অবণী উঠে চলে গেলে অভি কিছুক্ষন ভাবলো তারপর শ্রাগ করে খেতে লাগলো কিন্তু মাথায় ঘুরছে অবণী কেনো হঠাৎ করে উঠে চলে গেল, সেলফোন বেজে উঠলে ফর্ক আর নাইফ রেখে রিসিভ করলো।
কোথায় তুমি, অপর প্রান্ত থেকে অনামিকা জিজ্ঞেস করলো।
কেন, আমি লাঞ্চ করছি।
তা শুনেছি কিন্তু আমি যে তোমার অফিসে।
তুমি অফিসে, লাঞ্চ করেছো?
তা কত আগে, তোমার ফিরতে দেরী হবে?
না আসছি, আমি উপরেই আছি, বসো।
অভি দ্রুত খেয়ে উঠে গেলো। নিচে এসে দেখে অনামিকা রিসেপশনে বসে আছে।
কতক্ষন হলো এসেছো, আসো আমার রুমে চলো।
অনামিকা উঠে অভিকে ফলো করলো অভির চেম্বারে, চেম্বারে প্রবেশ করার পর অভি জিজ্ঞেস করলো, চা কফি?
কফি, অনামিকা জবাব দিলো।
অভি ইন্টারকমে কফি আর বিস্কিটের জন্য বলে অনামিকার দিকে ফিরলো।
তা তুমি আসবে আমাকে ফোন দিলে তো গাড়ী পাঠিয়ে দিতে পারতাম।
কাজ শেষ হয়ে যাওয়াতে ভাবলাম কি করবো, অফিসের গাড়ী পেলাম, চলে এলাম।
কফি দিয়ে গেলে কফির কাপ তুলে নিলো অনামিকা কাপে চুমুক দিয়ে বললো, তোমার অফিস বেশ সুন্দর, উপরে কি ক্যান্টিন?
হুম, অভি জবাব দিলো।
কি হলো, তুমি মাইন্ড করেছো আমি আসাতে?
না মাইন্ড করার কি আছে।
জানো অভি, আমি যখন তোমার কাছ থেকে চলে গেলাম তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমি নিজেকে কখনো মাফ করতে পারিনি।
ওইসব কথা থাক অনা, সরি অনামিকা।
তুমি অনেকদিন পরে আমাকে অনা ডাকলে, মনে আছে তোমার তুমি আমাকে আদর করে অনাই ডাকতে আর আজ এই ডাক শুনে আমার কি যে খুশি লাগছে তোমাকে বোঝাতে পারবোনা।
তুমি ভুল বুঝছো অনামিকা, আমি আদর করে নয়, শর্টে এই নামে ডাকতাম। এই সময় ইন্টারকম বেঝে উঠলে অভি রিসিভ করে বললো, বলো অবণী।
ওপাশ থেকে অবণী বলছে, স্যার আমি আজ বাসায় ফিরতে চাই।
এখন যেওনা কিছু জরুরী কাজ আছে, তুমি এক কাজ করো ডিক্টেশন দেবো তুমি প্যাড নিয়ে রুমে আসো।
অবণী অভির রুমে নক করে ভিতরে প্রবেশ করেই থমকে গেলো ভিতরে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে। অভি অবণীকে বসতে বললো।
অবণী ও আমার বন্ধু অনামিকা, আমেরিকা থেকে এসেছে আর অনামিকা অবণী আমার পিএস এন্ড আইটি হেড। অনামিকা পাত্তায় দিলোনা যেন কিছুইনা।
অনামিকা তুমি মাইন্ড না করলে আমার ড্রাইভার তোমাকে বাসায় পোঁছে দিয়ে আসবে, আমার আজ অনেক কাজ।
ওহ সরি, তাহলে তো তোমাকে ডিস্টার্বই করলাম, ওকে আমি যাচ্ছি বেবি, রাতে দেখা হবে।
অনামিকা উঠে চলে গেলে অভি অবণীর দিকে ফিরলো,
কি ব্যাপার তুমি খেলেনা উঠে চলে এলে আবার এখন চলে যেতে চাইছো?
না কিছুনা, শরীরটা ভালো লাগছেনা।
কেমন লাগছে, যদি খারাপই লাগে তাহলে তুমি আজ বাসায় যাও রেস্ট করো।
জি, আসি স্যার। অবণী উঠে গেলো।
অভি বুঝতে পারলোনা অবণীর মনে এখন অনেক ঝড় বইছে যে ঝড় সহজে থামার নয়।
অভি কোনো ডিক্টেশন নয় অনামিকাকে বিদায় করার বাহানা খুজছিলো, অবণী কল দেওয়াতে অভি বাহানাটা বানাতে পারলো। অভি ফাইলপত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
অবণী বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, সে কি ভেবেছিলো আর আজ কি হলো?
সে যাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে তার কিনা আগে থেকেই প্রেমিকা আছে, এই ভুল কিভাবে সে করলো, এখন সে যাবে কোথায়? দরজায় নক শুনে চোখ মুখ মুছে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো, অবণীর মা এসে নক করেছেন।
কিরে তোর কি হয়েছে?
না মা কই কিছু হয়নি তো।
কিছু হয়নি বললেই হবে, তোর চোখ মুখ ফোলা কেন?
দূর মা, কিছু হয়নি, কিছু বলতে এসেছিলে? কথা ঘুরালো অবণী।
চা দিচ্ছি, তুই আয়।
মা আমি খাবোনা, শরীরটা ভালো লাগছেনা।
এইতো আমি বলেছিনা, তোর কিছু হয়েছে, দেখি বলে কপালে হাত দিলেন, কই জ্বরটর তো নেই।
মা, মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, তোমরা খাও আমি একটু ঘুমাবো।
চা খেলে ভালো লাগতোনা।
দরকার হলে পরে খাবো মা, এখন তুমি যাও আমি শুবো। অবণীর মা চলে গেলে অবণী দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লো, মনে অনেক প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা আর তার উত্তর খুঁজে বেড়াই অবণী। রাতে খাবার সময় হলে শ্রাবণী আসে ডাকার জন্য, অবণী খাবেনা বলে দিলে শ্রাবণী চলে যায় একটু পর অবণীর বাবা এসে ডাক দেয়, অবণী, অবণী দরজা খুল মা।
বাবার ডাক শুনে অবণী তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেয়।
কি হয়েছে মা, তোর কি মন খারাপ?
অবণী বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো।
কি হয়েছে মা, তুই কাঁদছিস কেন?
অবণী নিজেকে সামলিয়ে বললো, বাবা দাদীকে খুব মনে পড়ছে, আমি দাদীর কাছে যাবো।
দাদী পাগল মেয়ে আমার, যেতে হলে যাবি এতে কান্না করার কি আছে, যা মুখ ধুয়ে নে, তোকে ছাড়া তো বাবা খেতে পারেনা, যা তাড়াতাড়ি কর, খিদে লেগেছে।
অবণী মুখ হাত ধুয়ে বাবার সাথে খেতে গেলো কিন্তু মুখে না রুচায় হাল্কা খেয়ে রুমে ফিরে এলো।
অভি অফিস থেকে আজ একটু দেরীতেই ফিরলো, ওর মা দেরী দেখে বাগানেই অপেক্ষা করছিলেন, অভির গাড়ী ঢুকতে দেখে এগিয়ে গেলেন। কিরে আজ কি বেশী ব্যস্ততা ছিল?
হাঁ মা।
ঠিক আছে চল ভিতরে চল।
বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে অভি নিজ রুমে চলে গেল ফ্রেস হতে, ঘরে ফিরেই গোসল করা প্রতিদিনের অভ্যাস ওর। শাওয়ার নিয়ে ফ্রেস হয়ে অভি নিচে নেমে এলো, এসে ড্রয়িং রুমে বসলো।
তুই ওখানে কেন বসলি খেতে আই, টেবিলে খাবার দেওয়া হয়েছে, অভির মা খেতে ডাকলেন।
অভি উঠে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো, অভির মা সবাইকে বেড়ে দিতে লাগলেন। অনামিকা যথারীতি অভির পাশেই বসেছে, অভি খেতে খেতে প্রিয়ন্তীকে বললো, তোর পড়ালেখা কেমন হচ্ছেরে?
জি ভাইয়া ভালো, আগামী মাসে পরিক্ষা।
ভালো করে পড়ছিস তো?
হেঁ ভাইয়া।
খাওয়ার কেমন হয়েছে অভি, অভির মা জিজ্ঞেস করলেন।
হাঁ মা তুমি রান্না করেছো, মজা হবেনা এ কি হতে পারে?
অভির মা হেসে দিয়ে বললেন আজ আমি রান্না করতেই পারিনি শুধু দেখেছি।
কি বলো, তাহলে কি সাইদুল কাকা রেঁধেছেন?
অভির মা না সুচক মাথা নাড়লে অভি প্রশ্ন সুচক তাকালো ওর মার দিকে, অনামিকা মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
অনামিকা আজ রেঁধেছে, আমাকে কিছুই ধরতে দেয়নি।
কি বলো, অনামিকা তুমি রাঁধতে জানো, অনামিকার দিকে তাকিয়ে অভি জিজ্ঞেস করলো?
অনামিকা হেসে জিজ্ঞেস করলো, কেমন হয়েছে তাই বলো।
বেশ ভালো হয়েছে, আমি জানতাম না তুমি রান্নাও করতে পারো, খেতে খেতে বললো অভি।
সকালে অনামিকাকে ওর অফিসে নামিয়ে দিয়ে অভি অফিসে ফিরেই খবর নিলো অবণী এসেছে নাকি, অবণী আসে নাই শুনে অভি নিজ চেম্বারে গিয়ে ফোন দিলো অবণীর সেলফোনে, প্রথম কলে অবণী ফোন ধরলো না, দ্বিতীয় কল আসাতে রিসিভ করে হ্যালো বলার সাথে সাথে অভি জিজ্ঞেস করলো, তুমি কেমন আছো অবণী, তুমি আজ অফিসে এলেনা?
জি স্যার আমি অসুস্থ ফিল করছি তাই আসিনি।
কেমন লাগছে তোমার, জ্বরটর নাতো?
জি জ্বর কিছুটা আছে, মিথ্যে বলল অবণী।
ঔষধ পত্র কিছু খাচ্ছো, ডাক্তার দেখিয়েছো?
জি খাচ্ছি।
ঠিক আছে তুমি রেস্ট কর, আমি আবার কল দেবো। অভি ফোন রেখে চিন্তা করতে লাগলো, অবণীর কথাবার্তা কেমন যেন লাগলো, অবণী তো ওকে কখনো স্যার ডাকেনা আর ও যখন কথা বলে তখন ওর মাঝে সব সময় উচ্ছলতা থাকে যা আজ ছিলোনা, কাল হটাৎ না খেয়ে উঠে যাওয়া, বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য অস্থিরতা, কি এমন হয়েছে অবণীর?
__________ চলবে।
ছবিঃ Collected.
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ভাল করে লাগিয়ে রাখুন,
চলুক।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ, পাশে থাকলে একেবারে আঠার মতোই লাগিয়ে রাখব। 😀
জিসান শা ইকরাম
গল্প যে কোনদিকে টার্ন নেবে তাই বুঝতে পারছি না,
অবনী যেন কষ্ট না পায়।
চলুক।
ইঞ্জা
অনামিকার কারণেই সব কিছু এলোমেলো, ভাবতেই পারিনি ভাইজান অনামিকা ঠাডার মতো আবির্ভাব হবে। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
অবণীর কান্নাটা পছন্দ হয়নি। ওর যা ব্যক্তিত্ত্ব দেখছিলাম, তার সাথে কান্নাটা কেন যেনো মানায়নি।
পাঠক হিসেবে আমার কাছে যা মনে হলো, নিশ্চিন্তে বললাম।
এখন লেখক জানেন, তিনি কি করবেন।
চলুক।
ইঞ্জা
আপনি যদি কাউকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন আর তাকে যদি দেখতেন অন্য মেয়ের ঠোটের লিপস্টিকের দাগ নিয়ে ঘুরতে সাথে যখন আপনার সামনেই সেই মেয়ে বেবি ডাকছে তাহলে কি হতো আপু?
নীলাঞ্জনা নীলা
ইঞ্জা আমি মেয়েটাই অন্যরকম। নিজের প্রেমিককে লাত্থি দিয়ে তাড়িয়েছি। চিটিং পছন্দ করিনা।
আর চোখের জল দিয়ে মেয়েদের সস্তা করে দেয়া হয়। অভি এখনও বোঝেইনি যে অবণী তার প্রেমে পড়েছে। আর ওদিকে অবণী কেঁদে-কেটে একাকার। তাই মানতে পারিনি।
ইঞ্জা
দেখুন না ভবিষ্যতে কি হয় আপু। 🙂
মৌনতা রিতু
হ্যাঁ, নীলা আপুর সাথে একমত, অবনি কাঁদবে কেন! আর অভি অবশ্য সব কিছু খুব স্বাভাবিকই নিচ্ছে। এটাই পুরুষের দোষ। কি দরকার অনামিকাকে এতোটি প্রশ্রয় দেবার ?
লেখক কিন্তু স্বার্থক হচ্ছে বুঝতে পারছেন তা ?
পাঠকের উপর গল্পের চাপ প্রভাব পড়ছে।
দেখা যাক কি হয়।
ইঞ্জা
কিছু গল্প লেখকের জীবন থেকেও চলে আসে আপু এরপরেও লেখক চেষ্টা করবে পাঠকের চাপ কমাতে। 🙂
মিষ্টি জিন
অবনিকে বেশী কষ্ট দিয়েন না। হতচ্ছাড়ি কালো বিড়াল ।
ইঞ্জা
কষ্ট না দিলে কেষ্ট মিলবে না যে আর কালো বিড়ালো যে এখনো এলোনারে ভাই। :p
শুন্য শুন্যালয়
অভি কেনু কিচ্ছু বোঝেনা? 🙂
ইঞ্জা
বোঝেনা সে বোঝেনা। 🙁
মোঃ মজিবর রহমান
এভাবে ভাল একটি মেয়েকে
কষ্ট দেওয়া কি আপনার স্বভাব!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
মানবতাবধ জাগ্রত হোক।
ইঞ্জা
মনে করুন ধুম ধুম করে মাথাটি দেওয়ালে মারছি (ইমো হইবেক) 😮 লেখক ব্যাটা বড়ই ফাজিল, আমি আপনার লগে। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
(y)
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অবনী প্রেমে পড়েছে আর অই হতচ্ছাড়া অনামিকা সেখানে বাগড়া হয়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে। আমি কিন্তু অবনীর পক্ষে।
ইঞ্জা
আমিও অবণীর পক্ষে কিন্তু অভি মনে হয় পল্টি দিচ্ছে। 😮
আবু খায়ের আনিছ
এই দুঃখে আমি প্রেমের গল্প লিখতে যাই না, কখন কিভাবে কি এসে প্যাচ মেরে বসে। অনামিকার বেবি বলাটা একটু বেশি ছেলে মানুষি আর কমন সেন্স এর অভাব বোধ মনে হচ্ছে আমার কাছে। সাধারণত আমরা এই ধরণের চরিত্রে সাথে খুব বেশি পরিচিত নয়, হ্যাঁ দুয়েকটা চরিত্র এমন পেয়েছি তবে তা খুব কম।
যাইহোক ভালো লাগছে, অপেক্ষায় রেখে দিচ্ছেন শুধু। না জানি শেষে কি হবে।
ইঞ্জা
আপনার সাথে একমত ভাই, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এই লেখাটা লিখতে বসে আর তওবা করছি আর না এইটা শেষ করেই ভাগবো।
অনামিকার বেবি ডাকটা হওয়ার কারণও আছে আর তা হলো অনামিকা প্রবাসী আমেরিকান আর ওখানে বেবি, হানি, সুইট হার্ট ডাক নরমাল বিষয়। 😀
ইলিয়াস মাসুদ
গল্প কিন্তু পড়ে যাচ্ছি, মানে সাথেই আছি …………
শুধু ভাবছি কি ভাবে পারেন ? খুব কঠিন আমার জন্য এত লেখা ভাই
ইঞ্জা
মুরগির ফার্মের মালিক খেয়াল করলো ডিম কম হচ্ছে কিছুদিন ধরে, রেগেমেগে বড় এক ছুড়ি নিয়ে ভিতরে ঢুকে শাসালো মুরগিদের যদি আজ জনে ২টা করে ডিম না দেয় তাহলে জবাই করে খাওয়া হবে, সবাই ভয়ে তটস্থ হয়ে ২টা করে ডিম পারলো, মালিক এসে গুনে গুনে দেখে সবাই দুটো ডিম পারলেও এক খোপে মাত্র একটা ডিম, মালিক রেগে আগুন, ধরলো আসামীর গলা চেপে, হারামজাদা সবাই ২টা করে ডিম দিলো তুই কেনো একটা দিলি, বেচারা আসামী কাঁপতে কাঁপতে হাত জোড় করে বললো, হুজুর আমি মুরগিনা মোরগ, মরার ভয়ে অনেক কষ্ট করে এইটাই দিতে পেরেছি।
আমারো এমনি অবস্থা ভাইজান। 😀