ভিন্ন বাস্তবতায় ঈদুল আযহা

তৌহিদুল ইসলাম ১ আগস্ট ২০২০, শনিবার, ১২:৪৭:০১পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ২৭ মন্তব্য

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। অথচ বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক ভিন্ন বাস্তবতায় ঈদুল আযহা উদযাপন করছে বিশ্বের লাখো কোটি মানুষ। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে নিশ্চিতভাবেই। করোনার পাশাপাশি সমগ্র দেশে বন্যার প্রভাবে বানভাসি মানুষের মনে আনন্দ নেই, মুখে হাসি নেই। চরম অসহায় দিনানিপাত করছেন বন্যা কবলিত এলাকার সকল মানুষ। কেমন আছে তারা? অন্য সবার মত কিঞ্চিত ঈদের আনন্দ কি তাদের মাঝেও বিরাজমান? এই প্রশ্নে নিজেই উদ্বেলিত হচ্ছি আজ।

বৃষ্টিতে নাজেহাল অনেক এলাকার মানুষ বাজার সদাই করতে পারেননি। বিকিকিনি কম বলে গ্রামের সাধারণ খেটেখাওয়া জনগন হাট করতে পারেননি। খামারিরা তাদের নিজেদের গৃহপালিত পশুটিকে ন্যায্যমুল্যে বিক্রি করতে পারেননি। মলিন মুখে হাট থেকে গরু, ছাগল ফেরত নিয়ে যেতে দেখেছি অনেককেই। পরিবারের কথা ভেবে যে অনিশ্চয়তার ছায়া তাদের চোখেমুখে দেখেছি, মন কেঁদে উঠেছে আমার।

করোনা এবং বন্যার এই রেশ পড়েছে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের মাঝেও। ঈদের তেমন কোন উচ্ছ্বাস নেই, মানুষের মুখে হাসি নেই। সবার মুখে কেমন যেন অস্পষ্ট বেদনাময় অনুভূতি। ছোটছোট নিষ্পাপ শিশুরাও কি করে যেন বুঝে গিয়েছে সবার মন খারাপ। বাজারে যাওয়া যাচ্ছেনা, নতুন পোষাকের বালাই নেই। অনেকেই কোরবানি দিতে পারেননি। ঈদ যেন হতাশাগ্রস্থের মত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে সবাইকে।

করোনা সংক্রমণ রোধে ঈদুল ফিতরের মত এবারের ঈদুল আযহাতেও ঈদগাহে বা মসজিদে নামাজ পড়তে যাবোনা। এবারেও বাজারে গিয়ে কেনা হয়নি নতুন কোন কাপড়। আমার মতো এই অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষই আছে এটা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। অন্তত খেয়ে পড়ে সুস্থ্যমত বেঁচে আছি এইবা কম কিসে! প্রতিবার যেভাবে আনন্দ নিয়ে কোরবানি দিতাম এবারে সেটাও উপলব্ধি করতে পারছিনা।

তিস্তা নদীর পাড়ে আমার গ্রামের বাড়ি হওয়ায় আমি দেখেছি বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের অসহায় অবস্থা আর দুর্গতিময় জীবনযাপন। পানি ডিঙিয়ে বাজার করা কিংবা চুলা জ্বালিয়ে দু'বেলা রান্না করে সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতে পারছেননা অনেকেই। অনেক জায়গার পানি কমে গেলেও সেখানে দেখা দিয়েছে ডাইরিয়াসহ বন্যা পরিবর্তী বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব। দেশব্যাপী বন্যা কবলিত এলাকার মানুষগুলোর সবাই কিন্তু এই দূরাবস্থাতেই আছে। তাদের মুখে হাসি নেই, ঈদের আনন্দ তাদের ছুঁয়ে যায়নি নিশ্চিত। আমরা কি কেউ তাদের খোঁজ নিয়েছি? নাকি স্বার্থপরের মত নিজেরা তাদের এড়িয়ে গিয়েছি? কাল কি হবে কে জানে!

সমাজের সামর্থবান সকলের কাছে অনুরোধ, আপনার ঈদের আনন্দ বানভাসি এবং অসহায় মানুষদের সাথে ভাগাভাগি করে নিন। বিশ্বাস করুন, আপনার পাশের ঘরের মানুষ না খেয়ে থাকলে আপনি কোনভাবেই উৎফুল্ল থাকতে পারবেন না। নিজেদের কোরবানির আনন্দে তাদের সামিল করলে মানসিক আত্মতৃপ্তি পাবেন নিশ্চিত। অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর মত পূণ্য কোরবানির পূন্যের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। সোনেলা ব্লগের সকল পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ী, মডারেটর, এডমিন প্যানেল সদস্য এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সবাইকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

ঈদ মোবারক।

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ