অবণী অভির হাত ধরে হাটছে, অনেক লম্বা কিন্তু সরু পথ সাথে হাল্কা কুয়াশা, চারিদিকে প্রচুর গাছপালা, পাখিরা গান গাইছে মধুর সুরে, অভি নিজের হাতটি অবণীর কোমরে দিয়ে হাটতে লাগলো, এক সময় অবণীর গ্রীবা তুলে ধরে চুমু খেলো তারপর বললো, ভালোবাসি তোমায়। হটাৎ অবণী খেয়াল করলো এক কালো বিড়াল ওদের দিকে ধেয়ে আসছে, অবণী চিৎকার দিয়ে অভি সরিয়ে দিতে গেল। অবণী ঝট করে উঠে বসলো, বুকটা হাফরের মতো উঠানামা করছে, ফ্যালফ্যাল করে এইদিক ওদিক তাকাচ্ছে, অভি কই? তারপর মনে পড়লো ও তো সাংহাইতে, দুঃসপ্ন দেখছিলো ও বুঝতে পেরে বড় করে নিশ্বাস ছাড়লো। অনেকক্ষণ বিছানার পিছে হেলান দিয়ে বসে রইল, ফোনের রিং বাজাতে সম্বিত ফিরে পেল।
রিসিভার উঠিয়ে হ্যালো বলল।
কি ব্যাপার কই ছিলে একটু আগেও রিং দিলাম, অভি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
জি ঘুমিয়ে ছিলাম, এখন উঠে পড়েছি।
ওকে তাহলে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও, রেডি হয়ে আমাকে নক কোরো।
অবণী মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো এ কেমন সপ্ন দেখলাম আমি? উঠে বাথরুমে ঢুকে ব্রাস করে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে হাল্কা গরম পানি ছেড়ে দিলো, মন থেকে এখনো সপ্নের কথা ভুলতে পারছেনা।
শাওয়ার সেরে টাওয়েল জড়িয়ে বের হয়ে রেডি হতে শুরু করলো। রেডি হয়ে বেরিয়ে অভির দরজায় গিয়ে নক করলো। অভি ধরজা খুলে বেরিয়ে এলো আর বলল, চলো আগে ব্রেকফাস্ট করে নিই।
কি ব্যাপার খাচ্ছোনা কেন তুমি, অভির ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল, জি খাচ্ছি।
আজ কেমন যেনো তোমার মুড অফ, এনি প্রবলেম?
না না, কোনো সমস্যা নেই বলেই অবণী খাওয়ার দিকে মন দিলো।
আজ আমাদের এইখানে শেষ দিন, রাত নয়টাই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবো, ভোর রাত একটায় আমাদের ফ্লাইট, অভি বললো।
ঠিক আছে, ছোট্ট করে জবাব দিলো অবণী।
মনটা দেখছি ভীষণ খারাপ তোমার, ফ্যামিলিকে মনে পড়ছে?
অবণী হেসে মাথা নাড়লো।
আসলে কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে, তুমি হাসলেই যেন তুমি তুমিতে থাকো, এখন যেন কেমন অচেনা অচেনা লাগছে তোমাকে।
না না এখন আমি ঠিক আছি, আপনিও তো খাচ্ছেন না। আর ভালো কথা জ্বর কি এখনো আছে?
কি যে বলোনা, যেখানে গ্রেট অবণী ম্যাডাম আছেন সেখানে জ্বর কি থাকতে পারে, ব্যাটা তোমার ভয়েই ভেগেছে বলেই হা হা হা করে হাসতে লাগলো অভি।
অবণী অভির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।
সত্যি জ্বর নেই বলেই অভির কপালে হাত দিয়ে দেখলো অবণী, আসলেই তো দেখছি জ্বর নেই।
দুজনে ব্রেকফাস্ট শেষ করে রিসেপ্সনে এলো, রিসেপ্সনিষ্ট মেয়েটা অভি শুভ সকাল বলে বললো, আপনার জন্য গাড়ী অপেক্ষা করছে। অভি ধন্যবাদ দিয়ে অবণীকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো। হাল্কা তুষারপাত হচ্ছে দেখে অবণীর মন খুশিতে ভরে গেলো। দুজনে একটা কালো লিমোজিনে উঠে বসলে ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল কোন দিকে যাবে, অভি ঠিকানা বললে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে গেলো।
অবণী, তুমি কিমকে ফোন দিয়ে বলো আমিরা আসছি দেখা করতে।
অবণী কোন প্রশ্ন না করে কিমকে কল দিয়ে জানালো যে তারা আসছে। কিমের সাথে আধা ঘন্টা পর দেখা হলো তাদের, কিম ওদের চাইনিজ কায়দাই নড করে সম্ভাষণ জানিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসালো।
অভি ধন্যবাদ দিয়ে কিমকে কিমদের আগের কথা ভুলে গিয়ে মন দিয়ে কাজ করতে বলল আর অবণীর সাথে পরামর্শ করে কিমদেরকে আরো ২% বেশি কমিশন দেবে বলে আশ্বাস দিলো। কিম তো মজা খুশি, তাদের নিয়ে পুরো অফিস ঘুরিয়ে দেখালো আর তাদেরকে দুপুরের লাঞ্চ করার আমন্ত্রণ জানালে অভিরা আনন্দের সাথে দাওয়াত কবুল করলো।
দুপুরের লাঞ্চ করে কিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন বেরুলো তখন দুপুর ৩.৩০, তুষারপাত আরেকটু বেড়েছে দেখে ওরা হোটেলে ফিরে এলো। অবণী নিজ রুমে চলে গেলো আর অভি নিজ রুমে। ঘন্টা খানেক পর অভি ইন্টারকমে রিং দিয়ে অবণীকে নিজ রুমে যেতে বলায় অবণী অভির রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার অভি স্যার?
বসো, বলছি।
অবণী বসলে, অভি বলল, কিছুক্ষন আগে মিঃ হাঙ ভিয়েতনাম থেকে কল করেছিলো, সে ক্ষমা চেয়ে বললো যে তারা ভুল করেছে এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে বললো তারা আমাদের সাথে বিজনেস কন্টিনিউ করতে চাই আর অনুরোধ করেছে ওদের কিছু কমিশন বাড়িয়ে দিলে তাদের ভালো হয়, আমি বললাম আমি চিন্তা ভাবনা করে জানাচ্ছি, তুমি কি বলো?
অভি স্যার আমি কি বলবো বলেন, আপনি চিন্তা করুন, সুবিধা যদি থাকে তাহলে আপনিই সিদ্ধান্ত দিন।
তা ঠিক আছে, এরপরেও তোমার মতামতটা জানতে চাই, এখিন তো তুমি আমার অঘোষিত এডভাইজারো তুমি, অভি হেসে বললো।
হাসালেন স্যার, আপনার অসুস্থতা দেখে আমি কিমের সাথে কথা বলেছি।
আরে যা করেছো তাতেই আমি ইম্প্রেসড, এখন তোমার বুদ্ধির ঝুলি খুলো দেখি।
অভি আর অবণী মিলে চিন্তাভাবনা করার পর অভি মিঃ হাঙকে কল দিয়ে নিজের এক্সেপ্টেন্স দিয়ে দিলো আর সাথে বললো যখন এখানেই সমস্যার সমাধান হলো তখন তারা আর ভিয়েতনামে যাবেনা আর দেশে গিয়েই অভি এগ্রিমেন্ট রিনিউ করে পাঠিয়ে দেবে মেইলে।
তাহলে আমাদের তো আর ভিয়েতনাম যাওয়ার দরকার নেই কি বলো, অভি অবণীর দিকে তাকিয়ে বলল।
জি তা তো অবশ্যই, অবণী বলল।
তাহলে তুমি বসো আমি রিসেপ্সনে গিয়ে টিকেট দিয়ে আসি ক্যান্সেল করানোর জন্য সাথে দেশে যাওয়ার টিকেটটাও করে নিতে বলি, বললো অভি।
আমিও আসি?
না না বসো তুমি, আমি আসছি বলেই অভি টিকেটগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল।
আধা ঘন্টা পর ফিরে এলে অবণী দুই মগ কফি নিয়ে বসলো সোফাতে, কফিমগ এগিয়ে দিতে দিতে বলল, টিকেটের কি হলো?
দিয়ে এসেছি, ওরা ব্যবস্থা করে জানাবে।
তাহলে কি আমরা আজকেই যেতে পারবো, অবণী জিজ্ঞেস করলো।
যতদূর জানি আজ আর হবেনা কারণ এখন আর ফ্লাইটে উঠার সময় নেই, দেখি কখন ফ্লাইট পাওয়া যায়।
তোমার বোনরা কি পড়ে?
হুম, মেঝোটা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং করছে আর ছোটটা এইচএসসি দেবে সামনে। আপনার ঘরে কে কে আছে?
মা আর ছোট বোন, বাবা কয়েক বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
চলে গেছেন মানে?
বাবা ইন্তেকাল করেছেন ২০১১তে।
সরি।
অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, আসলে আমি যখন আমেরিকায় পড়াশুনা করতাম তখন থেকে বাবা অসুস্থ ছিলো, আমি ফিরে আসার ৬ মাসের মধ্যে ইন্তেকাল করেন।
তা আপনার বোন কি করেন? কথা ঘুরানোর জন্য অবণী জিজ্ঞেস করলো।
ও গত বছর ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে, বলেছিলাম বাইরে চলে যা অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকা কোথাও পড়িস আর উনি যাবেননা, আমাদের ছেড়ে উনি থাকতে পারবেননা, বলেই হাসতে লাগলো অভি।
প্রায় এক ঘন্টা পর রুমবয় এসে একটা খাম দিয়ে গেলে অভি খুলে দেখতে লাগলো।
আমাদের ফ্লাইট কাল দুপুর ৩টায় কনফার্ম হয়েছে।
অবণীর মনটা খারাপ হয়ে গেলো শুনে।
___________ চলবে।
ছবিঃ Google.
২০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
গল্পের পরিণতি যে কি হবে তাই ভাবছি,
কালো বিড়াল অমঙ্গলের প্রতীক।
ইঞ্জি ভাই গল্পকার হয়েই গেলেন দেখছি 🙂
সুন্দর ছবিটা গল্পের প্রথমের সাথে মানিয়েছে ভালোই,
ছবিটা বড় হলে আরো ভাল লাগতো,
এমন ছোট ছবি আসে, যদি আপনি কোন ছবিকে নির্বাচিত ছবি করেন,
ছবি সরাসরি আপলোড করুন, নির্বাচিত ছবি মুছে ফেলুন।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান, ফেবুর এক দাদাভাই খুব চাপ দিচ্ছেন যেন কমছে কম ৩০ খন্ড করি যা আমি চাইনা কারণ গল্প লিখছি আমি উপন্যাস নয়।
আপনার নির্দেশনায় ছবি বড় করে দিলাম যা আগে জানতাম না, ধন্যবাদ আবারো।
জিসান শা ইকরাম
৩০ খন্ড! গল্প এত বড় হয়না, পাঠক আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
গল্প যত ছোট হয়, ততই ভাল।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
সেটা আমারও মত ভাইজান।
নীলাঞ্জনা নীলা
এ পর্ব বেশ লাগলো। চলুক।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ। 😀
আবু খায়ের আনিছ
জমিয়ে রাখছি, অষ্টম, নবম,………………. তারপর শেষ করব। পড়লেই শেষ হয়ে যায়, আর অপেক্ষা করতে হয় শুধু। মনের মাঝে খচখচ করে কি জানি হয়।
ইঞ্জা
খচ খচ করবে কেন প্রতিদিনই তো পোষ্ট করে যাচ্ছি, পড়ে যান আর আমি লিখতেই থাকি। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
কি ছুই নায় বলার
আছে শুধু গল্পকারের লেখার মার
আমি মুগ্ধ ইঞ্জা ভাই।
শুধু এটুকু বলব আমি অনেক ফাকিবাজ পাঠক ভাল না লাগলে সব পড়ি না
কিন্তু আপনার লেখা না পরড়ে উঠতে পারিনা। মনে পড়ে কড়ি দিয়ে কিনলাম, কাছের মানুষ, এভাবেই পড়েছিলাম।
ইঞ্জা
আপনি আমাকে এইভাবে লজ্জা দিবেন না ভাই, কোথায় সেইসব অনবদ্য উপন্যাস আর কোথায় আমার মন গড়া গল্প। আপনারা আমার লেখা পড়ছেন এইতেই আমি আপ্লুত।
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকবেন। 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
লজ্জা না ইঞ্জা ভাই, আসলেই তাঁরা তাদের জায়গায় অবশ্যই তাঁরা অতুলনীয়। কিন্তু আপনার গল্পে প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য পড়তে আলাদা আকরশন লাগে এই যা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই। 🙂
মৌনতা রিতু
দেখা যাক দেশে গিয়ে কতদূর কি হয়।
কালো বিড়াল রাস্তা কাটলে তো সমস্যা।
ভাল একজন গল্পকার হয়ে গেছেন।
চলুক,,,,,
ইঞ্জা
তার মানে কি ডাকাত হতে পেরেছি, আমার লেখা আপনাদের মন ডাকাতি করতে পেরেছে তা হলে, আমি সম্মানিত বোধ করছি আপু, দোয়া রাখবেন। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
কামকাইজ স্বপ্নে কেন!
চলুক, আছি সাথেই।
ইঞ্জা
ছিঃ ছিঃ কি বেরোমান্টিক কথাবার্তা :p
মিষ্টি জিন
কালো বিড়াল,গল্পের নতুন মোর এনে দিবে মনে হচ্ছে ।
মাএ তো কাছে আশা শুরু এখনই চলে যাবে?
আমার ও মন খারাপ হয়ে গেল. 🙁
ইঞ্জা
জানি না আপু কেন এই কালো বিড়ালের আগমন দেখা যাক কি হয়। 🙁
শুন্য শুন্যালয়
সবগুলো পর্বই পড়ছি ভাইয়া, মন্তব্য দিতে দেরী করে ফেলছি। সময়ের সাথে পাল্লাপাল্লি চলছে।
কিছু সময় সত্যিই স্মরনীয় হয়ে থাকে, তাই-ই অবনীর মন খারাপ। বলে দেয়না কেন সে? 🙁
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, আপনাদের সুন্দর মন্তব্য না পেলে যেন আমার লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 🙂