বিরুদ্ধাচারীদের আগমন

ভোরের শিশির ১১ মার্চ ২০১৫, বুধবার, ০৮:৩৫:২৪অপরাহ্ন কবিতা ১৬ মন্তব্য

সেদিন বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল।
মাঠে কিংবা রাজপথে বসন্তের সাথে শিমূল,
বুনোহাঁসের নীড়ে ফেরার তড়িঘড়ি,
যাযাবর মেঘের সূর্যের সাথে লুকোচুরি,
বেলা অবেলায় রক্তিম গোধূলি আর
ঝরা পাতার শীর্ণতা ছাড়িয়ে।

সেদিন বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল।
হতবুদ্ধি কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ মূক ও বধির ইশারা,
আবেগে চোখের জলকেলি,
ভ্রষ্ট সন্ন্যাসীর মনমেহন,
দিবারজনী চালুকলার পূর্ণ প্রদর্শন,
হৃদয় মন্থনে অসুরতার স্থিরতা আর
সরলতার বিভমিষা জাগিয়ে।

সেদিন বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল।
সম্প্রদায়ের কিংবা সাম্প্রদায়িকতার অকথিত প্রতিজ্ঞার দূরদর্শন,
স্থিরতার আপন জঠরে প্রত্যাবর্তন,
ভুবনখ্যাত স্পর্শের বেনোজলের ঢেউ,
অনুচ্চারিত অথচ স্পষ্ট তর্জনীর আস্ফালন আর
হৃদস্পদনে শারীরিক সঙ্গমের রক্তক্ষরণে।

সেদিন বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল
ব্যর্থতার সরল সোপানে চড়ে বাস্তবতার বিজয়োল্লাসে,
সেদিন আচারীদের প্রত্যাবর্তনের খুঁটি সরিয়ে
বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

  • নীতেশ বড়ুয়া

    প্রায় সবারই একই কথাঃ বুঝলাম না।

    ধন্যবাদ এই জন্যে যে মনের কথাটি জানিয়ে দিলেন। কি নিয়ে লিখা বা কিভাবে তা বলার আগে জানিয়ে রাখি- অনেকেই অনেক কিছু লিখি আমরা। কিন্তু কবিতায় এলে আমরা কবিতাটির ভাললাগা জানিয়ে যাই যেখানে কবিতা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। এই জন্যেই আমার খুব ভাল লেগেছে আপনাদের এই জানতে চাওয়ার অনুভূতি ‘বুঝলাম না’ শব্দে 😀

    তাই সবাইকেই একবারেই জানাচ্ছিঃ
    প্রথম লাইন-
    “সেদিন বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল।”
    এই লাইন যখন মাথায় আসে তখন কোন নির্দিষ্ট এক ব্যক্তিকে ঘিরেই। ধরে নেই সে তথাকথিত সকল প্রথার সাথে আপোষহীন হয়ে নিজের মতবাদ বা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীতা করে যায়। নিজের মতো নিয়ে থাকতে যেয়ে সে প্রায় সবার সাথেই দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে বা বিরুদ্ধাচারী হয়ে ওঠে। অর্থাৎ তার মতবাদ বা ধ্যান ধারণা সবই প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে।

    এইবার আসি বাকি কথায়।

    প্রথম প্যারা-
    “হতবুদ্ধি কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ মূক ও বধির ইশারা,
    আবেগে চোখের জলকেলি,
    ভ্রষ্ট সন্ন্যাসীর মনমেহন,
    দিবারজনী চালুকলার পূর্ণ প্রদর্শন,
    হৃদয় মন্থনে অসুরতার স্থিরতা আর
    সরলতার বিভমিষা জাগিয়ে।”
    এখানে দেখতে পাবেন সেই বিরুদ্ধাচারীর আগমণ কিসে। বিরুদ্ধাচারী কান্না করে, কোন মতের অধিকারীকে সেই কান্নাজলে ভোলায়, হৃদয়ের গহীনে নাড়া দিয়ে যায় সেই বিরুদ্ধাচারী নিজের অসম্ভব রকমের আসুরিক শক্তির মতো স্থিরতা দিয়ে আর সেই বিরুদ্ধাচারী কাঁপিয়ে দেয় সরলমনাদের একই সাথে।

    ২য় প্যারায়-
    “সম্প্রদায়ের কিংবা সাম্প্রদায়িকতার অকথিত প্রতিজ্ঞার দূরদর্শন,
    স্থিরতার আপন জঠরে প্রত্যাবর্তন,
    ভুবনখ্যাত স্পর্শের বেনোজলের ঢেউ,
    অনুচ্চারিত অথচ স্পষ্ট তর্জনীর আস্ফালন আর
    হৃদস্পদনে শারীরিক সঙ্গমের রক্তক্ষরণে।”
    এখানে সেই বিরুদ্ধাচারীকে দেখতে পাবেন ভিন্ন ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, সেই বিরুদ্ধাচারী ব্যক্তি ভিন্ন আরো বিশালতার মাঝে ছড়িয়ে আছে। সাম্প্রদায়িকতার লেশমাত্র রাখে না এই বিরুদ্ধাচারী। নিজের মতবাদে বা ধারণাতে সে ঘুরে ফিরে ফিরে যায় স্থির চিত্তে। কখনো বা সবাইকেই সে জানিয়ে দেয় যে সে আবারো বিরুদ্ধাচারণ করলো কিন্তু সেটা মুখ ফুটে নয় বরং লেখনীতে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়, আবার দেখা যায় সেই বিরুদ্ধাচারী সকল প্রথার বিরুদ্ধাচারণ করলেও স্বাভাবিকভাবেই অন্যের মনে অবস্থান করেও নিজের স্থিরতায় মিশে যায় সব কিছু ফেলে, ভাবে না কেউ তাকে বা অনেকেই তাকে মনে যায়গা দিয়েছে। এখানেও সে নিজের স্থিরতার জন্যে প্রশংসিত হয়েও সবাইকেই স্বীয় মহিমা দেখায় একই রকমভাবে নিজের প্রতিষ্ঠিত মতবাদের বিরুদ্ধাচারণ করে।

    শেষ প্যারায়-

    “ব্যর্থতার সরল সোপানে চড়ে বাস্তবতার বিজয়োল্লাসে,
    সেদিন আচারীদের প্রত্যাবর্তনের খুঁটি সরিয়ে
    বিরুদ্ধাচারীদের আগমন ঘটেছিল।”

    এখানে বিরুদ্ধাচারীকে খুঁজে পাবেন সেই সব মানুষের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যারা আসলে সরল মনে ব্যর্থতাকে ভুলে জায়গা দিয়েছিলো সেই বিরুদ্ধচারীকে। আর এই সরলমনাদের ব্যর্থতাকে সিঁড়ি বানিয়ে সেই বিরুদ্ধাচারী উঠেছে নিজের সাফল্যের শেখড়ে আর মেতেছে বিজয়ের উল্লাসে। সহজ অর্থে সরলমনা সেই সব ব্যক্তিদের মতবাদের খুঁটি সরিয়ে দিয়েছে সেই বিরুদ্ধাচারী।

    এভাবেই বিরুদ্ধাচারীর বা বিরুদ্ধাচারীদের আগমন।

    এইবার ভিন্নচোখে দেখলে দেখতে পাই-

    যারা নিয়মিত প্রবর্তিত প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরকে একবাক্যে সবাই বলেন বিরুদ্ধাচারণকারী। এরা সত্যান্বেষী বলে চিহ্নিত হয় অনেকের কাছে। এইসব বিরুদ্ধাচারীদের আগমণ হয় প্রথার বিরুদ্ধে, অন্ধবিশ্বাসে লেগে থাকাদের বিরুদ্ধে, অন্ধমতবাদের বিরুদ্ধে বা যা কিছু প্রচলিত সেইসব কিছুতে প্রশ্ন তুলে।

    ইতিহাসে দেখা যায় প্রতি সময়ে কিছু নির্দিষ্ট বিরুদ্ধাচারীর আগমণ হয়েছিল প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে, কেউ বিজ্ঞানী, কেউ ধর্মমত প্রদর্শনকারী, কেউ দার্শনিক বা কেউ সমাজবিদ। প্রত্যেকেই কিন্তু প্রচলিত প্রথাকে ভেঙ্গে নতুন করেই এগিয়ে নিয়েছে অনেক কিছুই।

    অর্থাৎ বিরুদ্ধাচারীর আগমণ মানেই নতুনত্বের প্রবর্তন।

    কিন্তু, খেয়াল করলে দেখা যায় সেই সব প্রতি বিরুদ্ধাচারী সেই একই প্রথা প্রচলনেই নিজের বিরুদ্ধে যেয়ে আবারো নতুন কিছু নিয়ে থাকে।

    একটা ইংরেজী প্রবাদ- হোয়াট গোজ আপ, মাস্ট কাম ডাউন।
    শুন্য হতে সৃষ্টি হলে আবার শুন্যেই মিলিয়ে যায় কিন্তু সেই শুন্যতেই সব শুরু হয়।

    মোদ্দাকথা হচ্ছে এইখানে বিরুদ্ধাচারী বলতে সেইসব স্বত্বা বা পথকে আঁকা হলো যারা প্রচলিত ও অপ্রচলিত সব কিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের স্বত্বা বা মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করে আবারো কিছু বিরুদ্ধাচারীর আগমণের জন্যে।

    এরপরেও কারো কিছু বলার থাকলে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম 😀

  • কৃন্তনিকা

    প্রথমে পড়ে ভেবেছিলাম বুঝেছি তো আমি।
    ব্যাখ্যা পড়ে বুঝলাম, না, অনেক কিছুই বোঝা বাকী ছিল।
    ভালো লেগেছে… (y) (y) (y)
    তবে আমার আপত্তি আছে। “গোধূলি” বানান এটা, সংশোধন করলে ভালো লাগবে আরো। 🙂

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ