ভালোবাসি তোমায় (৩খন্ড)

ইঞ্জা ১৭ জুলাই ২০১৬, রবিবার, ০২:০৫:০৫অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

 

বৃটিশ এয়ারওয়েজের ক্লাব ক্লাসের সিটে এসে বসলো অভি, এরোপ্লেন ছেড়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে, সব প্যাসেঞ্জার উঠে এসেছে, একটি মেয়ে তাড়াহুড়ো করে এসে ঢুকলো আর এইদিক ওদিক উকি মেরে দেখছে তার জন্য নির্দিষ্ট সিটের খোঁজে, তারপর অভির পাশের আইল সিটেই এসে বসলো। মেয়েটির দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো অভি, চিনতে ভুল করেনি এতোদিন পরেও অনামিকাকে। অনামিকা যখন ওর পাশে এসে বসলো তখন অভির মনটা বেশ ভারী হয়ে গেলো, ও মুখ ঘুড়িয়ে জানালার গ্লাসের অপারে দেখতে লাগলো, প্লেইন টেইক অফ করছে যখন তখন ও মুখ ফেরালো আর চোখাচোখি হলো অনামিকার সাথে, অনামিকা যেন ভূত দেখেছে তেমনি চমকে উঠলো, অভি আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো, চোখের পানি ছল ছল করে উঠলো কখন যেন?

অভি আর অনামিকা এক সাথে পড়তো একি ইউনিভারসিটিতে আমেরিকায় আর সেই সূত্রেই তাদের বন্ধুত্ব, একসময় দুজনেই একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে, দুজনেই ভেকেশনের সময় ঘুরে বেড়াতো বিভিন্ন লোকেশনে, বন্ধু মহলের সবাই জানতো তারা পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে করবে কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল, অনামিকা হটাৎ ওর আচরণ বদলে ফেললো, হেলাফেলা করতে লাগলো, অভিকে এড়িয়ে চলতে লাগলো আর এক সময় সে বলেই ফেললো ও অভিকে ভালোবাসেনা আর, কেন প্রশ্নের উত্তর কোনোদিন আর দেয়নি আর অভিও জিজ্ঞেস করেনি কারণ বাইরে বাইরে অভি জানতে পেরেছে অনামিকা নাকি ইউনিভারসিটির আরেক ছাত্রের প্রেমে পড়েছে আর সে এক মিলিয়নিয়ারের ছেলে, সাথে ঘুরে বেড়ায়, ডেটিং করে, এক সময় অভিও দেশে ফিরে আসে পড়াশুনা শেষ করে, তখন থেকেই আর অনামিকার সাথে যোগাযোগ নেই তার আর আজ এতোদিন পরে অনামিকা তার পাশেই বসে আমেরিকা যাচ্ছে।

অনামিকার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো অভির।
কেমন আছো তুমি, অনেকদিন পরে দেখলাম তোমাকে?
হুম ভালো আছি আর তুমি?
আমিও ভালো আছি, তুমি কোন এস্টেটে যাবে?
নিউইয়র্ক।
ওহ, আমিও তো বেশ কয়েক বছর ধরে ওখানেই থাকি?
কেন, তোমার হাসবেন্ড কি ওখানেই
না ওর সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে বিয়ের দুই বছরের মাঝেই।
ওহ সরি
না না সরির কিছু নেই আই এম সরি অভি, আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি বলেই আজ আমার এই দশা।
ওইসব বাদ দাও তো, অভি বলল।
এর মধ্যে এয়ার হোস্টেস এসে জিজ্ঞেস করলো কোনো ড্রিংক নেবে কিনা, অভি ভদকা মার্টিনী চাইলো উইথ সোডা আর অনামিকা সেম্পেইন, কেবিন ক্রু দুইজনকে ড্রিংক দিয়ে এগিয়ে গেলো।
অনামিকা বলল, তুমি তো হার্ড ড্রিংক করতে না আর পছন্দও করতে না?
সময় মানুষকে বদলিয়ে ফেলে, অভি জবাব দিলো।
তুমি কি আমার উপর এখনো রাগ?
না না, সেইসব দিন আমি আর মনে রাখিনি, মনেচ্রেখে কি লাভ হতো বলো, তুমি তোমার পথে ছিলে গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো অভি।
তুমি কখনো আমাকে কিছুই আর জিজ্ঞেস করোনি, না কিছু বলেছো, আর না বলেই তুমি ফিরে গেছো দেশে।
অভি চুপ করে রইলো।
অভি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
আচ্ছা ওই সব বাদ দাও তো।
রাতের ডিনার সার্ভ করাতে আর বেশিদূর এগুলোনা কথা, অভি ডিনার খাওয়া শুরু করলো, খাওয়া শেষে আরো কয়েকবার ড্রিংক নিলো ও যেন ঘুমাতে পারে।

লন্ডনের হিথ্রোতে যখন প্লেইন ল্যান্ড করে তখন ওখানে সকাল ৮টা, যারা আমেরিকা যাবে তাদেরকে ৭ ঘন্টার বিরতি দেওয়া হয়েছে, সবাই নেমে এলো এয়ারপোর্টে, অভির সাথে অনামিকাও পিছে পিছে এলো, অভি চাইছিলো অনামিকাকে এভোয়ইড করতে কিন্তু অনামিকা পাশে পাশেই হাটতে লাগলো। অভি, অনামিকা এক রেস্টুরেন্টে ঢুকলো স্মোকিং জোন দেখে, এক খালি টেবিল দেখে এগিয়ে গিয়ে বসলো, ওয়েটার এগিয়ে এসে মেনু দেখালে অভি সেন্ডউইচ আর কফির জন্য বলল দুজনের জন্য, অভি ব্লাক আর অনামিকা ক্রিম এক্সপ্রেসো উইত নাটস নিলো। খাবার আসতে আসতে অভি ডানহিল লাইটসের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালো আর তা দেখে অনামিকা বললো, তুমি এখন ড্রিংক কর, স্মোক কর, আমি আশ্চর্য হচ্ছি!
সময়, সময় মানুষকে চেঞ্জ করে দেয়, জবাব দিলো অভি ধুয়া ছেড়ে, তা তুমি কেন ডিভোর্স নিলে?
পিটার প্রচন্ড ড্রাগ আসক্ত ছিলো আর মেয়েদের প্রতিও আসক্তি ছিলো আর এইসব বিষয় নিয়ে যখন ওকে প্রশ্ন করতাম সে মারধরও কিরা শুরু করলো, এক সময় পুলিশে কম্পলেইন করলাম আর কোর্টে এপ্লাই করে ডিভোর্স ফাইল করলাম, তিন মাস লাগলো ডিভোর্স পেতে তারপর চলে এলাম আমি নিউইয়র্ক।
তা আজকাল কি করছো?
একটা মাল্টি ন্যাশনাল ফার্মে লজিস্টিক ম্যানেজার হিসাবে আছি, তা তুমি কি করছো, অনামিকা জিজ্ঞেস করলো।
অভি সেন্ডউইচে কামড় দিয়ে চিবুতে লাগলো তারপর বলল, আমার একটা শিপিং কোম্পানি আছে।
তা বিয়েতা করেছো, প্রশ্ন করে অনামিকা অভির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
অভি কফিতে চুমুক দিতে থাকলো।
না এখনো করিনি, দেখি ভালো মেয়ে পেলে করে ফেলবো, বলেই এই প্রথম অভি অনামিকার চোখে চোখ রাখলো, সে দেখতে চাই অনামিকার রিএকশন আর অভির চোখে চোখ রাখতে পারলোনা অনামিকা, চোখ নামিয়ে ফেললো।

দুপুর তিনটায় প্লেইন যখন ছাড়লো তখন অভি ঘুমিয়ে পড়লো, মাঝে এয়ার হোস্টেজ খাওয়া দিতে চেয়েছিল কিন্তু ও নেয়নি কারণ ওরা দুপুরের লাঞ্চ করে বোর্ডিং করেছিল। ঘুম ভাঙ্গে প্রায় দুই ঘন্টা পর, পাশে দেখে অনামিকা ঘুম, বাটন টিপে এয়ার হোস্টেজ থেকে পানি চেয়ে নিল। পানি খেতে খেতে অভি চিন্তা করলো অনামিকার সাথে দেখা না হলেই মনে হয় ভালো ছিল ও, ওকে ভুলেই ছিলো কিন্তু মনের কষ্ট কোনদিন ওর মন থেকে যায়নি, অনামিকার সার্থপরতা ওকে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছিলো অভিকে, মেয়েদের প্রতি এক বিতৃষ্ণা জম্মে ছিল, ওর মা ওকে বিয়ে করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু ও নানা টালবাহানায় এড়িয়ে যেতো। এর মধ্যে অনামিকা জেগে উঠলো আর জিজ্ঞেস করলো কিছু খেয়েছে কিনা, অভি মাথা নাড়ালো না সুচক।
ওদেরকে রাতের খাওয়া দেওয়া হলে খেয়েই অভি ঘুমের ভান করে পড়ে রইল যেন অনামিকা ওর সাথে কথা বলতে না পারে, এক পর্যায় ঘুমিয়ে গেলো। সকালে ব্রেকফাস্ট করার এক ঘন্টা পর প্লেইন ল্যান্ড করলো নিউইয়র্কে। দুজন যখন এয়ারপোর্ট থেকে বের হলো তখন প্রায় দুপুর, অনামিকা জিজ্ঞেস করলো, কেউ আসবে নিতে?
হাঁ আমার বিজনেস এসোসিয়েট গাড়ী নিয়ে আসবে।
কোথায় উঠবে, তোমার কোনো কন্টাক নাম্বার থাকলে দাও।
না এখনো জানিনা কোথায় উঠবো আর এখানকার কোনো নাম্বার নেই এই মূহুর্তে, মিথ্যে বললো অভি।
ঠিক আছে বলেই অনামিকা একটা ভিজিটিং কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ফ্রি হয়ে কন্টাক করো প্লিজ, আসি এখন বলেই অভিকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো, অভি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে এড়িয়ে গেল। অনামিকার অফিস থেকে গাড়ী এসেছে, তাতে চেপে বাই জানিয়ে অনামিকা বিদায় নিলো। অভি সেল ফোন বের করে কল দিলো ওর সোফারকে, ওর জন্য সোফার লিমুজিন নিয়ে এলো সাথে সাথেই আর অভি রওনা হয়ে গেলো ওর নিউইয়র্ক অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিসে গিয়ে কিছুক্ষন বিভিন্ন কাজ দেখে নিয়ে চলে এলো নিজ এপার্টমেন্টে।

ঘুম ভাঙ্গলো খুব ভোরেই জেট ল্যাগ আছে এখনো, হাত ঘরিতে দেখলো ভোর চারটা, দেশে এখন দুপুর দুইটা, খুব খিদে পেয়েছে তাই উঠে ফ্রিজ খুললে একটা পিচ ফল আর আপেল নিয়ে ডাইনিং টেবিলেই তারিয়ে তারিয়ে খেলো। খেয়ে রুমে ঢুকে রাতের ড্রেস খুলে দিগম্বর হয়ে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে জিম করার ড্রেস পড়েই জিম রুমে চলে এলো, জিম করে সে অনেক বছর ধরে অভি আর তাই তার শরীর বেশ ফিট থাকে। ঘন্টা খানেক জিম করেই সে কতক্ষণ রেস্ট নেয় শরীরের ঘাম শুকানোর জন্য, এরপর শাওয়ার নেয় অনেকক্ষণ করে, ব্রেকফাস্ট করেই অফিসের উদ্দেশ্যেই রওনা হয়, আজ নিজেই ড্রাইভ করছে অভি। সেল ফোনটা বেযে উঠলে সে গাড়ীর সাথে সংযুক্ত স্পিকার অন করে হ্যালো বলল, অপর প্রান্ত থেকে ওর অফিস রিসেপ্সনিস্ট ইংরেজিতে বলল, A lady want to asking for you Mr. Ovi, if you want I can redirect the call to you.
অভি বলল, please. অপর প্রান্ত থেকে টুট শব্দের পরে আওয়াজ এলো, hi অভি কেমন আছো? অভি একটু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে বলছেন?
আমি, চিনতে পারোনি অনামিকা আর খিল খিল করে হাসছে।
অভি জিজ্ঞেস করলো, তুমি আমার নাম্বার ফেলে কোথা থেকে?
আবার খিল খিল খিল হাসি আর সেই সাথে বলছে অনামিকা, অভি এইটা আমেরিকা, এইখানে নাম্বার পাওয়া কি বেশি কঠিন, এই সব বাদ দাও, আজকে লাঞ্চে কি টাইম হবে, প্লিজ না করোনা।
দেখ আমি এলাম মাত্র আর অফিসে আজ মিটিং আছে।
তাহলে রাত্রের ডিনার এট সেভেন, আমি তোমাকে পিক করে নেবো?
না কোথায় আসবো বলো, আমিই চলে আসবো, বুঝতে পেরেছে অনামিকা নাছোড়বান্দা।
রিজেন্ট পার্ক এর মেইন গেইটের সামনেই, রয়াল ডাচ।
হুম চিনতে পেরেছি।
Ok তাহলে আমি অপেক্ষায় থাকবো, মিস করোনা প্লিজ। অনামিকা এই বলে ফোন কেটে দিলো।
অভি একটু বিরক্তই হলো, আর চিন্তা করে কি লাভ ভেবেই শ্রাগ করলো।

অভির অফিস ২১ তলায়, লিফটে উঠে এসে নিজ চেম্বারে এসে বসেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল, আজ তার নতুন যে তিনটা শীপ কিনবে তা নিয়ে বিক্রেতার সাথে মিটিং হবে আর তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অফিসের কর্মকর্তা রিচার্ডের সাথে, এরপর সবাই বসলো (অন্যান্য অফিসার সহ) কনফারেন্স রুমে। এরপরে শুরু হলো আসল মিটিং, লাগাতার চললো সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত। সাড়ে ছয়টার দিকে অনামিকা ফোন দিয়ে আবার কনফার্ম করলো সে আসছে কিনা, অভি বলল সে বেরুচ্ছে।

সাতটার কিছু পরেই অভি পোঁছাল রয়াল ডাচে, অনামিকা আগেই রেস্টুরেন্টের কাঁচের জানালার পাশের এক টেবিল নিয়ে বসে আছে, জানালার পাশে বসে খাওয়া অভির পছন্দ আর তা অনামিকার মনে আছে দেখে অভি আশ্চর্য হলোনা, হাজার হলেও অনামিকা ওর এক্স। অনামিকা উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাত বাড়িয়ে দিলো, অভি অনামিকার বাড়ানো হাত গুলো ধরে একটু চাপ দিয়ে ছেড়ে দিলো, নিজের সাথে আনা গিফট র‍্যাপ করা বাক্সটা ওর হাতে দিয়ে তারপর বসলো চেয়ারে।
অনামিকা বলল, এগুলো আনার কি দরকার ছিল?
না তেমিন কিছু না জাস্ট কার্টেসি, অভি জবাবে বলল।
কি খাবে বলো, এখানকার ফিস আইটেম গুলো বেশ ভালো।
ওকে তুমিই তাহলে অর্ডার দাও।
ড্রিংক্স?
মাছ হলে, ওয়াইট ওয়াইন।

_________ চলবে।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ