ভালোবাসি তোমায় (৭ম খন্ড)

ইঞ্জা ২৩ জুলাই ২০১৬, শনিবার, ০৯:৫১:৪০অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

খুব সকালে অবণীর ঘুম ভেঙ্গে গেলে অবণী উঠে গিয়ে কিছুক্ষণ জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, মাত্র সূর্য উকি দিচ্ছে পূর্বের আকাশে, সামনে খোলা লেইকে অনেক গুলো সফেদ সাদা রাজ হাঁসরা জলখেলি করছে। অবণী জানালার কাঁচে মাথা রেখে ভাবনার সাগরে ডুবে গেলো। অভিকে প্রথম ভালো লাগে যখন শুনলো অভিই ওকে বাঁচিয়েছে, হাসপাতাল থেকে যখন রিলিজ নিলো তখন অভির বিজনেস কার্ড ইচ্ছে করেই নিয়ে নিলো রেসেপ্সেনিস্টের কাছ থেকে আর যখন দেখলো অভির অফিসে লোক নিচ্ছে তখন দেরি না করেই এপ্লাই করে।
ভেবেছিলো অভি ওকে চিনতে পারবে কিন্তু যখন অভি চিনলোনা তখন ঘরে ফিরে আসার পর অবণীর কান্না পাচ্ছিলো আর আজ ও অভির পারসোনাল সেক্রেটারি, সব কিছুই ওর সপ্নের মতো লাগছে। অভির পারসোনালিটি ওকে আকর্ষন করে, অভির কাছে থাকা ওকে উদ্দীপ্ত করে, কিন্তু অভি তেমন করে ওর চোখে চোখ রাখেনা, যদি রাখতো তাহলে বুঝতে পারতো অবণী ওকে ভালোবাসে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবণী বাথরুমে ঢুকে, ব্রাশ করে গরমজল ছেড়ে দিলো শরীরে। গোসল করে নিজেকে বেশ ফ্রেস লাগছে, বের হয়ে হাত ঘড়িতে দেখলো সকাল পাঁচটা, মনে মনে হাসলো বাংলাদেশের সময় রয়ে গেছে এখনো। সময় এগিয়ে দিলো ২ ঘন্টা ঘড়িতে চাবি দিয়ে, তারপর রেডি হতে শুরু করলো, রুমের ফোনটা বেঁযে উঠলে এগিয়ে পিক করে হ্যালো বললো।
অবণী তুমি কি উঠেছো আধা ঘন্টা পরে ব্রেকফাস্ট করতে যাবো, অভি বলল।
ওকে, ছোট্ট জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করতে গেলো জ্বর আছে কিনা তার আগেই অভি ফোন কেটে দিয়েছে।
আধা ঘন্টা পর অভি নক করলে অবণী বেরিয়ে এলো, বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আপনার জ্বরের কি অবস্থা বলেই অভির মাথায় হাত দিয়ে দেখলো, ইশ জ্বরে তো গা পুরে যাচ্ছে, আপনি বের হলেন কেনো?
কি করবো বলো, কাজ তো করতেই হবে।
অবণী চুপ করে রইলো, মন খারাপ হয়ে গেলো ওর।

দুজনে রেস্টুরেন্টে এসে একটা টেবিল নিয়ে বসলো। অভি অবণীকে বললো, কি খাবে নিজে চুজ করে নাও।
আপনি কি খাবেন, আমি কি নিয়ে আসবো?
দেখ কি পাও, আমার শরীর চলছেনা।
ডিম কি ধরণের পছন্দ করেন?
অমলেট উইত আউট ভেজি।
অবণী উঠে গেলো বুফে টেবিলে, থরে থরে সাজানো বিভিন্ন খাবার। অবণী একটা প্লেটে দুজনের জন্য বিন, বিফ সচেজ, দুটো অমলেট ও ব্রেড নিয়ে টেবিলে দিয়ে আবার গেলো জুস আনতে, দুই গ্লাসে অরেঞ্জ জুস নিয়ে এসে বসলো।
অভি খুবই অল্প বিন খেলো, তারপর একটা ব্লাক কফি নিয়ে বসলো।
আপনি কফিটা পরে খান, কফির কাপ সরিয়ে দিয়ে ফ্রেস জুসের গ্লাসটা এগিয়ে দিলো অবণী, অভি খানিক সময় অবণীর দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর গ্লাসটা নিয়ে খেতে লাগলো।
অভি স্যার আজকের কি প্রোগ্রাম?
অভি কিছু না বলে সেল ফোনটা বের করে ফোন দিয়ে বললো, নি হাও মিঃ কিম, when you want to come, we can sit in hotel conference room, ok at 9.00
bye, see you.
মিঃ কিম আসতেছে, খাওয়া শেষ?
জি।
ওকে চলো, আমি মেডিসিন নেবো তারপর কনফারেন্স রুমে বসবো।

দুজনে লিফটে উপরে উঠে আসলো, সোজা অভির রুমে ঢুকে অভি মেডিসিন নিলো ড্রয়ার থেকে, অবণী পানি এগিয়ে দিলো, অভি মেডিসিন খেয়ে বলল, ধন্যবাদ।
মেনশন নট বলে অবণী ব্যাগ থেকে থার্মোমিটার নিয়ে ধুয়ে নিয়ে এসে অভিকে দিলো, ২ মিনিট পর অবণী অভির মুখ থেকে থার্মোমিটার নিয়ে দেখে জ্বর ১০৩।
অভি স্যার আপনার উচিত না আজকের এই মিটিং এটেন্ড করা, আপনার খুব জ্বর।
এসেছি যখন মিটিং না করলে বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে।
তাহলে আপনি বেশি কথা বলবেন না প্লিজ।
তা কে বলবে, তুমি? অভি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
হুম আমিই করবো, যদি ভুল হয় আপনি শুধরিয়ে দেবেন।
অভি হাত ঘড়ি দেখে বলল, চলো, ওরা চলে আসবে এতক্ষণে।
আগে থেকেই হোটেলের কনফারেন্স রুম বুক করে রাখা ছিলো, অভি আর অবণী সেখানে এসে বসলো। অভি অবণীর কাছে জানতে চাইলো অবণী পারবে কিনা, অবণী মাথা নেড়ে সায় দিলো। একটু পর রিসেপ্সন থেকে কল দিয়ে জানালো গেস্ট এসে গেছে, অবণী তাদের ভিতরে পাঠানোর অনুরোধ করলো। দুই মিনিট পর পাঁচ ভদ্রলোক নিয়ে মিঃ কিম ঢুকলো রুমে। অভি সবার সাথে হেন্ড সেইক করে অবণীকে পরিচয় করে দিলো আর বললো আজকের মিটিং মিস অবণী প্রিসাইড করবে।

অবণী ধন্যবাদ দিয়ে ইংরেজিতে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালো তারপর শুরু করলো। (কথোপকথন ইংরেজিতে হলেও বাংলায় লিখলাম)
সো আপনাদের কি সমস্যা আমাদের সাথে একটু খুলে বলুন।
কিমঃ আমাদের সমস্যা হলো, আপনাদের শীপে শীপমেন্ট দিলে এভেইলেবল শীপ পাইনা, আপনাদের ফ্রেইট প্রাইজ রেইঞ্জ বেশি অন্যদের চাইতে কিন্তু কমিশন সেই হারে কম, আমরা অন্য শীপিং কোম্পানিতে আরো বেশি পাবো।
অভি নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে ওর এডভাইস লিখে ট্রান্সফার করলো অবণীর লেপটপে।
অবণীঃ আপনারা দীর্ঘ দিন আমাদের সাথে আছেন, হঠাৎ করে এই ডিসিশন না নিয়ে আমাদের আপনাদের সমস্যা জানালেন না কেনো, আর আমিরা রিসেন্টলি আরো তিনটা ভেসেল কিনেছি যা আগামী দুই মাসের মধ্যে সমুদ্রে সেইল করবে, তাহলে আপনাদের সমস্যা থাকার কথা নয়, আর আমরা ইন্টারনেশনাল ভেসেল আইনের চাইতেও আপনাদের ২% বেশি কমিশন দিই, তাহলে কেন আপনারা এই কথা বলছেন।
কিমঃ নো সরি, আমার কোম্পানি আর আপনাদের সাথে থাকতে চাইনা, আপনারা আমাদের পাওনা মিটিয়ে আমাদের বিদায় করেন।
অবণীঃ ওকে মিঃ কিম কিন্তু আপনার জানা উচিত এই মূহুর্তে আপনার কোম্পানি আমাদের কাছ থেকে কোনো বকেয়া পাননা বরঞ্চ লাস্ট কয়েকটা শীপমেন্টের পেমেন্ট বাবদ আমরা আপনাদের কাছ থেকে fifty six million, two hundred and seventy thousands পাওনা হই, বলেই অবণী লেপটপে এন্টার চাপ দেয়, প্রিটিং মেশিন চালু হয়ে দুইটা প্রিন্ট পেপার বের হলো আর তার একটা অভিকে আরেকটা কিমকে দিলো।

অভি আর কিমকে চমকে দিয়ে প্রিন্টেড পেপারগুলো দিয়ে অবণী বলল, অভি স্যার জাস্ট এই মূহুর্তেই আমাদের একাউন্ট ডিপার্টমেন্ট পাঠালো এজ ডেমারেজ অফ পোর্ট, ক্লাইয়েন্টস, সোর, অফসোর চার্জেস যা মিঃ কিমের নেগলেজেন্সিসের কারণে হয়েছে, আই মিন্স উনার কোম্পানির কারণে।
সো মিঃ কিম, আমাদের ২ দিনের মধ্যে পেমেন্ট গুলো ক্লিয়ার করে দিন আর আমরা আপনাদের সাথে আর এজেন্সি রাখতে রাজি নই, ইফ ইউ ফেইল আমরা এইখানেই পোর্ট অথরিটিকে জানিয়ে কেইস ফাইল করেই যাবো, এম আই রাইট অভি স্যার?
ইয়েস ইউ আর, অভি হেসে জবাব দিলো।
কিমঃ ওয়েট আ মিনিট মিঃ অভি, আমাদের চেক করতে দিন, আমরা আবার কাল বসি?
অবণীঃ নট টুমরো বাই টুডে নর ইউ নো।
কিমঃ ওকে ওকে, আই উইল।
অভি আর অবণী দাঁড়িয়ে ওদের বিদায় দিলো।

অভি হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো, এই একাউন্টস কই থেকে পেলে?
অবণী জানালো, কাল রাতেই একাউন্টস ডিপার্টমেন্টে মেসেজ দিয়ে রেখেছিলো যেন দ্রুত এদের হিসাব পাঠায়।
ভেরী গুড, মাথায় বুদ্ধি আছে।
আপনি এখন কেমন ফিল করছেন?
মনে হয় জ্বর বেড়েছে।
তাহলে চলুন, আপনি রুমে যান আমি আসছি।
ওকে বলে অভি চলে গেলে অবণী সব কিছু গুচিয়ে নিয়ে রিসেপ্সনে গেল।
হাই, আপনাদের এখানে ডক্টর অন কল আছে নিশ্চয়?
ইয়েস আমাদের আছে কিন্তু আধা ঘন্টা লাগবে, রিসেপ্সনিস্ট জানালো।
রুম নাম্বার জানিয়ে অবণী অভির রুমে চলে এলো, এসে দেখে দরজা খোলা আর অভি ব্লেনকেটের ভিতরে কাঁপছে, অবণী দ্রুত নিজ রুমে গিয়ে দুইটা হেন্ড টাউয়েল নিয়ে আসলো, আর এর মধ্যে রুম বয় এসে একটা বড় বাটি দিয়ে গেলো। অবণী অভির পাশে বসে টাওয়েল ভিজিয়ে অভিকে জলপটি দিতে গেলে অভি নিষেধ করলে অবণী বললো, আপনি চুপ করে থাকুন, আমার যা করা উচিত আমি তাই করছি। অবণী প্রায় আধা ঘন্টা ধরে জলপটি করতে লাগলো।

 

___________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ