বড় ছেলে

ফাহাদ মিয়া ৫ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ১০:৩১:৫৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৫ মন্তব্য

—কি ব্যপার এমন কইরা মুখ ভার কইরা বইসা আছো যে?

 

—কই? না তো!

 

—তুমি বললেই অইবো? আমি কিন্তু ঠিকই বুঝবার পারছি,কি হইছে তাই খুইল্লা কও।

 

—তোরে আর কি কইমু রে সখিনা?দেশ আর মন দুইডাই বেশি ভালা না।

 

—কেন?কি হইছে আবার?

 

—সখিনা! তোরে একটা প্রশ্ন করবার পারি?

 

—তোমায় প্রশ্ন করার জন্যি কেউ না করলো কহন?

 

—সখিনা,পরিবারের বড় পোলারা হয়তো পৃথিবীতে আসে দায়িত্বের বোঝা কান্দে নিয়া,তাই না রে?

 

—হঠাৎ এমন কতা কইতাছো যে?

 

—জানস সখিনা? পরিবারের বড় পোলারা আজীবন খাটি মইরা গেলেও তারা কহনোই কারো প্রিয় অইবার পারে না।

মা-বাবার মন তো রক্ষা করা আরো কঠিন ব্যপার স্যাপার!

 

—কি যে কও তুমি?

 

—আমি কিছু ভুল বলি নাই রে সখিনা!

পরিবারের বড় পোলাগো তো দায়িত্ব অনেক।

 

জন্মের পর বুঝবার মতোন বয়স হইবার পর থাইকা বড় পোলাগো সংসারের হাল ধরোন লাগে।

 

—শুধু বড় পোলাগো কেন, এইডা তো সব পোলা মাইনষেরই বেলায়!

 

—হাহাহাহা, সখিনা!

দায়িত্বের বোঝা যহন ভারি অইয়া যায়, তহন মানুষ নিজের জন্য কিছু ভাববার সময় পায় না।

নিজের স্বপ্ন, নিজের সুখ বিসর্জন দিতে অয়,তবেই দায়িত্ববান অওয়া যায়।

 

আর তাই দেখবি;একটা পরিবারে বড় পোলারাই জীবনে আয় উন্নতি কম করবার পারে,শেষ বয়সে যাইয়া হয় ভিক্ষা কইরা খাওন লাগে,আর নয়তো মাইনষের দয়ায় বাঁইচা থাকন লাগে!

 

আর বড় পোলারা সারাজীবন গাধার মতোন খাইটা গেলেও শুনবি,তারা পরিবারের জন্য কিচ্ছু করে নাই"!

 

—হুম,তা তুমি ঠিকই কইছো।

 

—জানোস সখিনা? একদিকে পরিবার আর অন্য দিকে নিজের সংসার সামাল দিয়া, দিন শেষে ক্লান্ত শরীরডারে একটু আরামও দেয়ার সুযোগ হয়না কখনোই।

 

বউয়ের কটু কতা/খোটা, সন্তানের আবদার,মায়ের অভিযোগ, বাবার অভিমান,ছোট-ভাই বোনের হিংসা এইসব হইলো পরিবারের বড় পোলাগো অর্জন।

 

—এত কঠিন কইরা কেন কও কবি?

 

—সত্যি একটা কথা কি জানোস সখিনা?

 

—কি?

 

—পরিবারের বড় পোলারা না,সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পোড়া কপাইলা হয়।

 

বিয়ে করবার গেলে মাইয়া পক্ষ যহন শুনে যে পোলায় পরিবারের বড় সন্তান,তহন আর মাইয়ার বাবার বিয়াতে মত দিবার চায় না।

 

মাইয়ার বাবায়ও বুঝবার পারে,এইহানে মাইয়ার কোনো ভবিষ্যত নাই!

 

তার জন্য বেশিরভাগ মাইয়ার বাপই পরিবারের ছোট পোলা খুঁজে নিজের মাইয়ার জন্য।

 

আর যদিও কপাল গুনে একখান বউ কপালে জুডে, তয় বউ স্বভাবে ভালো অইলেও দোষ,আবার না অইলোও দোষ।

 

—কেন কবি? ভালো না অইলেও দোষ আবার ভালো অইলোও দোষ কেমনে?

 

— পরিবারের বড় পোলার বউরা ঠিক ততটুকুই দাম পায় সংসারে যতটুকু বড় পোলারা সংসারে পায়।

 

গাধার মতো খাটি গেলেও কোনো নাম নাই।

উঠলে দোষ,আবার বসলেও দোষ।

 

কাজ করলেও দোষ,আবার কাজ না করলে তো মাগির ঝি বইলাও গাল মন্দ শুনা লাগে তাদের।

 

বড় ছেলের মতো, ঘরের বড় বউয়েরও অনেক দায়িত্ব থাকে সংসারে।

 

অহন কই ভালা না অইলে কি দোষ এইডাঃ

 

বড় পোলাগো বউ যদি ভালা না অয়,তয় পোলার জীবনডা একবারে শেষ!

 

সারাজীবন বউয়ের মানসিক অত্যাচারে তীলে তীলে মইরা পাথর অইয়া যায় বেচারা!

 

—কবি, তুমি তো আইজকা আমার চোখে পানি আইনা দিলা।এত কঠিন কঠিন কতা কেন কও কবি?

 

—হাসাইলি রে সখিনা!

যাই হোক, অনেক কতা অইলো,অহন আমার যাবার সময় হইয়া আইছে।

 

—এত কষ্ট নিয়া থাকো কেমনে কবি?

 

—কষ্ট? কই কষ্ট না তো! ঐ যে তোরে বললাম, বড় পোলাগো পয়দা ই হয় দায়িত্বের বোঝা কান্দে লইয়া।

 

সবকিছুর পরেও পরিবারের বড় পোলাগো সান্ত্বনা দেয়ার মতো মানুষ থাকে না,ভরসা দেয়ার কেউ থাকে না।

 

দিন শেষে নিজের সান্ত্বনা নিজেরই দেওয়া লাগে,নিজের কান্দে নিজেরই হাত রাইখা কওন লাগে,“থাইমা গেলে অইবো না, অহনো অনেক দায়িত্ব পালন করা বাকি আছে।”

 

সবশেষে পরিবারের হোগলের মুখের হাসিডাই তাদের(বড় ছেলের) ভালো থাকার একমাত্র সম্বল।

 

----------এ কথা বলেই কবি হাসতে হাসতে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন আর সখিনা তার চলে যাওয়া দেখতে লাগলো অপলক দৃষ্টিতে।

 

~ফাহাদ

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ