বিষন্নতায় ঘেরা কয়েটি দিন......

তকদিরের অমোঘ বিধানে খুবই কঠিন সময় পাড় করতেছি | ঈদের দিনে খুব সকাল থেকেই কোন ব্যাকরণ ছাড়াই মন খারাপ ছিল; ঈদের নামাজ থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়ি | আগের রাতে একটু দেরিতে ঘুমিয়ে ছিলাম, হয়তো একারণেই মন-মেঝাজ তেমন ভাল যায়নি |হঠাৎ মোবাইলের ডায়রিতে মিটিং এর এলার্ম বাজছে ; এই মিটিং গুলো তিন মাসে একবার হয় ; স্থানীয় ছোট -বড়-মাঝারি ব্যবসায়ীদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয় | এর আগে আমার এইসব মিটিং যাবার অভিজ্ঞতা হয় নাই | আমার ব্যবসায়িক পার্টনার যেতেন, এখন থেকে আমাকেই যেতে হবে | আমার বেশে আগ্রহ ছিল এ মিটিংয়ে |

বিশাল মাপের কিছু মানুষের একদম সাদা-মাটা কথা বলার দরুন আমার ভাল লেগেছিল | আমি যেহেতু একেবারেই নবাগত ; প্রথম দিক থেকেই সবার বক্তব্য খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেছিলাম | ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা বেশ আনন্দ লাগছিল ; সবার মাঝ খানে
#জন ও #ক্যারেল আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিল | সুযোগ কখনও হাতছাড়া আমি কখনই করিনা |
যেহেতু লোকাল কমিনিটি লোক বেশি ছিল ; আর লোকাল কমিনিটি ছাড়া এখানে ব্যবসা -অসম্ভব |স্থানীয় রোগবি -ফুটবল -ক্রিকেট সহ নানা বিদ ছোট-খাট ইভেন্টে আমার প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করে ; কাজেই স্থানীয় লোকদের কাছে আমাদের একটু আলাদা চাহিদাও আছে |লোকাল কমিনিটি নিয়ে আমাদের আগামীদিনের কিছু সুন্দর কিছু পরিকল্পনার কথা যখন তাদের বললাম | সবাই অনেক খুশি | আর এখানে আমি ও আরোও একজন তরুণী ছাড়া সবাই ৫০ উর্ধ ছিলেন | মিটিং শেষে আমার খুব খারাপ লেগেছিল ; যে খারাপ আমাকে কিছুটা জেদি করে ফেলে |
সবার দামি -দামি গাড়ি -জাগুয়ার -মার্সেটিজ -বিএম ডব্লিউ -ল্যান্ডরোভার ছিল | আর তখনই মাথায় খেলা করে ল্যান্ডরোভার কিনব |একদম নিউ সেইবের | ফাইন্যান্স করে হলেও ল্যান্ড রোভার কিনব |
নানা-রঙের স্বপ্ন নিয়ে মিটিং শেষে যখন বাড়ি ফিরলাম হঠাৎ বার্মিংহাম থেকে বড় বোনের ফোন, ভেজা গলায় আপা যখন বলছিল, মা খুব অসুস্থ -কিছু নিকট আত্বিয় আর আব্বু আম্মাকে ঈদের রাতেই ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছেন |
আমি নানা কারণে ব্যস্ত থাকায় ইদানিং আম্মাকে ও আব্বাকে খুব ফোন-টন করা হয়ে উঠেনি | বড় বোন প্রতিদিন ফোনদেন আর আমাকে আপডেট খবর দেন | আমার কাছে সারা পৃথিবী এক দিকে আর আমার বাবা-মা একদিকে |
গত বছর রাত আটায় আম্মু ফোনে দিয়ে বলেছিলেন,আব্বু অসুস্থ | সে সময় সারা রাত ঘুমাইনি ; সকালেই ম্যানচেস্টার এযারপোর্ট | মাত্ৰ কয়েক ঘন্টার ভিতর দেশে গিয়েছিলাম |
আমার প্রচন্ড রকমের আবেগের জায়গা আমার বাবা -মা | আমি চোখের সামনেই দেখেছি -বাবা-মা আমাদের ৫ ভাই বোনকে কিভাবে পড়া লেখা করিয়েছেন ; এক পরিবারের ৪-৫ ভাই বোন থাকলে সবাইকে ভাল মানুষ হিসাবে তৈরি করা যায় না |আমার বাবা ভাই-বোন ৫জনকেই শুধু লেখা পড়া করাননি; পৃথিবীর খুব ভাল ৫ শহরে নিজেদের নিজেস্ব বাড়ি -গাড়ি নিয়ে আত্ব সম্মানের সাথে বসবাসের সুযোগ করেদিয়েছেন |
আমি -ম্যানচেস্টার,মেজটা -নিউওয়ার্ক(আমেরিকা ),ছোট ভাই বার্মিংহামে,বোন্ একজন লন্ডনে আরেক জন বার্মিংহামে | যার সব টুকু অবদান -মা-বাবার |
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডঃ এ পি জে আবদুল কালামের একটি অসাধারণ
 উক্তি আছে ,যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।আমার কাছে আমার মা -বাবাই আমার দেশে, তাদের কাছ থেকেই জীবন ও দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা শিখা |
#আম্মুর অসুস্থতার খবর শুনে ! মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম দেশে যাব | আব্বু বলেন, আম্মু একটু একটু সুস্থ হয়ে উঠতেছেন ; তোমাকে উড়াতাড়া করে আসতে হবে না | ধীরে ধীরে এসো |
আমরা যারা স্থায়ী ভাবে বিদেশ থাকি | দেশে আসার জন্য একটা প্লান তৈরী করি |হুট করে কোথাও যেতে পারি না |কারণ :লন্ডনে (বিলেতে) কত নিষ্টুর ব্যস্ত জীবন |মাস শেষে বাড়ির মর্গেজ ,কারেন্ট,ওয়াটার,গ্যাস, কাউন্সেল ট্যাক্স,, গাড়ির ইন্সুরেনস, রোড ট্যাক্স, ক্রেডিট কার্ড এর বিল ,বাই নাউ পে লেইটার এর বিল, ছুট খাটো ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে মহা ব্যস্ততার মাঝে বেছে থাকা |
বিশেষ করে আমার মত অতি ক্ষুদ্র মানুষের জন্য সেটা খুবই প্লান করে যেতে হয় | যে কোন জায়গাতেই অন্য একজনকে ভাল ভাবে বুঝিয়ে -দ্বায়িত্ব দিয়ে যেতে হয় | তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যবসার প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা |কাজের ক্ষেত্রে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট করতে হবে।
নানা বাস্তবতায় ও আব্বার অনুরুধে এবার আর দেশে যাওয়া হয় নাই ; সময় করে খুব শীঘ্রই দেশে যাব |
ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছিল মায়ের অসুস্থতায় |মায়ের অসুস্থতা স্বাভাবিক জীবনে বিরাট প্রভাব পেলেছে | ঈদের দিন রাতে মাইনর স্টোক করার পর ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছিলেন মা, আর খানিকটা মুটা-মুটি সুস্থ হয়ে আজ বাসায় ফিরেছেন মা |বিষন্নতায় ঘেরা ছিল কয়েটি দিন, কোন কাজ-কামে মন বসছিলো না |
হে আল্লাহ ,হে মহান রব্বুল আলামিন,পরম করুণাময় আমার মা কে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করুন |
প্লিজ সবাই আমার মায়ের জন্য একটু দোয়া করবেন |যারা খোঁজ খরব নিয়েছেন -দুঃসময়ের এই মহা বিপদের দিনে -ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা সবার কাছে |

 

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ