ভালোবাসি তোমায় (১৮তম খন্ড)

ইঞ্জা ১৩ আগস্ট ২০১৬, শনিবার, ০৮:১০:৪৪অপরাহ্ন গল্প ২৯ মন্তব্য

 

images (8)

জিএম সাহেব রুমে আসুন, ইন্টারকমে কল দিয়ে ডাকলো অভি।
জি স্যার আসছি বলে রিসিভার নামিয়ে অবণীর দিকে তাকালো, অবণী আপনি বসেন, আমাকে স্যার ডাকছেন এসে বাকি গুলো দেখে নিচ্ছি। জিএম দ্রুত অভির চেম্বারে এসে নক করে ভিতরে প্রবেশ করলো, স্যার আমাকে ডেকেছেন?
বসুন, আপনি তো নিশ্চয় শুনেছেন অবণী ইস্তফা দিয়েছে।
জি অভি স্যার।
As per agreement with us উনার কোনো বেতন কাটবেনা আর তিন মাসের এক্সট্রা বেতন দিয়ে দিন।
স্যার এইটা কি নীতি বিরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছেনা আমাদের।
আমি যা বলছি তাই করুন।
জি স্যার আমি দেখছি।
উনি যদি কোনো এডভান্স নিয়ে থাকেন তাও কাটবেননা।
জি স্যার, আমি উঠবো?
ওকে আসুন।
জিএম নিজ রুমে এসে বসলো তারপর অবণীকে বললো, স্যার আপনাকে তিন মাসের বেতন দিয়ে দিতে বলেছেন।
স্যার আমার বেতন লাগবেনা, এমনিতেই তো আমি রুলসের বাইরে গিয়ে রিজাইন করছি।
না না তার কোনো অসুবিধা নেই।
না স্যার, আমার এক্সট্রা বেতনের দরকার নাই, ও আমি নেবোনা, আপনি শুধু আমার কাজগুলো বুঝে নিন।
ঠিক আছে আপনি যখন না করছেন তাহলে আর কিছুই করার নেই, দিন আপনার কাগজপত্র বুঝিয়ে দিন।

অবণী অফিস ছেড়ে যখন বেড়িয়ে যাচ্ছে তখন সেই মেয়েটিকে দেখলো অভির চেম্বারে দেখলো আজ যার কারণে সে অভিকে ছেড়ে যাচ্ছে। চোখের পানি মুছে লিফটের জন্য অপেক্ষা করছিলো তখন ওর আইটির অফিসাররা এগিয়ে আসতে দেখে ওদের দিকে ফিরে তাকালো।
ম্যাম আপনি এভাবে চলে যাচ্ছেন আমাদের ছেড়ে, একজন বলল।
অবণী কষ্ট মাখা এক হাসি দিয়ে বললো, আমি দেশে আসলে তোমাদের সাথে দেখা করবো।
আরেকজন বললো, ম্যাম এভাবে না গেলে হতোনা?
না ভাই, আমার যে যেতেই হচ্ছে, তোমরা ঠিক মতো কাজ করো আর দোয়া করো।
সবার জুনিয়র মেয়েটা এগিয়ে এসে একটা ফুলের তোরা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো সাথে বাকিরা এসে জড়িয়ে ধরলো এক সাথে অবণীকে আর দূর থেকে তা দেখে অফিসের সবাই এগিয়ে এলো অবণীকে বিদায় জানাতে। অবণী সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লিফটে উঠলে ওর ডিপার্টমেন্টের কয়েক জন এক সাথে উঠলো, ওরা অবণীকে গাড়ীতে তুলে দেবে।

সারা পথে অবণী কাঁদতে লাগলো, আজ সে সব হারিয়েছে, ওর ধ্যান জ্ঞ্যান সাধনা, প্রেম সব হারিয়েছে আর আজ নিজেই সব কিছু পিছনে ফেলে এসেছে, তার একমাত্র ভালোবাসা আজ তাকে সামান্য কর্মচারীর মতো করে বিদায় দিয়েছে, এক বুক ভালোবাসা নিয়ে সে যে অফিসে এসেছিল আজ সব ছিন্ন করে সে ফিরছে নিজ পথে, তার প্রেম, তার ভালোবাসা, তার জীবনদাতা একবার তাকে আর ফিরে চাইলোনা। অবণী এই কষ্ট কিভাবে বয়ে বেড়াবে তা তার জানা নেই কিন্তু যেদিন অভির গালে কারো চুমুর দাগ দেখলো আর সেইদিনই সেই মেয়েটি অভিকে বেবি ডাকতে শুনেছে সেদিনই অবণী বুঝতে পেরেছে অভিকে নিয়ে ওর দেখা সপ্ন ভেঙ্গে চুর চুর হয়ে গেছে, অভির যখন গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে অবণীর কি কাজ সেখানে?
অবণী যখন বাসায় পোঁছুলো ওর মা গাড়ী বান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, অবণী গাড়ী থেকে নামতেই জিজ্ঞেস করলেন, আজকেই চাকরী ছেড়ে দিয়ে এলি?
অবণী হাঁ সুচক মাথা নেড়ে জবাব দিয়ে ভিতরে নিজ রুমে চলে গেলো। পিছন থেকে ওর মা ডাক দিয়ে বললেন, ফ্রেস হয়ে আয় টেবিলে খাবার দিচ্ছি।

কি ব্যাপার অভি, মেয়ে একটাকে দেখলাম অফিস থেকে বেরুচ্ছে আর পিছ পিছ তোমার স্টাফরা সবাই ওর পিছে গেলো, অনামিকা প্রশ্ন করলো অফিসে প্রবেশ করেই।
আমার সেক্রেটারি চাকরী ছেড়ে চলে গেলো।
ওহ আই সি।
তা তুমি এখানে?
কাজ শেষ তাই ভাবলাম তোমার এখানে আসি।
তা তুমি বাসায় চলে গেলেই পারতে।
ওখানে এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কি করবো, তাই তোমার কাছে চলে আসলাম।
তা তুমি কবে যাচ্ছো?
এমন ভাবে বলছো যেন আমাকে আমেরিকা পাঠাতে পারলেই তুমি বাঁচো?
না তা না, তোমার কাজ শেষ যখন নিশ্চয় তুমি চলে যাবে, তাই জানতে চেয়েছি।
ভাবছি আর যাবোনা, বেবি তোমার এখানে একটা চাকরি দিয়ে দাওনা যেনো আমার আর ফিরে যেতে না হয়।
অভি কাষ্ট হাসি দিয়ে বললো, তুমি বাসায় যাও আমি আজ খুব ব্যস্ত থাকবো।
ঠিক আছে বেবি আমি যায়, রাতে দেখা হবে।
অনামিকা বেড়িয়ে গেলে অভি ঘড়ি দেখলো এরপর উঠে লাঞ্চ করার জন্য কেন্টিনের উদ্দেশ্য গেল। কেন্টিনে পোঁছে কারো সাথে কথা বললোনা, নিজের জন্য অল্প কিছু নিয়ে নির্ধারিত টেবিলে বসে খেতে শুরু করলো কিন্তু কেমন যেন লাগছে হটাৎ, মুখে রুচলোনা কিছুই, উঠে গেল অভি, নিজ প্লেইট ঠেলে রেখে উঠে নিচে নিজ চেম্বারে চলে এলো ও, নিজ চেয়ারে বসে অভি একটা কফি দিতে বলে একটা সিগারেট নিলো পেকেট থেকে আর তা ধরিয়ে অজান্তেই এক টান দিলো জোড়ে আর ধোয়ার টানে কাশতে লাগলো। নিজেই অবাক হলো নিজের হাল দেখে, ও কখনো এমন করেনা, আজ কেনো এমন করলো ও!

হটাৎ করে অবণীর বিয়ে তাও কানাডায়, কেন? অভি হিসাব মেলানোর চেষ্টা করতে লাগলো, অবণীর তো শুধু কানাডাতে যাওয়ার কথা, তাহলে বিয়ের ব্যাপারটা কখন ঠিক হলো? তাহলে কি অবণীর বিয়ে আগে থেকেই ঠিক ছিলো যা অবণী জানায়নি, হলে হতেও পারে।
আমি কেন ওর কথা ভাবছি, ওর তো বিয়ে আর অবণীতো আমার কেউ হয়না, ধ্যাত এইসব কেন ভাববো আমি, এইসব অবণীর নিজস্ব ব্যাপার, নিজে নিজে স্বগতোক্তি করলো অভি তারপর একটা ফাইল টেনে নিলো, দেখলো উপরে লেখা আছে "জেসমিন সুলতানা (অবণী)"।
ফাইল খুলে দেখলো প্রথম পৃষ্টায় একাউন্টসের ইনফরমেশন, আর তাতে দেখলো অবণীকে অভির নির্দেশিত তিন মাসের টাকার কোনো উল্লেখ নেই।
ইন্টারকমে কল দিলো জিএমকে, অবণীকে তিন মাসের এক্সট্রা বেতন কি দেননি?
না স্যার, উনি তা রিফিউজ করেছেন, অপর প্রান্ত থেকে জানালো জিএম।
ওয়াট, কেন?
জানিনা স্যার, আমি ইন্সিস্ট করেছিলাম কিন্তু উনি কোনো ভাবেই নিতে চাইলেন না, বলেছেন এতে উনার কোনো অধিকার নেই।
ওহ, ঠিক আছে।
আজ অফিসে মন ঠিকছেনা অভির, উঠে গেল বেড়োনোর জন্য। নিচের পাকিংলট থেকে গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে গেল অভি উদ্দেশহীন ভাবে।

তুরাগ তীরে নির্জন জায়গা দেখে গাড়ী দাঁড় করালো অভি, এরপর গাড়ী থেকে নেমে সিগারেট ধরিয়ে টান দিতে লাগলো ঘন ঘন, একটা স্পীড বোট কাছে এসে ভীড়লো আর জিজ্ঞেস করলো স্যার যাবেন? অভি গাড়ী লক করে উঠে পড়লো, আসতে চালাবে।
স্পীড বোট আসতে চলতে লাগলো আর অভি পিছনের সিটে শুয়ে পড়ে আকাশ দেখতে লাগলো, পা দুইটা বোটের এক পাশে তুলে দিলো। আকাশটাকে আজ নিস্ব মনে হচ্ছে, পাখিরা সব যেন পালিয়ে যাচ্ছে কোন অজানায়, হয়ত ফিরবেনা আর এই পথে, সূর্য ডুবতে চলেছে আর অপর পাশে এক ফালি চাঁদ উঠেছে, মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা জোড় করে চাঁদকে বলেছে আজ উঠতে, কেমন যেন বিষন্ন সব, খুব মদ খেতে ইচ্ছে করছে, নিজেকে আজ মাতাল করতে ইচ্ছে করছে।
স্যার তিন ঘন্টা হলো, ডাক শুনে সম্বিৎ ফিরে পেলো অভি।
ঠিক আছে, আমার গাড়ীর কাছে নিয়ে যাও।
স্পিড তুলে গাড়ীর কাছে আসতে আধা ঘন্টার মতো লাগলো।
স্যার ২৫০০ টাকা।
অভি মানিব্যাগ থেকে ৩০০০ বের করে ওর হাতে দিয়ে বললো, বাকিটা রাখো।
গাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে অভি রওনা হয়ে গেল শহরের উদ্দেশ্যে, গাড়ীর সিডি চালু করে দিলো, গান বাজছে, আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়,
অশ্রু ভরা দুটি চোখ, তুমি ব্যাথার কাজল মেখে লুকিয়েছিলে ঐ মুখ।

বাসায় যখন পোঁছে অভি তখন রাত দশটা বাজে, মাকে যথারীতি বাগানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো অভি।
কিরে আজ অনেক দেরী?
খেয়েছো মা?
তুই না আসা পর্যন্ত খেতে পারি পাগল ছেলে, বলেই অভির মাথার চুল গুলো নেড়ে এলোমেলো করে দিলেন। যা ফ্রেস হয়ে আয়, খাবার দিচ্ছি।
মা আজ খেতে ইচ্ছে করছেনা, তোমরা খেয়ে নাও না।
কি বলিস, অসুস্থ লাগছে কি তোর?
না মা এমনিতেই খেতে ইচ্ছে করছেনা, ড্রয়িংরুমে এসে বসলো অভি।
যা তো বাপ, বিরক্ত করিসনা, ফ্রেস হয়ে আয় আমরা ওয়েট করছি সবাই।
অভি নিজ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে নেমে এলো।
আজ অনামিকা নিজেই দায়িত্ব নিলো সবাইকে সার্ভ করার, অভির মা না করেছিলেন কিন্তু অনামিকা ইন্সিটস করাতে আর না করলেন না।
অভি খুবই হাল্কা খেয়ে উঠে গেল, মা আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, আমি রুমে গেলাম।
কফি খাবিনা?
না মা, দরকার হলে চেয়ে নেবো, বলেই অভি নিজ রুমে চলে গেল।
অভির মা খেয়ে উঠে অভির রুমের সামনে গিয়ে হাল্কা নক করলেন কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে উঁকি দিলেন ভিতরে, অভি সোফার হাতলে বসে পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আনমনা হয়ে, বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। অভির মা ভিতরে প্রবেশ করে আসতে করে ছেলের কাঁদে হাত রাখলেন।
অভি ফিরে তাকালো আর কিছুক্ষন মার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মাকে জড়িয়ে ধরলো।
তোর মন খারাপ আজ?
জানিনা মা।
তাহলে আজ তোর এমন কেন চেহেরা।
আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই।
অভি লক্ষি ছেলের মত বিছানাতে শুয়ে মার কোলে মাথা রাখলো।
তুই চোখ বন্ধ করে ঘুমা আমি মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছি। অভি চোখ বন্ধ করে রইল আর ওর মা ওর মাথায় হাত ভুলাতে লাগলো।

___________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ