এক রাশ মন খারাপ নিয়ে মধ্যে রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে অাছি। বেলকনি থেকে কুর্মিটোলা হসপিটালের ফাঁকা রোডটা পরিষ্কার দেখা যায়। লকডাউনে রাস্তায় কুকুর আর গাড়ি ছাড়া কিছুই নেই! আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। অন্যদিনের তুলনায় আজকের আকাশে অনেক তারা। বিশাল আকাশে জেগে আছে ধবধবে সাদা চাঁদ। চোখ তুলে রাস্তার দিকে তাকাতে চোখে ভেসে উঠলো কয়েকটা এম্বুলেন্স! লাল সিগনাল বাতি জ্বালিয়ে গাড়ীগুলো যেন বিদ্যাুত গতিতে ছুটছে। আমি একটি এম্বুলেন্সের দিকে তাকিয়ে দেখলাম 'ভেতরে আমার বয়সে একটা ছেলে শ্বাসকষ্টে ছটফট করছে! পাশে তজবি হাতে একজন মধ্যবয়সী মহিলা বসে আছেন। বুঝার বাকী নেই মহিলাটি ছেলেটির মা।
তারপর, হসপিটালের গেইট থেকে আরেকটি এম্বুলেন্স আসলো। এম্বুলেন্সের ভেতরে সাদা কাপনে মুড়ানো লাশ। কয়েকজন সাদা পোশাক পরা ডাক্তার গাড়ির থেকে নামলেন। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে উনাদের দিকে তাকিয়ে আছি। একজন ডাক্তার গাড়ি থেকে নেমে এম্বুলেন্স থেকে লাশটা নামালেন। লাশের মুখ থেকে কাপড়টা সরাতেই চোখে ভেসে উঠলো 'এক বৃদ্ধ মহিলার চেহারা। বুঝার বাকী রইলো না, মহিলাটি করোনায় মারা গেছেন। তারপর ওপাশ থেকে একজন সাদা পোশাক পরা লোক ফোন করে কারো সাথে কথা বলছেন 'আপনি কী আসবেন নাহ? আপনার মায়ের লাশ নিতে? ফোনের ওপাশ থেকে কি কথা হয়েছে তা বুঝতে পারিনি। তারপর, লোকটা কালো মুখ করে ফোনটা রেখে দেয়। তখন বুঝতে পারলাম 'মহিলাটির পরিবারের কেউ লাশ নিতে আসবেনা!!
আমি সিগারেটা ফেলে ট্যাবট্যাব করে উনাদের দিকে তাকিয়ে আছি। কয়েকজন ডাক্তার মিলে বেজোড় সারি করে বৃদ্ধ মহিলাটির জানাজা পড়ালেন। জানাজা শেষে এম্বলেন্সের লাল বাতিটা জ্বালিয়ে ক্রো ক্রো করে পথের খুঁজে রওনা হলেন!
৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা । ভালো লাগলো পড়ে
হালিম নজরুল
এ আমাদের সকলের লজ্জা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কঠিন আর সত্য বিষয়টি উপস্থাপন করলেন। করোনা দেখি আমাদের কে অমানবিক করে দিয়েছে, জানিনা বিধাতা আর কত শাস্তি দিবেন। ভালো লাগলো গল্পের মোড়কে সমসাময়িক বিষয় তুলে ধরার জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
আরজু মুক্তা
কঠিন বিষয়। কঠিন শাস্তি।
হে আল্লাহ মুক্তি দেন
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
জীবন এখন বড্ড কঠিন সময় পার করছে। সুন্দর মানবিক লেখা। শুভেচ্ছা।