ভালোবাসি তোমায় (৩৩তম খন্ড)

ইঞ্জা ৩১ অক্টোবর ২০১৬, সোমবার, ০৯:৩৪:৪৭অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

images-11

 

আব্বু আম্মু দেখে যাও, তাড়াতাড়ি এসো, শ্রাবণী চিল্লাতে লাগলো টিভিতে ব্রেকিং নিউজের স্ক্রলে বারবার অভির এক্সিডেন্টের খবর দেখে।
অন্য ঘর থেকে অবণীর বাবা, মা আর ফাল্গুনী দৌড়ে এলো ড্রয়িং রুমে আর এরি মধ্যে সকাল ৭টার খবর শুরু হলো আর নিচে স্ক্রলে বারবার ব্রেকিং নিউজ চলতে লাগলো, খবর প্রেজেন্টার বলতে লাগলো, গতকাল দেশের শীর্ষ শীপিং ব্যবসায়ী অভি চৌধুরী মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায়য় আহত হয়ে এই মূহুর্তে এপোলো হাসপাতালে ভর্তি আছেন, উনার অবস্থা আশংকা জনক, ডাক্তারদের বরাত দিয়ে জানা যায় যে অভি চৌধুরীর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত উনার শারীরিক অবস্থা কি অবস্থায় আছে তা বলা সম্ভব নয়।
অবণীর মা কাঁদতে কাঁদতে অবণীর বাবাকে বললো, অবণীর বাবা আর দেরী করোনা, এখনি চলো, জানিনা অভির মা বোনের কি অবস্থা, আল্লাহ্‌ তুমি ছেলেটিকে হায়াত দান করো।
তুমি তাড়াতাড়ি কাপড় চেইঞ্জ করো, চলো আমরা যায়, অবণীর বাবা তাড়া দিলেন।
আব্বু আমরাও যাবো, ফাল্গুনী বললো।
না তোরা গিয়ে ওখানে ভিড় করার দরকার নেই, তোরা থাক আমরা যাচ্ছি, অবণীর বাবা না করলেন আর দৌড়ে নিজ রুমে গেলেন রেডি হতে, দশ মিনিট পর দুজনেই বেড়িয়ে এলেন দ্রুত, অবণীর বাবা ড্রাইবারকে গাড়ী বের করতে বলে ফাল্গুনীর দিকে তাকালেন আর বললেন, আমরা কতক্ষণে আসি তার কোন ঠিক নেই, তোরা দরজা বন্ধ করে ঘরে থাকবি আর তুই কোথাও যাবিনা, বুঝেছিস?
জি আব্বু।
ওকে তাহলে আসি আমরা।
আল্লাহ্‌ হাফেজ আর পারলে জানিও ভাইয়া কেমন আছে।
ঠিক আছে, আল্লাহ্‌ হাফেজ।

অভির মা অভির বেডের ঠিক পাশেই গ্লাস দেওয়া আছে সেইখানে দাঁড়িয়ে আছেন, উনাকে কেউ নাড়াতেও পারেননি ওখান থেকে, প্রিয়ন্তী কিছুক্ষণ সোফায় গিয়ে বসে আবার এসে মাকে সোফায় নিয়ে গিয়ে বসাতে চেষ্টা করে এমনিই চলতে থাকে। সকাল সাতটাই হক সাহেব জোড় করে ওদের নিয়ে গেলেন ক্যান্টিনে, ক্যান্টিনে পোঁছেই প্রিয়ন্তীদের বসিয়ে মোনালিসাকে নিয়ে খাবার অর্ডার দিতে গেলেন আর কিছুক্ষণ পর ব্রেড বাটার জ্যাম, অমলেট, মিক্সড ভেজিটেবেল আর কফি নিয়ে এসে বসলেন, অভির মা চেষ্টা করলেন খেতে কিন্তু তেমন কিছু গলা দিয়ে যেন গেলোনা, উনি কফি পান করতে লাগলে আর বাকিরা ব্রেকফাস্ট খেতে লাগলো, প্রিয়ন্তী চেষ্টা করেছিলো মাকে খাওয়াতে উনি জোর করতে না করাতে সে নিজের ব্রেকফাস্টের দিকে নজর দিলো কিন্তু তার অবস্থাও প্রায় একি ধরণের, একটি ব্রেড কোন রকমে খেয়ে সেও কফি খেলো এরপর হক সাহেব আর মোনালিসার কাছে ক্ষমা চেয়ে মাকে নিয়ে নিচের আইসিইউতে চলে গেলো।
বাবা তোমার কি মনে হচ্ছে, মোনালিসা জিজ্ঞেস করলো।
ভালো মনে হচ্ছেনা মা, ওর অবস্থা বেশ ক্রিটিকেল, বাঁচবে কিনা তাও সন্দেহ।
আল্লাহ্‌ যেন এমন না করে, দেখছোনা আন্টিদের কি অবস্থা, অভির কিছু হলে আন্টি পাগল হয়ে যাবেন।
আচ্ছা শুন, আগামীকাল নেদারল্যান্ড থেকে বাইয়ার আসতেছে, তোর আমার দুজনেরই থাকা উচিত চট্টগ্রামে।
আগে এখানকার অবস্থা দেখি তারপর না হয় লাস্ট ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাবো।

অবণীর বাবা মা এপোলো হাসপাতালে প্রবেশ করে ইনফরমেশন ডেস্কে খবর নিলেন অভিকে কোথায় রাখা হয়েছে আর গেস্ট পাস নিয়ে উনারা দ্রুত লিফটের কাছে এসে লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেনআর লিফট এলে পঞ্চম তলার উদ্দেশ্যে উঠে পড়লেন, পঞ্চম তলায় এসে লিফটের দরজা খুলে গেলে দুজনেই বেড়িয়ে এলেন লিফট থেকে আর একটু এগোতেই দেখলেন অভির মা দ্রুত এগিয়ে আসছেন আর সাথে সাথে অবণীর মাও দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরলেন, অভির মার সাথে সাথে অবণীর মাও কাঁদতে লাগলেন এরপর অভির মা অবণীর মাকে টেনে নিয়ে গেলেন ছেলেকে দেখাতে, জানালার পাশে নিয়ে গিয়ে বললেন, দেখ হাসি দেখ আমার ছেলের কি হলো, আমি তো কোনদিন কারো সাথে অন্যায় করিনি তাহলে আজ আমার ছেলের কেন এই অবস্থা বলেই আবার অবণীর মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন আর এই অবস্থা দেখে প্রিয়ন্তী এগিয়ে এসে দুজনকেই টেনে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো এই বলে যে এইটা আইসিইউ আর এইখানে এতো কান্নাকাটি করলে এরা বের করে দেবে কারণ অন্য রোগিদের অসুবিধা হচ্ছে।
আনকেল আপনিও বসুন, অবণীর বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রিয়ন্তী বললো।
হাঁ মা বসছি, তোমরা তো কাল থেকেই এইখানে, বাসায় তো আর যাওনি, অবণীর বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
না আনকেল কি ভাবে যায় ভাইয়াকে এইভাবে ফেলে রেখে।
হুম বুঝেছি, হাসি তুমি এক কাজ করো, তুমি আপা আর মেয়েকে নিয়ে বাসায় যাও, বাসায় গিয়ে ওনারা গোসল করে কিছুক্ষণ রেস্ট করুক তারপর খেয়ে দেয়ে আবার এসো, অবণীর মাকে বললেন অবণীর বাবা।

অভির মা আর প্রিয়ন্তী তো কোনভাবেই যাবেনা, অবণীর বাবা জোর করে অবণীর মার সাথে উনাদের পাঠিয়ে দিলেন সাথে মোনালিসা আর হক সাহেবও গেলেন আর অবণীর বাবা রয়ে গেলেন হাসপাতালে।
অবণীর মা নিজেদের গাড়ীতে অভির মা আর প্রিয়ন্তীকে নিয়ে নিলেন আর মোনালিসাদেরকে নিয়ে অভিদের গাড়ী রওনা হলো অভিদের বাসার উদ্দেশ্যে।
হাসি তোর ফোনটা একটু দিবি, অফিসে কল দেবো বলে অবণীর মার ফোন চেয়ে নিলেন অভির মা, নিজের আর মোনালিসার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে, উনি জিএমকে রিং দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হাসপাতালের এডভান্সটার পেমেন্ট করা হয়েছে কিনা? প্রতি উত্তরে জিএম নিশ্চিন্ত করলেন উনাকে আর এয়ো বললেন উনি এই মূহুর্তে হাসপাতালেই এসেছেন মাত্র।
ঠিক আছে আপনি থাকুন, ওখানে অবণীর বাবা আছেন, একটু খেয়াল রাখবেন, বলেই ফোন কেটে দিলেন আর অবণীর মাকে বললেন, তোরা কোথা থেকে শুনেছিস?
খবরে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছিলো আর তা দেখেই তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি।
তোর মেয়ে মানে অবণী এলোনা?
অবণী তো কানাডা চলে গেছে তা তো প্রায় কয়েক মাস হয়ে গেল, কেন তুই জানিস না?
নাতো, জানিনা।
আচ্ছা চল এখন আমার বাসায় চল, সেখানেই ফ্রেস হয়ে নিবি।
নারে আগে বাসায় যায়, জানিনা বাসার কি অবস্থা, তোর অসুবিধা হবে নাতো।
আরে না না কিসের অসুবিধা, ড্রাইভারকে ঠিকানাটা বলে দাও তো মা, প্রিয়ন্তীকে বললেন অবণীর মা।

ছোট মা আজ কি রান্না হয়েছে নাকি রান্না করবে, অবণী অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো।
তেমন কিছুনা, আজ বিফ স্টেইক করছি সাথে ভেজিটেবেল, তুই চাইলে গেল্প করতে পাড়িস, ছোট মা বললেন।
অবণী কিচেনে এসে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা বলো কি হেল্প করতে পারি?
তুই ভেজিটেবেল গুলো সুন্দর করে কেটে দে, বাকিটা আমি করবো।
ওকে, বলেই অবণী প্রথমে আলু, গাজর আআর চায়নিজ বিন গুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিলো এরপর সুন্দর করে কাটতে লাগলো, ডিনারের সময় হয়ে আসাতে দ্রুতই কাটতে লাগলো সাইজ করে করে হঠাৎ ও মাগো করে চিৎকার করে উঠলো।
কি হলো, কি হলো চিৎকার করতে করতে ছোট চাচী দৌড় দিলেন।
আঙ্গুল কেটে ফেলেছি।
দেখি দেখি, ছোট চাচী এগিয়ে গিয়ে দেখতে লাগলেন আর এরি মধ্যে ছোট চাচা আর দাদীও এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন কি হয়েছে, ছোট চাচী চাচাকে বললেন, তোমার মেয়ে হাত কেটে ফেলেছে বলেই অবণীকে টেনে নিয়ে গিয়ে বেসিনের কাছে এনে বেসিনের পানি ছেরে দিয়ে হাতটা ভালো করে ধুয়ে দিলেন গরম পানি দিয়ে, ছোট চাচা তাড়াতাড়ি করে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এলেন, ছোট চাচী ভালো করে এন্টিসেপ্টিক ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলেন।

কিরে কিভাবে কাটলি, মন কই ছিলো তোর, দেখে শুনে কাজ করবিনা, ছোট চাচা হাল্কা বকা লাগালেন।
ছোট বাবা, আসলে আমি মনে হয় অন্যমনস্ক ছিলাম।
কেন অন্যমনস্ক ছিলি, বাড়ীর কথা মনে পড়ছে নাকি অন্য কিছু?
না ছোট বাবা কিছুই নয়।
হুম কিছু না হলে তো ভালো, আচ্ছা আমি যায় তোর ছোট মাকে হেল্প করি, বলেই ছোট চাচা এগুলেন কিচেনের দিকে।
দাদী পাশেই ছিলেন, অবণীর একটা হাত টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে বুড়ী বেশি ব্যাথা পেয়েছিস?
না দাদী হাল্কা কেটেছে।
তা তোর মন খারাপ কেন?
বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে অবণী বললো, জানিনা দাদী গতকাল থেকেই কেমন যেন লাগছে, কিছুই ভালো লাগছেনা।
কেমন?
কেমন জানিনা কিন্তু শরীরটা চলছেনা, কাজে মন বসছেনা।
আল্লাহ্‌ রহম করুক, তুই খেয়ে উঠে ঢাকায় একটা ফোন দিয়ে সবার খবরা খবর নে, দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে।
ঠিক আছে দাদী।
এর মধ্যে চাচা কিচেন থেকে বেড়িয়ে এলেন ট্রেতে করে পানির গ্লাস নিয়ে, টেবিলের দিকে এগুতেই হোচট খেলেন, নিজেকে সামলাতে গিয়ে ট্রে সহ সব গ্লাস ফ্লোড়ে পড়ে গেল ঝনঝন শব্দে।
ধ্যাত্তেরিকে আজ এইসব কি হচ্ছে, বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন ছোট চাচা।
ছোট চাচী দৌড়ে এসে অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি বড় বড় কাঁচের টুকরা গুলো তুলে নিয়ে ফেলে এলেন আর ছোট চাচা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পুরা কারপেট পরিষ্কার করে নিলেন।

সবাই খেতে বসলে চাচী অবণীর প্লেটে বড় একটা স্টেইক আর ভয়ল্ড ভেজিটেবেল তুলে দিলো আর দাদীকেও স্টেইক দিলো ভেজিটেবেলের সাথে আর সামনে কয়েকটা রুটি দিলো কারণ দাদী রুটি ছাড়া স্টেইক পছন্দ করেন না আর দাদীর স্টেইক ফিফটি পারসেন্ট টেন্ডার করতে হয় আর বাকিদের জন্য সিক্সটি থেকে সেভেন্টি পারসেন্ট করেন।
সবাই খেতে শুরু করলো, অবণী আসতে আসতে খেতে লাগলো দেখে ছোট চাচী জিজ্ঞেস করলেন, কিরে ভালো হয়নি, একটু মাশরুম সস দিয়ে নে।
অবণী মাশরুম সস নিয়ে স্টেইকের উপর হাল্কা দিলো আর পাশেই রাখা মিট সসও কিছু নিয়ে খেতে লাগলো কিন্তু আজ ওর মনটা কেনো জানি ভালো নেই আরর খেতেও তেমন ইচ্ছে করছেনা এরপরেও ছোটমা কষ্ট করে করেছে না খেলে মনে কষ্ট নেবে এই ভেবে খেতে লাগলো। খাওয়া সবার প্রায় শেষ পর্যায়ে এর মধ্যে ঘরের ল্যান্ডফোন বেজে উঠায় অবণী বললো, তোমরা বসো আমি দেখছি বলেই অবণী ন্যাপকিনে ঠোঁট মুছে নিয়ে এগিয়ে গেল, ফোন তুলে হ্যালো বললো আর অপর প্রান্ত থেকে ফাল্গুনী বললো, আপু কেমন আছিস?
ভালো, তোরা কেমন আছিস?
জি আমরা ভালো।
আর সবাই কই, আব্বু আম্মু শ্রাবণ?
আপু একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছি।
কি বল।
আপু, ভাইয়া মানে অভি ভাইয়া বড় ধরণের এক্সিডেন্ট করেছে।
কি কি বললি, বুকে ধরপড় শুরু হয়ে গেলো অবণীর।
আপু ভাইয়া মনে হয় বাঁচবেনা বলেই হাউমাউ কান্না জুড়ে দিলো ফাল্গুনী আর অবণীর পুরা, শরীর জুড়ে কাঁপানি শুরু হলো হাত থেকে ফোনের রিসিভার ছুটে গেলো, কাঁপতে কাঁপতে হঠাৎ মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারালো অবণী।

 

__________ চলবে।
ছবিঃ google.

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ