ভালোবাসি তোমায় (১৩তম খন্ড)

ইঞ্জা ৩১ জুলাই ২০১৬, রবিবার, ০৩:১৫:০৫অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

images (12)

ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো অভির ফোনের রিং শুনে, এতো ভোরে কে ফোন করলো, কোনোরকম চোখ মেলে ফোন তুলে নিয়ে ডিস্পলেতে চোখ রাখতেই ফোন কেটে গেল, ধ্যাত বলে ফোনটা রেখে আবার ঘুমানোর চেস্টা করতে লাগলো অভি, আবার রিং ভেজে উঠলো বিরক্তের সাথে ফোন রিসিভ করে চোখ বন্ধ অবস্থায় হ্যালো বললো।

কি ব্যাপার তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো, ফোন দিই ধরনা?
কে বলছেন, বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করলো অভি।
ন্যাকামি করছো কেন, আমাকে চিনতে পারছোনা?
সরি মিস, আপনি ভুল নাম্বারে রিং করেছেন, বলেই কাটতে গেল, শুনছে ওপাশ থেকে বলছে, অভি শুনো, ফোন কেটোনা।
অভি ফোনের ডিস্পলে দেখলো, আমেরিকার নাম্বার।
কে অনামিকা?
চিনলে তাহলে?
আসলে ঘুমাচ্ছিলাম তো তাই বুঝতে পারিনি, বলো।
কেমন আছো?
হুম ভালো, তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো, অনুযোগ করলো অনামিকা।
না না তা নয়, কি খবর বলো, হটাৎ এই ভোর বেলায়?
আমি জানি তুমি খুব ভোরে উঠো, তাই কল করেছি।
হুম তা উঠি কিন্তু আরো আধা ঘন্টা পর উঠতাম।
আচ্ছা শুনো, আমি আজ রাতে উঠছি, কাল পোঁছাব দেশে।
হুম ভালো, আসো।
এইবার দাদু বাড়ী যাওয়ার জন্য আসছিনা, ঢাকায় আসছি কাজে, ভাবছি ঢাকায় এসে হোটেলে উঠবোনা, তোমার বাসায় উঠবো আগের মতো, তোমার আপত্তি নেই তো?
ঠিক আছে উঠো, গাড়ী পাঠিয়ে দেবো কি এয়ারপোর্টে?
পাঠালে ভালো হয়।
ঠিক আছে, তুমি তোমার ফ্লাইট নাম্বার আর এরাইবাল টাইম দিয়ে টেক্সট করে দাও।
ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আসলে কথা হবে, বাই সুইট হার্ট।
বাই বলে অভি ফোন কেটে দিলো।

বিছানা ছেড়ে উঠে গেল অভি, কাপড় ছেড়ে ওয়াস রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে বের হলো এরপর ট্রেক স্যুট পড়ে নিয়ে বাইরে বের হয়ে কিছুক্ষন হাটলো তারপর জগিং করে জিমে গেল। ফিরে এসে ঢুকলো সাওয়ার নিতে, সাওয়ার নিতে নিতে চিন্তা করছিলো অনামিকার ফোনের কথা। রেডি হয়ে নিচে নামলো ব্রেকফাস্টের জন্য, মা আর প্রিয়ন্তী দুজনেই বসে আছে।
ভাইয়া তুমি যাওয়ার পথে আমাকে মেডিকেলে নামিয়ে দেবে?
ঠিক আছে, মা তোমার মনে আছে অনামিকার কথা?
কোন অনামিকা, ওর মা জিজ্ঞেস করলো।
ওইযে আমার সাথে ইউনিভারসিটিতে পড়তো, একবার এসেছিলো।
ও হাঁ, কি হয়েছে ওর?
কিছু হয়নি, ফোন দিয়েছিল কাল আসছে, আমাদের এখানে উঠবে, আমাদের গেষ্টরুমটা রেডি করতে বলো।
ঠিক আছে, বলে দিচ্ছি, ওর হাসবেন্ড কি আসছে?
না মা, ওদেএ ডিভোর্স হয়ে গেছে। অভির ফ্যামিলি জানেনা যে অনামিকার সাথে অভির এফেয়ারস ছিল।
অভি মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

প্রিয়ন্তীকে মেডিকেল কলেজে নামিয়ে দিয়ে বেরুচ্ছে এই মুহুর্তে সেল ফোন বাজতে লাগলো, অভি ব্লুথুত অন করে হ্যালো বলতেই জিএমের ভয়ানক চিৎকার, স্যার অভি স্যার আপনি কই, দ্রুত অফিসে আসুন, সর্বনাশ হয়ে গেছে।
কেনো কি হয়েছে?
স্যার আমাদের নতুন শীপ বাংলার আকাশে জলদস্যু এটাক করতেছে, অবণী ম্যাডাম কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
ও কিভাবে করবে, ওতো এ বিষয়ে কিছুই জানেনা, ওকে আমি আসছি, বলেই অভি দ্রুত গাড়ী ছুটালো।
আধা ঘন্টার উপরে লেগে গেলো অভির অফিসে পোঁছাতে, ঢাকার ট্রাফিকের উপর অভির খুব রাগ হচ্ছে, মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে। অভি অফিসে ঢুকেই দেখলো অফিসের সবার মুখে হাসি, সবাই তালি বাঝাচ্ছে, জিএম দৌঁড়ায়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
স্যার অভি স্যার আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি।
কিভাবে কিভাবে, অভি উত্তেজিত অবস্থায় জিজ্ঞেস করলো অভি।
অবণী ম্যাডামের উপস্থিত বুদ্ধি আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে, আসেন স্যার আসেন অবণী ম্যাডাম এখনো শীপের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন।অভি দ্রুত আইটি ডিপার্টমেন্টে চলে এলো, এসে দেখে অবণী জিজ্ঞেস করছে কেপ্টেইনকে লং ডিস্টেন্স ওয়াকিটকিতে ইংরেজিতে, আপনারা আর কতদূর পানামা খাল থেকে, পিছনে কি খেয়াল রাখা হচ্ছে?
যান্ত্রিক শব্দ করে কেপ্টেইনের গলা শুনা গেলো, ইয়েস ম্যাম আমরা এই মুহুর্তে আর মাত্র ৭৫ নটিক্যাল মাইল দূরে আছি, দস্যুরা বিপদ দেখে পিছিয়ে পড়েছে, আমাদের কাছাকাছি পানামা খালের কোস্টগার্ডরা এসে গেছে, এই মুহুর্তে আমরা নিরাপদ, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ম্যাম আপনার বুদ্ধির বলে আমরা আজ এই রিস্ক নিয়েছি বলেই এই বিপদমুক্ত হলাম, স্যালুট ম্যাম, ওভার।
আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ আমাদের পক্ষ থেকে, আপনাদের সহায়তা ছাড়া এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব ছিলোনা, আবারও ধন্যবাদ, ওভার এন্ড আউট।

অবণী রেডিও রুম তথেকে ববের হয়ে নিজ রুমে এলো, অবণী নিজের চেয়ারে না বসে সোফায় গিয়ে বসলো, সারা শরীর এই এসির মধ্যেও জব জব করে ঘামছে, জিএম দ্রুত টিসু বক্স এগিয়ে দিলো। অবণী থরথর করে কাঁপছে দেখে অভি পানি ভর্তি গ্লাস এগিয়ে দিলো, তারপর পাশে বসলো। অবণীর একটা হাত নিজের হাতে টেনে নিলো, তারপর আসতে করে বললো, Thank you.
অবণী ফ্যাল ফ্যাল করে দেখতে লাগলো অভিকে।
পানিটা খেয়ে নাও, অবণীর পানি সব ঢক ঢক করে খেয়ে নিলো। অভি কিছুক্ষণ অবণীর হাত ধরে বসে থাকলো, অবণী একটু শান্ত হয়েছে দেখে বললো, এখন ঠিক আছো? অবণী হাঁ সুচক মাথা নাড়লে অভি বললো, তুমি কিছুক্ষণ সোফায় শুয়ে থাকো আমি আমার রুমে যাচ্ছি, জিএম সাহেব আপনি আমার রুমে আসুন, অবণী উঠে যাতে চাইলে অভি জোর করে শোয়ায়ে দিল, তুমি চোখ বন্ধ করে ঘুমাও কিছুক্ষণ, অবণী শান্ত মেয়ের মত চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। অভি আর জিএম এক সাথে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ঘটনা কি জিএম সাহেব, খুলে বলুন শুনি।
স্যার, হটাৎ অবণী ম্যাডাম দ্রুত রেডিও রুমে যেতে বললে আমি দ্রুত দৌড়ে গেলাম তখন উনি আর রেডিও অপারেটর বললো যে আমাদের শীপকে জলদস্যুরা আক্রমনে এগিয়ে যাচ্ছে আর করণীয় কি জানতে চাইলে আমি নিজেও ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়, তখন অবণী ম্যাডাম নির্দেশনা দিতে শুরু করে দিলেন, যখন প্রথম স্পীড বোট কাছে আসলে ম্যাডাম নির্দেশ দিলেন সিগলেন শুটার দিয়ে দস্যুদের রাবারের বোটে শুট করতে করতে পালানোর জন্য, সিগনেল শুটারের আঘাতে দস্যুদের বোটে আগুন লেগে ছিদ্র হতে লাগলে বাকি দস্যুরা দূর থেকে তা দেখতে পেয়ে পিছিয়ে যায় আর এই সুযোগে আমাদের শীপ পালিয়ে বাঁচে।
আগেও তো অনেক শীপ আক্রান্ত হয়েছিল, ওরাতো বাঁচতেও পারে নাই, আসলে আল্লাহর অনেক রহমত ছিলো আমাদের উপর, অভি বলল।
খবর নিন এখন শীপ কোথায় আছে আর অবণীকে বলুন উনি যদি সুস্থ থাকে আমার রুমে আসার জন্য।

কেমন ফিল করছো এখন, অবণী অভির চেম্বারে এলে জিজ্ঞেস করলো অভি।
হুম ঠিক আছি এখন, এই ধরণের মানসিক চাপ আগে কখনো নিই নাই।
আমিও সারপ্রাইজড তোমার কাজ দেখে, একজন প্রফেশনালই পারে এই সিদ্ধান্ত দিতে, আমি তোমার ভক্ত হয়ে গেলাম।
অবণী চুপ করে রইল।
কফি দিতে বলি, অবণীকে জিজ্ঞেস করলে অবণী মাথা নেড়ে সায় দিলো।
ইন্টারকমে কল দিয়ে অভি দুকাপ কফি আর কিছু বিস্কিট দিতে বললো।
এক কাজ কর, তুমি আজ রেস্ট নাও বাসায় গিয়ে, এতে তোমার মানসিক চাপটা কমবে।
না না অভি স্যার আমি ঠিক আছি।
পিয়ন কফি আর বিস্কিট দিয়ে গেলে দুজনেই খেলো চুপচাপ, খাওয়া শেষে অভি উঠে দাঁড়াল, চলো আমি নিজেই তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
জিএম ঢুকে জানালো যে শীপ এখন পানামা খালেই আছে আর সেইফও আছে। অভি অবণীকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো অবণীকে ড্রপ করার জন্য।

রাতে অভি নিজেই গেল অনামিকাকে পিক করতে, অনামিকা গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো। অভিকে বাইরে অপেক্ষা করতে দেখে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
অনামিকা এইটা বাংলাদেশ, ছাড়ো মানুষ কি ভাববে?
ভাবা ভাবির কি আছে, যা ভাবার ভাবুকগে বলে অভিকে ছেড়ে দিলো, অভি রিং দিয়ে ড্রাইভারকে গাড়ী ভিতরে নিয়ে আসতে বললো, গাড়ী এলে অনামিকার লাগেজ গুলো তুলে দুজনেই পিছনে বসলো।
তা তুমি কেমন আছো, অনামিকা জিজ্ঞেস করলো।
হুম ভালো, তা কি কাজে এলে এবার?
আমার জীবনদাতাকে দেখতে বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
অভি একটা কাস্ট হাসি দিলে অনামিকা বলল, তুমি মনে হয় খুশি হওনি আমি আসাতে?
না না খুশি হয়েছি, এমনি জিজ্ঞেস করলাম আর কি।
অনামিকা অভির হাতের ভিতর নিজের হাত ঢুকিয়ে হাতটাকে জড়িয়ে ধরলো।

___________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ