছেড়ে দেওয়া হবে এমনই প্ল্যান করা আছে। 

ওরা যখন ভাড়া বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো তখন সকাল সাড়ে সাতটা, রুদ্র টেক্সি ফেয়ার মিটিয়ে দিয়ে মালামাল নামিয়ে নিয়ে মা আর অনিলাকে নিয়ে বাসার দিকে এগুলো। 

 

সুমি ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেরুচ্ছিলো, দরজা খুলে বেরুতে যাবে হটাৎ রুদ্রদের দেখে চিৎকার করে উঠে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।

কিরে কাঁদছিস কেন?

আমার খুব খুশি লাগছে ভাইয়া, বলেই মাকে জড়িয়ে ধরলো। 

কেমন আছিস তোরা, রুদ্রের মা জিজ্ঞেস করলেন। 

ভালো আছি মম, তুমি কেমন আছো? 

ভালো আছি আমি, দেখ সাথে কে এসেছে। 

অনিলার দিকে তাকিয়ে মাকে ছেড়ে অনিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ভাবী খুব ভালো লাগছে তোমাকে দেখে। 

ইতিমধ্যে রেনু রুহি বেরিয়ে এসেছে সুমির চিৎকার শুনে, রেনু এগিয়ে এসে শ্বাশুড়িকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো, ওদিকে রুহি তো খুশিতে আটখানা, দৌড়ে এসে রুদ্রর কোলে উঠে জড়িয়ে ধরলো। 

আসসালামু আলাইকুম ভাবী, অনিলা রেনুকে সালাম দিলে রেনু ফিরে তাকিয়ে বললো, ওয়া আলাইকুম আসসালাম,  মম ভিতরে আসেন আপনারা। 

রুদ্রর মা ও রুদ্র খেয়াল করলো রেনু অনিলাকে এভয়ড করলো। 

সবাই ঘরে প্রবেশ করলে রুদ্রর মা জিজ্ঞেস করলেন, নীল কই? 

উপরে আছে ও, আসেন মম বলেই রুদ্রর মাকে নিয়ে উপরে চলে গেলো রেনু। 

ভাইয়া, ভাবী খুব ভালো লাগছে তোমাদের দেখে, এখন তোমরা রেস্ট করো, আমার ইউনিভার্সিটির সময় হয়ে গেলো, আমি বিকালেই চলে আসবো। 

আচ্ছা যা। 

মমকে বলো হাঁ, বলেই সুমি বেরিয়ে গেলো ইউনিভার্সিটির উদেশ্যে।  

 

রুদ্র অনিলাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসলো, কিছুক্ষণ পর ওর মা আর রেনু নীলকে নিয়ে নিচে নেমে এলো, নীল রুদ্রকে দেখে বললো, রুদ্র তুই এসেছিস, ড্যাড তোকে কি ঘর থেকে বের করে দিয়েছে?

রুদ্র থমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। 

কেমন আছো ভাইয়া? 

আমি ফিট আছি, ঐ মেয়েটা কে? 

রুদ্রর মা বললেন, নীল ও রুদ্রর বউ। 

রুদ্রের বউ, ওতো বিয়ে করে নাই মম? 

না করেছে, তুই তখন এইখানে এসেছিলি। 

এই মেয়ে তুমি রুদ্রকে বিয়ে করেছো কেন, ড্যাড ওকে মারবে, তোমাকেও মারবে। 

মারবেনা বাবা, ড্যাড খুশি হয়েছে। 

তাই, আচ্ছা ভালো তো, রুদ্র তোর বউকে বলনা আমার সাথে এংগ্রি বার্ড খেলতে। 

অনিলা এগিয়ে এসে বললো, অবশ্যই খেলবো ভাইয়া। 

নীল তুমি উপরে যেয়ে খেলো, রেনু বললো, মুখটা থমথমে হয়ে আছে। 

নীল বাধ্য ছেলের মতো উপরে চলে গেলে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, ভাবী কোন রুম খালি আছে? 

নিচের সব রুম খালি আছে, ব্রেকফাস্ট তো করো নাই নিশ্চয়, ফ্রেস হয়ে নাও, আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি।

 

রুদ্রর মন খারাপ হয়ে গেলো, রুম একটাতে নিজেদের ব্যাগ রেখে বেডে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে থাকলো ও, তা দেখে অনিলা পাশে এসে বসলো। 

কি হলো তোমার, মন খারাপ? 

না তেমন কিছু না। 

আমি বুঝতে পেরেছি ভাবীর অভিমান এখনো যায়নি, তা নিশ্চয় এক সময় চলে যাবে, তুমি এ নিয়ে মন খারাপ করে থেকোনা, আচ্ছা উঠো এখন, যাও ফ্রেস হয়ে এসো। 

হুম যাচ্ছি, বলেই রুদ্র উঠে গেলো নিজের ব্রাশ, টুথপেষ্ট আর টাওয়াল নিয়ে। 

ওদিকে রুদ্রর মা ফ্রেস হয়ে এসে রেনুকে হেল্প করতে লাগলেন, সাথে কথাও পাড়লেন, রেনু আমি জানি রুদ্রর এইভাবে বিয়ে করাটা তুমি মেনে নিতে পারোনি, তাই বলে ওর সামনেই তা দেখানো কি উচিত, আগে তো এমন ছিলেনা তুমি?

রেনু কান্না করে দিলো, মম ওকে আমি নিজের ছোটো ভাইয়ের মতো মনে করতাম, সে এইভাবে আমাদের ছাড়া বিয়ে করে ফেলবে তা ভাবতেই পারিনি।

রুদ্রর মা রেনুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, পাগলি, তোকে তো সব খুলে বলেছি, রুদ্র আমার কথায় বাধ্য হয়েছে, এছাড়া অনিলাও তো কোনো অংশে কম না, তোর জা হিসাবে বেশ মানায় ওকে, রুদ্র যেমন তোর ছোট ভাই, তেমনি অনিলাও, এরপরেও যদি না হয় তাহলে আর কিছুই বলার নেই। 

রেনু হেসে দিলো, মম ঠিক আছে, আমি বুঝতে পেরেছি। 

এইতো লক্ষ্মী মা আমার।

 

ব্রেকফাস্ট করে রুদ্ররা দিলো ঘুম, জ্যাট ল্যাগের কারণে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে রেনু ওদের ঘুমাতেই দিলো, এরপর দুপুর দুইটার সময় ডেকে দিলো লাঞ্চ করার জন্য, রুদ্ররা ফ্রেস হয়ে এসে ডাইনিংয়ে বসলে খাবার দিতে শুরু করলো রেনু। 

আজ রেনু পোলাও, মুরগির রোস্ট, বিফ ভুনা, মিক্সড ভেজিটেবল, কাবাব করেছে দেখে অনিলা বললো, ভাবী এতো কিছু করলেন কখন? 

এ আর এমন কি, তুমি প্রথম এলে, যা করেছি কমই করেছি, এখন খাওয়া শুরু করো। 

ভাবী আপনিও আসুন। 

হাঁ আমিও বসছি। 

রুহি ইতিমধ্যে রুদ্রর কোলে উঠে বসেছে, অনিলাকে বসতে দেখে দ্রুত নেমে গিয়ে অনিলার কোলে উঠে বসে বললো, তুমি আমাকে খাইয়ে দেবে?

অবশ্যই কেন নয়। 

না না অনিলা ও নিজেই খাবে, তুমি ওকে নামিয়ে দাও, রুহি নেমে এসো, রেনু ডাক দিলো। 

ভাবী কোনো সমস্যা নাই, আমি খাইয়ে দেবো আর নিজেও খাবো। 

অনিলা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও খেতে শুরু করলো, অনিলা নিজে এক লোকমা খেলে আরেক লোকমা রুহিকে খাইয়ে দিতে লাগলো।

 

সন্ধ্যার পর রুদ্রের রুমেই সব জড়ো হলো, রুদ্র আর অনিলা তাদের ব্যাগ গুলো খুলছে, অনিলা বার্বি ডলের কালেকশনটি নিয়ে রুহিকে দিলে রেনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, এতো লেটেস্ট কালেকশন, অনেক দামি, তুমি এতো দাম দিয়ে এইটা আনলে কেন? 

অনিলা হেসে বললো, ভাবী ও তো আমার মা, ওর জন্য না আনলে কার জন্য আনবো, অবশ্য এ আমার টাকা দিয়ে কিনেছি ভাবী। 

রুহি মাম্মিকে থ্যাংক ইউ বলো। 

রুহি এসে অনিলাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললো, থ্যাং উ (থ্যাংক ইউ)। 

মোস্ট ওয়েলকাম মা। 

রুদ্র দুইটা পারফিউম নিয়ে রেনুকে দিয়ে বললো, ভাবী দেখোতো পছন্দ হয় কিনা, আরও দুইটা সুমিকে দিয়ে বললো, এগুলো তোর, আর ভাবী এই নাউ বিভিন্ন ধরণের চকলেট আছে, আমাদের সবাইকেও দিও। 

অনিলা নিজের ব্যাগ থেকে দুইটা ক্লাচ (পার্টি ব্যাগ) বের করে একটা রেনু, আরেকটা সুমিকে দিলো। 

বাহ খুব সুন্দর তো, তোমার বেশ চয়েজ আছে, রেনু বললো। 

রুদ্র রেনুকে দুইটা টি শার্ট দিয়ে বললো, এগুলো ভাইয়ার। 

 

তা ভাবী ডলার গুলো পেয়েছো? 

হাঁ পরদিনই আমার একাউন্টে পেয়েছি। 

তা অপারেশন কবে? 

পরশুদিন, আগামীকাল ভর্তি করাবো। 

কোনো কম্পলিকেশন কি আছে,,ডাক্তার কি বললো? 

তেমন না, ওরা বললো এমন অপারেশন ওরা প্রতিদিনই করে। 

তাহলে তো ঠিক আছে, তা ভাইয়া সুস্থ হওয়ার চান্স কেমন, কি বললো ডাক্তাররা, রুদ্র আবার জিজ্ঞেস করলো।

ডাক্তাররা বলছে খুবই ছোটো একটি ব্লাড ক্লট জমে রয়েছে, তা রিমুভ করে দিলে ছয় মাসের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। 

রুদ্রর ফোনে রিং হচ্ছে শুনে রুদ্র উঠে গিয়ে বেড টেবিল থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে হ্যালো বললো। 

আসসালামু আলাইকুম স্যার। 

জিএম সাহেব ওয়ালাইকুম আসসালাম, বলুন। 

স্যার, চেয়ারম্যান স্যারের উকিল সাহেব এসেছেন, আপনার সাথে কথা বলতে চান।

দিন প্লিজ। 

ওপাশ থেকে উকিল সাহেব বললেন, রুদ্র আমি তোমার বাবার উকিল কম, বন্ধু বেশি, আমার নাম এডভোকেট রহমান। 

সালাম আংকেল, ড্যাডের কাছে আপনার কথা শুনেছিলাম, বলুন আংকেল। 

তোমার বাবা একটা উইল করেছিলেন যা উনার ইন্তেকালের ছয় মাস পর তোমাদের সবার উপস্থিতিতে পড়ে শুনানোর এবং ইম্পলিমেন্ট করার কথা বলেছিলেন। 

কি বলেন আংকেল। 

হাঁ এটাই সত্য, এখন আজ শুনলাম নীল নাকি অসুস্থ।

হাঁ আংকেল আশা করি ভাইয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে, আগামী পরশু ওর অপারেশন হবে। 

তাহলে এক কাজ করো, আমি জিএম সাহেবের কাছে ফোন নাম্বার দিয়ে রাখছি, নীল সুস্থ হয়ে উঠলে কল করো আমাকে, আমি আসবো। 

জি আংকেল, সালাম।

 

........ চলবে।

ছবিঃঃ কালেক্টেড।

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ