ভালোবাসি তোমায় (১৪তম খন্ড)

ইঞ্জা ১ আগস্ট ২০১৬, সোমবার, ০৯:৪২:০৩অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

images (11)

বাসায় পোঁছানোরর পর অভি অনামিকাকে প্রিয়ন্তী আর মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
ওয়াও অভি, বিরাট বাড়ী তোমাদের বেশ সুন্দর, কে বানিয়েছে এইটা?
আব্বা বানিয়েছিলেন, যাও তুমি প্রিয়ন্তীর সাথে যাও ও তোমাকে তোমার রুম দেখিয়ে দেবে, তোমার লাগেজ আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
প্রিয়ন্তী অনামিকাকে নিয়ে চলে গেলে অভির মা জিজ্ঞেস করলো, মেয়েটা কি করেরে?
আমেরিকায় এক কোম্পানিতে লজিস্টিক ম্যানেজার হিসাবে আছে।
মেয়েটা বেশ সুন্দর, দেশে বাড়ি কই?
খুলনায় মা।
আচ্ছা ঠিক আছে, তুইও ফ্রেস হয়ে নে আমি খাবার রেডি করছি।
অভি উঠে চলে গেল নিজ রুমে।
কিছুক্ষন পর সবাই মিলিত হলো খাবার টেবিলে, অনামিকা গিয়ে অভির পাশে বসলো। ওমা আন্টি এতো খাবার দাবাড় কেনো করেছেন, আমি তো অত খাইনা।
অভির মা হেসে খাবার তুলে দিতে লাগলেন, তোমার পছন্দ জানিনা মা, তোমার যা পছন্দ নিজের মতো করে খাও।
না না আন্টি ঠিকই আছে, আমি নিজেই নিয়ে খাচ্ছি।
অভি চুপচাপ খেয়ে এসকিউজ চেয়ে উঠে চলে গেল নিজ রুমে।

রুমের দরজায় নক শুনে অভি দরজা খুলে দেখে অনামিকা।
আসতে পারি?
আসো আসো।
কি ব্যাপার মন খারাপ তোমার, না খেয়ে উঠে চলে এলে?
না তেমন কিছুনা, খেতে ইচ্ছে করছিলোনা।
নাকি আমি এসেছি তাই তোমার পছন্দ হয়নি? খোঁচা দিল অনামিকা।
না না আসলে মনটা আজ খারাপ হয়ে আছে, সকালে খুব বড় বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছি।
তোমার কোনো সমস্যা হয়নিতো বেবি, অভির হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলো অনামিকা।
অভি হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো, না আমার কোনো সমস্যা হয়নি।
আচ্ছা অভি, শুনলাম তোমাদের এখানে নাকি তোমার নিজস্ব জিম আছে?
হুম আছে।
আমি যে কয়দিন আছি তোমার জিমটা ইউজ করতে পারি?
সিউর ওয়াই নট করবে, এতে আপত্তি কিসের? আচ্ছা শুনো, আমি খুব টায়ার্ড, তুমিও নিশ্চয় টায়ার্ড, যাও রেস্ট কর আমিও ঘুমাব, অনেক রাত হয়েছে। অনামিকা চলে গেলে অভি ড্রেস চেইঞ্জ করে স্লিপিং ড্রেস পড়ে শুয়ে পড়লো।

আ্যলার্মের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল অভির, কিছুক্ষন শুয়ে শুয়ে ঘুম তাড়ালো এরপর উঠে ফ্রেস হয়ে বাগানে জগিং করতে করতে গেইট দিয়ে বেরিয়ে গেল সামনের পার্কে, এক ঘন্টা জগিং শেষে কিছুক্ষন পার্কের ইট সিমেন্টের জমানো চেয়ারে বসে থাকলো, চারিদিকের গাছ গাছালি থেকে পাখিদের কলকাকলি শুনতে লাগলো এরপর রোদ জমতে শুরু করেছে দেখে উঠে আবার জগিং শুরু করলো বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় পোঁছে জিমে ঢুকলো অভি, অনামিকা আগে থেকেই জিম করছিলো দেখে হাই দিলো তারপর ইনুস্ট্রুমেন্ট দিয়ে জিম শুরু করলো। অনামিকা ঘাম মুছতে মুছতে কাছে এসে দাঁড়াল।
ওয়াও অভি তুমি এতো ওজন নিতে পারো জানা ছিলোনা, অভির বুকে হাত ভুলালো অনামিকা। অভি ইন্উস্ট্রুমেন্ট ছেড়ে দিয়ে অনামিকার হাত সরিয়ে দিলো বললো, অনামিকা প্লিজ আমাকে জিম করতে দাও।
মাইন্ড করেছো?
না মাইন্ডের বিষয় না, আমি জিম করি কোনো ডিস্টার্বেন্স ছাড়া।
অনামিকা অভির দুই পায়ের উপরে গিয়ে বসে পড়লো আর গলা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে চাইলে অভি মুখ সরিয়ে নিলো।
অনামিকা উঠে গিয়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, চোখ ছলছল করছে।

ব্রেকফাস্ট করে অভি বেরুবে, অনামিকা বললো আমাকে কি একটু গুলশান নামিয়ে দিতে পারবে অভি।
ঠিক আছে আসো। অভি গাড়ী ড্রাইভিং করছে পাশে বসে অনামিকা স্টেরিওতে গান চালালো, রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে মুখ বিকৃত করে বললো, ইয়াক এই সব যাতা গান কে শুনে, কোনো ইংলিশ গান নেই?
আমি শুনি আর এই গান যাতা গান নয়, এ রবীন্দ্র সঙ্গীত বলেই অভি এফএম ছেড়ে দিলো যেখানে ইংরেজি গান চলছে।
আসলে তুমি তো জানো আমি এইসব গান কখনো শুনিনি আর বুঝিওনা, তুমি রাগ করেছো অভি?
না রাগ করার কিছু নেই, তোমার যা ভালো লাগে তাই শুনো, গুলশান কয় নাম্বারে যাবে?
২ এর ২৭ নাম্বার রোড, অভি অনামিকার নির্দিষ্ট ঠিকানার সামনে এলে অনামিকা নেমে যাওয়ার মূহুর্তে অভি জিজ্ঞেস করলো, তুমি বাসায় ফিরে যেতে পারবে?
না চিনবোনা।
তোমার কতক্ষন লাগবে শেষ হতে?
বিকাল ৩/৪টায়।
ওকে আমি ড্রাইভার পাঠিয়ে দেবো।
অনামিকা কাছে এসে গালে একটা চুমু খেয়ে বললো, সো সুইট তাহলে তাই কর, আমি আসি এখন, বাই সুইট হার্ট।

অভি অফিসে চলে এসে অফিসের কাজকর্ম দেখছে নক করে অবণী ঢুকলো। হাই কেমন আছো তুমি, অভি জিজ্ঞেস করলো।
জি ভালো, আপনি?
হুম ভালো, তোমাকে আবারো ধন্যবাদ কালকের জন্য।
না না ধন্যবাদের কিছুই নয় আমার দায়িত্ব ছিল।
কি খাবে বল, চা কফি, ওকে আমিই কফির জন্য বলছি, কফির জন্য বলে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা তোমার কেমন ধরণের গান পছন্দ?
স্যার আজকে এই প্রশ্ন?
হটাৎ মাথায় এলো জিজ্ঞেস করলাম।
আমার গান শুনার কথা শুনে হাসবেন আপনি।
না না হাসবো কেন, বলো তুমি।
রবীন্দ্র সঙ্গীত আর পুরনো বাংলা গান।
হাই ফাইভ দাও, হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললো অভি।
অবণী অভির হাতে হাই ফাইভ দিয়ে বললো, অভি স্যার আপনিও!!
হুম আমিও।
আসলে যারা রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনেনা তারা জানেনা এই গানগুলিতে কি সুধা ঢেলে দিয়েছেন কবি গুরু।
ঠিক, মনের কথা বললেন আপনি।
অভি হাসতে হাসতে ঘড়ির দিকে তাকালো, লাঞ্চের সময় হয়ে এসেছে, চলো লাঞ্চ সেরে আসি।
আগে আমার কাজ সেরে নিই, আবণী বললো, হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিলো অভির দিকে, সেটেলাইট ভাড়া দিতে হবে এই সপ্তাহের মধ্যে। অভি ফাইলটা খুলে পড়তে লাগলো, পড়া শেষে জিএমকে কল দিয়ে বিষয়টি বলে চেক রেডি করতে বলে দিলো।

চলো আগে খেয়ে আসি।
দুজনেই রুম থেকে বেরিয়ে ক্যাটিনের উদ্দেশ্যে গেল, ক্যান্টিন অফিসের উপরের তলায়, দুজনেই সিড়ি বেয়ে চলে এলো ক্যান্টিনে। অফিসের সবাই বুফে দেওয়া খাবার থেকে নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী খাবার নিচ্ছে, অভি আর অবণী এগিয়ে গেলে বাকিরা একটু সরে দাঁড়ালো। কি খবর সবার, কোনো সমস্যা হচ্ছে নাতো, হলে জানাবে, তা আজকের খাওয়া কোনটা বেশী টেইস্টি হয়েছে? অভি হেসে হেসে জিজ্ঞেস করলো। একজন বলল, অভি স্যার আজকের ডাল দিয়ে খাসীর মাংস চমৎকার হয়েছে।
তাহলে তো শেষ হওয়ার আগে আমাদের ওইটাই নেওয়া উচিত, কি বলো অবণী?
অবণী দুইটা প্লেইট নিয়ে একটা অভির হাতে দিলো, দুজনেই অল্প ভাত, সবজি আর খাসীর মাংস নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো। খাওয়া শুরু করার আগ মুহুর্তে অবণী জিজ্ঞেস করলো, অভি স্যার আপনার বাম গালে কিসের দাগ?
কিসের দাগ বলেই অভি নিজ গালে হাত দিলো।
অবণী একটা টিসু এগিয়ে দিয়ে বলল, মনে হয় লিপস্টিকের।
সিট, মেয়েটা কি করেনা বলেই ঘসে ঘসে লিপস্টিকের দাগ তুলতে লাগলো।
কোন মেয়ে, প্রশ্ন করলো অবণী।
আমার বন্ধু এসেছে আমেরিকা থেকে, ওকে গুলশানে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলাম, নামার আগে এই কাজ করলো।
অবণী একদম চুপ মেরে গেল।

কি ব্যাপার ভাত শুধুই নাড়াচাড়া করছো, খাচ্ছোনা কেন?
অবণী কয়েক চামুচ ভাত মুখে দিয়ে বললো, সরি আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা, আমাকে উঠতে হবে।
কেনো কি হলো?
কিছু ইমারজেন্সি কাজ আছে, আপনি খান বলে উঠে জোর কদমে অফিসে চলে গেল অবণী।
নিজ রুমে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ও, বুক যেনো ফেটে যাচ্ছে কিন্তু অবণী যখন অফিসে ঢুকছিলো তখন খেয়াল করেনি একটা মেয়ে রিসেপশনে অপেক্ষা করছে অভির জন্য।

__________ চলবে।

ছবিঃ Collected.

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ