ভালোবাসি তোমায় (৮ম খন্ড)

ইঞ্জা ২৫ জুলাই ২০১৬, সোমবার, ০৭:৫৭:০৪অপরাহ্ন গল্প ১৯ মন্তব্য

আধা ঘন্টা পর ডাক্তার এসে অভিকে চেক করে কিছু মেডিসিন দিলো আর বলল, আপাতত জ্বর সেরে যাবে কিন্তু যেহেতু জ্বর কয়েকদিন থেকে তাই কিছু চেকআপের অবশ্যই দরকার আর যদি তাড়া থেকে তাহলে অবশ্যই যেনো দেশে ফিরে চেকআপ করে নেওয়া হয়। অবণী ডাক্তারকে বিধায় দিয়ে অভির কাছাকাছি সোফায় বসলো। অভি তখন বলল, অবণী তুমি কেনো এতো কষ্ট করছো, সারাদিন তুমি রেস্ট করোনি যাও একটু রেস্ট করো।
না অভি স্যার, আমার রেস্টের প্রয়োজন নেই, আপনি উঠে মেডিসিন গুলো খেয়ে নিন বলে অবণী উঠে গিয়ে পানি নিয়ে এলো। ঔষধ খেয়ে অভি শুয়ে পড়লো আর অবণী লেপটপ খুলে কাজ করতে লাগলো। অভির ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে দেখে অবণী উঠে দেখলো অভি ঘুম কিনা, অভি ঘুম দেখে ফোনটা তুলে নিলো, স্ক্রিনে মা লেখা দেখে ফোনটা নিয়ে পাশের টিভি রুমে চলে এলো, ফোন কেটে দিয়ে নাম্বার নিয়ে নিজ ফোন থেকে ডাইয়েল করলো।
সালামালেকুম ম্যাম, আমি অভি স্যারের পিএস বলছি।
ওয়া আলাইকুম সালাম, অভি কই, কাল রাতেও ফোন দিলাম, এখনও দিলাম ফোন ধরছেনা কেনো ও?
জি ম্যাম, অভি স্যারের গতকাল থেকে খুব জ্বর, ডাক্তার এসেছিলো কিছু মেডিসিন দিয়েছে, খাইয়ে দিয়েছি, এখন ঘুমাচ্ছে বলে আর ফোন রিসিভ করতে পারে নাই তাই আমি কল দিলাম।
ডাক্তার কিছু বলেছে?
জি জ্বর সেরে যাবে, দেশে ফিরলে কিছু টেস্ট করে নিতে বলেছে।
ঠিক আছে, অভি জাগলে ফোন দিতে বলো কেমন।
জি ম্যাম।
অভির মা ফোন কেটে দিলো।

বিকালে কিম এলে অবণী নিজেই বসলো ওদের সাথে মিটিংয়ে, কিম ক্ষমা চেয়ে বলল যে তাদের মধ্যে মিস আন্ডার স্টেন্ডিং হয়েছিলো যার জন্য ওরা ক্ষমা প্রার্থী আর ওরা বিজনেস কন্টিনিউ করতে চাই আর বকেয়া দেনা গুলো ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে চাই। অবণী কোম্পানির পক্ষ থেকে এগ্রিমেন্ট সাইন করলো আর অভির অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করে ক্ষমা চাইলো। ওদের বিদায় দিয়ে অবণী ফিরে এলো অভির রুমে।
অভি ঘুম থেকে উঠে সোফায় বসে আছে দেখে অবণী জিজ্ঞেস করলো, এখন কেমন ফিল করছেন?
জ্বর মনে হয় কিছু কম, অভি জবাব দিলো।
তাহলে কিছু খান, খালি পেটে থাকতে নেই, তা কি খাবেন?
একটা সেন্ডউইচ দিতে বলো, তুমি খেয়েছো?
না আমিও খাইনি।
তাহলে তোমার জন্যও খাওয়ার আনিয়ে নাও, বেলা তো অনেক হলো।
অবণী দুইটা সেন্ডউইচের অর্ডার দিলো ইন্টারকমে।
কিম এসেছিলো, অভি জিজ্ঞেস করলো।
অবণী সব খুলে বললো আর এগ্রিমেন্ট এগিয়ে দিলো।
গুড ভেরি গুড।
অবণী কফির জন্য গরম পানি করতে দিলো ইলেক্টিক কেটলিতে।

খাবার খেতে খেতে অভি জিজ্ঞেস করলো, এইসব কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় তুমি কিভাবে জানো, তুমি তো আগে জব করনি কোথাও?
আসলে আসার আগেরদিন বাবাকে বলেছিলাম সমস্যা কি, উনিই বললেন কি কি করতে হতে পারে, কামড়ানো সেন্ডউইচের টুকরোটা গিলে ফেলে অবণী জবাব দিলো।
বাহ, আসলে তোমার আব্বা অনেক বেশি জানেন এই বিষয়ে, উনাকে আমার ধন্যবাদ দিও।
জি, হেসে জবাব দিলো অবণী।
তা তোমার ফ্যামিলিতে কে কে আছে?
জি বাবা, মা আর দুই বোন।
ভাই?
না আমাদের ভাই নেই তাই ছেলের পরিবর্তে আমাকেই এখন ঘরের দায়িত্ব নিতে হয়েছে।
কেন যদি ছেলে থাকতো তাহলে কি চাকরি করতেনা?
না তা নয়, হয়ত করতাম।
আচ্ছা একটি কথা বলি তুমি অন্য ভাবে নিয়োনা।
জি বলুন।
আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি?
অভির ফোন বেঁজে উঠলো।
অভি উঠে ফোন রিসিভ করে কথা বলছে।
আরেহ না না তেমন কিছু নয় মা, একদম ফিট আছি।
হা হা হা হা মিথ্যে বলবোনা আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে, হুম কাল থেকেই বেশ জ্বর ছিলো, এই কিছুক্ষন আগে জ্বর পড়েছে।
ওর নাম অবণী, না না মুসলিম, ডাক নাম।
হাঁ মা ওই এখন খেয়াল রাখছে, তুমি চিন্তা করোনা, হাঁ মা তাড়াতাড়ি চলে আসার চেষ্টা করবো, তোমরা ভালো থেকো, বাই। অবণী রুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে, অভি ভুলে গিয়েছিলো তার প্রশ্নের উত্তর নিতে, থাক আরো কিছুদিন অভি না জানুক তাতে কি বা ক্ষতি হবে চিন্তা করে অবণী ড্রেস চেইঞ্জ করে কিছুক্ষন শুলো।

সন্ধ্যার পরে অভির ইচ্ছেই দুজনে বেরুলো বাইরে খেতে, অভির জ্বর নেই এখন আর অভির রুমের মধ্যে বসে থাকতে ইচ্ছে করছিল না বলেই অবণীও রাজি হলো। যেহেতু খুব ঠান্ডা পড়ছে তাই অবণী কমপ্লিট স্যুট পড়েছে এরপরও ঠান্ডায় কাপছে। টেম্পারেচার -2 আর আরো কমবে তা অভি জানে, দুজনেই হাটতে হাটতে এক শপিং মলের সামনে পোঁছালে অভি বললো, চল ভিতরে ঢুকি, অবণী অভির পিছু নিলো। এই শপ ওই শপ ঘুড়তে ঘুড়তে একটি স্যুটের দোকানে ঢুকলো অভি, অবণী অভিকে ফলো করলো, অভি প্রথমে নিজের জন্য একটা ওভারকোট চুজ করে হাতে নিলো এরপর লেডিস সেকশনে গেলো, এইটা ওইটা দেখছে আর অভি নিজেই নিজে মাথা নাড়ছে, অবণী জিজ্ঞেস করলো, কার জন্য?
তোমার জন্য।
না না অভি স্যার আমার লাগবেনা।
তুমি কি আমার চাইতে বেশী জানো, কালই টেম্পেরেচার আরো কমবে বলেই নিজে খুঁজতে খুঁজতে একটা লাল রঙের ওভারকোট পেলো আর তা নিয়ে অবণীকে দিয়ে বললো এইটা গায়ে দিয়ে দেখতো হয় কিনা?
অবণী কিছু না বলে গায়ে চড়ালো, বুঝতে পেরেছে বলে লাভ নেই আর ঠান্ডাও যেভাবে পড়ছে তাতে উপায়ও নেই। দুজনে বিল মিটিয়ে বের হলো, মলের ফুড কোর্টে গিয়ে ওরা খাবার একটা খালি টেবিল দেখে এগিয়ে গেলো।

কি খাবে বলো, অভি বলল।
আপনিই অর্ডার দিন।
অভি দুইটা স্টেকের অর্ডার দিলো সাথে একটা পেপসি আর পানি, পানিটা যেনো রুম টেম্পেরেচার থাকে তা বলে দিলো। তারপর তাদের আগামী কালকের প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা শুরু করলো।
অভি স্যার জ্বর কি আছে?
হুম মনে হচ্ছে জ্বর আসবে, শরীরে কাঁপুনি দিচ্ছে।
তাহলে আমরা কেনো এখানে এলাম বলেই অভির মাথায় হাত দিলো অবণী তারপর বললো, না তেমন জ্বর নেই এখন কিন্তু আসতে কতক্ষন, আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরা উচিত, বাইরে অনেক ঠান্ডা।
খাবার এলে দুজনেই তাড়াতাড়ি খেয়ে বিল মিটিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। বাইরে ঠান্ডা আরো ঝাপিয়ে পড়েছে, দুজনই দ্রুত হাটতে লাগলো। হোটেলের কাছাকাছি আসতেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হলো, অভি দৌড় দিলো হোটেলের গেইটের উদ্দেশ্যে, গেইটে পোঁছে পিছন ফিরে দেখে অবণী নেই, দূরে অবণী আকাশের দিকে মুখ উঁচু করে বৃষ্টির পানি অনুভব করছে। মেয়েটা আর ভিজার সময় পেলোনা, মনে মনে স্বগতোক্তি করলো অভি, অবণী, অবণী তাড়াতাড়ি আসো এই পানিতে মানুষ ভিজেনা, ডাক দিলো অভি।
অবণী দৌড়ে এলো আর মিষ্টি রিনঝিন শব্দে হাসছে, অভি অবাক চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ তারপর বলল পাগল হয়েছো এই বৃষ্টি মানে বুঝো?
জি বুঝি বরফ পড়বে, আগেও দেখেছি আমি সুইজারল্যান্ডে, হেসে গা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল অবণী।

দুজনে রুমে এসে গায়ের ওভারকোট, স্যুট খুলে হেঙ্গারে রেখে সোফায় বসলো, কফি, অবণী অভি দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।অভি সম্মতি দিলে দুই মগ কফি করে নিয়ে এলো। তা তোমার বাবা কতোদিন হলো রিটায়ার করেছেন, অভি জিজ্ঞেস করলো।
তা বছরের উপর।
তোমরা বুঝি খুব বিদেশ ঘুরতে?
বিদেশ ঘুরতাম আপনাকে কে বললো?
ওই যে বললে সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলে।
আরেহ না, ওখানে গিয়েছিলাম ইউনিভারসিটি থেকে, আমরা গণিতের এক কম্পিটিশন এটেন্ড করতে গিয়েছিলাম, আপনি কখনো গিয়েছেন সুইজারল্যাল্ডে?
নাহ আমার যাওয়া হয়নি ওখানে, দরকারও পড়েনি।
কি বলেন, এতো রোমান্টিক প্লেইসে কখনো যাননি, আশ্চর্য তো!
যেহেতু আমি রোমান্টিক নয় বলেই হয়তো যাওয়া হয়নি, হেসে জবাব দিলো অভি।
কি বলেন, আপনি রোমান্টিক নন বা আপনার মনে রোমান্টিকতা নেই, আবণী পাল্টা প্রশ্ন করলো অভির চোখের দিকে তাকিয়ে যেখানে হটাৎ শুধুই শুন্যতা যেন নেমে এলো।অভি চুপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল, অবণী বুঝতে পারছে অভির মন এখন অনেক দূরে। একটু পরে অভি অবণীর দিকে তাকালো, অবণী পরিবেশ সহজ করতে উঠে গেলো, একটু পর ফিরে এলো থার্মোমিটার নিয়ে।

আচ্ছা তুমি কি ডাক্তার নাকি রুগী যে থার্মোমিটার রাখো তোমার সাথে, অভি সহাস্যে জিজ্ঞেস করলো।
না না আমি কোথাও বাইরে গেলে মাই ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয় এইসব, হেসে বললো অবণী।অভি থার্মোমিটার নিয়ে মুখে পুরলো, কিছুক্ষণ পরে বের করে দেখে অবণীকে দিলো, ১০১ জ্বর।
তাহলে আপনি রেস্ট করেন, আমি রুমে গেলাম দরকার হলে কল দিয়েন, বলে অবণী বিদায় নিয়ে নিজ রুমে চলে গেলো। রাত ১১.১০, অবণী ড্রেস চেইঞ্জ করে শুয়ে গেলো আর অবণী চলে যাওয়ার পর অভিও ড্রেস চেইঞ্জ করে ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে নিজেও শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো আর এর মাঝে সেল ফোনটা বেজে উঠলে হাত বাড়িয়ে তুলে নিলো, হাঁ মা আমি ভালো আছি, সিগারেট ধরাতে ধরাতে জবাব দিলো।
জ্বর হাল্কা আছে, ১০১, এই কিছুক্ষন আগে চেক করলাম। তোমরা সবাই ভালো তো, প্রিয়ন্তী কই?
আশা করছি আগামী সপ্তাহে চলে আসবো।
কোন মেয়ে, অবণী? ভালো মেয়ে, বেশ কাজেরও, কি যে বলোনা মা, ও আমার এমপ্লয়ি। ঠিক আছে মা এখানে অনেক রাত হইয়েছে, ওকে আল্লাহ্‌ হাফেজ। সিগারেটটা বিষাদ লাগাতে এস্ট্রেতে চেপে নিভিয়ে দিলো তারপর শুয়ে রইলো। মনে মনে হাসছে মার কথা ভেবে, অবণী কেমন মেয়ে, সুন্দরী কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
মা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছে বিয়ে করাতে কিন্তু অভি রাজি হয়নি, প্রিয়ন্তীর বিয়ে হোক তারপর চিন্তা করবো এই বলে কথাটি এড়িয়ে গেছে। অবণী সুন্দরী, বুদ্ধিমতি আর ওর হাসিটি কেমন যেন মন ছুঁয়ে যায়, ধ্যাত এইসব কি ভাবছি, চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা শুরু করলো আবার, ঘুমন্ত অভির মুখ খানিতে যেন হাসি লেগে রইল।

_____________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ