মেয়েটি

রিমি রুম্মান ২ অক্টোবর ২০১৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১৩:৫৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

৬/৭ বছরের মেয়েটি বাড়িটিতে কাজ করে। কাজ বলতে ছোট খাটো ফরমায়েশ। বাকিটা সময় আমার ৪ বছরের ছেলের সঙ্গে খেলাধুলা করে... ইয়েস, নো, গুড টাইপের কথাবার্তা বলে কাটে। কিন্তু সমস্যা হলো__ আমি যখন আমার ছেলে ২ টাকে গা ঘষে ঘষে গোসল করিয়ে দেই, লোশণ দিয়ে দেই, খাইয়ে দেই তখন সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। ভীষণ বিরক্ত হই। ধম্‌কে সরে যেতে বলি। রাতে ছেলেদের জড়িয়ে ঘুমাই। মেয়েটি অন্য রুমে। রাত গভীরে ঘুম ভেঙ্গে গেলে রুমে আসা চাঁদের আলোয় দেখি সে আমারই রুমের ফ্লোরে ঘুমিয়ে ! হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে অন্ধকারে ফ্লোরে কাউকে ঘুমাতে দেখে ভয় পেয়ে যাই, বিধায় সকালে উঠে তাকে তিরস্কার করি।

অবকাশ যাপনের সময় ফুরিয়ে আসে। আমি ফিরে আসি আমার নিজস্ব ঠিকানায়। কিন্তু লক্ষ করি __ যখন আমি আমার সন্তানদের গোসল করাই,খাওয়াই, ঘুম পাড়াই তখনই বিস্ময়করভাবে মেয়েটির শুন্যতা অনুভব করি। সেই জ্বলজ্বল করা চোখ জোড়া, ফ্যালফ্যাল চাহনিতে চেয়ে থাকা, হাসিটা___ সব, সব !

কি জানি, কেন এমন চেয়ে থাকা ! সে কি কল্পনায় ডুবে যেতো, কিংবা স্বপ্নে বিভোর হতো___ তার মা তাকে এমন যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে... গা ঘষে ঘষে গোসল করিয়ে দিচ্ছে, কিংবা গভীর মমতায় বুকে আগলে ঘুমাচ্ছে...

তার না হয় মায়ের আদর যতন পাওয়ার সুযোগ নেই, নিষ্ঠুর "অভাব" তাকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। তাই বলে কি দূর থেকে চেয়ে দেখাটাও অপরাধ ! আমি অপরাধ বোধে ভুগতে থাকি একাকী রাতের আঁধারে সবাই ঘুমিয়ে গেলে। আমার সন্তানকে মেয়েটির অবস্থানে ভাবি। ঘাম্‌তে থাকি। ঢক্‌ঢক্‌ করে পানি গিলি। রাতের নিস্তব্দতা ভেঙ্গে ঢকঢক্‌ করে পানি খাওয়ার শব্দ এটম বোমার শব্দের মতোই বিঁধে নিজের ভেতরে।

যে কোন বিবরণ নিখুঁতভাবে তুলে ধরার জন্যে যথেষ্ট পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকতে হয়। আমার সেই ক্ষমতা নেই। থাকলে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যেতো এই বন্ধন-বিচ্ছেদের বাস্তব গল্পটি।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ