ভালোবাসি তোমায় (১০ম খন্ড)

ইঞ্জা ২৭ জুলাই ২০১৬, বুধবার, ১১:১৮:০০অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

প্লেন ল্যান্ড করলে অভি আর অবণী রেডি হয়ে নিল বের হওয়ার, সবাই আসতে আসতে বেরুচ্ছে, ওরা দুজন বসে রইল প্যাসেঞ্জার কমার জন্য, প্যাসেঞ্জার কমে এলে দুজন বেরিয়ে এলো। দুজনে এম্বারকেশন কম্পলিট করে বের হয়ে এলে ড্রাইভার দুজনের লাগেজ নিয়ে পিছনের বনেটে রেখে দিলো। গাড়িতে উঠে অভি ড্রাইভারকে বললো আগে বনানী যেতে, অবণী প্রশ্নভরা চোখে তাকালো অভির দিকে, অভি বলল, তোমাকে আগে ড্রপ করে দিই, অবণী চুপ করে রইলো। মনটা খারাপই হয়ে আছে অভির থেকে দূরে থাকতে, আসতে করে হাত রাখলো অভির হাতে যেন অজান্তে, তারপর হাত সরিয়ে নিলো দুজনেই। কাল তো অফিস বন্ধ, বলল অভি।
জি ছোট করে জবাব দিলো অবণী।
তা কি করবে তুমি সারাদিন?
কিছু না।
তোমার কি মন খারাপ, কাল থেকেই লক্ষ্য করছি।
জি না মন খারাপ হবে কেন?
তা কিভাবে জানবো আমি কিন্তু মনে হলো তাই বললাম।
অবণীর বাড়ীর কাছাকাছি এলে অবণী বলল কোন জায়গায় যেতে হবে। বাড়ীর সামনে এসে গাড়ী থামলে অবণী অভির দিকে তাকিয়ে বললো, এক কাপ চা বা কফি খেয়ে যান।
আজ না আরেকদিন, ড্রাইভার ম্যাডামের লাগেজ ভিতরে দিয়ে এসো। অবণীর মনটা হু হু করে উঠলো।

বাসায় যখন পোঁছাল তখন অভির মা আর প্রিয়ন্তী দুজনেই ঘরের সামনের স্টেয়ারসে দাঁড়িয়ে, গাড়ীর হর্ন শুনে এসে দাঁড়িয়েছে, গাড়ী থামার পর মা আর বোন দুজনেই এগিয়ে অভিকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
কেমন আছো মা?
তুই কেমন আছিস বাবা, জ্বর কি আছে মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
না মা জ্বর নেই, হয়ত ভাইরাস ছিলো। কিরে খুন্তি কেমন আছিস? মাঝে মাঝে প্রিয়ন্তীকে খেপানোর জন্য এই নামে ডাকে, প্রিয়ন্তী এসে দিলো দুই গা তারপর জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। তিন জনই ঘরে ঢুকে ড্রয়িংরুমে এলে অভির মা চলে গেলো, খাবারের ব্যবস্থা করতে।
তা ভাইয়া শুনলাম এইবার সুন্দরী সেক্রেটারি নিয়ে সাথে নিয়ে গেছো?
মাথা এক গাট্টা মেরে অভি বলল, তোর এতো মাথা ব্যাথা কিসের?
হুম ভালো, ভালো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
কথা আর বাড়তে পারলোনা, অভির মা এসে অভিকে বলল, তুই তাড়াতাড়ি চেইঞ্জ করে আই, খাবার দিচ্ছি,
অভি উঠে গেলো। অভিদের বাড়ীটা বেশ বড়, ওর বাবা,শখ করে বাড়ীটি বানান, ডুপ্লেক্স বাড়ী ড্রয়িং রুমটা বাড়ীর অর্ধেকটা জুড়ে, নিচে কয়েকটা রুম আর দড়য়িং রুমের উপরে চারিপাশে গোল করে ৭টা রুম। অভিরা যখন এই বাড়ীতে আসে তখন অভির বয়স পাঁচ আর প্রিয়ন্তী তখন হয়নি। অভি উপরে নিজ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে এলে সবাই খেতে বসলো এক সাথে।

খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠা অভির অভ্যাস, ফ্রেস হয়ে কতক্ষণ বাগানে জগিং করে, জিমে গিয়ে জিম করা নিত্যদিনের অভ্যাস, এই কয়েকদিন জিম করতে না পেরে গায়ে যেন জং ধরেছে। জিম শেষে গোসল দিয়ে রেডি হয়ে নিচে এসে ব্রেকফাস্ট করলো মার সাথে, প্রিয়ন্তী বন্ধের দিন দেরিতে উঠে বলে মা ছেলে মিলে ব্রেকফাস্ট করে।
মা আজ একটু বেরুবো, সালাউদ্দিনের বাসায় যাবো বারোটা করে, আসলে যেতে বলেছিলো।
তা যা, দুপুরে কি ঘরে খাবি?
না মা মনে হয় ঘরে খাওয়া হবেনা।
ঠিক আছে।

১২টার পরে বের হলো অভি, নিজেই ড্রাইভ করছে, প্রথমে গেল বন্ধুর বাসায়, ওখানে আড্ডা মেরে বের হয়ে গেল দুপুরে খেয়ে যেতে বললেও ও কাজ আছে বলে এড়িয়ে গেল। বেড়িয়ে অভি চলে গেল গুলশান ১ এর মার্কেটে, ভাবলো মা আর প্রিয়ন্তীর জন্য কিছু কিনবে।
কিছু শপিং করে বের হয়ে রওনা হলো বাসার উদ্দেশ্যে, খিদে লেগেছে দেখে পিজ্জা হাটে ঢুকলো। ভিতরে প্রায় সব টেবিল খালি, একটা টেবিলে বসে প্রিয়ন্তীকে ফোন দিলো আসার জন্য, প্রিয়ন্তী শুনেই তো লাফঝাঁপ শুরু করে দিলো, বললো এখনি বেরুচ্ছে। ওয়েটার আসলে বলল একটু পরে আসতে, ও কারো জন্য অপেক্ষা করছে। আধা ঘন্টা পর প্রিয়ন্তীকে ঢুকতে দেখলো, পিছনে দুইটা মেয়ে। অভি হাত তুলে ইশারা করছে প্রিয়ন্তীকে দেখে এরপর হাত তোলা অবস্থায় অবাক হয়ে গেল, সবার পিছনে অবন্তী ঢুকছে। প্রিয়ন্তী আর পিছ থেকে অবণী দুজনেই এক সাথে হাত নাড়লো।

অবণী অভিকে দেখে আশ্চর্যই হলো আর ওর মুখ হাসিতে ভরে গেল, কিন্তু সামনে একটি মেয়েকে অভির উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে দেখে দ্রুত হাত নামিয়ে নিলো।
অবণী ওর বোনদের নিয়ে অন্য একটা টেবিলে গিয়ে বসতে গেলে অভি ডাক দিলো, অবণী। প্রিয়ন্তী অলরেডি ভাইয়ের টেবিলে বসেছে, ভাইকে অবণী ডাকতে শুনে পিছন ফিরে তাকালো অবণীদের টেবিলের দিকে। অভি নিজেই উঠে গেল অবণীদের টেবিলে।
কি ব্যাপার, তুমি এখানে?
জি বোনদের নিয়ে এসেছি।
ওহ উনারা তোমার বোন, হাই কেমন আছেন আপনারা?
জি ভালো।
অবণী একে একে দুবোনকেই পরিচয় করিয়ে দিলো।
তোমরা আমার টেবিলে চলে আসো, অভি বলল।
না না স্যার, আপনার সাথে গেষ্ট আছে, আমিরা এখানেই বসি।
আরে না না ও প্রিয়ন্তী, আমার বোন, চলে আসো একসাথে বসি।
অভি ওদের নিয়ে এলো নিজ টেবিলে, প্রিয়ন্তীর সাথে পরিচয় করে দিলো সবার।
আপু আপনি বেশ সুইট, প্রিয়ন্তী অবণীকে বললো।
তুমি আরো বেশি সুইট, অবণী বললো।
তা আজ কি বিশেষ কোনদিন, খেতে এলে তোমরা, অভি জিজ্ঞেস করলো।
না না তেমন কিছুনা, বোনরা আবদার করলো তাই নিয়ে এলাম।
অভি ফাল্গুনি আর শ্রাবণীর দিকে ফিরে বললো, তা তোমরা কি খাবে বলো?
ভাইয়া আপনারা যা খাবেন তাই খাবো, কোনো অসুবিধা নাই, শ্রাবণী জবাব দিলো।

অভি দুইটা লার্জ পিজ্জা, সবার জন্য আলাদা করে পট সালাদ, পাস্তা, কোল্ড ড্রিংক্স আর সব শেষে আইস্ক্রিম এভনি এন্ড আইভরির অর্ডার দিলো।
তা অবণী আজ দেখছি মন ভালো?
অবণী হেসে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকালো। অভি খেয়াল করলো অবণীর চোখটা আজ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
আপু আপনার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে, প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করলো অবণীকে।
আরে নাহ মাত্র তো চাকরি বাকরিতে ঢুকলাম, বয়ফ্রেন্ড যোগানোর সময় কোথায়, অভির দিকে এক নজর তাকালো।
কাউকে কি পছন্দ করেন?
প্রিয়ন্তী এইসব জিজ্ঞেস করেনা, অভি ধমক দিলো।
না না থাক, অসুবিধা নেই, অবণী অভিকে বললো।
হুম পছন্দ করি।
কাকে?
আছে একজন বলেই অবণীর গাল লাল হয়ে গেলো।
অভি অবণীর বোনদের সাথে কথা বলছে আর প্রিয়ন্তী অবণীর সাথে বকবক করছে। এর মধ্যে খাবার এলে সবাই খাওয়া শুরু করলো, খাওয়ার সাথে সাথে চলতে লাগলো গল্প, যা বলছে ওরা চারজন নিজেদের মধ্যে আর অভি দর্শক, মনে মনে অভি বলছে মেয়েরাও পারে। খাবার শেষে এলো আইস্ক্রিম আর তা দেখে চার মেয়েরই সব দাঁত খুশিতে বেরিয়ে গেল।

খাবার শেষে ওয়েটার বিল নিয়ে এলে অভি ক্রেডিট কার্ড বের করে বিল মেটালো। তারপর অবণীকে বললো, আমরা তোমাদের নামিয়ে দিই?
না না অভি স্যার, আমরা গাড়ী নিয়েই এসেছি।
ওকে তাহলে চলো আমরা উঠি আজ।
সবাই একসাথে বেরিয়ে এলো পিজ্জা হাট হতে।
ড্রাইভার কই, গাড়ী কোনটা?
অবণী বটল ব্লু এলিয়েন দেখিয়ে বললো ওইটাই আমাদের আর ড্রাইভার আমি।
অভি হেসে দিলো।
আপু আপনার নাম্বারটা দিন তো, প্রিয়ন্তী অবণীকে।
অবণী নাম্বার বললে প্রিয়ন্তী ডায়েল করে রিং দিয়ে কেটে দিলো, আপু নাম্বারটা সেইভ করে রাইখেন, মাঝে মাঝে বিরক্ত করবো, হেসে বললো।
আচ্ছা কোরো কোনো অসুবিধা নেই, হেসে জবাব দিলো অবণী, আচ্ছা আসি আজ বলে অবণীরা গাড়ীতে উঠে স্টার্ট দিলো।

__________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ