বাঙালীর “খাওন দাওন” কড়চা

শিপু ভাই ১৩ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৪:০২অপরাহ্ন এদেশ, বিবিধ, রম্য, সমসাময়িক ২১ মন্তব্য

বিয়ে বাড়িতে গরুর মাংসের বাটিতে হাড়ওয়ালা মাংস খুজে বাঙালী! কিন্তু নিজে যখন বাজার থেকে মাংস কিনে তখন হাড়ছাড়া মাংস দিতে বলে। অর্থাৎ হাড় খুবই সুস্বাদু যখন সেটা ফ্রি পাওয়া যায়। এককালে গরুর চেয়ে মুরগী বেশি এলিট ছিল। ব্রয়লার তখন এতটা প্রসার পায়নি। ফলে মুরগীর দাম ছিল গরু এবং মাছের চেয়ে বেশি। বিয়েতে তখন কেউ কেউ বলতো -"আমি গরু খাই না" অর্থাৎ আমাকে আরেক পিস রোস্ট দেন!!! বিয়ের দাওয়াতে যারা বলে "রান দেন" তাদের আমার কেমন জানি লাগে। আরো ভয়ংকর হল- "ভাই, আমার পোলারে রান দেন"! আরেক গ্রুপ আছে যারা বিয়ের বা এধরণের দাওয়াতে খেতে বসে "সাদা ভাত" চায়। আরে ব্যাটা সবসময়ই তো ভাত খাস তাইলে একবেলা একটু পোলাউ খাইলে মইরা যাবি!!??
গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সবাই গরুর মাংস পছন্দ করে। মুরগীর দাম কমে যাওয়ায় বিয়ে শাদিতে মুরগীর আইটেম বেশি থাকে এখন। এসেছে আরেক গ্রুপ "ফারম খাই নাই"! ঢং
এক সময় পুটি, টেংরা, বাইলা, শিং ইত্যাদী ছিল গরিবের মাছ আর রুই কাতলা পাংগাস, কই ইত্যাদী বড়লোকী মাছ। কিন্তু এখন রুই মাছ ১৫০/- কেজি আর পুটি ৪০০/- কেজি হওয়ায় রুই কাতলা পাংগাস হল গরিবের মাছ আর পুটি শিং বড়লোকদের মাছ। তবে ইলিশ সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই গরিবের ধরা ছোয়ার বাইরে। অবশ্য ইলিশ মাছ খাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পরে না। যার সামর্থ আছে সে ডেইলি খাবে আর যার সামর্থ কম সে মাসে ছয় মাসে একবার খাবে।
অতিথি আপ্যায়নে আমার মনে হয় বাংলাদেশীরা বিশ্বে সেরা। এই বেলা কেউ কার্পণ্য করে না। নিজের সামর্থ্য মত খাবারের আয়োজন করলেও আন্তরিকতা থাকে শতভাগ। তবে কিছু ছোটলোক আছে যারা বিয়ে শাদিতে ইচ্ছে করে এমন করে রান্না করে যাতে অতিথিরা কম খায়। কলকাতার অনেকে অতিথিদের ভরপুর আপ্যায়ন করে। খোজ নিলে দেখা যাবে তারা খাটি কলকাতার না, বাংলাদেশ থেকে মাইগ্রেট করা তারা।
যে সিজনে যেই ফল বা সবজি এভেইলেবল আমরা সেটা খেতে চাই না। অফ সিজনে যখন সেই বস্তু এভেইলেবল না তখন সেটা খাওয়ার জন্য আমাদের মন আকুপাকু করে।
এদেশের অধিকাংশ মানুষ খাওয়ার সময় স্বাদের চেয়ে উদরপূর্তিতে বেশি মনযোগী। ২০০ টাকার বার্গারের চেয়ে ৬০/৮০ টাকা প্লেট তেহারি বেশি আকর্ষনীয়। অতি দরিদ্র বা মজুর শ্রেনীর লোকেরা কলা রুটি খেয়ে ২০ টাকায় লাঞ্চ সেরে ফেলবে। অথবা ৩ টা পাঁচ টাকা দামের চিতই পিঠা পেট ভরার জন্য যথেষ্ট! মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের চেয়ে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের ঘরে খাদ্য বৈচিত্র বেশি। মূলত ব্যবসায়ি পরিবারগুলোতেই খাদ্যবিলাস বেশি হয়। ইদানিং রেস্টুরেন্টে খাওয়ার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠতেছে। একসময় "চাইনিজ খাওয়া" ছিল একটা বিশেষ ঘটনা! এখন শুধু চাইনিজ না, ইতালিয়ান, ইন্ডিয়ান, থাই, মেক্সিকান এমনকি জাপানি খাবার খেতে যাওয়াও বিশেষ কোন ব্যাপার না। আগে হয়তো বছরে দুইবার রেস্টুরেন্টে খাওয়া হত (সবাই সাজুগুজু করে যেত) আর এখন সপ্তায় তিনদিন রেস্টুরেন্টে খায়। গ্রামাঞ্চলেও এখন মেহমান এলে রান্নার ঝামেলায় না গিয়ে কাউকে বাজারে পাঠিয়ে "চিকেন ফ্রাই" কিনিয়ে আনে।
কিছু খাবার সাম্যবাদী খাবার। যেমন- মুড়ি, টোস্ট বিস্কুট, চানাচুর! পাউরুটি এখনো গ্রামাঞ্চলের মানুষের প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় ঢোকেনি। তবে সকালের নাস্তায় রুটি (ঘরে বানানো) খাওয়ার প্রচলন বাড়ছে। আগে গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে চা খাওয়ার আয়োজন ছিল হাতে গোনা দুই একটা ঘরে। এখন প্রায় সবার ঘরেই চায়ের আয়োজন থাকে। শহুরে মেয়েদের প্রিয় খাবার আইসক্রিম আর চকলেট। গ্রামের মেয়েদের প্রিয় খাবার "আচার"! তবে মুরুব্বি কিছু মানুষের সফট ড্রিংক্সের প্রতি দূর্বলতা আছে কিন্তু লজ্জায় তারা মুখ ফুটে বলে না। আপনার আম্মু আব্বু দাদা দাদী নানা নানিদের জিজ্ঞেস করবেন তারা কোক সেভেনাপ খাবে কি না!!!

"খাবার" খাওয়ার জন্যই। খান মন প্রান ভরে। তবে খাবার নষ্ট করবেন না। আপনার আশে পাশে কেউ না খেয়ে আছে কি না সেই খোজটাও নিয়েন। আপনার কোন অনুষ্ঠানে (ঢাকায়) খাবার বেচে গেলে আমাদের "প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন" পরিচালিত "ফুড ব্যাংকিং প্রজেক্ট" এ জানান কষ্ট করে। 01842002023 এই নাম্বারে কল করলে ভলান্টিয়াররা আপনাদের সেই উদ্ধৃত খাবার সংগ্রহ করে পৌছে দিবে ঢাকা শহরের ভাসমান অনাহারী মানুষদের মুখে!!!

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ