কিছু দিন আগে তিউনিশিয় বংশদ্ভুত ফরাসী পরিচালক আবেদেল লতিফ কেশিশে পরিচালিত ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেষ্ট কালার ছবিটি দেখেছিলাম। উল্লেখ্য ছবিটি ২০১৩ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন পাম পুরস্কার জিতে আলোড়ন তৈরী করেছিল। এংলি, ষ্টিফেন ষ্পিলবার্গের মত পরিচালক ছবিটিকে সেরা বলে রায় দিয়েছিলেন। ছবিটির দুই লিড অভিনেত্রী এডেল এক্সারসোপুলোস এবং লিয়া সেদু সেরা অভিনেত্রী এবং পরিচালক আবেদেল লতিফ কেশিশে সেরা পরিচালকের পুরষ্কার জিতেছিলেন। এছাড়া গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা এওয়ার্ডেও ছবিটি সেরা ছবির বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল।
dfsd

জুলি মারোর গ্রাফিক উপন্যাস লা ভা দ্য এদেলের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ছবিটির প্লট। ছবির গল্পের শুরুটা হয় ফরাসী এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ১৫ বছরের কিশোরী এডেলকে কেন্দ্র করে। আট দশটা ফরাসী কিশোরীর মত তার জীবনও স্কুল, বাসা আর বন্ধু বান্ধবের ঘরোয়া আড্ডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই বয়সী ছেলেমেয়েদের আড্ডার বিষয়বস্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয় বিপরীত লিঙ্গ কেন্দ্রীক যৌনতা। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। বন্ধু বান্ধবের এই বিপরীত লিঙ্গ কেন্দ্রীক আড্ডায় নিজেকে অবাঞ্ছিত বলে মনে করতে থাকে এডেল কারণ প্রকৃতিগত কারণেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সে কোন আকর্ষণ বোধ করে না। তবুও নীরবে সবকিছু গোপন করে চলে সে। এক সময় সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে সমবয়সী এক কিশোরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় সে কিন্ত সম্পর্কের এক পর্যায়ে আবিস্কার করে এতকাল ধরে নিজের সঙ্গেই প্রতারণা করে চলছে সে। সম্পর্ক ভাঙ্গার পর এক পানশালায় এমা নামের নীল চুলের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় এডেলের যাকে আগে একদিন রাস্তায় দেখে প্রবলভাবে আকর্ষিত হয়েছিল সে । এমা বিশ্ববিদ্যালয়ে্র আর্টের ছাত্রী। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে তৈরী হয় ঘনিষ্ঠতা। এরপর সময় যতই গড়ায় সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের অধিকারী এমার প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে এডেলের। এভাবেই আস্তে আস্তে গভীর এক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এমা ও এডেল। এমার উদারনৈতিক পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে দ্বিধা করে না কিন্ত নিজের রক্ষণশীল পরিবারের কথা ভেবে এমার সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্কের কথা পরিবারের কাছে গোপন রাখে এডেল। আট দশটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মত এক সময় এই সম্পর্কেও দেখা দেয় ব্যস্ততা আর বিশ্বাসের সংকট। নিজের আর্টের প্রদর্শনী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এমা। এডেলকে দেয়ার মত পর্যাপ্ত সময় হয় না তার। নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে এক সময় এক স্কুলের শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হয়ে হয় এডেল। সেখানে এক সহকর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় এডেলের। একদিন তাদের দুজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফুঁসে ওঠে এমা। এডেলকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে সে, ভেঙ্গে যায় এমা আর এডেলের দীর্ঘ সম্পর্ক। কিন্তু জীবন তো আর থেমে থাকে না। এমা তার আর্টের প্রদর্শনী নিয়ে ব্যস্ত হয় , একসময় নুতুন সঙ্গীও আসে তার জীবনে কিন্ত এডেলের জীবন যেন থমকে যায়। এমার কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারে না। একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে এমার স্মৃতি রোমন্থন করেই দিন কাটে তার।

এবার আসি পরিচালনা আর চিত্র গ্রহনের প্রসঙ্গ। ছবিটিতে অধিকাংশ দৃশ্যে ক্লোজ শটের আধিক্য। ক্লোজ শটে ক্যামেরার বিভিন্ন এঙ্গেলে পরিচালক এডেলের অবদমিত যৌনতা , নিসঙ্গতা, একাকীত্ত্বের কষ্ট তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং স্বীকার করতেই হবে কাজটি তিনি দুর্দান্ত ভাবেই সম্পন্ন করেছেন। এমা আর এডেলের পরিবারের খাদ্যাভ্যাস আর জীবনাচরণ পদ্ধতির তুলনামূলক পার্থক্যটা তুলে ধরে ফ্রান্সের উদার আর রক্ষণশীল পারিবারিক মূল্যবোধের পার্থক্যটাও দর্শকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । ফ্রান্সের তরুণ প্রজন্মের জীবন যাপন , চিন্তাভাবনা, বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গীগুলোকে সার্থক ভাবে তুলে ধরার জন্যও পরিচালককে কৃতিত্ব দিতে হবে। এমার যে নীল চুলের প্রতি এডেলের তীব্র আকর্ষণ সেই নীল চুলের সম্পর্কের বিভিন্ন পর্যায়ে আস্তে আস্তে ধুসর হয়ে যাওয়া ছবিটির কন্টেক্সটে আলাদা অর্থ বহন করে। এছাড়াও ছবিটির বিভিন্ন দৃশ্যে নীল রঙের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। ছবিটির শেষ দৃশ্যে নীল রঙের পোশাক পরিহিতা এডেলের রাস্তায় হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটির কথাও আলাদা করে বলতে হবে। পরিচালকের মুন্সিয়ানায় নীল কখনো হয়ে উঠেছে উষ্ণতার রং আবার কখনোবা বিচ্ছেদের। তবে ছবিটির দীর্ঘ যৌন দৃশ্যের জন্য পরিচালককে অনেক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে এবং এই সমালোচনাকে ক্ষেত্র বিশেষে যথার্থই বলতে হবে। কারণ এই দৃশ্যগুলো ছবিটির দৈর্ঘ্যকেই শুধু দীর্ঘ করেছে , শৈল্পিক মুল্য কিছু যোগ করেছে বলে মনে হয় না। এছাড়া ছবিটির গতিকেও মাঝখানে কিছুটা শ্লথ বলে মনে হয়েছে। অভিনয়ের কথা বলতে গেলে সবার আগে আসবে এডেল চরিত্রে অভিনয় করা এডেল এক্সারসোপুলোসের নাম। অবদমিত যৌনতা , সমাজের কাছে নিজের পরিচয়টিকে আড়াল করা আর একাকীত্বের অভিব্যক্তিগুলোকে অত্যন্ত সার্থক ভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এছাড়া এমা চরিত্রে অভিনয় করা লিয়া সিঁদুর কথাও আলাদা করে বলতে হবে। দুর্দান্ত অভিনয়ের পুরষ্কার হিসেবে তারা দুজনই যৌথ ভাবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা অভিনেত্রীর পুরষ্কার জিতেছিলেন ।

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ। নারী ও পুরুষের মধ্যকার সামগ্রিক সম্পর্কের পুরোটাই গড়ে উঠেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে। এই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিকাঠামোর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি হল যৌনতা। বিষমযৌন সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে সমাজ অনুমোদিত যৌন সম্পর্ক হিসেবে সমাজে টিকে আছে। অনেক নারীবাদী মনে করেন নারীকে নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে পুরুষ বিষমযৌনতার ধারণাকে গড়ে তুলেছে এবং একে ব্যবহার করে আজও নারীকে শোষণ করে চলেছে। নারী যতদিন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িত থাকবে ততদিন নারীদের মুক্তি ঘটবে না অর্থাৎ নারী ও পুরুষের মধ্যকার এই বিষম যৌন সম্পর্কই নারী মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। এ থেকে মুক্তির বিকল্প উপায় হিসেবে সমযৌন সম্পর্কের কথা বলেন এই শ্রেণীর নারীবাদীরা। তাদের মতে সমযৌন সম্পর্কই পুরুষতান্ত্রিক প্রাধান্যের বিরুদ্ধে নারীর প্রতিরোধের প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করবে। নারীর যৌনতাকে স্বতন্ত্র স্বীকৃতি দিয়ে তার মুক্তির পথকে এগিয়ে নেবে।এই ধারার মতবাদকে রাজনৈতিক সমকামিতাও বলা হয়। ষাটের দশকে পাশ্চাত্যে সেকেন্ড ওয়েভ ফেমিনিজম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ধারার মতবাদ শক্তিশালী হয়। এই ধারার নারীবাদীদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেষ্ট কালার ছবিটি। তাদের মতে এই ছবিটি আসলে সমকামিতার আড়ালে পুরুষতান্ত্রিকতার ছবি। সমকামী সম্পর্ককে ভুল ভাবে উপস্থাপনের দায়েও পরিচালককে অভিযুক্ত করেছেন তারা। তাদের ভাষ্য মতে ছবিটির এমা চরিত্রটি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা্কেই সার্থক ভাবে লালন করছে। ছবিটিতে দেখা যায় এমা তুলনামুক বয়স্ক , জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ, তুলনামূলক ভাল প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের অধিকারী। বিপরীতে এডেল অল্পবয়সী, অনভিজ্ঞ , পারিবারিক সমর্থন বঞ্চিত। সম্পর্ক চলাকালীন এমা সব সময় এডেলের উপর তার প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করেছে যেমনটা একজন ক্ষমতাবান পুরুষ তার নারী সঙ্গীটির প্রতি করে থাকে। সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও এমার নেয়া। এমনকি সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর সে ঠিকই নুতুন জীবন সঙ্গী খুঁজে নিয়েছে , সর্বোপরি তার জীবনকে এগিয়ে নিয়েছে মসৃণ ভাবে। এমার আচরণে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রকাশ ফুটে উঠেছে ছবিটির অনেক জায়গায়। বিপরীতে এডেলকে দেখা যায় দুর্বল এক চরিত্র হিসেবে, এমার প্রতি ভালবাসাই যার একমাত্র সম্বল। এমার আবার ফিরে আসার ভ্রান্ত আশাকে মনের মাঝে লালন করে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন পার করছে সে। ঠিক যেন আমাদের সমাজে প্রচলিত "অবলা" নারীর প্রতিচ্ছবি।

তবুও প্রেম আর বিচ্ছেদকে বিশেষ করে সমকামী প্রেমকে ভিন্নরুপে উপস্থাপনের অসাধারণ দক্ষতায় অনবদ্য এক ছবি হয়ে উঠেছে ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেষ্ট কালার। সমকামী সম্পর্কও যে পূর্ণ আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে গড়ে উঠা সম্ভব তা আবারো নুতুন করে দেখিয়েছে ছবিটি। আগ্রহীরা দেখতে পারেন।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

  • জিসান শা ইকরাম

    পড়লাম আপনার মুভি রিভিউ
    যারা এই মুভিটি দেখেননি তাদেরকে কিভাবে মুভিটি দেখতে উদ্বুদ্ধ করতে হয় তা আপনি জানেন
    যেমন আমি এই মুভিটি দেখিনি– আপনার রিভিউ পড়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

    মুভির উপর আপনার নিজস্ব বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে
    সম্পর্কের উপর আমরা আসলে প্রচলিত ধ্যান ধারনার বাইরে যেতে পারিনা
    যে কোন সম্পর্কই আবেগ আর ভালোবাসায় পূর্ন থাকে
    এমনকি আমার ছোট বেলায় পোষা পাখিটির মৃত্যু কষ্ট আমি এখনো ভুলতে পারিনা।
    রিভিউ লেখুন আরো……

    শুভ কামনা
    নববর্ষের শুভেচ্ছা -{@

    • অপার্থিব

      সময় করে দেখে ফেলুন। সমাজ ও সংস্কৃতির পরিবর্তনের কারণে নারী ও পুরুষ উভয়ই এখন সম্পর্কের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গিগুলো খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করছে। নিজেদের চাওয়া পাওয়া ও ভাল লাগা -মন্দ লাগার ব্যাপারে সবাই এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। ভিন্ন টাইপের প্রেমের গল্পের স্বাদ পেতে পারেন এই ছবিটিতে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

      • জিসান শা ইকরাম

        দেখলাম মুভিটি………
        বেশ ভালো মুভি লিখেছেন আপনি……… আমি তেমন লিখতে পারিনা,তবে এই মুভিটির রিভিউ লিখতে আপনি যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছেন,আমি লিখলে এসব বিষয়েই জোর দিতাম।
        ছবিটির দীর্ঘ যৌন দৃশ্যে আসলে মুভির মূল বক্তব্যকে কিছুটা ব্যহত করেছে।এসবের এত বিস্তারিত দেখানোর দরকার ছিল বলে মনে হয়না।এত ভালো একটি মুভির পরিচালক কোন বিবেচনায় এটি আনলেন তা বুঝলাম না।

        ধন্যবাদ এত ভালো একটি মুভির নাম শেয়ার করার জন্য।
        আরো রিভিউর অপেক্ষায় থাকবো।

      • অপার্থিব

        দীর্ঘ যৌন দৃশ্যের জন্য ছবিটি অনেকের কাছ থেকেই সমালোচনার শিকার হয়েছে।তাছাড়া ছবিটির দৈর্ঘ্য এমনিতে একটু বেশি, এটাও পরিচালকের মাথায় রাখা উচিত ছিল। তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে যে এটি একটি ফরাসী সিনেমা, ফরাসী শিল্প সংস্কৃতি এ ব্যাপারে একটু বেশিই লিবারেল। আপনার প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে রিভিউ লেখার।

  • ব্লগার সজীব

    ‘ ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেষ্ট কালার ‘ মুভির নামটিই তো অত্যন্ত আকর্ষনীয়।এমন ভালো মুভি রিভিউ পড়ে মুভি দেখলে বুঝতে সুবিধা হয় আসলে। মুভি দেখেন নিয়মিত বুঝতে পেরেছি।আরো রিভিউ চাই।

  • শুন্য শুন্যালয়

    আপনার অন্যান্য লেখার মতই রিভিউটা ধারালো হয়েছে অপার্থিব, দেখবো অবশ্যই।
    নারীবাদীরা যেই সমালোচনা করেছেন, তাতে আমার কিছুটা প্রশ্ন আছে। সাধারনত সমকামী যুগলদের মধ্যে একটু তাকালেই দেখতে পাওয়া যায়, কেউ একজন পুরুষালি এটিচিউড ধরে রেখেছেন, সেইরকম পুরুষদের মধ্যেও একজনকে দেখা যায়, একটু মেয়েলী ভাবে থাকতে পছন্দ করে। আদতে প্রকৃতগত ভাবেই স্বাভাবিক নারী-পুরুষের কিছুটা ডাইভারশান এই সমকামিতা, তাই এতে পুরুষতান্ত্রিক ভাব থাকাটা এত সমালোচনা পাবার কোন কারন আছে বলে মনে হয়না।
    যাই হোক, মুভিটা দেখবো নিশ্চিত, বাকিটা দেখার পরেই বলবো। তবে রিভিউ লেখায় আপনি ১০০% দক্ষতা দেখিয়েছেন, লিখতে হবে এমন আরো।

    • অপার্থিব

      আপনি ঠিকই বলেছেন যে এমন অনেক সমকামী যুগল আছে যাদের মধ্যে একজনকে বিপরীত লিঙ্গের এটিচিউড ধারণ করতে দেখা যায় কিন্ত এটা সব ক্ষেত্রে সবার জন্য প্রযোজ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মানূষ কেন সমকামী সম্পর্কে আকৃষ্ট হয় তার সুনির্দিষ্ট কারন বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। জিনগত , হরমোনাল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলোকেই মুলত এক্ষেত্রে হাইলাইট করা হয়। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পুরোটাই সাংস্কৃতিক। সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন হয় কিন্ত মোটামুটি সব সংস্কৃতিতেই দেখা যায় পুরুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নারীর উপর তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। পুরুষতান্ত্রিক অর্থনীতি নারী কাজ করলেও তাকে তার শ্রমের ন্যায্য মুল্য দেয় না, আবার অনেক কাজকে রীতিমত মুল্যহীন করে রেখেছে।যেমনঃ পরিবারে আমাদের মায়েদের করা ঘর-গৃহস্থালির কাজ। এখন নারী সমকামীদের মধ্যেও যদি পুরুষালী মেকানিজম অনুসরণ করে নারীর সঙ্গে সম্পর্কের গতি প্রকৃতি নির্ধারণের চেষ্টা করা হয় তাহলে যারা সম যৌন সম্পর্ককে পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে মনে করেন তাদের মতবাদের সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতিয়মান হয়।যদিও অনেক নারীবাদী এই মতবাদের বিরোধিতা করেছেন কিন্ত পুরুষতান্ত্রিক আচরন প্রতিরোধের ব্যাপারে সব নারীবাদীই একমত। নিজের পোশাক নির্বাচন ও ব্যক্তিত্ব গঠনের ব্যাপারে সবাই স্বাধীন কিন্ত পুরুষের সাজ পোশাক নিলে পুরুষের মত আচরন করতে হবে এমন ভাবনাটাও ভয়ংকর। একারনে অনেক নারীবাদীর কাছ থেকে সমালোচনার শিকার হয়েছে ছবিটি।

      সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

  • অপার্থিব

    আপনি ঠিকই বলেছেন যে এমন অনেক সমকামী যুগল আছে যাদের মধ্যে একজনকে বিপরীত লিঙ্গের এটিচিউড ধারণ করতে দেখা যায় কিন্ত এটা সব ক্ষেত্রে সবার জন্য প্রযোজ্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মানূষ কেন সমকামী সম্পর্কে আকৃষ্ট হয় তার সুনির্দিষ্ট কারন বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি। জিনগত , হরমোনাল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলোকেই মুলত এক্ষেত্রে হাইলাইট করা হয়। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পুরোটাই সাংস্কৃতিক। সমাজ ও সংস্কৃতি ভেদে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন হয় কিন্ত মোটামুটি সব সংস্কৃতিতেই দেখা যায় পুরুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নারীর উপর তার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। পুরুষতান্ত্রিক অর্থনীতি নারী কাজ করলেও তাকে তার শ্রমের ন্যায্য মুল্য দেয় না, আবার অনেক কাজকে রীতিমত মুল্যহীন করে রেখেছে।যেমনঃ পরিবারে আমাদের মায়েদের করা ঘর-গৃহস্থালির কাজ। এখন নারী সমকামীদের মধ্যেও যদি পুরুষালী মেকানিজম অনুসরণ করে নারীর সঙ্গে সম্পর্কের গতি প্রকৃতি নির্ধারণের চেষ্টা করা হয় তাহলে যারা সম যৌন সম্পর্ককে পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে মনে করেন তাদের মতবাদের সাথে সাংঘর্ষিক বলে প্রতিয়মান হয়।যদিও অনেক নারীবাদী এই মতবাদের বিরোধিতা করেছেন কিন্ত পুরুষতান্ত্রিক আচরন প্রতিরোধের ব্যাপারে সব নারীবাদীই একমত। নিজের পোশাক নির্বাচন ও ব্যক্তিত্ব গঠনের ব্যাপারে সবাই স্বাধীন কিন্ত পুরুষের সাজ পোশাক নিলে পুরুষের মত আচরন করতে হবে এমন ভাবনাটাও ভয়ংকর। একারনে অনেক নারীবাদীর কাছ থেকে সমালোচনার শিকার হয়েছে ছবিটি।

    সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    মুভিটা তো দেখতেই হবে। এবং তা আজই দেখবো।
    আচ্ছা শিখিয়ে দেবেন কিভাবে এতো সুন্দর মুভি রিভিউ লেখেন? চোখের সামনে যেনো চলে এসেছে চলন্ত দৃশ্যগুলো। (y)

  • অনিকেত নন্দিনী

    আজই এই মুভির রিভিউ পেলাম এমন একজনের কাছ থেকে যে কিনা মুভিটি দেখাকালীন সময়েই রিভিউ দিচ্ছিলো।
    ডাবল রিভিউ পেয়ে ভাবছি এটি দেখতেই হবে। 😀

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ