মেহেদী সাজে ঈদ

রোকসানা খন্দকার রুকু ১৩ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:১৪:৪২পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

“ ও মন, রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”- আর একদিন পরেই খুশির ঈদ। ত্রিশদিন রোজা রাখার পর ঈদ সত্যিই উপভোগ্য। নতুন পোশাকে ও নানা বাঙ্গালী সাজে আত্নীয়- স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে ঈদ পালন করা হয়। তার আগে কেনাকাটাও হয়, বিশেষ করে তরুন সমাজ সবচেয়ে বেশি আপ্লুত থাকে।

ঈদের আগের দিন মেয়েদের মেহেদী দিবস হয়। বাঙ্গালী মেয়ে মানেই চাই নানা রঙ্গের-ঢঙ্গের মেহেদীর সাজ। এ সময় বিউটি পার্লারগুলোতে মেহেদী লাগানোর ভীর লেগে  থাকে। তবে যারা বাড়িতে মেহেদী লাগান তাদের অন্যান্য কেনাকাটার সাথে টুক করে মেহেদী কিনে ফেলাও খুব জরুরী। চাঁদরাতে কোনকারনে মেহেদী পাওয়া না গেলে অনেকেই আবার ছোটেন মেহেদী কিনতে। তা না হলে ঈদের সাজ যেন মাটি। আর সারাবছরের অপূর্ণ ঈদের খচখচানি যেন থেকেই যায়।

ছোটবেলায় মা-খালাদের সাথে আমরাও মেহেদী পরতাম পাটায় ডলে ডলে। তখন যেহেতু বাজারে মেহেদীর এতো বাহার ছিলো না তাই ঈদের দুদিন আগে থেকেই শুরু হতো মেহেদী আয়োজন। তাই তখন প্রায় সব বাড়িতেই মেহেদীর গাছ  ছিলো।

গাছের পুষ্ট পুরাতন পাতায় রঙ বেশী হয় তাই সেগুলোই বেছে বেছে তোলা হতো। তারপর ধুয়ে পাটায় মিহি করে বেঁটে লাগানো হতো। যতো মিহি ততো রঙ। নখে, হাতে-পায়ে যাতে বেশি রঙ হয় সেজন্য হাত-পায়ের নখ চুন, সোডা দিয়ে পরিস্কার করা হতো। এরপর ছোট ছোট চিকন কাঠি দিয়ে মেহেদীতে হাতে- পায়ে নানা শৈল্পিক আঁকিবুকি হতো। যার রঙ যতো গাঢ় তার মন নাকি ততো ভালো। এ কথার সত্যতা না থাকলেও সবাই রঙ না হবার ভয়ে সিটকে থাকতাম। অনেক সময় দুতিনবার করে মেহেদী লাগিয়েও রঙ বানানো হতো।

দৈব ক্রমে কারও হাতে রঙ না হলে উহ! কি নিদারুণ যন্ত্রনা। অন্যদের খোঁচা আর বাঁকা বাক্য বানে জীবন একেবারে অতিষ্ঠ। মেহেদী শুকিয়ে গেলে তুলে সরিষার তেল মেখে দেয়া হতো। এতে রঙ অনেকদিন থাকতো।

অনেক বছর পর করোনার কবলে মেহেদী কেনা না হওয়ায় পুরোনো ঐতিহ্য জায়গা পেলো। মেহেদী পাতা তোলা বাটা শেষ, পঙ্গপালের দল সব মেহেদী সাজের জন্য তৈরি।

নিজেদের মতো করে হাত পরিস্কার করে লাইন হয়ে বসে পড়েছে। সিনিয়র সদস্য একে একে মেহেদী লাগিয়ে দিলেন। ইচ্ছেমতো নিজেদের হাত-পা মেহেদীতে সাজিয়ে সবাই বেশ খুশি।

কখন শুকাবে আর কখন উঠিয়ে দেখা হবে কার রঙ বেশি হয়েছে। এ নিয়ে তাদের ভেতরের উত্তেজনার শেষ নেই। হাগু- মুতুর পালা শেষ করে মেহেদীতে বসলেও কিছুক্ষন পর শুরু হলো সমস্যা। তা হলো, কারও পিট চুলকায় কারও মাথা চুলকায়, কারও পাছা চুলকায়। মহাবিপদ সবার হাতেই মেহেদী। এখন এতো সব চুলকানির দায়িত্ব নেবে কে?

এ সবের পেছনে আরও অন্য কারণ লুকায়িত তা হলো, বাজারের রেডিমেট মেহেদীর বদৌলতে আমরা সব ডিজিটাল হয়ে গেছি। মেহেদী লাগিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকা ভালো লাগে না। পাঁচমিনিটে ঘন কালো রঙ যেখানে পাওয়া যায় সেখানে কেন দুঘন্টা বসে থাকবো। তাই সবার এতো চুলকানির সমস্যা।

বাড়িতে তৈরি বাটা মেহেদী কষ্টকর হলেও তার রঙ দীর্ঘদিন স্বায়ী হয়। বাজারের কেনা মেহেদী যেমন পাঁচমিনিটে রঙ দেয় তেমনি ক্ষনস্থায়ী, দুদিন পরেই শেষ। তাই মাঝে মাঝে প্রাচীনে ফিরে যাওয়াতেও মহা আনন্দ!

এবার ঈদ তেমন আয়োজনে নেই। কেনাকাটা না হোক, না হোক ঝটপট মেহেদীর রঙে সাজ। যতটুকু বাড়িতে রাঙানো হয়েছে তাতেই খুশি অফুরান। কারণ ঈদ শুধু কেনাকাটা,স্থানান্তর বা বেড়ানোতেই পূর্ণতা পায় তা নয়। ছোট ছোট বিষয়ে আত্বতৃপ্তিতেও হতে পারে।

তাই পার্লারে, বাজারে অযথা ভীর না করে চলুন আমরা এবারের ঈদ মেহেদী আয়োজন নিজের বাসায়, হাতেই করি। তাতেই বরং আনন্দ ঢের বেশি।

ভীর এডিয়ে ভালো থাকি, সুস্থ থাকি। দেশকে বিপদমুক্ত রাখি। সবাইকে আগাম “ঈদ শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক”।

ছবি নেটের

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ