ISIS / ISIL / Waffen / @albaraka_news

বিশেষ নোটঃ আমি ভূমিকা পর্বে( বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-১ ) একটা ব্যাপার জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, বিস্তারিত পর্ব শেষ হলে, রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্ক নামে একটি বিকল্প গনমাধ্যমে প্রকাশিত আইএস জঙ্গিদের উত্থান ও এর অন্তরালের ষড়যন্ত্র নিয়ে যে অসংখ্য সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে, সেখান থেকে বাছাই করা আলোচিত কিছু সাক্ষাৎকার দিব।

পর্বঃ ১ এর পর চলুন উত্তর খুঁজি পর্বঃ ২এঃ

যুক্তরাষ্ট্রের পাগলাটে চিত্র পরিচালক মাইকেল মুরের প্রামান্য ছবি ‘ফারেন হাইট নাইন-ইলাভেন’-এর দর্শক মাত্রই জানেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াভহ এক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায়, ৯টা ৬ মিনিট থেকে ৯টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিও বুশ বিশাল এক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন! ‘দেশ যখন সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়েছে’ এমন একটি ঘোষনা জাতিকে দেবার আগে বা পরে তাঁকে মোটেও তৎপর মনে হয়নি। এমনকি তিনি অ-গুরুত্বপূর্ণ সেই পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান, বক্তব্য কিংবা ফটোসেশন কোনটাই বাতিল করেননি।

pic 1

ছবিঃ টুইন-টাওয়ার ধংস হচ্ছে আঘাতে, ভিতরে নিরহ মানুষ পুড়ছে জ্বলন্ত আগুনে।

বিশ্ব ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া নাইন-ইলাভেনর ঘটনাকে কেন্দ্র করে, হাজারো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভিড়ে ঠাই করে নিয়েছিল বুশের ওই মুহূর্তটিও। যা কিনা অনেকের কাছেই ‘রোম পুড়ছে আর নিরো বাঁশি বাজাচ্ছেন’ এমন উপমার সমার্থক হয়ে উঠেছিল। প্রেসিডেন্ট বুশ সেদিন কেন জাতির অমন দুর্যোগ মুহূর্তে মহামূল্যবান পঁচিশ মিনিট একটা অগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করলেন? ৮টা ৪৫ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিন টাওয়ারের দশটি তলা ভেদ করে যখন বিশাল একটি বোয়িং ভেতরে ঢুকে গেছে এবং তার আগে ৮টা ৪০ মিনিটে বোস্টন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের নো-র‍্যাড ঘোষনা থেকে জানা গেছে যে ফ্লাইট ইলাভেন ছিনতাই হয়েছে, তখনও অত্যাধুনিক লিমুজিনে বসে প্রেসিডেন্ট কিছুই জানতে পারলেন না? নাইন-ইলাভেনের আগে পরে অন্তত পাঁচটি চাটার বিমানে করে শতাধিক সৌদি নাগরিক বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন, তারা কারা? কেন তাদের বিশেষ ব্যাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের সুযোগ করে দেওয়া হলো? ১১ সেপ্টেম্বর সকালে মধ্যপ্রাচ্যের যে দুই লোক প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার চাইলেন তারাই বা কারা? কেন ঘটনার আগের রাতে ফ্লোরিডার সারাসোটায় প্রেসিডেন্টের রিসোর্টের ছাদে মিসাইলের প্রহরা ছিল? তাহলে কি সেখানে কোন নিরাপত্তা সতর্কতা জারি ছিল? সতর্কতা থেকে থাকলে সেটি গোপন রাখা হল কেন? তাহলে কি নাই-ইলাভেনের ঘটনায় ফ্লোরিডার সারাসোটা’র বিশেষ কোন যোগ আছে?

bob grahamrepor picture 1ছবিঃ ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর সিনেটর বব গ্রাহাম ও কংগ্রেসের যৌথ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট।

কংগ্রেসের যৌথ তদন্ত কমিটির (9/11 REPORT: JOINT CONGRESSIONAL INQUIRY) রিপোর্ট সেটাই বলছে। হামলাকারিদের অন্তত তিনজন সারাসোটার একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে এফবিআই কি জেনেছে সেটা জানা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, জয়নাল আবেদিন ওমর নামে যে সুদানি লোকটি সেই রাতে প্রেসিডেন্টে বুশের নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে আর কোথাও দেখা যায়নি।

আমি আগেই, লিখায় জানিয়েছিলাম যে, নাইন-ইলাভেনের ঘটনা নিয়ে ২০০৩ সালের জুলাই-এ একটি রিপোর্ট দিয়েছিল কংগ্রেসের যৌথ তদন্ত কমিটি। ঘটনার আগে পরে দেশ বিদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতাই ছিল এই রিপোর্টের বিষয়বস্তু। কিন্তু রিপোর্টটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বলা হয় সবচেয়ে আসল অংশটাই প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। ওই রিপোর্টে ২৮ পৃষ্ঠার একটি পরিচ্ছেদ ছিল। যেখানে নাইন-ইলাভেনের ঘটনায় সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স বানদারের ভূমিকা, সৌদি গোয়েন্দা সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রে তার একাধিক এজেন্টের রহস্যময় উপস্থিতি, ঘটনার এক বছর আগে থেকে লস এঞ্জেলেস, সান্তিয়াগো, লাস ভেগাস আর সারাসোটায় তাদের আনাগোনা এবং এফবিআই, সিআইএ’র রহস্যময় নিরবতা এইসব কিছুই, ওই রিপোর্টের ২৮ পৃষ্ঠার পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু রিপোর্টের সেই পরিচ্ছেদটি প্রকাশ করতে দেয়নি বুশ প্রশাসন। কথিত ‘ক্লাসিফায়েড’-এর মোড়কে আজও গোপন রাখা হয়েছে বিশ্ব ইতিহাসের বর্বরতম একটি ষড়যন্ত্রের দলিল।

repor picture 2

ছবিঃ কংগ্রেসের যৌথ তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রশ্নবোধক ২৮ পৃষ্ঠা।

অনেকদিন ধরেই কংগ্রেসের যৌথ তদন্ত কমিটির ওই ‘ক্লাসিফায়েড’ অংশটুকু প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। প্রতিবছর নাইন-ইলাভেন বার্ষিকী এলেই দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। নাইন-ইলাভেনের তথ্য লুকানো কালো অধ্যায়টিকে, প্রতিবছর যিনি যুক্তরাষ্ট্রের আত্মভোলা বিস্মৃতিপ্রবন জাতির সামনে তুলে ধরেন, তিনি ফ্লোরিডার সাবেক গভর্নর-সিনেটর বব গ্রাহাম। কংগ্রেসের দ্বি-দলীয় যৌথ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। যেহেতু ‘গোপন তথ্য ফাঁস না করার শপথ নিয়েছেন’ তাই রিপোর্টের ক্লাসিফায়েড অংশটি নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য থেকে বরাবরই বিরত থেকেছেন বব গ্রাহাম। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন অন্তরালের ঘটনা তা যত অবিশ্বাস্য আর বেদনাদায়কই হোক না কেন, আসল ইতিহাস জানবার অধিকার জনগনের আছে। তাই সেই তথ্য প্রকাশের দাবিতে ১১ বছর ধরে একটি আন্দলন চালিয়ে যাচ্ছেন বব গ্রাহাম। এই আন্দলনের নাম-‘Reopening of the 9/11 investigation’। সবশেষ নাইন ইলাভেন বার্ষিকীতেও ওই রিপোর্টের ২৮টি পৃষ্ঠা জাতির সামনে প্রকাশ করতে প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাবেক এই সিনেটর বলেছেনঃ ‘এটা নিশ্চিত যে, নাইন-ইলাভেনের ঘটনায় সৌদি আরবের ভূমিকা ছিল। হামলাকারী ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সৌদি নাগরিক! তাদের কারো কারো সাথে সরাসরি সৌদি কানেকশন ছিল এবং এফবিআইও সেটা জানত। সন্ত্রাসীদের অন্তত তিনজন স্বপরিবারে ফ্লোরিডার সারাসোটায় বিলাসি জীবন-যাপন করেছে এবং তিনটি বিলাশবহুল গাড়ি ব্যাবহার করত তারা। এফবিআই এটাও জানত যে সারাসোটায় এমন কিছু মানুষের আনাগোনা আছে যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি। এখানে এমন অনেক বিষয় আছে যা আমার পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আবার সারাসোটার সন্ত্রাসীদের বিষয়ে এমন কিছু কিছু তথ্য আমি জানি যা এফবিআই জনগনকে জানতে দিতে চায় না। সরকারও এই তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। কারন প্রতিবছর আমরা তাদের কাছে (সৌদি আরব) বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছি’। (বব গ্রাহামের সাক্ষাৎকার বিস্তারিত পাবেন পর্ব শেষের সাক্ষাৎকার পরিচ্ছেদে) এখানে বলে রাখা ভাল, সিনেটর বব গ্রাহাম সেই তথ্য প্রকাশ না করলেও সেটি গোপন থাকেনি। তার অনেকখানিই ফাঁস হয়েছে।

বলা হয়েছে হামলায় জড়িত ১৯ ছিনতাইকারি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ফ্লাইটিং ক্লাবে ভর্তি হয়ে এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট ছোট বিমান চালিয়ে প্রশিক্ষন নিয়েছে এবং নাইন-ইলাভেনের দিন বোয়িং ছিনতাই করে হামলা চালিয়েছে। প্রশ্ন হল কেউ এক ইঞ্জিনের ছোট্ট বিমান চালাতে পারলেই কি চার ইঞ্জিনের বিশাল বোয়িং উড়িয়ে নিতে পারেন? অভিজ্ঞ পাইলট ফিলিপ মার্শাল বলেছেন অসম্ভ! ছিনতাই হওয়া চারটি বিমানের, ছিনতাইকারি পাইলটদের বিমান ওড়ানো দেখে সিআইএ’র সাবেক পাইলট ফিলিপ মার্শালের একবারও মনে হয়নি যে তারা এক ইঞ্জিনের আনাড়ি কোন পাইলট। তাহলে কি এই ছিনতাইকারিরা ধারনার চাইতেও বেশি অভিজ্ঞ? ‘বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালাতে বদ্ধপরিকর’ এবং সম্ভাব্য হামলাটি হবে ছিনতাই করা একাধিক যাত্রীবাহী বিমানকে মিসাইলের মতো ব্যাবহার করে। এমন কিছু সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা রিপোর্ট আগস্টেই প্রেসিডেন্ট বুশকে জানানো হয়েছিল। সেই রিপোর্টের পর কী ব্যবস্থা নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি পরাশক্তির শক্তিশালী গোয়েন্দা দপ্তর? আজও এই প্রশ্নগুলির কোন উত্তর মেলেনি। নাইন-ইলাভেনের ট্রাজেডির দিন প্রেসিডেন্ট বুশের রহস্যময় আচরন নিয়ে কোনদিন প্রশ্ন তোলেনি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার কথিত স্বাধীন গনমাধ্যম। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের যেসব গনমাধ্যমের কৌতূহলী সংবাদকর্মীরা এই যোক্তিক প্রশ্নগুলো তুলেছেন তাদের চাকরি হারাতে হয়েছে। যেমন নিজের প্রানটাই হারিয়েছেন সিআইএ’র সাবেক পাইলট এবং নাইন-ইলাভেন রহস্যের গবেষক ফিলিপ মার্শাল!!

আসলে কে এই ফিলিপ মার্শাল???

.......................................জানবো আগামী পর্বে।

 

সবাই ভাল থাকুন, চোখ-কান খোলা রাখুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা নিরন্তর।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ