চারিদিকে বাজছে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার ডামাডোল। মেসি কি বাংলাদেশ চেনে? তবুও মেসির প্রেমে পতাকা, গেন্জি চাইই চাই! এদিকে ফতোয়ারও ছড়াছড়ি তোমরা খেলা পাগলরা জাহান্নামী, এসব করা হারাম, যাদেরকে ভালোবাসবে তার সাথেই হাসর- নাসর হবে, ওয়াক্ থু ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবুও মন কি কথা শোনে? অতোসতো বোঝে? সে কিছু পাপ হলেও ছাড়ে না। সে খোঁজে ভালোলাগা, প্রিয় মানুষ, প্রিয় গন্ধ, প্রিয় কিছুর গন্ধ। খেলা দেখতে দেখতে হয়ে যায় আমাদের চকলেটের বক্স আর চিপসের প্যাকেট সাবার। প্রিয় দল জিতে গেলে আনন্দে মন ফুরফুরে হয়ে যায়।জিবন যেন স্বার্থক, ফেসবুকময় ভরপুর স্ট্যাটাস। মন এমনই, কারণ- অকারণ ভালোবাসে।

সেদিন পাসপোর্ট অফিসে গেলাম। পরিচিত একজন জানতে চাইলো, ‘এই করোনাকালে কোথায় যাবেন?’

বললাম- ‘ অনেকদিনের শখ ইন্ডিয়া গিয়ে শাহরুখ খানের চুলে খামচি দেবো। বাঁচি না মরি তাই শখটা পূরণ করেই আসি। আরে, তাকায় আছেন ক্যান? বয়সের সাথে যায় না, নাকি নাউযুবিল্লাহ!’

তিনি রসিক বটে! বললেন, ‘ শাহরুখ খান বোধহয় ইন্ডিয়াতে নেই। শুধু শুধু!!!

-হা হা হা আছে আছে, খোঁজ নিয়েই যাচ্ছি।

তাকে যদি বলি আমার পরিচিত ছেলেবন্ধু ক্যান্সারে আক্রান্ত তার বোন যাবে আমিও যাবো। ভাবতে সময় নেবেন না  তার সাথে আমার কিছু চলছে। ও তার বউ আছে! তবুও পরকীয়া ভেবেই নেবেন।

-এরপর ভাই যাবে? নাকি একা? তিনি যেতে দেবেন এই করোনা কালে? হাজার প্রশ্ন!

কেন ভাই? এত সমস্যা। একা জন্মেছি, বড় হয়েছি, নিজেকে তৈরি করেছি। সবটাতেই যদি আমিত্ব থাকে তাহলে বিয়ে কি শেকল? আর বৈবাহিক সম্পর্ক তো বোঝাপড়ার, সম্মানের, মর্যাদার, ভালোবাসার। এমনকি ভাই, বোন, বন্ধু, আত্নীয় প্রত্যেক সম্পর্কেরই আলাদা মর্যাদা, স্থান থাকে। কোনটার সাথে কোনটা কমপেয়ার করা যায় না। সকল সম্পর্কই জরুরী।

আজকাল আমরা ভালোবাসাকে পাপ বানিয়ে ফেলেছি। শারীরিক বানিয়েছি। ছেলে- মেয়ে সবটাতেই! ছেলে হলে বউ ছাড়া অন্যটা পাপ, মেয়ে হলে স্বামী ছাড়া পাপ।ভালোবাসার বদলে এখন কার্বন, শিশা, বারুদ, মিসাইল এগুলোই আমাদের পছন্দ।

যাই হোক ছিলাম খেলায়,,,,

-প্রিয় মানুষ তোমার খেলা ক্রিকেট না ফুটবল?

-তার ক্রিকেট আমার ফুটবল!

-ফুটবলে তোমার দল কোনটা ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা? -তার ব্রাজিল, আমার আর্জেন্টিনা।

-তোমার লুডু খেলা না কার্ড?

-তার লুডু, আমার কার্ড।

কোনটিতেই মিল নেই তবুও মানুষগুলো প্রিয়, পছন্দের, কাছের। পাশে থাকলে তুমুল মারামারী, চিৎকার, হট্টগোল। দুরে থাকলে বড্ড পানসে, একঘেয়ে। তখন বোঝা যায় প্রিয় মানুষটি অন্যদলের বলেই তাকে পাশে নিয়ে খেলা দেখতে এতো মজা ছিলো। প্রিয় প্রতিপক্ষ ছাড়া যে কোনকিছুই জমে না। প্রিয় দল হেরে গেলে কখনো- সখোনো মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। একসময় খেলা শেষ হয়। আমরা আবার এক হই, বেডিয়ে পরি কোথাও একসাথে সূখ খুঁজতে।

তুমুল ঝগড়ার পর প্রিয় মানুষটা যখন বলে, ‘ আমি খেতে পাচ্ছি না, মুখে ঘাঁ, নাকে ফোড়া উঠেছে। তোমার কোন খোঁজই নেই আমার। তার এমন কষ্টে মন অস্থির হয়। রাগ পরে যায়!

-বলো তোমার জন্য কি করবো?

অবশেষে পুরো শহরময় লকডাউনে লটকন খুঁজে বেড়াতে একটুও বিরক্তি থাকে না। অনেক কষ্টের পর পাওয়া গেলেই মন আনন্দিত হয়। নাছোর বান্দা পুলিশ কনষ্টেবলকে ‘স্যার প্লিজ, আমার যাওয়া জরুরী’ বলাতেও যেন মুখে বাঁধে না, ইগোতে লাগে না।

জাষ্টিন ট্রুডো আমার পছন্দ। ভালোলাগে তার ব্যক্তিত্ব, সততা, চালচলন এসব। সে খ্রিষ্টান না পাপী, নাকি তার জান্নাত নেই এসব নিয়ে ভাবিনা। কোথাও ছবি দেখলেই হাত থেমে যায়। কেউ সেটাকে পাপ নেয়, কেউ অন্যকিছু। আমি মুগ্ধ হয়ে একজন মহান মানুষকে দেখি। আমরা কেন এমন সহজ ও মহান হতে পারি না।

দুনিয়াতে এতো সব থাকতে শরীরটাই কেন আমরা বড় করে নেই বুঝিনা। শরীরের উদ্ধে যে মন তা ভাবতেই পারিনা। কোন কমিটমেন্ট ছাড়া ভালোবাসা পাপ? ভালোবাসা তো ভালোবাসাই! জাত- পাত, গোত্র- বর্ন, দেশ সে বোঝেনা। একদিন মন বলে তাকে ভালোবাসি, ভালোলাগে তারপর চলতেই থাকে।

সোনেলা ব্লগে একবছর পার করলাম এমনি এমনিই, ভালোবেসে। আমার যোগ্যতা খুব সামান্যই ততটুকু দিয়ে যা করা যায় তাই প্রকাশ করতে ভালোবাসি। মনোযোগ দিয়ে সবার লেখা পডি, মন্তব্য দেই যতটুকু বুঝি। কারও প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ, প্রতিযোগিতা কোনটাই আমার নেই।কারন আমি কবিসভায় নাম লেখাতে কিংবা টাকা কামাতে আসিনি। পদবী বা অন্যকিছু নিয়েও আমার খুবএকটা মাথা ব্যথা নেই।

আমি মনের খোরাক যোগাই। আমার ভালোলাগে বলে শতব্যস্ততায়ও কোন দায়িত্ব পালন করতে চেষ্টা করি। তাতে কেউ পছন্দ করুক বা না করুক আমার কিছু যায় আসে না। কেউ অন্যটা ভেবে বসে থাকলে আমার কি করার আছে? কারও কাছে আমি সবসময় ইমম্যাচিউরড, রুড,এরোগেন্ট, ফিলিংলেস, সেলফিস। কি করবো, আমি এমনই?

নেগেটিভিটি বাদ দিয়ে সবকিছুতে পজিটিভ খুঁজতে শেখাই মানব ধর্ম। বিপদে- আপদে, সুখে-দুখে কারও পাশে থাকাটাও মানব ধর্ম। যদিও আজকাল আমরা ‘ মানুষ মানুষের জন্য কিংবা মানবপ্রেমই বড় ধর্ম’ এসব ভুলতে বসেছি।

তবুও আসুন স্বার্থ ভুলে আমরা উপভোগ করি প্রিয়দল, প্রিয় প্রাঙ্গন, প্রিয় মানুষের সঙ্গ। একেবারে নিজ পছন্দে, নিজস্ব স্বাধীনতায় হিংসা- বিদ্বেষ ছাড়া। প্রিয় সকল কিছু পাশে থাকুক অতি প্রিয় হয়ে! শুধু আশা মনের পছন্দের সাথে যেন সম্পর্কের ফাটল না ধরে। নেগেটিভিটি ত্যাগ করে প্রানভরে ভালোবাসতে শিখি সবাই সবাইকে!!!!!

ছবি- নেট থেকে।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ