যৌতুকের বলি…৪র্থ পর্ব

মনির হোসেন মমি ১৪ নভেম্বর ২০১৪, শুক্রবার, ০৮:৪৯:১৬অপরাহ্ন গল্প ২২ মন্তব্য

ব্যাস্ত নগরীতে চলছে ব্যাস্ত মানুষের ছুটাছুটি।কারো এক মুঠো অন্নের খোজেঁ তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।নাগরীক জীবনে কর্ম তৎপরতায় সব চেয়ে বেশী বিরক্তকর হলো যান জট।অনেক প্রয়োজনীয় সময় যানজটে পরে নষ্ট হয়ে যায়।সাংবাদিক রায়হান সাহেব তেমনি একটি বিশাল যানজটে পড়ে পাবলিক বাসে বসে বসে দেখছিলেন কর্ম চঞ্চল মানুষের কি ভোগান্তি।এক সময় ঢেলা গাড়ীর মতো বাসটি যানজট ঢেলতে ঢেলতে তার গন্তব্যে পৌছান।

বিশাল অট্রালিকায় তার প্রকাশনা অফিসে সম্পাদকের মুখো মুখি বসেন।গোল গোল হাতের লেখায় একটি ডায়রী সম্পাদকের বরাবর পেশ করেন।কয়েকটি কালো আধারেঁ মিশ্রিত ছবি একটি খাম থেকে বের করেন।ছবিগুলো মনে হয় কাচাঁ হাতে তোলা তাই তেমন একটা লোকগুলোর ফেইস স্পষ্ট বুঝা যায় না কিন্তু কারোই বুঝতে অসুবিদা হবে না যে ছবিতে কিছু লোক ঘণ কালো অন্ধকারে বাশ ঝাড়ের পাশে দা কোদাল নিয়ে কি যেন করছেন।ভালো করে সেইগুলো লক্ষ্য করছেন সম্পাদক সাহেব।

-চমৎকার!রায়হান,আমি জানতাম তুমি তা পারবে ।এবার আমার খেলা...তোমাকে বলা হয়নি একটি কথা,সে মানে রশিদ মোল্লা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধেও গ্রামে আল বদর,আল সামস্ বাহিনীদের সহযোগিতা করেছিল।

তুমি হয়তো অবাক হবে আমি এত কিছু জানি কি করে?তবে শুনো, মেয়েটির বাবা আলমাছ আলী সে আমার দূর সম্পর্কের চাচা হন।তোমার কাছে যখন মেয়েটির পরিবারের বিষয়াদি জানলাম তখন থেকেই আমি তার পরিচয় খুজেঁ বের করতে আমার স্পেসিয়াল লোক লাগাই ঠিক তুমি আসার দু'দিন আগেই আমি আমার কাঙ্খিত রিপোর্ট পেয়ে যাই।

-ধন্যবাদ স্যার,আমি অবাক এবং কৃতজ্ঞ, তবে সেই গ্রামটি বিভিন্ন কু-সংস্কারে ভরে গেছে...এক মাত্র ঐ একটি লোকই সারা গ্রামটিকে জিম্মি করে রেখেছেন, গ্রামের তরুণ সমাজ আগের চেয়ে অনেক সচেতন তবে লোকটির ক্ষমতার বলে তারা কোন কিছুই করতে পারছে না এমন কি কেউ নেই যে তরুণদের সাহস দিবে।

-হুম!তুমি কালই সেখানে আবার চলে যাবে আমি এর মধ্যেই পত্রিকায় প্রকাশ করব এই ডায়রী থেকে নিখোজঁ মেয়েটির অজানা যত তথ্য।

-স্যার,সেখানে আরেকটি সমস্যাও আছে সেখানকার থানার বড় কর্মকর্তা, মধুর হাড়ির মতো রশিদ মোল্লার সাথে তার সম্পর্ক।

-সব ঠিক হয়ে যাবে,আগে রিপোর্টটি প্রকাশ করি।

-ওকে স্যার, তাহলে কালকেই আমি রওয়ানা দিবো।

-ইয়েস!

রায়হান সাহেব ঢাকা উত্তরার বাসীন্ধা উচ্চ শিক্ষিত আর সরকারী উচ্চ পদস্হ কর্মকর্তায় ভর পুর তার বংসে।সেই সুবাদে সে এতটা সাহসী, যে কি না এমনি এক প্রভাবশালীর সাথে টক্কর দিচ্ছেন তার লক্ষ্য এ দেশের সব কুলাঙ্গার প্রভাবশালীর মুখোশ উম্মোচন করা।ফুলীর কেইসটির জয় দিয়ে সে তার লক্ষ্যে পৌছতে চান।আজ এমনি প্রয়োজনীয় মুহুর্তে সে পেয়ে যান তার কয়েক জন আত্ত্বীয় যারা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় রয়েছেন।তাদের সাথে বেশ কয়েক বার মত বিনিময় করেন কখনও মোবাইলে কখনও বা স্ব-শরীরে।..............................................................................................................................

ভোরের ঘণ কুয়াশায় গ্রামীন মেঠো পথ দিয়ে কাধে বাশের ভার দিয়ে তাল রসের কসল বয়ে নিয়ে চলছেন কোন এক বিক্রেতা তা আমাদের গ্রাম বাংলার চিরচেনা রূপ।এমনি কুয়াশায় চায়ের দোকানগুলোও জমজমাট।দু'একজন পত্রিকা হাতে চা পানে মগ্ন তাদের এক জনের চোখে পড়ে বেশ বড় করে হেড লাইন "রাজাকার রশিদ মোল্লার ভয়ে তটস্ত গ্রাম বাসী"।বেশী পাওয়ারের চশমা লাগানো চোখে এক বৃদ্ধ বার বার বেশ উৎফুল্ল নিয়ে একটি খবর পড়ার চেষ্টা করছেন।

-এই হুনছছনি আমাগো রশিদ মোল্লা নাকি রাজাকার ছিল।

শুধু হেড লাইন পড়ে খ্যান্ত বৃদ্ধ চোখেঁ তেমন একটা দেখতে পায় না বলে পাশে দারানো চা পান করছিলেন সাংবাদিক রায়হান সাহেব সেও পত্রিকায় নিউজটি পড়ছিলেন বৃদ্ধটি বেশ কৌতুহল নিয়ে বলছেন লেখককে।

-বাবা,তুমিতো সেই সাংবাদিক তাই না?আমিতো চোখে কম দেহি তুমি জোড়ে জোড়ে ....এই ..যে এই... খবরটা পড়ে শোনাবা?

মাথা ঝুলিয়ে উত্তর দেন লেখক।

-আমিওতো সেটা পড়েছি এবং আপনাদের আমি আজ ঠিক তার চেয়েও আরো কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা বললব যদি আপনাদের অনুমতি পাই...

সেখানে বসে দাড়িয়ে থাকা সবাই হ্যা হ্যা বলে সম্মতি দেন......

ফুলী এবং চম্পা দু'জনেই মাইল দু এক হেটে এসে রশিদ মোল্লা প্রতিষ্ঠিত স্কুলে লেখা পড়া করত।প্রতি দিনের মতো রোমিও সেজে রশিদ মোল্লার ছেলে আকমল এবং তার দুএক জন বন্ধুদের নিয়ে ছেলে মেয়েদের স্কুল যাওয়া আসা পথে দাড়িয়ে থাকত অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও মেয়েদের উত্ত্বেক্ত করতে প্রস্তুত ছিল।

হাতে বেসলেট কানে দুল মাথায় লম্বা চুল বাহারী রংয়ের ছাপা সার্ট।প্রতিদিনের মতো আজও তাদের দেখে ফুলী এবং চম্পা পাশ কেটে চলে যেতে প্রস্তুতিতে বকাটে আকমলের অকথ্য কথনে বিরক্তিকর ঘটনা যেন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।আজ অকথ্য কথনের সাথে ফুলীর উড়না ধরে টান দেয়।মেয়ে দুটি ভয়ে দৌড়ে নিজ বাসায় ফেরত চলে যায়,আজ যাওয়া হলোনা আর... তাদের স্কুলে।

অসময়ে বাসায় ফিরে আসাতে বাবার প্রশ্নের জবাবে মেয়ে কেদেঁ ফেলেন।

-বাবা আমি আর স্কুলে যাবো না।

-কি কছরে মা তোমারে এতো কষ্ট কইড়া নয় ক্লাশে তুললাম আর তুমি অহন কও পড়বা না!

-না বাবা আমিতো পড়তে চাই কিন্তু ঐ পাড়ার মোড়লের ছেলেডা বড়ো জালাতন করে...আমার ভয় হয় যদি সে কিছু একটা করে বসে...

ফুলীর দু'চোখে কান্নার জল,অসহায় বাবার চোখেঁ মেয়ে নিরাপত্তার অব্যাক্ত বেদনা।মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশে আজও মা জাত যেন অবহেলিত অত্যাচারিত।পুরুষ শাসিত সমাজে মা জাত যেন দাসী বান্ধী কিংবা বিশ্ব বাজারে বিক্রিত পর্ণ।প্রতি দিনের খবরের কাগজে দেখি এ সব নর পশুদের যন্ত্রনায় কোথাও না কোথাও স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের  মৃত্যু কিংবা আত্ত্ব হত্যার খবর পাওয়া যায়।এ সব খবর কেউ পত্রিকায় পড়ে মজা পান কেউ বা এদেরকে নিয়ে রাজনিতীর ফয়দা লোটান, প্রতিকার কিংবা ভিক্টিমদের সহযোগিতার কাছেও যান না কেউ, তাই পর পর সমাজের আনাচে কানাচে ঘটতে থাকে অঘটন,বোনের ইভটিজিং কিংবা ছাত্রীর ইভটিজিং রক্ষায় হত্যার স্বীকার হন অভিযোগকারী অথচ আইন করা আছে তা কেবল আইনের পান্ডুলিপিতে সীমবদ্ধ এর বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ দেখতে পাইনা।এ সব ঘটনা প্রতিকারে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট  বসবে আমার মনে হয় না তা এ যাবৎ কারো কোন উপকারে এসেছে বরং আইনের লোক হয়ে আইনকেই গিলে ফেলেন নর পশু এক পুলিশ।কোথাও নারীরা আজ নিরাপদ নয় কি কর্ম ক্ষেত্র কিংবা শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বত্রই আজ নারীরা যেন ভোগের পাত্র।এ সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে থেকে জাগাতে হবে নতুন প্রজন্মকে,সকল অন্যায়ের বাধ ভেঙ্গে ঘুণে ধরা সমাজকে বদলানোর সময় এসেছে।

চলবে.....

যৌতুকের বলি ৩য় পর্ব

ছবি:অনলাইন

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ