ভালোবাসি তোমায় (২২তম খন্ড)

ইঞ্জা ২৩ আগস্ট ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৪:৪৪:৫২অপরাহ্ন গল্প ২২ মন্তব্য

 

images (10)

 

অবণীরা চাচার বাসায় যখন পোঁছাল তখন সন্ধ্যা সাতটা প্রায়, টেম্পারেচার প্রায় মাইনাস চার, চাচী দরজা খুলেই জড়িয়ে ধরলেন আর বলতে লাগলেন, এসো মা এসো, কেমন আছো তুমি?
হাঁ ছোট মা আমি ভালো, ছোট বাবা কই? অবণীর বাবারা দুই ভাই আর ছোটটাই কানাডা থাকে, উনাদের কোনো বাচ্চা নাই বলেই অবণীদের নিজের মেয়ের মতোই দেখেন দুজনে।
আমার মা এসে গেছে বলতে বলতে ছোট চাচা বেড়িয়ে এলেন ভিতর থেকে, অবণীকে জড়িয়ে ধরলেন এরপর অবণীর চিবুকটা তুলে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছিস মা, তোর চেহেরা এমন হয়েছে কেন?
আমি ভালো আছি ছোট বাবা, তুমি শুকিয়ে গিয়েছো কেন?
তোর ছোট বাবা আজকাল খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে, হাসতে হাসতে অবণীর চাচী বললেন, কি গো মেয়ের সব খবর কি দুয়ারেই নেবে নাকি ভিতরে আসতে দেবে মেয়েকে, আয় মা আয় ভিতরে চল।
সবাই ভিতরে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো আর রবিন সব ব্যাগ এনে ড্রয়িং রুমে রেখে এসে বসলো সাথে।
তা বল, ঘরের সবাই ভালো? অবণীর চাচী জিজ্ঞেস করলেন।
হাঁ সবাই ভালো ছোট মা।
অবণী কথা বলছে আর এই দিকে চাচা ওর মাথায় হাত ভুলাচ্ছে।
তোকে অনেকদিন পরে দেখে কি যে আনন্দ লাগছেনা মা কি বলবো, অবণীর চাচা বললেন।
অবণী তুই চল তোর রুম দেখিয়ে দিই, আগে ফ্রেস হয়ে নে তারপর ডিনার করেই গল্প করবো আর রবিন তুমি এখন যেওনা, এক সাথে খাবে আমাদের সাথে বলেই অবণীর চাচী অবণীকে নিয়ে উঠলেন।
নো নো আন্টি আই এম লিভিং নাও, আই হেভ সাম জব টু ঢু, রবিন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো।
এই ছেলে একদম চুপ মেরে বসে থাকো আমি আসছি এখনি বলেই অবণীর ব্যাগ গুলো নিয়ে দুজনেই উপরে চলে গেলেন।
ওহ নো গড সেইভ মি।

ডুপ্লেক্স বাড়ীটার নিচে ছোট একটা রুম যেখানে অবণীর দাদী থাকেন, যেহেতু উনার পায়ে আথ্রাইটিস আছে, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা নিষেধ তাই নিচের রুমেই থাকেন উনি আর আছে ড্রয়িং ডাইনিং এক সাথে এবং তার পাশেই কিচেন, উপরে আছে তিনটা রুম।
অবণীকে উপরে নিয়ে এসে উনাদের পাশের রুমটার দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন অবণীর চাচী, এই রুমটায় তোর জন্য ফ্রেস করে রেখেছি, তুই ভালো করে দেখ পছন্দ না হলে আমাদের রুমটা দেবো তোকে।
না ছোট মা, এই রুম বেশ সুন্দর।
তাহলে ফ্রেস হয়ে নিচে আয় তারপর এক সাথে ডিনার করবো।
ঠিক আছে, আমি শাওয়ার নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।
শাওয়ার নিবি না নিলে হয়না, খুব ঠান্ডা পড়ছে?
তুমি চিন্তা করোনা ছোট মা, তুমি যাও আমি আসছি।
ঠিক আছে কিন্তু সাবধান ঠান্ডা বাধিয়ে ফেলিসনা।
ওকে, তুমি যাও আমি আসছি।
চাচী চলে গেলে অবণী দরজা লক করে, ব্যগ খুলে কাপড় কিছু নিয়ে বাথরমে গেল, আধা ঘন্টা পর ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে এসে দেখলো ওর চাচী খাবার রেডি করছে, অবণীও সাথে হাত লাগালো খাবার গুলো টেবিলে নিয়ে এলো, সব রেডি হলে সবাই খেতে বসলো।
ছোট মা, এতো খাবার?
আরে তুই আসছিস আর আমি একটু ভালো মন্দ রাঁধবোনা এ হতে পারে?
সবাই খেয়ে উঠলে, অবণীর চাচী সবার প্লেট আর ডিস গুলো নিয়ে এলেন কিচেনে আর সাথে অবণীও হাত লাগালো চাচীকে সহায়তা করতে, ছোট চাচী গরম গরম চকলেট কফি মগে ঢেলে ট্রেতে করে সবাই কে দেওয়ার জন্য বললেন, অবণী সবাইকে দিয়ে নিজেও একটি নিয়ে চুমুক দিতে লাগলো।

আন্টি থাংক্স ফর দা নাইছ ফুড, নাও আই হেভ টু গো নাও, রবিন বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলে অবণীর চাচা বললো, ছেলেটা বেশ ভালো, তা মা তোর কি ঘুম পাচ্ছে?
না চাচ্চু অসুবিধা নেই, গল্প করি কিছুক্ষণ।
দরকার নেই, মেয়েটা অনেক জার্নি করে এসেছে, আজ ও ঘুমাক, কাল সানডে জমিয়ে গল্প করো, অবণী চল তোকে ঘুম পারিয়ে আসি, অবণীর চাচী বাগড়া দিলেন। অবণী সবার থেকে বিদায় নিয়ে চাচীর সাথে উপরে উঠে এলো নিজের জন্য নির্ধারিত রুমে, ওর চাচীও সাথে এসে বিছানায় বসলো।
অবণী আপা কেমন আছেরে?
মা ভালো আছে, মা কিছু একটা দিয়েছে তোমার জন্য, খুব করে প্যাকিং করে দিয়েছে, দাঁড়াও ব্যাগ থেকে বের করি, অবশ্য আমি জানিনা কি দিয়েছে, বলেই ব্যাগ খুলে বড়সড় একটা পলি প্যাকের প্যাকেট বের করে ছোট চাচীর হাতে দিলো।
হাতে নিয়ে বললো, তোর মা কি দিয়েছে আমি জানি মনে হয়।
ওমা কি বলো, তুমি জানো, ঠিক আছে কি আছে বলো তো?
আমার মনে হয় তোর মা আমার জন্য অনেক গুলো পিঠা দিয়েছে, তুই তো জানিস আমি পিঠা বলতেই অজ্ঞান, হি হি করে হাসতে লাগলেন।
তাহলে খুলে দেখো দেখি, অবণী আগ্রহ নিয়ে বললো।
চাচী প্যাকেট খুলতে খুলতে বলছেন, জানিস তোর কোনো খালা না থাকার কারণে আপা আমাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসতেন, আমি কি খাবো না খাবো, কি পড়বো, কেমন সাজবো সব আপা খেয়াল রাখতেন, বলতে বলতে চোখ পানিতে ভরে গেলো উনার। প্যাকেট খুলেই উজ্জ্বল মুখে দেখালেন অবণীকে, দেখ কি দিয়েছে তোর মা।
ওমা, তোমার কথাটাই ঠিক, মা তো পিঠা দিয়েছে তোমার জন্য।
ওকে অনেক রাত হয়েছে তুই ঘুমিয়ে পড় আর সকালে ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে উঠিস না, এতে তোর জ্যাট ল্যাগ হবে কম।
ঠিক আছে ছোট মা, গুড নাইট।
চাচী কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন, গুড নাইট মা।

অবণী অভির হাত ধরে হাটছে, অনেক লম্বা কিন্তু সরু পথ সাথে হাল্কা কুয়াশা, চারিদিকে প্রচুর গাছপালা, পাখিরা গান গাইছে মধুর সুরে, অভি নিজের হাতটি অবণীর কোমরে দিয়ে হাটতে লাগলো, এক সময় অবণীর গ্রীবা তুলে ধরে চুমু খেলো তারপর বললো, ভালোবাসি তোমায়। হটাৎ অবণী খেয়াল করলো এক কালো বিড়াল ওদের দিকে ধেয়ে আসছে, অবণী চিৎকার দিয়ে অভিকে সরিয়ে দিতে গেল। অবণী ঝট করে উঠে বসলো, বুকটা হাফরের মতো উঠানামা করছে, ফ্যালফ্যাল করে এইদিক ওদিক তাকাচ্ছে, দুকরে কেঁদে দিলো অবণী, কেনো কেনো সে এইসব সপ্ন দেখছি আমি, আমি তো সব ছেড়ে চলে এসেছি তবুও কেনো এইসব সপ্ন দেখছি তোমাকে নিয়ে, নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো অবণী। চারিদিকে অন্ধকার, ভোরের আলো ফুটে নাই এখনো, হাত ঘড়িটাতে সকাল ৭টা। দরজায় হাল্কা নক শুনে ফিরে তাকালো অবণী, উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো দাদী দাঁড়িয়ে, জিজ্ঞেস করলো, ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম নাকিরে অনু, দাদী মাঝে মাঝে আদর করে অনু ডাকে অবণীকে।
না দাদী এসো ভিতরে এসো, তোমার না উপরে উঠা বারণ?
তুই এসেছিস, তোকে না দেখে থাকতে পারলামনা, তোর ঘুম হয়েছিলো রাতে?
হাঁ হয়েছে, সবাই কি উঠে পড়েছে?
হাঁ উঠে পড়েছে।
দাদী এইখানে ভোর হয় কয়টাই?
এখন তো শীতের সময় তাই এইখানে সূর্য উঠে দেরিতে, বাইরে বেশ ঠান্ডা, তুষারপাত হবে মনে হয় আজকে, তুই রেডি হয়েনে আমি অপেক্ষা করছি, বাকি সবাইও তোর জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে অপেক্ষা করছে।

অবণী ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে দাদীকে নিয়ে নিচে নেমে এলো, সবাইকে সালাম দিয়ে ব্রেকফাস্ট খেতে বসলো।
ও মা তোর ঘুম হয়েছিলো রাতে, অবণীর চাচা জিজ্ঞেস করলো।
ঘুম আসতে দেরী হলেও ঘুম হয়েছে ছোট বাবা।
চাচী নিজ হাতে আজ পরটা, লুচি, লাবড়া, ডিম ভাজি বানিয়েছে সবার জন্য, সাধারণত ব্রেড বাটার, জেম, ডিম এইসব থাকে কিন্তু আজ স্পেশাল করলেন। আগে অবণীর প্লেটে লাবড়া আর ডিম তুলে দিতে দিতে বললেন, জানি তুই লাবড়া খুব পছন্দ করিস, তাই তোর জন্য স্পেশাল এইটা করেছি, নে খা।
অবণী খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের এইখানে হিটার দেখি সব ঘর গরম করে রেখেছে।
হাঁ মা এইখানে হিটার ছাড়া চলতেই পারবিনা, এখন তো বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা, ওয়েদার ফোরকাস্ট হলো আজ তুষারপাত হবে।
ওহ গড, তাহলে তো ঘর থেকেই বেরুনো যাবেনা।
অপেক্ষা কর, আমরা বেরুবো শপিংয়ে, তোর জন্য ওভারকোট আর গরম কিছু কাপড় নিয়ে আসবো, চাচা বললেন।
ওভারকোটের কথা মনে হওয়াতে অবণীর মন কেঁদে উঠলো, লাল ওভারকোটটা অভী কিনে দিয়েছিলো। ছোট বাবা আমার কাছে ওভারকোট আর গরম কাপড় আছে, আমার দরকার নেই।
কয়টা ওভারকোট আছে তোর?
একটা।
তুই একটা ওভারকোট নিয়ে কয়দিন চলবি?
আচ্ছা ছোট বাবা, তাহলে আমিও আসি তোমাদের সাথে, সারাদিন ঘরে বসে থাকতে পারবোনা।
তাহলে ত আরো ভালো হয়, আম্মা আপনিও যাবেন নাকি আপনার নাতনীর সাথে?
চল, আমিও ঘুরে আসি, দাদী জবাবে বললেন।

জিএম সাহেব আমার রুমে আসতে হবে যে, ইন্টারকমে কল দিয়ে বললো অভি, তা আনকেল কি খাবেন বলুন?
এইতো কিছুক্ষণ আগেই ব্রেকফাস্ট করে বেরুলাম, এখন আবার কি খাবো, কফিই দিতে বলো, হক সাহেব বললেন।
আর মোনালিসা, তুমি?
আমিও কফি ছাড়া আর কিছু খাবোনা, আজ আন্টি যা খাইয়েছে তাতেই আমার পেট ফুল।
অভি ইন্টারকমে চারটা কফি দিতে বললো, জিএমও রুমে আসছে কিনা। জিএম নক করে ভিতরে প্রবেশ করে সালাম দিলো সবাইকে।
তোমাদের আগের জিএম কি চলে গেছে বাবা, তোমার আব্বার খুব বিশ্বস্ত ছিলেন উনি।
আনকেল ইনি কবির সাহেব আগের জিএম আনকেলেরই ছেলে।
ওহ তা তোমার আব্বা কেমন আছেন?
জি স্যার উনি ভালো আছেন।
জিএম সাহেব, উনি হক শিপিংয়ের সিএমডি আর উনার মেয়ে মোনালিসা, উনি আবার হক শিপিংয়ের সিইও, অভি পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, আমাদের নতুন দুইটা ওয়েল শীপ কেনার কথা ছিলোনা তা উনারা এই দেশেই বানিয়ে দিতে চাইছেন, কি বলেন আপনি?
স্যার ইতি মধ্যে উনাদের সারা বিশ্বে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।
তাহলে এক কাজ করুন, আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের বানানো ড্রয়িং আর স্পেসিফিকেশন নিয়ে আসুন, উনাদের বুঝিয়ে দিই, আর আনকেল আপনাদের লোকাল এলসি দিলে তো অসুবিধা নেই নাকি?
না না কোনো অসুবিধা নেই বাবা, জবাবে হক সাহেব বললেন।
আর আনকেল সাইনিং মানি কতো দিতে হবে?
এক টাকাও না অভি সাহেব, আপনাকে আমরা সম্মান করি, মোনালিসা জবাব দিলো হক সাহেবের পক্ষ থেকে।

চলুন আনকেল কনফারেন্স রুমে বসে আপনাদের সাথে ডিলটা বুঝিয়ে দিই আর এগ্রিমেন্ট সাইনও করে ফেলবো। অভি সবাইকে নিয়ে কনফারেন্স রুমে এসে ড্রয়িং আর শীপের বিশদ বিবরণ গুলি বুঝিয়ে দিলে হক সাহেব বললেন, অভি এই দুইটা শীপের মধ্যে একটা আমরা এই বছরেই দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো আর বাকিটি আগামী মার্চেই পাবে ইনশা আল্লাহ্‌।
অভি একটা ২ কোটি টাকার চেক এগিয়ে দিয়ে বললো, আনকেল এইটা আপনার টোকেন মানি।
না বাবা এইটা লাগবেনা বললোনা লিসা।
না আনকেল এইটা সম্মানি হিসাবে দিয়েছি।
ঠিক আছে বাবা, আমি নিলাম আর এই দুইটার মূল্য আমরা হিসাব নিকাস করে আমরা দুই একদিনের মধ্যেই জানাবো।
অসুবিধা নেই আনকেল।
অভি মোনালিসা ঢাকাতে তো এসেছে কিন্তু ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি, তুমি কি একটু ঘুরিয়ে দেখাতে পারবে, হক সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
কোনো সমস্যা নেই, তা কোথায় যেতে চাও বলো, মোনালিসাকে অভি জিজ্ঞেস করলো।
আপনার পছন্দের জায়গা তাও ন্যাচারাল হতে হবে, জবাবে মোনালিসা বললো।
ওকে, আগে চলুন লাঞ্চ করে নিই, বিকালে নিয়ে যাবো, ঠিক আছে?
ওকে, মিষ্টি হেসে জবাব দিলো মোনালিসা।

___________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ